somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুল তবু ফুটবেই....(তৃতীয় অংশটুকু)

২৭ শে মে, ২০১১ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফুল তবু ফুটবেই...

ফুল তবু ফুটবেই...(দ্বিতীয় অংশটুকু)

*******

ওদিকের এত কান্ড সালমার জানার কথা না। সে অতিথঘর থেকে একটা মিনিটের জন্য বের হয় নাই। সত্যি বলতে কি হাসান সাহেবের চোখে রেডিয়ামের মত বাত্তি জ্বলে। গ্রাম বাংলায় এধরনের চোখ কেই বোধহয় বিড়াল চক্ষু বলে। হাসান সাহেবের চোখ সালমার পছন্দ না। তাকালেই মনে হয় চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সারা শরীর।
এ বাড়িতে আসলে এই একটা লোককেই সে এড়িয়ে চলে যতদূর পারা যায়। বড় আপার যে বুদ্ধি কম সে আর না বললেও হয়।
তোরে তর দুলাভাই ডাকতেছে। যেন দুলাভাই শালীরে ডাকছে এর থেকে আনন্দময় আর কিছু হতে পারেনা। কেন ডাকে এইটা যদি আপার মাথায় ঢুকতো।
ইয়া মাবুদ!

সালমা হাত পা ছড়িয়ে খেতে বসেছে। হঠাৎ তাকে দেখলে উদভ্রান্ত মনে হবে। সারাপিঠময় চুল ছড়ানো। চোখ ফোলা। তবে তাঁর ভেতরে আত্মবিশ্বাস অন্যরকম। সে জানে তার সৌন্দর্য্যের কাছে এসব অতি তুচ্ছ।
জমিলা সামনে বসে রয়েছে। তার ভাষায় ' আফামনি ' আসলে তার মনে খুব আনন্দ হয়। যে কয়দিন থাকে সে সারাক্ষন চেষ্টার মধ্যে থাকে আফামনির পাশে পাশে থাকার। রূপসী মাইয়াদের দেমাক বেশি থাকে । আফামনি দেমাকের ধারে কাছেও নাই।
মাশাল্লাহ যেরাম রূপ সেরাম জ্ঞিয়ানী। আল্লাহর রহমত! একবার তো জমিলা অতি অদ্ভুত কথা শুনলো আফামনির মুখে।
তখন পরথম পরথম আফার বিয়া হইল। তাদের কথাবার্তা ছিল নিম্নরূপ,

- কি খবর জমিলা বেগম? সব ভাল তো?

- কি যে কন না আফা! আমগো আবার ভাল আর মন্দ! পরের বাড়ি বান্দীগিরি কইরা কুল পাইনা। হারাদিনে একবার আয়নাতে যে মুখ দেখুম তার উপায় নাই। 'টাইম' পাইনা। আমরা কি আর মানুষ! আমগো তো কেউ গনতির মইদ্যেই ধরেনা। আপনে ভাল মানুষ আফা। কি সুন্দর কইরা কতা কন, ভাল মন্দের কতা জিগান।

- হা হা। কি যে বল না তুমি! তোমার বাচ্চা কাচ্চা হয় নাই জমিলা বেগম?

- জি আফা? বিয়া কইরাই তো জামাই দেশান্তরী হইয়া গেল। আমরারে তার পসন হয় নাই আফা। সেই যে গেল,শুনছি ভাটি অঞ্চলে গিয়া বিয়া কইরা ঘর বানসে। বাচ্চা পামু কই। জগতের একখান নিয়ম আফা,পুরুষ ছাড়া বংশ নাই। আমার পুরুষ নাই। গফ এইখানেই শেষ।

- এক ধরনের গিরগিটি আছে পৃথিবীতে। তার বংশ বাড়াতে পুরুষ গিরগিটিকে লাগেনা। বুঝেছো জমিলা বেগম?
বলেই মিষ্টি হাসি দিল সালমা।

- কি কন আফা? আপনের কি মাথা খারাপ হইসে? পুরুষ ছাড়া বংশ! কেমনে কি?

- যখন কোন টাইফুনের মত ঝড় টড় হয়। অগ্ন্যুৎপাত হয়। সব প্রানী ধ্বংশ হয়ে যায়। শুধু একটা গিরগিটি যদি কোন খাঁজের মধ্যে বেঁচে যায়, সে হাজার খানেক ডিম পেড়ে আবার বংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। অদ্ভুত না জমিলা?

- আচানক কথা। আমার জবান বন হয়া গেছে আফা।

সালমা মুখ বন্ধ করে খাবার গিলতে থাকে আজ। সামনে জমিলা আছে তা যেন খাওয়ার থেকে গুরুত্বপূর্ন না। জমিলার মন খারাপ হইতে থাকে। এত সুন্দর আফাটার চক্ষের নিচে কেমনে কালি জমসে! আহারে!
মায়া লাগে জমিলার। বুকের মধ্যে তার মায়ের মত মায়া লাগে।

হাসান সাহেব শালীর আসার খবর জানলেন পরদিন ভোর বেলায়। এ নিয়ে কিছুক্ষন হইচই করলেন। ভোর বেলায় সালমা বাড়ির পেছনের বাগানটাতে হাঁটছিল। এখন সে অনেকটাই স্বাভাবিক। দূর থেকে হাসান সাহেব দেখলেন। কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরা এক মহিলা বাগানের ভেতরে হাঁটছে। খুব দ্রুত তিনি বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলেন। একটু পরই আবার বেরিয়ে এলেন। দেখলেন আবার ঢুকে গেলেন। ভাবলেন সালমা এসেছে এই খবরটা তাকে যথা সময়ে না দেবার জন্য হাসিনা খাতুন কে কঠিন শাস্তি দেবেন।
সাতসকালেই হাসিনা খাতুন রান্নাঘরে। তাকে ঘরে ডেকে এনে হইচই টা শুরু করলেন তিনি। সব শোনার পর ঠিক করলেন নাস্তা খেয়ে কথা বলবেন সালমার সাথে।

*******

সালমার ভেতরটা ছটফট করছে। ভেতরের এত কথা! বলার মত কেউ নেই। আজ এই প্রথম নিজেকে নিঃস্বঙ্গ মনে হচ্ছে সালমার। দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে টেনে দিয়ে সে চিঠি লিখতে বসলো। এখন তার নিজেকে হালকা করা খুব জরুরি।
সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খুব গুরুত্বপূর্ন একটা সিদ্ধান্ত!


চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৯
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×