এমনিতে অফিস থেকে বাইর হইতে দেরি লাগে। আটটা, নয়টা, দশটা বাজে। কালকে চাপ ছিল কম। তাই বন্ধুর সঙ্গে আজিজ মার্কেটে গেছিলাম। অবরোধের মধ্যে মার্কেটের দোকান পাট সব খোলে নাই। মানুষজনও নাই। তাই নিরিবিলি একটু হাঁটাহাঁটি করতেছিলাম। বই উলটানো, পত্রিকা দেখা এইসব। একফাঁকে অন্তরে গিয়া লুচি খেয়ে নিচে নামতে গিয়া মানে নেমে খানিক দূর এগিয়ে গিয়া দেখি ভাস্কর দা। আরে ভাস্কর দা আপনি? আহা আজিজ মার্কেটে আসাটাই সার্থক। ভাস্কর দার সঙ্গে ওনার বন্ধু। সেই বন্ধু ব্লগে যার সঙ্গে তিনি থাকেন বইলা একটা বিপ্লব পয়দা করতে ধরছিলেন। পরিচয় হইলো। বাহ বেশ।
ভাস্করদাদেরও লুচি খাওয়ার ইচ্ছা। আবার লুচি খাইতে যাইতে হয়। কী করি, এবার এলির দিকে আগাইলাম। ব্লগ নিয়া কিছু আলাপ আলোচনা হইতেছে। কবিসভা নিয়া হইতেছে। জাহাঙ্গীরনগর নিয়া কিছু আলাপ হইতেছে। ভাস্করদার মধ্যে জেহাদী আরেক ভাস্কর মাঝে মাঝেই চাগাড় দিয়া ওঠে। তিনিও মাঝে মাঝে কথা বলতেছিলেন। ভালই।
একথা সেকথার পর ভাস্করদা হঠাৎ রাসেল প্রসঙ্গ ওঠালো। ব্লগীয় রাসেল। আমি একটু আগ্রহ দেখইলাম। চলুক না। রাসেলকে নিয়াও তো আলাপ হইতে পারে। ভাস্করদা বলে, রাসেল অভিযোগ করলো তুমি নাকি পড়ো না। তুমি প্রবিাদ করলা না বা কিছু বললা না েয?
আমি একটু চুপ থাকলাম। ভাস্করদার কাছে এ বিষয়ে কিছু বলা বাতুলতা। কারণ ওনার সঙ্গে আমি বেশ অনেক দিন একই রুমে আছিলাম। ফলে উনি জানেন আমি কি পড়ি কি পড়ি না। বেশ একটা আমি আমি ব্যাপার হইতেছে। বেশ।
আসলে গল্পটা ব্লগীয় রাসেলকে নিয়াও শুরু করা যাইতো। পিয়াল ভাই তার নাবালক ভ্রাতুষ্পুত্র রাসেলকে নিয়া আজিজ মার্কেটে আসছেন। ব্লগে সবাই গল্প লেখার প্রতিযোগিতা করতেছে। সেই সময় আমিও একটা গল্প লিখতে পারতাম। কেন তখন লিখলাম না তা এক গুরুতর প্রশ্ন। আর এখন কেন লিখতেছি তাও এক গুরুতর প্রশ্ন।
সামহোয়ারে আমি এসেছিলাম ফেব্রুয়ারি মাসে। কী লিখবো কেন লিখবো ভাবতে ভাবতে একটা শব্দকোষ লেখা শুরু করছিলাম। তখন একটা ডিস্টার্বিং এলিমেন্ট খুব ফালাফালি করতো। তার নাম রাসেল ডটেড। ব্লগে গালাগালি, ফালতু কমেন্ট আর বেয়াদবীর অন্যতম উদ্যোক্তা রাসেল। তার লাস্ট পোস্ট দেখে অবাক লাগলো। তিনি এখন সেনসরশিপের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তো এই রাসেল ডটেড বাবুর সঙ্গে আমার একবার তুই তোকারিও হয়েছিল। সেটাও রাসেলেরই উদ্যোগে। তখন আমি ভাবতাম রাসেল নিশ্চয়ই কোনো নাবালক হবে। কিন্তু ব্লগে নিজের ব্যক্তিত্ব নির্মাণের একটা সচেতন উদ্যোগ ছিল তার। আর এ কাজ করতে গিয়া সে রাইসু ভাইকে গালাগলি করতো আর তার যে কোনো পোস্টের পেছনে লেগে থাকতো। রাইসু ভাই বিখ্যাত লোক। ফলে এই লেগে থাকতে থাকতে রাসেলও বিখ্যাত হয়ে উঠলো। তার বয়সটা বেশি বেশি মনে হতে লাগলো। জানি না এই কারণে আমি হয়তো তাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছিলাম। অবশ্য এই গুরুত্ব দেয়াটা ভুল কোনো পদ্ধতি ছিল না। ব্লগের সব লেখকই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতামতের গুরুত্ব আছে। অনেকই খুব ভাল লেখেন। কিন্তু রাসেল কলেজ বা স্কুল ম্যাগাজিনের লেখক হয়েও রাইসু ভাইয়ের বিরোধিতা করে ঢাকায় বেশ স্টার হয়ে উঠলো।
যেদিন রাসেল আজিজে আসল সেদিনকার ঘটনা। রাইসুভাই এমনিতে নাবালকদের ব্যাপারে আগ্রহী থাকেন না। কিন্তু বিরোধিতার কারণে হোক আর আমেরিকা থেকে এসেছে বলে হোক, কি পিয়াল ভাইয়ের সঙ্গে এসেছে বলেই হোক, কি ব্লগীয় সামাজিকতার বোধ থেকেই হোক রাইসু ভাই দেখি রাসেলকে ওয়ার্মলি নিতেছেন। সাকুরায় গিয়া রাসেলের প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটলো। সে খাচ্ছিলো না অবশ্য। খাইলে হয়তো তার কথা থেকে কিছু পরিমাণ বাঁচা যেত। বাঙলা কবিতা নিয়া তার খুবই প্রাথমিক ধারণা। কিছু পড়েছে, কিছু মুখস্ত করেছে আর কিছু নাম শুনেছে। সেখান থেকে রীতিমতো বিজ্ঞের মতো বিররণ দিয়ে যাচ্ছিল। আমি হাসতেও পারছিলাম না কাঁদতেও পারছিলাম না। কিন্তু রাইসু ভাইয়ের ধৈর্য দেখে আমি অবাক। তিনি তাকেও বুঝতেও দিলেন না যে, নিজের সম্পর্কে রাসেলের ধারণাটা ঠিক নয়। রাইসু ভাই তার সঙ্গে কাব্যআলোচনা করছিলেন। আমি অতিকষ্টে হাসি চাপছিলাম। পিয়াল ভাইকে বলছিলাম, আপনার মুক্তিযুদ্ধের কাজগুলা নিয়ে সামনের বইমেলায় একটা বই করেন। ইত্যাদি।
পরে দেখি রাসেল ব্লগে বলতেছে মাহবুব মোর্শেদ কিছু পড়ে না। আরে বাবা, 'তুমি যে কলেজের নতুন ছাত্র আমি সেই কলেজের প্রফেসার।'(মমতাজের গান থেকে মারলাম)। তো স্যার, কে পড়ে না পড়ে এইটা কে আপনাকে নির্ধারণ করতে বললো? এখন ওনার সঙ্গে কেমনে কাব্য আলোচনা সম্ভব? বিশেষ করে ভুট্টা সিরিজের আলোচনা।
রাসেলের বয়সবৃদ্ধির জন্য সকলের দোয়া চেয়ে। ইতি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



