গতকাল ছিল "ফ্রাইডে দ্যা থার্টিনথ"। "Jason" নামক এক সাইকো কিলার এর চরিত্র নিয়ে বানানো মুভি "Friday the13th" মুভি দেখে নি এমন মানুষ কমই আছে। মুভি নয় বরং "ফ্রাইডে দ্যা থার্টিনথ" কেন কিভাবে এল এসম্পর্কে লিখছি।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যখন কোন মাসের ১৩ তারিখ শুক্রবার পড়ে তখন পশ্চিমাদের কুসংস্কার অনুযায়ী এটাকে "আনলাকিয়েস্ট" ধরা হয় এবং একে বলা হয় "Friday the 13th" । সাধারণত মাসের শুরু রবিবার হলে ওই মাসের ১৩ তারিখ শুক্রবার পড়ে।
এক বছরে সর্বোচ্চ তিনবার এমন দিন হতে পারে।
||- UNLUCKY 13 -||
"১৩" সংখ্যাকে ধরা হয় দুর্ভাগ্যের সংখ্যা আর এই ১৩ সংখ্যার প্রতি ভয়কে বৈজ্ঞানিক নামে বলা হয় ট্রিসকেইডিকাফোবিয়া - "triskaidekaphobia" [trɪskaɪˌdɛkəˈfoʊbiə, ˌtrɪskə-/, tris-kye-dek-ə-foh-bee-ə or tris-kə-dek-ə-foh-bee-ə; গ্রীক tris অর্থ "three", kai অর্থ "and", deka অর্থ "10" and phobos অর্থ "fear" or "morbid fear"]
১৩ সংখ্যাকে দুর্ভাগ্যের সংখ্যা বলার পেছনে কিছু কারণ আছে বলে মনে করা হয়। সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে বরং নেট ঘেটে যা পেলাম তা দিচ্ছিঃ
- প্রাচীন মিশরের মানুষেরা ১৩ ধাপের একটি চক্রে বিশ্বাস করতেন। তাদের মতে চক্রের ১২টি ধাপ জীবিত অবস্থায় সম্পন্ন হয়। আর ১৩ নম্বর ধাপ মৃত্যুকে নির্দেশ করে। তাই ১৩ সংখাটি তাদের কাছে ছিল ভয়ের কারণ। ১৩-কে তারা মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক মনে করত। অনেকের মতে এই সংখ্যাটির সাথে আনলাকি বা অশুভ কথাটি যোগ হওয়ার ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছিল এভাবেই।
তবে কিছু কিছু ধর্মে, রূপকথায়, প্রচলতি কাহিনী কিংবা লোককথায়ও ‘১৩’ সংখ্যাটিকে অশুভ বলা হয়েছে।
- এ বিষয়ে নরওয়ের একটি রূপকথা তুলে ধরা যাক: এক রাতে ১২ জন দেবতা একসঙ্গে রাতে খাবার খেতে টেবিলে বসল। ঠিক তখনই বিনা দাওয়াতে ১৩তম ব্যক্তি হিসেবে সেখানে উপস্থিত হলেন খারাপ কাজের দেবতা লকি। অশুভের সূচনা হল এর পরই। লকি শীত ও অন্ধকারের দৃষ্টিহীন দেবতা হোডকে প্ররোচিত করেন ভালো কাজের দেবতা ব্লাডারকে হত্যা করতে। যে কথা সেই কাজ। লকির প্ররোচনায় পড়ে ব্লাডারকে হত্যা করেন হোড। সেদিন পুরো স্বর্গপুরীতে নেমে এসেছিল শোকের মাতম।
- খ্রিস্ট ধর্মেও ১৩ জনের একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসাটাকে অশুভ বলে মনে করে। কারণ, লাস্ট সাপারে ১৩তম ব্যক্তি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জুডাস ইস্কারায়োট। পরবর্তীতে জুডাস ইস্কারায়োটই যীশুর সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন।
-হিন্দু ধর্মেও ১৩ সংখ্যাটির বিষয়ে বারণ রয়েছে। একই সঙ্গে, একই উদ্দেশ্যে, একই সময়ে ১৩ জনের একত্রিত হওয়া নিয়ে হিন্দু ধর্মেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বাস করা হয় যে, ১৩ সংখ্যাটি অশুভ হওয়ার কারণেই ১৩ মাসের চন্দ্র পঞ্জিকার বদলে ১২ মাসের সৌর পঞ্জিকার ব্যবহার শুরু হয়েছে। আর এসব কারণে ‘১৩’ সংখ্যাটিকে এখনো অনেকেই আনলাকি মনে করেন।
||- FRIDAY THE 13TH -||
"Friday the 13th" এর ভয়কে বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে প্যারাসকভিডেক্যট্রিয়াফোবিয়া - "paraskevidekatriaphobia" (গ্রীক শব্দ Paraskeví (Παρασκευή, অর্থ "শুক্রবার"), ও dekatreís (δεκατρείς, অর্থ "১৩") তথা ফ্রিগাট্রিসকেইডেকাফোবিয়া - "friggatriskaidekaphobia" (কারণ নর্স দেবী Frigg এর নামানুসারে ইংরেজিতে Friday শব্দ আসে)।
গতকাল ছিল Friday the 13th। এই দিন নিয়ে কিছু কথাঃ
- পশ্চিমাদের অধিকাংশ মানুষই এই কুসংস্কার এ বিশ্বাস করেন। বিখ্যাতদের মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ও ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট ছিলেন অন্যতম। ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট এই দিনে বাইরে কাজ, ট্যুর সব ক্যান্সেল করে দিতেন। এমনকি খাবারের সময় ১৩ তম ব্যক্তিকে বসতে দিতেন না।
- ১২কে সম্পূর্ণ মনে করার পেছনে আরও একটি কারণ হলো ঘড়ি ও মাসের হিসাবে যথাক্রমে ১২ ঘন্টা এবং ১২ মাস ধরা হয় যেখানে ১২কে সম্পূর্ণ মনে হরা হয়।
- আমেরিকার লাসভেগাসে অনেক হোটেলের এলিভেটরে ১৩ নাম্বার ফ্লোর নেই। এছাড়াও অনেক হসপিটালেও ১৩ নাম্বার রুম নেই। অনেক রোডেও এক্সিট ১৩ বাদ দেয়া হয়েছে।
- অক্টোবর ১৩, শুক্রবার ১৩০৭ খ্রিষ্টাব্দে Knights Templar কে গ্রেপ্তার করতে ফ্রান্সের ফিলিপ IV আদেশ করেন। তখনকার সময়ে এই "Friday the 13th" ভীতি প্রচলিত ছিল না। কিন্তু পরবর্তিতে এই ঘটনা থেকে তা ২১ শতকে প্রচলিত হয় এবং "The Da Vinci Code" এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
- এছাড়া ১৯০৭ সালে Thomas W. Lawson এর উপন্যাস "Friday the 13th" এ দেখা যায় এই কুসংস্কারকে ভিত্তি করে ওয়াল স্ট্রিটে আতংক ছড়ানো হয়। এছাড়া "Friday the 13th" নিয়ে হরর মুভি সিরিজ রয়েছে। পোস্টের শেষে লিংক দিয়ে দিলাম।
- প্যারিসে কোয়ার্টজাইম নামক একটা টার্ম ব্যবহার করা হয় ১৪ নাম্বার গেস্টদের জন্য। যাদের ১৩ জন হয় কোনো খাবার আয়োজনে, তারা ১৪ নাম্বার গেস্ট হায়ার করে আনেন এই ভীতি এর জন্য।
- চেরকি বিল নামক এক মার্ডারার ১৩ জনকে মার্ডার করার পর ধরা পরে, এবং যে ধরিয়ে দেয় সে ১৩০০ ডলারের পুরষ্কার পায়, তার বিচারে ১৩ জন স্বাক্ষী ছিলো, এই বিচারের রায় ঘোষনা করতে ১৩ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলো জুরিগন অতপর ১৮৯৬ এর ১৩ই এপ্রিল তাকে ফাসি দেয়া হয়, যেই ফাসিমঞ্চে ১৩ টি সিড়ি ছিলো।
||- ইতিহাস থেকে -||
- জানুয়ারি ১৩, ২০১২: রণতরী কোস্টা কনকোরডিয়া টুসকেনি উপকূলে ডুবে যায় এবং এতে নিহত হয়েছিল ৩২ জন।
- আগস্ট ১৩, ২০০৪: গ্রিসের এথেন্সে সামার অলিম্পিকের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
- ফেব্রুয়ারি ১৩, ১৯৭০: ব্ল্যাক সাবাথের প্রথম অ্যালবাম বের হয়।
- এপোলো ১৩ তে ১৩ এপ্রিল ১৯৭০ সালে অক্সিজেন ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটে। যদিও এপ্রিল ১৭ তে ফিরে আসে নিরাপদে।
- নভেম্বর ১৩, ১৯৭০: বাংলাদেশের চট্রগ্রামে ঝড়ের আঘাতে নিহত হয় প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
- জানুয়ারি ১৩, ১৯৮৯: ব্রিটেনের শতাধিক আইবিএম কম্পিউটারে একসাথে ভাইরাস আক্রমণের পর মুছে যায় সকল প্রোগ্রাম এবং এ ভাইরাসের নাম দেয়া হয় ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন’
- জুন ১৩, ১৯৮৬: এ দিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন ওসলেন টুইনস নামে পরিচিত আমেরিকান অভিনেত্রী এবং ডিজাইনার মেরি কেইট এবং অ্যাসলে। তারা ছয় বছর বয়সে ফুল হাউজ নামের জনপ্রিয় টেলিভিশন শোতে কাজ করা শুরু করেছিলেন।
- সেপ্টেম্বর ১৩, ১৯৬৬: লাস ভেগাসে গুলি করে হত্যা করা হয় রাপার টুপাক সাকুরকে।
- অক্টোবর ১৩, ১৯৬৭: সেদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লেনডন জনসন সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণের লিখিত আদেশ জারি করেন।
- অক্টোবর ১৩, ১৯৩৯: প্রথম নারী ফ্ল্যাইট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে লাইসেন্স পান ইভলিন পিনকার্ট কিলোরি।
- জুলাই ১৩, ১৯২৩: হলিউড উদ্ভোধন করা হয়েছিল। তখন তার নাম হলিউডল্যান্ড থাকলেও ১৯৪৯ সালে ইংরেজিতে বানান থেকে শেষের চার অক্ষর অর্থাৎ ল্যান্ড বাদ দেয়া হয়।
- অক্টোবর ১৩, ১৯০৬: তথ্যফাস করার অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল ফরাসী- ইহুদী মিত্র বাহিনীর প্রধান আলফ্রেড ড্রিফাসের বিরুদ্ধে। ১৯০৬ সালের ১৩ অক্টোবর সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
- আগস্ট ১৩, ১৮৯৯: আলফ্রেড হিচকক জন্মগ্রহণ করেন সেদিন।
- জুলাই ১৩, ১৮৩২: আমেরিকার ভূতত্ত্বববিদ হেনরি রোউই স্কুলক্রাফট সেদিন মিসিসিপি নদীর উৎস আবিস্কার করেছিলেন।
||- একই রকম অন্য ফোবিয়া -||
- অনেক স্প্যানিশ-স্পিকিং দেশে টুইসডে দ্য থার্টিন্থকে আনলাকি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
- টেট্রাফোবিয়াঃ চায়না, জাপান, তাইওয়ান, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে "চার" সংখ্যা নিয়ে এক ধরণের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। এমনকি লিফটে চার তলার জন্য বাটন থাকে না অনেক জায়গায়। চায়নায় মান্দারিন ভাষায় "চার" শব্দটি মান্দারিন "মৃত্যু" শব্দটির কাছাকাছি। এজন্যই হয়ত এরকম কুসংস্কার এর প্রচলন শুরু হয়।
- 666 বা 616 ফোবিয়া যাকে বলে "Hexakosioihexekontahexaphobia"। একে "শয়তানের সংখ্যা" বা "নাম্বার অফ দ্যা বিস্ট" বলা হয়।
- ১৭ সংখ্যাটা ইতালিতে দুর্ভাগ্যের প্রতিক।
- "অভিশপ্ত ৩৯" আফগানিস্তান এর কোন কোন অঞ্চলে ৩৯ সংখ্যাকে অভিশাপের প্রতিক হিসেবে ধরা হয়।
লিংকঃ Friday the 13th মুভি সিরিজগুলোর ডাউনলোড লিংকঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/pavelahmed/29207012
[বিঃদ্রঃ আমি শুধু ইন্টারনেট ঘেটে সংগ্রহ, অনুবাদ করে এখানে একত্র করে দিয়েছি। কোনটাই নিজের বানানো নয়। ধন্যবাদ]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:২৮