তোমাকে ঠিক কবে প্রথম দেখেছি মনে নেই, তবে সেদিন ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। প্রথম দেখায় প্রেম - এ দর্শন আমার কাছে তখনো সস্তা আবেগ মনে হতো। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার গভীর মায়াভরা চোখে যখন তাকিয়েছিলাম আমার মনে হলো এ জগতে আর কেউ নেই। কারো থাকবার অধিকারও নেই শুধু তুমি ছাড়া। তুমি আনমনা হয়ে দূরে কোথাও তাকিয়েছিলে আর আমি স্রেফ মরে গিয়েছিলাম তোমার চোখের গভীরতায়। খুব করে চেয়েছিলাম থেমে যাক সময়, এভাবেই চলতে থাকুক সহস্র বছর।
আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার নাম সাইফুল আলম, আমি ঢাকা কলেজে পড়ি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার পকেটে মাত্র দুটি ছেঁড়া দশ টাকার নোট আর আমার আব্বা হাঁপানির কারণে মৃত্যু শয্যায়। আমার মনে ছিলো না গত সপ্তাহে আমার শেষ টিউশনিটাও ছুটে গেছে।
আমার হাতের লেখা কোনকালেই ভালো ছিলো না, জীবনে ক্লাসনোট ছাড়া আর কিছুই লিখিনি। অথচ তোমার জন্য আস্ত একটা চিঠি লিখে ফেললাম। লিখলাম আর ছিঁড়লাম, তোমাকে প্রথম দেখার পর পুরো রাতটি ছিলো আমার এমনই অসহ্য যন্ত্রণাময়।
অহনা জানো সেই রাতে আমার একফোঁটা ঘুম হয়নি। আমি তখনো জানি না তুমি আমাদের মহল্লায় থাকো। তখনো বুঝিনি তুমি বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। আমি জানি না তোমার প্রিয় হিরো কে? তোমার পছন্দের রং ...প্রিয় গান কিচ্ছু জানি না। জানার প্রয়োজনও বোধ করিনি। আমি কেবল জানতাম পাড়ার ছেলেদের কাছে শোনা তিনটি শ্রেষ্ঠ অক্ষর ...অ হ না। তোমার নাম।
এরপর আমি বদলে গেলাম। সেদিন থেকে আমার জীবন হলো তুমিময়। তোমার দুটি চোখের বিনিময়ে আমি সারা পৃথিবী বিলিয়ে দিতে পারতাম। আমার রাগ -অভিমান সব নষ্ট হয়ে গেল। গতকাল যে কলেজের বড় ভাইদের হাতে মার খেয়েছি, তা ভুলে গেলাম। আগে নিজের জন্য বাঁচতাম এখন তোমার জন্য বাঁচতে শিখলাম।
আমি জানি আমার মধ্যে কোন বৈশিষ্ট্য নেই, আর অন্য দশটা ছেলের মতোই স্বাভাবিক সিম্পল। আমি সেকেন্ডহ্যান্ড শার্ট পরি, টিউশনি করে মাস চালাই। তাই আমি কোনদিন তোমার কাছে গিয়ে বলতে পারবো না তোমার চোখজোড়া আমার দেখা সবচেয়ে প্রিয় জলপ্রপাত। আমার এই দুঃসাহস নেই যে আমি তোমার সামনে বলবো - এই যে বনলতা সেন! তুমি কি আমার জন্য একটুখানি মেঘ এনে দেবে আকাশ থেকে?
আমি তোমাকে আমার ভালোলাগার কথা জানাবো না কারণ তোমার অবজ্ঞা আমি সইতে পারবো না, স্রেফ মরে যাবো।
কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিলাম, বন্ধুদের আড্ডা আমার জন্য অসহনীয় হয়ে উঠলো। আমার একমাত্র কাজ ছিলো তোমার বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করা, আর সস্তা সিগারেটের ধোঁয়ায় ডুব দিয়ে তোমায় কল্পনা করা। যেন তুমি আমার ব্যক্তিগত শিউলি।
তোমার নীল রঙের গাড়িটা, তোমাদের বিশাল ছয়তলা বাড়ির সাদা রেলিং আমার কাছে নিজের জীবনের চাইতেও প্রিয় হয়ে উঠলো। বিরক্তিকর বৃষ্টি আমার কাছে অনেক রোমান্টিক মনে হলো। ভালো লাগলো পড়ন্ত বিকেল আর ভাঙা জানালার গায়ে একফালি রোদ।
আর হ্যাঁ, আরো একটা জিনিস করতাম। তোমাকে চিঠি লিখতাম খুব। কিন্তু কখনোই তা তোমার হাতে যেতে দেইনি। কারণ লিখেই ছিঁড়ে ফেলতাম। অহনা ..অহনা ..অহনা এভাবে কতবার যে তোমার নাম আমার ক্লাসের খাতায় লিখেছি তার ইয়ত্তা নেই। তোমার নাম যেন আমার নিত্য অনুষঙ্গ।
অবশেষে এলো সেইদিন।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমি তোমাদের বাসার সামনে বসেছিলাম, অপেক্ষায় ছিলাম কখন কলেজ থেকে ফিরবে। আর আমি দেখবো তোমাকে।
তুমি এলে শেষ পর্যন্ত। একি তুমি আমার দিকেই আসছো। আমার বুকটা ছ্যাত্ করে উঠছে।
- আপনার নাম সাইফুল?
তুমি তোমার বকুল ফুলের মতো মুখ দিয়ে আমার নাম উচ্চারণ করলে আর আমি তাকিয়ে থাকলাম।
-এই চিঠি কে লিখেছে?
তোমার হাতে আমার একটি চিঠি, কিন্তু আমি তো তোমায় চিঠি দেইনি, আমার কোন বন্ধু বোধহয় পাঠিয়ে দিয়েছিল তোমার ঠিকানায় মজা দেখার জন্য।
আমি কিছু বলতে পারলাম না। শুধু দেখলাম আমার লেখা চিঠি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে রাস্তায় ছড়িয়ে দিলে। তুমি প্রচণ্ড রাগছিলে, নাকের ওপর দু ফোঁটা ঘাম যেন মুক্তোর মতো। আমার মনে হলো কে যেন বিবস্ত্র করে তোমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমায়।
আমাকে বললে - মেয়েদের দেখলে মাথা ঠিক থাকে না?
বাহ কি সুন্দর পরিসমাপ্তি টেনে দিলে আমার ভালোবাসার! জানি আমার হাতের লেখা ভালো না, চিঠিতে অজস্র ভুল। কিন্তু কাগজটা টুকরো করে যেন আমার কলিজা ফালিফালি করে কাটলে।
আমি সাইফুল আলম। ঢাকা কলেজের বখে যাওয়া ছেলে। আমার পকেটে ছেঁড়া দুটি দশ টাকার নোট, আর আব্বা হাঁপানির যন্ত্রণায় এখন মৃত্যুশয্যায়। আর এই হলো আমার অসমাপ্ত প্রেমের গল্প।
আলোচিত ব্লগ
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।