somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিইতো আমার ছোট ভাই

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হয়তো আজই ও এইচএসসি পাস দিত। জিপিএ৫ তো পেতোই- পাচ্ছেতো সবাই। না, তবুও খুব একটা আনন্দ হতো না। মা আদ্র কণ্ঠে বলতেন, ‘তোর বাপ থাকলে আজ সবচেয়ে খুশি হতেন। সে নাই, খুশিও নাই। এই পাশ দিয়া আমি কি করবো! উনিইতো স্বপ্ন দেখতেন- এই ছেলেটাকে অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন।’
তিন ভাই-বোনের সংসারে বড় দু’জনের একজনও পারিনি বাবার এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আহ্লাদ পূরণ করতে। তাইতো আকাশ ছুঁই স্বপ্ন ছিল ছোট ভাইটাকে নিয়ে। যে কিনা আমার ১৫ বছর পর দুনিয়ার ধূলোয় চোখ মেলেছে। এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে, সুযোগ পেলেই আব্বা খুউব তাচ্ছিল্য নিয়ে মা’কে বলতেন- ‘তুমিতো তোমার দুইটাকে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াইতে পারোনাই, এইবার দেখ আমি আমার একমাত্র পোলাটারে কই পড়াই।’
সত্যিই, আমার ছোট ভাইটাকে আব্বা একেবারে পিঠে-কোলে-বুকে চেপে বড় করেছেন। আজ সেই বাবাও নেই। ভাইটাও পাশ করেনি। পরীক্ষাইতো দেয়নি সে। পাশ করবে কোথ্থেকে! এটা নিয়ে অবশ্য মায়ের কোনও আক্ষেপ নেই। কারণ, এই মা-ইতো পুরো একটা গ্রামের ছেলে-পুলেকে নিজের উঠোনে পাটি বিছিয়ে বিনে পয়সায় পড়াশুনায় হাতে খড়ি দিয়েছেন। তার অসংখ্য ছেলে-পুলে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বসে আছে। এখনও অনেক বুড়ো ছেলে মাকে ‘মাস্টর আফা কেরকুম আছেন?’ বলে ন্যুইয়ে পড়েন। সেই মায়ের একটা ছেলে একটা মামুলি এাইচএসসি পাস না করলে কি এমন যায় আসে! তাছাড়া আমি আর আমার বোনটাতো মায়ের কথা ঠিকই রেখেছি, পাশ করেছি বহু বছর আগেই। হয়তো বাবার আহ্লাদটা পূরণ করতে পারিনি। তাকে কি এমন যায়-আসে?
আসে না। অনেক কিছুই চলে যায়। যেভাবে কিছু না বলে-কয়ে ভাইটাকে ঢাবি ক্যম্পাসে না রেখেই চলে গেছেন বাবা। যেভাবে ক্লাস ফাইভের পর ছোট ভাইয়ের জীবন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে গেছে স্কুল জীবন। হুম, আমার ছোট ভাইটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর আর পড়াশুনা করতে পারেনি। করলে, আজ নিশ্চিত তার এইচএসসির ফল প্রকাশ পেতো। এবং জিপিএ৫ পেতো।
ওর পুরো নাম আল আমিন মুন্না। জন্ম ১৯৯৬। দেখতে আমার কার্বন কপি। তবে উচ্চতায় আমার প্রায় দ্বিগুন। এই একটি বিষয়ে ও আমাকে ছাড়িয়ে গেছে। বাবা-মা-বোনের আফসোস ঘুঁচিয়েছে। কারণ, আমার উচ্চতা নিয়েই যত মনকষ্ট ছিল সবার। সেই কষ্ট জুড়িয়েছে মুন্নার উচ্চতা। বাদবাকী রং-ঢং সবই আমার ফটোকপি।
ওর স্মরণশক্তি খুব বাজে। শর্টটার্ম মেমোরি। তাইতো পড়াশুনাটা আর এগুলো না। একটা জলজ্যান্ত আদরের মানুষকেতো আর জোর করে বনবাসে পাঠানো যায় না। তাছাড়া আমারও প্রায় একই অবস্থা। স্মৃতিশক্তির অব্স্থা খুউব বাজে। হয়তো ততোটা নয়। আমার মগজে ওর চেয়ে বড়জোর কয়েক ফোঁটা বেশি ধারণ ক্ষমতা। ব্যস, ওইটুকু বিকিকিনি করেই টিকে আছি আজও এই শহরে। হয়তো কোনও এক ভরদুপুরে চর পাগলা থেকে চিলের মতো ছোঁ মেরে ছোট মামা আমায় এই শহরে এনে ফেলেছেন বলেই...। ম্যা বি..। কারণ অসংখ্যবার অসংখ্য বিষয় মিলিয়ে দেখেছি ওর সঙ্গে আমার। ফলাফল পেয়েছি একটাই, ‘আমিইতো আমার আপন ছোট ভাই।’
আফসোস, মুন্নার বেলায় আমিতো আর চিল হতে পারিনি, বাবা হতে পারেননি মায়ের মতো ‘মাস্টর আফা’। যাইহোক, আমি আসলে আমার এই ছোট ভাইটার জন্মরাতের কথা লিখতে চেয়েছি। অথচ কিসব ছাইপাস-ছারপোকা লিখেই চলেছি। যত্তসব আজগুবি!
থাক, ছোট ভাইর সেই জন্মরাতের কথা আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। শুধু নিজেকে নিজে মনে করিয়ে দিচ্ছি এটুকুই, ‘জন্ম কখনোই আনন্দের হতে পারে না। বরং মৃত্যুটাই অদ্ভুত সুন্দর।’ কারণ, খুব কাছ থেকে আমি আমার ভাইয়ের জন্ম দেখেছি, তার বেঁচে থাকার কষ্টটাও দেখছি। দেখেছি বাবার মৃত্যুও। তাঁর প্রশান্তিটাও অনুভব করতে পারছি মনে মনে।
চুপিচুপি আমিও দৌড়াচ্ছি, বাঁচার আসায় বাবার কাছে। ভাইটাকে চিলের মতো ছোঁ মেরে সঙ্গে নিতে পারলে সুখ পেতাম। ওর এই বাঁচার কষ্ট আর কতো সইবেন দুর্ভাগা মা? নাকি তিনিও চুপিচুপি অনেকটা পথ এগিয়ে আছেন আমার থেকে, না ফেরার পথে...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×