somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ভিডিও দিয়ে টিকটকার হয়ে গেছে ?

১৭ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

SR shipping এর শিপ MV abdullah হাইজ্যাক হয়েছে সেখানে অস্ত্র রাখা হয় নি কেনো ? এতো বড় একটা জাহাজ সমূদ্রে চলছে অথচ কোনো নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয় নি কেনো ?

জাহাজে কোনো আর্মস বা অস্ত্র রাখা হয় না এটা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নিষিদ্ধ, এর অনেক কারনও আছে সেসবে যাচ্ছি না, নিরাপত্তারক্ষীও রাখা হয় না সাধারনত ! যে টেরিটরি দিয়ে মার্চেন্ট শিপগুলো সেইল করে সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় দেশগুলোর দায়িত্ব। এটাই নিয়ম, এটাই হয়, হয়ে আসছে ! সমূদ্রে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিয়ে তৈরী হয়েছে safety of life at sea (solas) আইন! এই সকল ব্যাপার এই আইনেই বলা আছে, এর প্রয়োগও যথাযথ হয়, তাই অস্ত্র রাখার বিধান না থাকার ব্যাপারে এতো কড়াকড়ি !

আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুকিপূর্ণ এলাকা আছে যেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় যেমন সোমালিয়ার উপকূলীয় এলাকা, সেখানে আলাদা আর্ম ফোর্স বা সিকিউরিটি অফিসার নেওয়া হয়, যারা একটা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত জাহাজের সাথে থেকে জাহাজগুলোকে আর্মসসহ সাপোর্ট দেয় ! নির্দিষ্ট এলাকা পার হলে তারা শিপ থেকে নেমে যায় ! জাহাজ আবার পূর্বের নিয়মে চলতে থাকে !

কিছুদিন আগে বাংলাদেশেরই আরেকটি কোম্পানী একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দিয়ে তার স্থলে একজন সিকিউরিটি অফিসারকে জাহাজে তুলেছিলো কারন জাহাজ ওইরকম একটি ঝুকিপূর্ণ এলাকা দিয়ে চলার প্রয়োজন ছিল ! আর জাহাজে লোকবল হতে হয় নির্দিষ্ট, যতজন লোক নেওয়া হবে কমপক্ষে ততজনের জন্যে ইমার্জেন্সি মোমেন্ট মোকাবেলার জন্য সকল আয়োজন থাকতে হবে, যেমন কমপক্ষে ততজনের ধারনক্ষমতার লাইফবোট থাকতেই হবে, সেই ইঞ্জিনিয়ারকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিলো কারন লাইফবোটের ধারনক্ষমতা লোকবলের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ন হচ্ছিল ! সুতরাং জাহাজগুলো যে নিরাপত্তার ব্যাপারে ছাড় দেয় না, সেটা মোটামুটিভাবে সকল কোম্পানিই নিশ্চিত করে ! নইলে এই লস তাদের! এই যে এখন যে জাহাজটি হাইজ্যাক হলো, তাতে কোম্পানীর কোটি কোটি টাকা লস, তাহলে তারা শিপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইবে না কেনো ?

আর যদি বলেন, এটা বাংলাদেশ ভাই, এখানে সব সম্ভব!

তা ঠিক, তবে সেটা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম/মংলা/পায়রা বন্দরের জন্যই, এই সীমানা পার হয়ে অন্য দেশে ঢুকতে যান, প্রত্যেকটা জিনিস পাই টু পাই চেক করে তারপর তাদের দেশে ঢুকতে দিবে, কোনো কিছু মিসিং মানে তারা সেই দেশের ত্রিসীমানায় প্রবেশের অনুমতিই পাবে না, আর একটি জাহাজের একদিন অকারনে বসে থাকা মানে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি !

সুতরাং দেশের বাইরে কোনো জাহাজ গেলেই তাকে সর্বদিক খেয়াল রেখেই চলতে হয়, চলতে বাধ্যই থাকে ! তা সে বাঙলাদেশী কোম্পানী হোক বা অন্য ! বে অব বেঙ্গলে আপনি হয়তো বাঘ কিন্তু ওটা পার হলেই আপনি জাস্ট বিড়াল !

তবুও MV abdullah কিভাবে হাইজ্যাক হলো?

জাহাজটি হাইজ্যাক হয়েছে ভারত মহাসাগরের এক জায়গায়, ওই জায়গাটাকে অতো ঝুকিপূর্ণ বলে ধরা হয় না, তাই তাদের অতোটা কঠোর নিরাপত্তা বিধান করার প্রয়োজন মনে হয় নি ! আর সোমালিয়ানরা এতো দূরে এসে হাইজ্যাক করবে, এটাও নাবিকদের ধারনার বাইরে !

আর জাহাজে যখন হাইজ্যাকাররা উঠে পড়ে তখন নাবিকদের কাজই হলো নিজেদেরকে সম্পূর্নভাবে তাদের নিকট সোপর্দ করা, এর বাইরে আপনার আর কাজ নাই, তা কোনো নাবিক যদি সেটার একটু ভিডিও করে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কিংবা মিডিয়ার কাছে পাঠাতে পারে তার মানে এই না সে টিকটকার কিংবা সো কল্ড সেলেব্রিটি হতে চাচ্ছে ! তাই না ?

তবে হাইজ্যাকিং অস্বাভাবিক না, এর জন্যে সবচেয়ে বেশী দায়ী আন্তর্জাতিক রাজনীতি ! আপনার কি মনে হয়, এই একটা দেশের পাইরেটসদেরকে (সোমালিয়া) নিয়ে সারা দুনিয়াতে এতো আলোচনা হয়, অথচ তাদেরকে পুরো দুনিয়া মিলে আয়ত্বে আনতে পারছে না ?

পারছে না নাকি ইচ্ছা করেই আনছে না, এরকম প্রশ্ন তুললে বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে ! কারো না কারো লাভ তো নিশ্চয়ই হচ্ছে, কেও না কেও তো তাদের অবশ্যই সাপোর্ট দিচ্ছে, তারা যে অবশ্যই শক্তিধর দেশ, সেটাও কি আলাদা করে বলে দিতে হবে ?

ধরে নেন, এটাও একটা ব্যবসা, তাহলে বিষয়টা বুঝতে সহজ হবে ! তবে যেহেতু নাবিকরা জাস্ট সেই খেলার একটা গুটি মাত্র, তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু !
জাহাজের ইন্সুরেন্স করা থাকে, জাহাজের পণ্যের ইন্সুরেন্স করা থাকে, তাই জাহাজ কিংবা জাহাজের মালামাল নিয়ে চিন্তার কিছু নাই, কিন্তু একজনের জীবন ? সেটারও ইন্সুরেন্স করা থাকে কিন্তু একটা জীবন চলে গেলে বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিলেও কি সেই জীবনটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব ? তাই এখানে মানুষের জীবনটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার !

এরা সবাই প্রশিক্ষিত নাবিক, চাইলেই একজন নাবিক হওয়া যায় না, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নাবিক হয়ে উঠতে হয় ! সুতরাং, আমরা যে বিষয়গুলা জানি না, আমজনতার সেসব বিষয়ে উচিত না নিজেকে বিজ্ঞ প্রমান করতে যাওয়ার ! একটা ভিডিও প্রকাশ করার মানে এই না, তারা ইউটিউবার হতে গেসে !

পাড়ার দোকানে চা ওয়ালাও জানে, অফ স্পিনের বলটা কিভাবে খেললে শচীন টেন্ডুলকার আউট হতো না। শুধু জানে না, কিভাবে ভালো করে চা বানাতে হয় ! ব্যাপারটা চা-ওয়ালার জন্যে লজ্জার হওয়া দরকার ছিল কিন্তু ক্রিকেটীয় বিষয়ে সে নিজেকে বিজ্ঞ ভাবতে গিয়ে চা বানাতে ভুলে গেছে ! ব্যাপারটা প্যাথেটিক।

নাবিকেরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেই নিজেদেরকে ওই সোমালিয়ানদের কাছে সোপর্দ করতে বাধ্য হয়েছে, এটা নিয়ে অন্তত প্রশ্ন তুইলেন না, সন্দেহ রাইখেন না । তাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছে নিজেদেরকে সেইফ রাখার জন্যে তাতে কোনো সন্দেহ নাই ।

তাই বলি ভাই, জাহাজের এই মানুষগুলার জন্যে দোয়া করেন ! এই মানুষগুলা যাতে আবার পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারে সেই প্রার্থনা করেন ! এরা জাস্ট নিরীহ মানুষ, এরা শুধু কামলা দিতেই গেসে, এরা আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্যাচ বোঝে না, বুঝতেও চায় না, তারা শুধু জানে কিভাবে সাইন অন থেকে সাইন অফ পর্যন্ত সার্ভাইভ করতে হবে, বিনিময়ে কিছু পয়সা পাবে যেটা দিয়ে তার পরিবারের লোকেরা একটু আরামে জীবন কাটাতে পারবে, এর বাইরে এই লোকগুলার কোনো চাওয়া নাই !

আবার বলি ভাই, লোকগুলার জন্যে দোয়া করেন ! জানেনই তো, আপনি যদি মন থেকে অন্যের জন্যে কিছু চান, সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আপনাকে নারাজ করবেন না, রমজান মাসে তো অবশ্যই না !

আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন আর নাবিক ভাইদেরকে সুস্থ শরীরে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনুন !

আমিন, সুম্মা আমীন ৷

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:০৫
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×