গত কয়েকদিন আগে এলাকার পরিচিত আঙ্কেল দেখলাম ফোনে কথা বলছেন। তাঁর ছেলে এইচএসসি দিয়েছে তাই দোয়া নিচ্ছেন সবার কাছে।
-ভাইজান সিয়ামের জন্য দোয়া করবেন ও যেন এপ্লাস পায়, অবশ্য ও পরিক্ষার আগের দিনই সব প্রশ্ন পেয়েছে। শুধু বাংলা কোশ্চেন পায় নি। এটা নিয়েই যত টেনশন!!!
অপরপ্রান্তে যিনি ছিলেন তিনি একজন পিতার মুখে এই গুণধর পুত্রের অসাধারণ গুণের কথা শুনে কি মনে করেছেন কে জানে?
ঠিক চার পাঁচ বছর আগেও পুরো উল্টো দৃশ্য ছিলো। তখন মানুষ এভাবে বলত,
- ভাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন যেন ভালো রেজাল্ট করে। সারাবছর ছেলেটা অনেক খাটাখাটনি করেছে। কোচিং, মডেল টেস্ট সবই করছে। এখন পাস ফেল খোদার হাতে।
******************
আমার সাথে এলাকার এইচএসসি পরিক্ষার্থী দেখা করেছে সবার একটাই কথা ভাই দোয়া করবেন যেন এবার এপ্লাস পেয়ে যাই। একসময় দোয়া চাইত, যেন ভালো রেজাল্ট করতে পারি।
এখন এপ্লাস পেতেই হবে, গোল্ডেন আসতেই হবে, সবার এই লক্ষ্য। কি ভয়ঙ্কর চিন্তা!
আমি এইচএসসি দিয়েছি চার পাঁচ বছর আগে। রেজাল্টের দিন আম্মা রোজা রেখেছিলেন যেন কমপক্ষে পাশ করে যাই। এপ্লাস পেয়েছি শুনে তিনি খুশির চোটে মিষ্টি খেয়ে ফেলেছিলেন!
*********************
পরিক্ষা চলাকালীন ফেসবুকে কয়েকটি পেজ আমার চোখে পড়েছে, যেগুলো আগের দিন প্রশ্ন ফাঁসের ঘোষণা দিয়েছিল। কৌতুহল নিয়ে ঢুকেছিলাম এক পেজে। দেখলাম এক বেরসিক পেজের এডমিনের কাছে আবেদন জানিয়েছে প্রশ্নের সাথে সাথে যেন উত্তরও সলভড করা হয়! সেলুকাস, সত্যিই সেলুকাস!
প্রশ্ন ফাঁসের মতো জঘন্যতম কাজ যারা করেছেন তারা জাতীয় শত্রু, সামান্য অর্থের বিনিময়ে পুরো এক প্রজন্মের যে ক্ষতি তারা করেছেন খুব তাড়াতাড়ি পুরো জাতিকে এর খেসারত দিতে হবে।
পুনশ্চঃ একটি গল্প দিয়ে লেখা শেষ করবো। একলোক কোন এক দেশে গিয়ে দেখলেন সেখানে টাকার বিনিময়ে পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রি হয়, তিনি ভাবলেন তাহলে আমার ঘোড়ার জন্য একটি কিনে নেই। ঘোড়ার পিএইচডি কিনে নিয়ে কিছুদূর গিয়ে মনে হলো নিজের জন্যও একটা সার্টিফিকেট দরকার। ঘোড়ার ডিগ্রি থাকবে মালিকের থাকবে না এটা হতে পারে না। আবার ফিরে গিয়ে বললেন ভাই আমার জন্য একপিস ডিগ্রি দেন! বেরসিক দোকানদার ঝটপট জবাব দিল, আমরা ঘোড়াকে সার্টিফিকেট দেই, গাধাকে দেই না!! যে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট -ডিগ্রি দেয় সে গাধাই তো।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




