somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুল তবু ফুটবেই....(২য় অংশটুকু)

২৪ শে মে, ২০১১ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


;
প্রথম অংশ টুকু: ফুল তবু ফুটবেই....

*******

মানুষটার একটা গুন ভাল ,বাইরের কারো সামনে বকাঝকা করেনা। এমনকি বাড়ির দাসি বান্দীর সামনেও না। একলা হইলেই কেন জানি মাথায় বিকার ওঠে।
হাসিনা খাতুনের বৃদ্ধা মা কিছুদিন হল মেয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। এতসব কান্ডের কিছুই তিনি ঘুনাক্ষরেও জানেন না। তার কাছে জামাই হইল সাক্ষাৎ চান্দের টুকরা।
প্রতি রাতের খাবারের পর হাসান সাহেব এই মহিলার সাথে ফিসফিস করে কোন গোপন আলাপ করছেন এমন ভাব নিয়ে গল্প করেন।
হাসিনা খাতুন তখন সে স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন না। এটাই নিয়ম। হাসান সাহেব বেশ গলা উচিয়ে বলেন মা ছেলের আলাপের মধ্যে বাইরের কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এ ধরনের কথায় বৃদ্ধা স্বর্গীয় সুখ পান। তার নিজের পুত্র কন্যারা কথায় কথায় মায়ের ভুল ধরতে পছন্দ করে।

বাড়িটা হাসান সাহেবের দাদার আমলের। হাসিনা বেগম তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অর্ধমৃত অবস্থায় দোতলার ছোট একটা ঘরে পড়ে আছে। হাসান প্রথম দু এক বছর নিয়ম করে স্ত্রীর ঘরে যেতেন। খোঁজখবর করতেন।
স্ত্রীকে দেখতে যাওয়ার সময় তার এক হাতে থাকতো আতরের শিশি, আরেক হাতে সিজিনাল ফল। দূর্লভ ফলমূল ছিল তাঁর পছন্দের তালিকায় প্রথম।
তিনি আতরের শিশি থেকে একটু আতর স্ত্রীর হাতে মাখিয়ে দিতেন। এতে করে রোগের গন্ধ ঢাকা পড়ত। তখন তিনি স্ত্রীর হাত ধরে কিছুক্ষন বসে থাকতেন।

এরপর একে একে কেটে গেছে প্রায় সাড়ে নয় বছর। অনেক দীর্ঘ সময়। মাইয়া লোকের জান গুচি মাছের মতন। আয়না বিবির এত দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না। অযথা মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। আয়না বিবি হাসান সাহেবের প্রথম স্ত্রীর নাম।
আগে আয়না বিবি প্রায়ই মিহি করুন সুরে কাঁদতেন। তাঁর কান্নার আওয়াজ বেশিদূর না গেলেও হাসান সাহেবের কানে ঠিকই পৌঁছাতো। একদিন তিনি হুকুম দিলেন কান্নার শব্দ যেন দরজার বাইরে না যায়!
কান্নর সুর বুকের মধ্য দিয়া কানে যায়। তার দৈনন্দিন কর্মে ব্যাঘাত ঘটে।
সবচেয়ে বড় কথা ঐ সুর তার কাছে পেত্নীর ডাকের মত লাগে। হঠাৎ কানে গেলে বুক ধ্বক করে ওঠে। এমনিতেই হাসান সাহেবের হার্ট বেশ দূর্বল। হার্ট দূর্বল লোকদের হম্বি তম্বি হয় দেখার মত। দূর্বলতা ঢাকতেই কিনা কে জানে!

বিশেষ করে মাঝরাতে পেছনের বাঁশঝাড় থেকে শো শো আওয়াজ হয় শুকনা পাতার। হঠাৎ করে কানে আসলে মনে হয় যেন কেউ হাঁটছে। হয়ত চোর টোর হবে। হাসান সাহেবের ঘুম ভেঙে গেলে তিনি স্ত্রীর আঁচলের তলা খোঁজেন। ভয়ের সাথে তার শরীরের বিশেষ অঙ্গ জেগে ওঠে।
এমন মুহূর্তে যদি চিকন স্বরে কারো সুর করে কান্নার আওয়াজ কানে আসে তো বিরক্তি আপনা থেকেই এসে যায়।

আয়না বিবির পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল পার্বতী রানী। বয়স কালে তার সৌন্দর্য্যে আটকা পড়েছিলেন হাসান সাহেব। নিম্ন বর্নের হিন্দু ঘরে জন্ম তার। জাত নিয়া সমস্যা তখন রূপের কাছে চোখে পড়ে নায় হাসান সাহেবের। হাসানের ধারনা গরীব ঘরে জন্মাইলে চোখে থাকে চুরনী ভাব। এই মেয়েটির মধ্যে ছিল দূর্গা ভাব। গোবর থেকে পদ্মের গাছ তুইলা তিনি টলমলা জলে লাগাইলেন। মুসলমান বানায়া ঘরে তুললেন। নাম বদলায়া রাখলেন আয়না বিবি। গ্রাম ছাড়া করলেন শশুরের গুষ্টি কে।

আয়না বিবি সন্তান ধারন করতে পারলেন না। ফল যা হবার তাই হল। হাসান সাহেবের প্রাথমিক মোহ কেটে যাবার পর রূপ কে বিষ্ঠা মনে হতে লাগলো। কিছুদিন বাজারে নটী বাড়ি যাওয়া আসা করলেন, মনের দুঃখ মিটাইতে। শেষ মেষ বিবাহ করে ঘরে আনলেন হাসিনা খাতুন কে।

হাসিনা খাতুন কথা এমনিতেই কম বলতেন, হাসান সাহেবের বাড়িতে ঢোকার পর জবান প্রায় বন্ধের পথে।
ছেলে বড় হচ্ছে হাসান সাহেবের। দ্বিতীয় স্ত্রী আনার পরও দীর্ঘদিন তিনি সন্তানের বাবা হইতে পারেন নাই। মধ্য বয়স পেরিয়ে যাওয়া হাসান সাহেবের সাথে তাই পুত্রকে একটু বেমানান লাগে বৈকি। পুত্রের বয়স কেবল নয়। গ্রামের মানুষ আড়ালে মুখ টিপাটিপি করে। পুত্র হাসান সাহেবের কিনা! এই নিয়াও কানাঘুষা চলে।

চৌধুরী সাহেব এখনো বাজারের নটীর ঘরে যান। মদিনা তার টাকায় ঘর তুলেছে বাজারে। মদিনার ঘরে অন্য পুরুষ ঢোকা নিষেধ।


*******

হাসিনা খাতুন কথা গুছায়ে রেখেছিলেন। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার নিজেই নিজেরে শুনায়েছেন। তবে বলতে গিয়া গড়বড় হইলে এক বেইজ্জত। হাসিনা খাতুনের ছোট বোন সালমা স্বামীর বাড়ি থেকে এক কাপড়ে চলে এসেছে। হাসান সাহেব কে এখনো জানানো হয়নি। হাসিনা বেগমের মাকেও জানানো হয়নি। সালমা খাতুন অতিথ ঘরে মুখ গুঁজে পড়ে আছে। মেয়ের পেটে লাত্থি দিলেও যদি কোনো কথা বের হয়!
হাসিনা খাতুন কিছুক্ষন চেষ্টা নিয়েছেন কথা বের করার।
তারপর হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
সালমার মুখে এক কথা, আমাকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করিস না আপা। তবে ঐ বাড়িতে ফিরে যাইতে বললে আমি বিষ খাব। বিষের একটা শিশি সে সাথে করেই এনেছে।
যেন ঝামেলা হওয়া মাত্র বিষের যোগান নিয়া সমস্যা না হয়।
এই কথা বলার সময় নীল ছিপি ওয়ালা বোতলটা সে বের করেও দেখিয়েছে। যেন বিষ নিয়ে কোনো রকম সন্দেহ না থাকে হাসিনা খাতুনের।

কি মুসিবত! হাসিনা খাতুন প্রানপনে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। এরকম বিপদের মুহূর্তে দোয়া ইউনুস হইল কোরামিন ইনজেকশন। এর আগেও তিনি পরীক্ষার ফল হাতে নাতে পেয়েছেন।
আজ খুব গরম পড়েছে। গরম এত বেশি যে মনে হচ্ছে তিনি মাছের পেটের মধ্যেই ঢুকে পড়েছেন। সমানে ঘামছেন তিনি।
ঘাম হচ্ছে কিন্তু শরীর ঠান্ডা হচ্ছেনা। আজব ব্যাপার! এত কান্ডের মধ্যে সালমার কথাটা আর বলা হলনা। স্বামীকে ধরে তুলতে গিয়ে ভাবলেন বিকেলে আর একবার চেষ্টা নিবেন।

- এই মূর্খ মেয়েলোক বগলের নিচে ধর। কব্জি ধইরা টানাটানি কর কি জন্যি? আবার একলা একলা কি বিড়বিড় করতেসো? আমারে বিছানায় শোয়ায় দাও। খাইতো খাইতে হাতি হইসে একটা। বাড়ির মধ্যে হাত্তি পুষনের মামলা অখন টের পাইতেসি।
ঠিকমত ধর কইলাম।

অনেক কষ্টে হাসিনা খাতুন তিনারে বিছানার মধ্যে তুলে শোয়াতে পারলেন। এটুকু করতে গিয়ে ঘাম ছুটে গেল।

- ত্যানা ভিজায়া আমার হাত মুখ মুছায়া দাও। খবরদার এ ঘরে যেন কোন বান্দীর বাচ্চা না ঢোকে। সব খাবার দাবার তুমি উঠায়া নিয়া যাইবা। গর্ধব মেয়েছেলে যাও ত্যানা ভিজায়া নিয়া আসো।

আজ যোহরের ওয়াক্তে নামাজের সময় থেকেই হাসান সাহেবের মন এলোমেলো। মদিনাকে নিয়ে কদিন ধরে সমস্যা যাচ্ছে। এসব যদিও ব্যাপার না। টাকা পয়সা খরচ করতে হবে, কদিন চোখ কান খোলা রাখতে হবে। বাজারে দুটো দল। জলিল সাহেবের দল কদিন ধরেই তাঁর পেছনে লেগেছে। গুচি ব্যাইমের বাচ্চাগুলা! নামাযের মধ্যে কিছুতেই সুরা ঠিকমত মনে করতে পারছিলেননা। অভ্যাসবশত মুখ নড়ে,আর চোখের সামনে ওই মাগীর মুখ ভাসে। যা তা অবস্থা! অবশ্য আল্লাহপাক রহমানুর রাহীম। সব কিছুর পর ক্ষমা চাইয়া নিলেই হইব। আল্লাহ নিজে বলসেন তোমরা শুধু আমার কাছে ক্ষমা চাও।
নাহ মাথা ঠান্ডা কইরা আগাইতে হইব।গরম হইয়া গেলেই সমস্যা!


চলবে....

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৮
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জঙ্গি শক্তির ছায়া, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×