somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ টাইগারদের গল্প। (পর্ব-১)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টাইগারদের গল্প শিরোনামে ৬ পর্বের ধারাবাহিক পোস্টের আজ প্রথম পর্ব। বিশ্বকাপে টাইগারদের সম্পর্কে জানা অজানা অনেক তথ্য নিয়ে আলোচনা করব। বাংলাদেশ দলের ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিশ্বকাপ নিয়ে থাকবে ধারাবাহিক আলোচনা।

এই সিরিজের অন্যান্য পর্বগুলোঃ
বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ টাইগারদের গল্প (পর্ব-২)
বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ টাইগারদের গল্প (পর্ব-৩)
বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ টাইগারদের গল্প (পর্ব-৪)
বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ টাইগারদের গল্প (পর্ব-৫)



দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১১তম আসর। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের এ আসর মাঠে গড়ানোর আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ থেকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ভেন্যুতে গড়াচ্ছে বিশ্ব সেরা নির্ধারণের লড়াই।

বিশ্বকাপ নিয়ে একটু পিছনে ফিরে তাকানো যাকঃ

১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ড সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করে ওয়ানডে ক্রিকেট প্রবর্তনের ৪ বছর পর। সেখানে ৮ টি দল ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড, পুর্ব আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ অংশগ্রহণ করে সেই বিশ্বকাপে। প্রতিযোগিতা হয় ১৫ টি ম্যাচের। চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।১৯৭১ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যাকার টেস্ট ম্যাচটি বৃষ্টির কারনে পন্ড হয়ে গেলে বিকল্প ভাবনা হিসেবে একটি ৬০ ওভারের ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল।
১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে হারিয়ে ক্রিকেটের প্রথম দুটি শিরোপা জিতে ওয়েস্টইন্ডিজ। ৪ বছর পর ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনালেও উঠে তারা কিন্তু ভারতের কাছে পরাজিত হয়। এরপর আর কোন বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লেখাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৮৭ সালে এলান বোর্ডারের নেতৃত্বে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জিতে অস্ট্রেলিয়া। এরপর টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা ২০ বছর রাজত্ব করে তারা। ২০১১ সালে ভারত তাদের সম্রাজ্যের লাগাম টেনে ধরে। উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে ভারত ১৯৮৩ ও ২০১১, পাকিস্তান ১৯৯২, শ্রীলংকা ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ জিতে।

এবার চোখ বুলানো যাক বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিশ্বকাপে লড়াই শুরুর গল্পে,



১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ৭ম বিশ্বকাপে প্র্যথমবার অংশ নেয় বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা আসরে। বাংলাদেশের এই অর্জন সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে। অতিক্রম করতে হয়েছে অনেক বাধা বিপত্তি, অনেক বন্ধুর পথ। অনেক সংগ্রামের ফসল আজকের ক্রিকেট বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালেই ক্রিকেট বোর্ডের পুনর্গঠন ও ক্রিকেটের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে আই সি সি বাংলাদেশকে সহযোগী সদস্যপদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৭ সালে সেটা পেয়েও যায়। এর দু'বছর পর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ প্রথম আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। প্রথম আই সি সি ট্রফিতে বাংলাদেশ খুব ভাল না করতে পারলেও ২য় আই সি সি ট্রফিতে সেমিতে উঠে ৩য় বিশ্বকাপ খেলার আশা জাগিয়েও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে সে স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।
এরপর ৪র্থ আই সি সি ট্রফিতে আবার সেই স্বপ্ন দেখার সময় আসে। আবার সেমি-ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। আবার-সেই জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে আরো একবার স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। তবে ১৯৯৭ সালে ৬ষ্ঠ বিম্বকাপে আর আশাহত হতে হয়নি বাংলাদেশকে। এ দেশের সোনার ছেলেরা মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের বিজয় কেতন উড়িয়ে অপরাজিত বিজয় উপহার দেয় দেশবাসীকে। সেই সাথে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৭ম বিশ্বকাপে শুরু হয় বাংলাদেশের স্বপ্নের বিশ্বকাপ যাত্রা। সেই থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপে নিয়মিত অংশ নিয়ে পাকিস্তান, ভারত, দ.আফ্রিকা, স্কটল্যান্ড, বারমুডাকে হারিয়ে নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।

বাংলাদেশের অভিষেক বিশ্বকাপ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমবার নাম লেখানোর পর এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বযজ্ঞে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ খেলেছে ২০০৩,২০০৭ ও ২০১১ এর বিশ্বকাপেও। বিশ্বকাপে খেলা তাই বাংলাদেশের কাছে নতুন কিছু নয়। বরং ২০১৫ সালের বিশ্বকাপটা বাংলাদেশের জন্যে পঞ্চম বিশ্বকাপ মিশন।

১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় বাংলাদেশের। বর্তমানে বাংলাদেশ আইসিসির পুর্ন সদস্য দেশ।

এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ যে ৪ টি বিশ্বকাপ আসরে প্রতিযোগিতা করেছে তার সফল ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে। সেবার বাংলাদেশ সুপার এইটে যেতে সক্ষম হয়েছে। গত ৪ টি আসরে বাংলাদেশ মোট ২৬ ম্যাচ খেলে তার মধ্যে ৮ টিতে জয় ১৭ টিতে পরাজয় এবং একটি বাতিল হয়ে যায়। এবার নিয়ে টানা তৃতীয় বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছেন সাকিব, তামিম ও মুশফিক। তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলবেন মাশরাফিও, ২০০৩ ও ২০০৭-এর পর এবার। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে সাকিব, মুশফিক ও তামিম প্রত্যেকেই গেছেন ১৫ টি করে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে। মাশরাফির থাকছে ১১ টি, মাহমুদউল্লাহর ৪ টি এবং রুবেল হোসেনের ঝুলিতে থাকছে বিশ্বকাপ ম্যাচের অভিজ্ঞতা। অবাক করা তথ্য হল ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের ৪টি আসরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মোট ২৬টি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরী করেছেন মোট ১৩টি। এখনো বাংলাদেশ পায়নি সেঞ্চুরির দেখা। অসংখ্য অর্ধশতকের ইনিংস থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষে কেউই তাদের অর্ধশতককে পরিণত করতে পারেনি শতরানে।
সাকিব আল হাসান সবচেয়ে বেশি ৩টি হাফ-সেঞ্চুরী করেছেন। মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস,মিনহাজুল আবেদিন করেছেন ২টি এবং মুশফিকুর রহিম ও মেহরাব হোসেন করেছেন ১টি করে হাফ-সেঞ্চুরী।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অর্ধশতক করেন মেহরাব হোসেন অপি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি ১২৯ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় ১৯৯৯ সালের ২৪ মে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে অপরাজিত ৬৮ রান করে ম্যাচ সেরা হন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। এছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একই বিশ্বকাপে করেন ৯৯ বলে অপরাজিত ৫৩ রান।বাংলাদেশ একই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৩ টি ফিফটি পেয়েছে ২০০৭ সালে পোর্ট অব স্পেইনে ভারতকে হারানো ম্যাচে। মুশফিকের অপরাজিত ৫৬, সাকিবের ৫৩ এবং তামিমের ঝড়ো ৫১ রানের উপর ভর করেই বাংলাদেশ জয় পায়।
বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮৭ রান মোহাম্মদ আশরাফুলের। ২০০৭ সালে সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই ম্যাচ সেরা ইনিংসের জন্যই প্রথম বারের মত শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। আশরাফুল ২০০৩ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ৮২ বলে ৫৬ রান।
এছাড়া সাকিব আল হাসান ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ বলে অপরাজিত ৫৭ রান এবং তামিমের একই বিশ্বকাপে একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ৮৬ বলে ৭০ রান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ইমরুল কায়েস ২০১১ বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬০ রান এবং নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

আজ এ পর্যন্তই। প্রতিদিন রাত ১০ টায় ধারাবাহিকভাবে বাকী পর্বগুলো পোস্ট করব (নতুবা পোস্ট বেশি বড় হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×