somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে আকাশে পাখি নেই, যে পাখির আকাশ নেই

০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

#
যে পথে বাড়ি ফেরার কথা সেই পথে বাড়ি ছিল না বলে আমি ঘুরপথে বাড়ি ফিরতে গেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি শূন্যতা, সেখানে কোনো পাখি উড়ছে না। অথচ মা পইপই করে বলে দিয়েছিল আকাশে পাখি না উড়লে বাড়ি ফিরবি না। এই আকাশে পাখি নেই, যে আকাশে পাখি আছে সেই পথে বাড়ি নেই।
আমি ঠিক মাঝে অথবা একটু আগে পিছে হবে কোনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ি। মা’র কথা আমি অমান্য করি কেমন করে? তাকিয়ে দেখি স্টেশন। লাল রং এর বিল্ডিং। স্টেশনের গায়ে নাম লেখা নেই, আশেপাশে কোনো মানুষ নেই। এক টং এর দোকানে বসে চা বিক্রেতা মাছি তাড়াচ্ছে।
ভাই,আকাশে পাখি নেই কেন?
আকাশ? আপনি আকাশ কই পাইলেন? এখানে তো কোনো আকাশ নাই।
তাইলে,ঐটা কী?
চা বিক্রেতা দাঁত বের করে হেসে ফেলে, হলুদ হলুদ দাঁত; দেখতে বিশ্রী লাগে।
এভাবে হাসবেন না।
হে হে।ধুর মিয়া,ভালা শার্ট-প্যান্ট পড়সেন, এইটা বুঝেন না ঐটারে আকাশ কয় না,কয় ফকফকা সাদা মানে শূন্যতা।

আমি চিন্তায় পড়ে যাই। তাই তো শূন্যতা, আকাশ মানে শূন্যতা। শূন্য দিয়ে গুণ করলে সব শূন্য হয়ে যায়। তাহলে সেখানে পাখি ওড়ে কিভাবে? আমরা যাদের উড়তে দেখি সেটা কী? জোছনা কী? চাঁদ কী? মেঘ কী? । তারমানে পাখি নেই, জোছনা নেই, চাঁদ নেই, তারা নেই?
চা বিক্রেতা হাসি থামিয়ে বলে, লন চা খান। যাইবেন কই?
আমার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখন কোথায় যাব?
এইখানে ট্রেন থামে না?
থামত কোনো এককালে। এখন তো কিছু নাই। ঐ যে আকাশের কথা কইলেন না? আছে কিন্তু নাই,স্টেশনের ঐ অবস্থা আর কী।
চা খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করি, মানুষ নেই কেন?
চা বিক্রেতা চুপ হয়ে গেলে খেয়াল করি, তার সঙ্গে আমার চেহারায় অনেক মিল। শুধু তার দাঁত হলুদ, তাকে হাসলে বিশ্রী দেখায়, আমাকে দেখায় না।
আশ্চর্য আমার চেহারার সাথে আপনার চেহারায় অনেক মিল।
মিল তো হবেই। আবার নেমে আসে নিঃস্তব্ধতা।

এখন আমি কী করব? চা বিক্রেতার ভাষ্যমতে এখানে কোনো ট্রেন থামে না, এখানে কোনো আকাশ নেই, এখানে কোনো মানুষ নেই। তবে আমি যাব কোথায়?
বাড়ি ফিরা যান। নাইলে,আমার মতো আটকা পড়বেন।
বাড়িতে কেউ নেই। মা ছিল। মারা গেলেন কইদিন আগে। মারা যাওয়ার আগে এই ঠিকানাটা দিয়ে গেলেন। কিন্তু এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি সাধারণত মানুষের সাথে কম কথা বলি। এখন এই অচেনা জায়গায় অচেনা মানুষের সাথে কথা বলেই যাচ্ছি, বলেই যাচ্ছি।
আবার কথা বলে ওঠে লোকটি, এইটা পরকালে যাওয়ার আগের স্টপেজ, বুঝলেন? মারা গেসেন আপ্নি,এইখানে সবার চেহারা এক, স্বপ্ন এক, কান্না এক,হাসি এক।

আমি হেসে উড়িয়ে দেই। এটা হওয়া সম্ভব না। আমি তো বহুদিন আগেই মারা গিয়েছি। নতুন করে কিভাবে মরব।
তা ক্যামনে মারা গেলেন?
ঠিক ক বছর আগের বাবা মারা গেল মনে নেই। আমার ইন্টার পরীক্ষা চলছিল। এরপর পর যা হবার তাই হলো। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল। ইচ্ছে করলে করতে পারতাম কিন্তু করি নাই। একটা দোকান দিয়ে বসলাম। ভালোই চলছিল। মা বিয়ের কথাবার্তা শুরু করেছিল। আমার না, আমার বোনের। বিয়ের আগের দিন রাতে কে বা কারা বোনের মুখে এসিড মারল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই করে যাচ্ছিলাম। আর পারলাম না। জীবনের এসব জটিলতার সাথে কিভাবে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়, বাবা শিখিয়ে দিয়ে যেতে পারেন নি। আমিও শিখতে পারি নি। এরপর যে ছেলে এসিড মারল সে এসে আমার দোকান ভাঙচুর করল। তার ক’দিন পরেই তার বড় ভাই কমিশনার ইলেকশনে দাঁড়াইল, আমি ভোট ও দিলাম। আসলে সেদিন-ই আমি মারা গিয়েছিলাম। আর আপনি বলছেন এটা পরকালের আগে স্টপেজ স্টেশন?

#

ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি বাসাতেই আছি। তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? মা আমাকে কোথায় যেতে বলেননি। অথচ হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে দেখি আকাশে সত্যি পাখি নেই। আকাশ কী আছে?

বাড়ির সামনে স্টেশনে মানুষের ভীড়। আমি জানি, প্রত্যেকে বহন করে চলেছে নিজস্ব কাহিনী, নিজস্ব গল্প। হয়ত আমার মতো কিংবা মার চেয়ে খারাপ কোনো গল্প। কারো কারো হয়তো গল্পই নেই।
আকাশে পাখি থাকে না, আকাশ থাকে না, স্বপ্ন থাকে না অথচ আমরা সব দেখি, সব করি, বেঁচে থাকি। মনে হয়- বেঁচে থাকা শূন্যতা, মরে যাওয়া তার চেয়েও বেশি শূন্যতা। শূন্যতার ভেতর খাবি খাওয়া একদল নির্বোধ মানুষের দল আমি, আমরা, সবাই, আমাদের পুর্বপুরুষেরা,আমাদের উত্তরপুরুষেরা।
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×