somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর বন্ধু এবং....

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুমন! আমার বন্ধু। হঠাৎ করে ফোন দিয়ে বললো, মিথি বলতো আমি কই?

বিকেল চারটা বাজে। আমিা কেবল দুপুরের খাবার নিয়ে বসছি। সামনে একটা ঈদসংখ্যা। ভাত খাওয়ার সময় আমি আবার বই না পড়লে খাইতে পারিনা। খাওয়ার মত বোরিং আর কিচ্ছু হয়না।
আন্দালিব রাশদির উপন্যাসটা বের করেই খাওয়া শুরু করবো। হুমায়ূন মারা যাবার আগেই আমি বলতাম এইটা নেক্সট হুমায়ূন। আর এখন তো হুমায়ূন শূন্য ঈদসংখ্যা কিনেছিই তার জন্য।

এমন মেজাজ খারাপ হইলো। এমনিতেই ঘুম থেকে উঠে অলরেডি দুইবার আম্মার ঝাড়ি খাইসি। এক সারারাত জেগে মুভি দেখে সারাদিন ঘুমানো এইটা আম্মার দুই চোখের বিষ। আর দুই আজকের সব ক্লাস মিস দিয়া আমার গায়ে বাতাস লাগানো আম্মার সহ্য হইতেছেনা। আমিও বলসি তোমার বাড়ি থাইকা না গেলে বুঝছি তুমি আব্বারে নিয়া সুখি হইবানা!
এই খোঁটা দেয়ার মুল কারন গতকাল বিকালে আব্বা আম্মা বাইরে গেছে। বাইরে আর কি নিশ্চয় শাড়ি কিনতে। আব্বার টাকার শ্রাদ্ধ করা ছাড়া তো ঐ মহিলার আর কিচ্ছু ভাল লাগেনা!
আর আমি আধাঘন্টার মধ্যে ফোন দিয়া বলছি জলদি বাসায় আসো জলদি। বলেই ফোন কেটে দিয়া বন্ধ করে দিছি।
বাসায় আসলে বলছি আমার একলা বাসায় ভয় লাগতেছিল।
আম্মার মনে হইলো রাগে হার্টের রক্ত পাম্পিং না থেমে যায়! আর আব্বা মিটমিট কইরা হাসলো। পরে শুনি পাশের ঘর থেকে শব্দ। আম্মারে বলতেছে, তোমার ই তো মাইয়া!
মেয়ে তো বড় হইছে অন্য ঘরে চইলা গেলে এইসব পাগলামীর জন্য কেমন সব শূন্য লাগবে! আমাদের আর কে আছে বল?

আমার আব্বা পৃথিবীর সব চেয়ে ভাল আব্বা।এইটা আমি দুশ টাকার স্ট্যাম্পে লিখে দিতে পারি। যদিও তার দরকার হবেনা। কারন নবনি গতকালই বলেছে তার বাপের মত হারামি বাপ সে জন্মে একটাও দেখে নাই। ছেলে মেয়ে এত্ত বড় হয়ে গেছে তাও কথায় কথায় মাকেও মারে ছেলে মেয়েদের ও মারে। বলতে বলতে নবনি কেঁদে ফেলেছিল!

সে যাই হোক সুমনের ফোন পেয়ে ভাল লাগলেও ভাব নিয়া বললাম, আমি ক্যামনে জানি? হুহ!
মরিয়া হয়ে সে বললো , ওহ গেস করনা মিথি। এরকম করিস ক্যান?
এবার আমি চিৎকার দিয়া বললাম, শয়তান তুই টয়লেটে বইসা আমারে ফোন দিছস? জানোস আমি খাইতে বসছি?

সুমন খুব মন খারাপ করে বললো ,মিথি! তুই আমার সাথে সবসময় এমন করিস কেন মিথি?

হাসতে হাসতে বললাম আচ্ছা যা আর করবোনা। এইবার বল কই তুই? ডুবে মরতে গেছিস?
গতকাল খুব মনমরা হয়ে বসেছিলো ক্যান্টিনে। কি হইছে কিছুতেই বলেনা বলেনা পরে শুনলাম ক্রাশ খাইছে। মাইরারে বলতে পারতেছেনা। এই যুগে এমন পোলা ও আছে নাকি? গাবদা একটা, ঝামটা দিয়া বলছি, ডুইবা মরো মমিন!

সে ওপাশ থেকে বলছে মিথি মাইর খাবি মিথি। সুমন এরকম ই। কথার আগে একবার কথার পরে একবার নাম ধরে ডাকবেই। মিথি আমার সাথে একটু বাজারে যাবি মিথি? মিথি ক্ষুধা লাগছে,ফুচকা খাওয়াতো মিথি।
একদিন ওরে কইছিলাম তোর কি আমার নাম ম্যালা পছন্দ?
সে দেখি লজ্জায় শেষ! যা বাব্বা!

-তাইলে কই তুই? ওইদিকে দেখি আম্মা কটরমটর করে তাকাচ্ছে। খেতে বসে একেতো ভাতের সাথে গল্পের বই উনি দুচোখে দেখতে পারেন না তার
উপর ফোনে কথা বলতেছি ডাবল অপরাধ।
তাড়া দিয়া কইলাম, জলদি কইরা বল কই তুই? নাইলে আম্মা কিন্তু আগুন চোখ দিয়া আমারে ভস্ম কইরা দিবে। খাইতে বসছি।

-আমি বকুল তলায়। মিথি তুই খেয়ে বের হতে পারবি? প্লিজ মিথি।
- আচ্ছা দেখি। রাখলাম।

ওহ উপন্যাসে কেবল টানটান একটা অবস্থা। এই সময় কি উঠা যায়? গাল দিতে দিতে জলদি খাওয়া শেষ করলাম।
পৌঁছাতেই দেখি গিটার কোলের উপর নিয়ে বসে আছে সুমন। বললাম কি রে, কি হইছে?
তাকাতেই দেখি পুরা চোখ লাল! হঠাৎ করে বুকে ধাক্কার মত লাগলো। এমন উদভ্রান্তের মত দৃষ্টি আমি কোনদিন দেখিনি। গুনের কবিতা ভাব নিয়ে বলতে ইচ্ছে করেছিল একবার, তোমার চোখ এত লাল কেন!
অবস্থা দেখে ঢোক গিলে চেপে গেলাম।
-আসলেই সিরিয়াস অবস্থা দেখছি তোর।
আচ্ছা কি হয়েছে বলবিতো?

অসহায় এর মত বললো তোকে একটা জিনিস দেব। নিবি?
আমি বললাম, কি?
আস্তে করে হাতের মুঠো খুললো। দেখি ছোট্ট একটা বকুল ফুলের মালা। হাত টা বাড়াবি?
আমি অজান্তেই হাত বাড়ালাম হাতের ভেতর ঢুকিয়ে দিল ব্রেসলেটের মত।
তারপর নিজ থেকেই বললো অনেকক্ষন ধরে বসে আছি। কোন সুতা পাচ্ছিলাম না। পরে গিটারের ব্যাগ থেকে সুতো টেনে ছিঁড়েছি।

আমি তো একটা বেকুব হুট করে বললাম, এই শোন তুই যে আমারে বকুল দিলি এইটা তো প্রেমিক রা দেয়!
-হু দেয়। তো কি?
-তুই কি আমার প্রেমিক?
-ছিলাম না। হব।
-কিন্তু দিনের মধ্যে সতেরোটা ক্রাশ খাই আমি তুইতো জানিস ই।
- এখন ও খাবি।
-সব কথা তোরে বলতে পারবোতো?
-সব।

সুমন মিষ্টি করে হাসছে। ইশ এই ছেলেটা এত মায়ার কেন! খাইলাম তো আবার ক্রাশ!

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৭
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×