বয়ষ্ক মানুষ দেখলে সাধারনত সে রিক্শায় উঠিনা কারন সিটে বসে তাঁর হাপিয়ে হাপিয়ে প্যাডেল চালানোটা দেখতে কষ্ট হয়। সেদিন এক বড় ভাইয়ার সাথে ছিলাম। প্রবর্তক থেকে চকবাজার রিকশা করে যাবো। ভাইয়া কথা বলতে বলতেই খেয়াল না করে রিকশা একটা ঠিক করলো। উ্ঠার পর্ খেয়াল করলাম উনি বয়ষ্ক। বয়সের ভারে নুয়ে পরছে, কিন্তু পেট তো আর বয়স মানেনা; সে আজন্ম ক্ষুধা নিয়ে এসেছে। ভাবলাম উঠেই যখন পরেছি চলে যাই, টাকা কিছু বাড়িয়ে দিবো।
খুব কষ্ট করেই রিকশা টানছিল। যেতে যেতে হঠাৎ একটা গাছের ছায়ার রিকশাটা থামালো। রিকশা থেকে নেমেই মাটিতে বসে খুব হাপাতে শুরু করল।আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।
জিজ্ঞেস করলাম,
কি হয়েছে চাচা? খারাপ লাগছে? শরীর খারাপ?
-হ বাবা, কোমরের নিচে দুই পাশে দুইডা ফোড়া উটসে।
: ডাক্তারের কাছে যান নাই?
- গেসিলাম।ডাক্তারের দুইডা ফাও(পা) ধরসি ওষুদের লাইগ্গা। দেয়নাই, কয় ২০০ টেহা আন, তারপর দেখুম। ২০০টেহা জোগার করবার আইসি। রাগ কইরেনা না বাবা, একটু জিরায় লই।
কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো। সাথে সাথেই দুজন রিকশা থেকে নেমে গেলাম। তাকে কিছু টাকা দিয়ে বললাম ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খান। আজকে আর চালাইয়েন না।
ভাবছি ডাক্তাররা কি আসলেই অনুভুতি শুন্য? এই বুড়ো মানুষটার জন্য একটুও দয়া হয়নি ঐ বেটার? যে পেশার মুলনীতিই মানুষের সেবা করা, তাদেরই যদি সামান্যতম মানবতাবোধ না থাকে তো আর কার কাছে আশা করা যায়..এই অবহেলা কি "ডাক্তার"’” নামের অপমান না?
আসলে এখন ডাক্তারি পড়ার মুল লক্ষ্য হয়ে দাড়িয়েছে টাকা বানানো। আর যেখানে অর্থ ঢুকে পড়েছে, সেখানে মানবতাবোধের কোন স্থান না থাকাটা স্বাভাবিক।
একটা ঘটনা বলি।
যখন মেস এ থাকতাম, একজন ছিল ম্যাডিকেল স্টুডেন্ট যে ঢাকা থেকে চিটাগাং এসেছে পড়তে । তাকে যখন জিজ্ঞাস করতাম সে ডাক্তারি কেন পড়ছে, সে নির্দ্বিধায় উত্তর দিতো এই পেশায় টাকা বেশি আয় করা যায় তাই।
তার মানবতার একটা উদাহরণ দেই। একদিন রাতে পাশের রুমের এ্ক বড় ভা্ইয়ার কানের ভেতর ঘুমের মধ্যেই একটা ছোট পোকা ঢুকেছে। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও ভয়ানক ছিল। কোন ভাবেই সেই পোকা বের হচ্ছে না। এবার রুম থেকে বেড় হয়ে হাকডাক শুরু করে দিল। স্বভাবতই এই বিপদে প্রথমে ডাক্তারের কথাই আগে মনে পরে। তাকে মনে পরেছিল কারণ হাসপাতালে সে সাথে গেলে সুবিধা হবে। তো ডাক্তারের রুমে টোকা দিচ্ছেন। কিন্তু ডাক্তার তো উঠেনা। কানে যে হেডফোন লাগিয়ে ঘুমিয়েছেন। যাক ফোন টোন দিয়ে তুললেন কোন ভাবে।
:ভাই আমার কানের ভেতরে কি পোকা একটা ঢুকল আর বের হচ্ছেনা। তুমি একটু আসবে আমার সাথে হাসপাতালে?
-সরি ভাই আমারতো কালকে একটা ভাইবা আছে, যাইতে পরবোনা।
কি সোজা উত্তর। কোনভাবেই আর কনভিন্স করানো গেলোনা ডাক্তার সাহেবকে।ভাবছি এই সময়ে তার ভা্ইবার কথাই মনে পড়তে হল?
বাধ্য হয়েই আমার রুমে টোকা দিলেন।
-ও মাহফুজ! ও মাহফুজ! দড়জাটা খোল। আমি মারুফ।
আমি হন্তদন্ত হয়ে দড়জা খুললাম।উনার লাফালাফি দেখে তাড়াতাড়ি প্যান্ট পরলাম। চলেন ভাই চলেন।আমি বুঝতে পাড়ছি আপনার কানের ভেতর কি চলছে।সাধারণ একটা পিপড়া ঢুকলেই কি অসহ্য লাগে, আর সেখানে একটা পোকা। মনে হবে একটা হাতি ঢুকে তান্ডব চালাচ্ছে।
রেডি হেয়ে বের হব এমন সময় ভাইয়ার কান থেকে ফুড়ুৎ করে পোকাটা বের হল। দেখে তো অবাক, এত বড় পোকা কানে ঢোকে কিভাবে?
পানি খেয়ে কানে তুলা দিয়ে ঘুমাতে বললাম। যাতে আর ঢুকতে না পারে
রুমে ঢুকে রুমমেট সহ দুজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলাম কিছুক্ষন।
ইন্জিনিয়ারদের কি পরিমান ক্লাস ট্সে আর রিপোর্ট থাকে সেটা ইন্জিনিয়াররা ছাড়া আর কেউ জানেনা। আমারও তো ইক্সাম ছিল। কিন্তু এই বিপদে ইক্সামের কথা মাথায়ও আসেনি।
ডাক্তারের মাথায় আসলো কেন? কারন সে ভালো ডাক্তার হয়ে টাকা কামাবে।সুতরাং পরীক্ষা মিস দেয়া যাবেনা। আসলে এই জানোয়ার ভালো ডাক্তার হবে না, ভালো কসাই হবে।
যার ভেতর শুরুতেই মানবতার লেশ মাত্র নেই সে হবে ডাক্তার।তার মত কসাইয়ের ফি দিয়ে গিয়েই ওষুধ কেনার টাকা থাকবে না।
সুতরাং ফর্মেসির হাতুড়ে ডাক্তারই এই শ্রেনীর একমাত্র ভরশা। যারা সব অসুখেই বলে, প্যারাসিটামল দুইবেলা...।