১ম পর্ব মিস করলে এখানে ক্লিক করুন
১৫. কোন কোম্পানীতে যদি তার ডিষ্ট্রিবিউটরদের আয় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় অথবা আয় সম্পর্কে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয় তবে সেটা পিরামিড স্কিম না হলেও সেখানে কাজ করার কথা ভুলে যান। নিজেকেই প্রশ্ন করুন: কোন জেনুইন বা প্রকৃত ট্রেডিশনাল/ডিরেক্ট সেলস কোম্পানী কি কখনও তার ডিষ্ট্রিবিউটরদের আয় সম্পর্কে ভুল তথ্য পরিবেশন করবে?
মূল বিষয় হচ্ছে সাধারণত পিরামিড স্কিম এবং ভুয়া কোম্পানীগুলোই এই বাজে কাজটি করে থাকে। তারা বিভিন্ন অসত্য তথ্য এবং ডাটা ব্যবহার করে নতুন ডিষ্ট্রিবিউটর যোগাড়ের চেষ্টা করে থাকে। এগুলো তারা এমনভাবে উপস্থাপন করে থাকে যেন শুনলে সেগুলোকে নির্ভেজাল সত্য মনে হয়। কিন্তু আসলে সেগুলো সবই মিথ্যে এবং বানোয়াট।
চিন্তা করুন, পূর্বেই বলেছি ডিষ্ট্রিবিউটরদের কাজই হচ্ছে প্রকৃত ভোক্তার নিকট কোম্পানীর পণ্য খুচরা মূল্যে বিক্রয় করা এবং এভাবে মার্কেট ডিমান্ড তৈরীর লক্ষ্যে কাজ করা। তো প্রকৃত ভোক্তার নিকট পণ্য বিক্রয়ের জন্য কি ডিস্ট্রিবিউটরদের আয় সংক্রান্ত প্রশ্ন আসবে? হেড এন্ড শোল্ডারস/প্যান্টিন/অল ক্লিয়ার প্রভৃতি শ্যাম্পু বিক্রয়ের সময় কি ক্রেতা কখনও কোম্পানীগুলোর ডিষ্ট্রিবিউটরদের আয় নিয়ে মাথা ঘামায়? বা বিক্রেতারাও কি কখনও বলতে যায় এসব শ্যাম্পুর ডিষ্ট্রিবিউটররা কত টাকা উপার্জন করে? কখনই নয়। কাস্টোমারদের নিকট পণ্য ব্যতীত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানীর নির্দিষ্ট কিছু তথ্য ব্যতীত অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলার তো কখনই প্রয়োজন পড়ার কথা নয়। তাহলে ডিষ্ট্রিবিউটরদের আয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ আসে কখন? সহজ উত্তর, যখন কোন ডিষ্ট্রিবিউটর রিক্রুট করতে চায়!!!! আর যখন ডিষ্ট্রিবিউটররা খুচরা বিক্রয় অপেক্ষা রিক্রুটিং এর প্রতি ঝুঁকে পড়ে তখন কি ঘটে? আশা করি বুঝতে পারছেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জেনুইন ডিরেক্ট সেলস কোম্পানীগুলোর ক্ষেত্রে কোন ভুল তথ্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকেনা বললেই চলে। কারণ, জেনুইন কোম্পানীগুলোর সেলস ডাটা, ডিষ্ট্রিবিউটর নাম্বার, ডিষ্ট্রিবিউটরদের গড় আয় এগুলো সম্পর্কে অফিসিয়াল এবং অথেনটিক ডকুমেন্ট থাকে। সুতরাং কোন ডিষ্ট্রিবিউটর যদি মিথ্যা বা ভুল তথ্যের আশ্রয় নিয়েও থাকে, সে ধরা পড়তে বাধ্য।
তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, ডিষ্ট্রিবিউটরদের আয় এবং গড় আয়ের মধ্যে পার্থক্য। আমেরিকার ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশন (যেটা পৃথিবীর সব ডিরেক্ট সেলস কোম্পানীগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে) এর মুখপাত্র অ্যামি রবিনসন এর মতে, ডিরেক্ট সেলারদের গড় আয় বছরে মাত্র ২৪০০ ডলার!!!! শুধু তাই নয়, ৮% এরও কম ডিরেক্ট সেলার বছরে ৫০,০০০ ডলার উপার্জন করতে সক্ষম হয়!!!! এই ডাটাগুলো অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য। এখান থেকে নিশ্চয় আয় এবং গড় আয়ের পার্থক্য বুঝতে পারছেন। ১০০ জন ডিরেক্ট সেলারদের মধ্যে ৯২ জনই বছরে মাত্র ২৪০০ ডলার তথা মাসে মাত্র ২০০ ডলার উপার্জন করেন। বাকি মাত্র ৮ জন মাসে ৪১৬৬ ডলারের মত আয় করেন। সুতরাং লসের হারটা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়।
ডেস্টিনিতে ৪০ লক্ষাধিক ডিষ্ট্রিবিউটর কাজ করে কিন্তু তাদের মধ্যে কতজন আকাশ ছোঁয়া আয় করছে সেইটাই বিবেচ্য বিষয়। তাহলেই লস রেট হিসেব করে বের করা সহজ হবে।
ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসার একদম অবশ্য পালনীয় একটি নিয়ম হচ্ছে, ডিষ্ট্রিবিউটররা কখনও কোন রকম ফিক্সড আর্নিং ক্লেইম করতে পারবেনা!!! হ্যাঁ, এটা ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসার নীতিমালা বহির্ভূত এবং অবৈধ। কিন্তু বাংলাদেশ আমরা কতজন সেটা মানি? তার চেয়েও বড় বিষয় কতজনই বা বিষয়টি জানি?
ডিষ্ট্রিবিউটররা কেবল বলতে পারবে যে, আপনি যত বেশি কাজ করবেন তত বেশি আয় করতে পারবেন। আর কাজ বলতে এখানে অবশ্যই রিটেইল সেল তথা প্রকৃত ভোক্তার নিকট খুচরা বিক্রয় বুঝানো হয়েছে, অন্য কিছু নয়।