somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলভূমি-তে প্রকাশিত মাহমুদ টোকন-এর গুচ্ছ কবিতা

০১ লা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহমুদ টোকন এর ছয়টি কবিতা

বেগুনচাষি
বিপনীবিতানগুলো খুলেছে কেবলি, মাথা তোলে কৃত্রিম উজ্জ্বলতা
বিহ্বল সত্যের মতো। বেনিআসহকলা’য়-
মুছে গেল প্রকৃত চেহারা
বেচারা চাষির কাছে নিজের বেগুন ক্যামোফ্লেজ
অচেনা অচেনা মনে হয়...

এক মরশুমে ঘর। দো-ফসলে বউয়ের নাকফুল
বাবার চোখের ছানি-
চলে যাবে, যাবে বলে বছর গড়ালো। এখন সে ঘরেই হোঁচট
খায় আর ম্লান হেসে বলে,
- বয়স হলে খানিকটা এরকম হয়!

ঘন্টা বাজিয়ে যাচ্ছে প্রাত্যহিক বিলম্বিত ট্রেন
স্টেশন ছেড়ে যাওয়া বিষন্ন ভেঁপুটি বাজে পোঁ...ও
বেগুনের বস্তা রেখে স্টোর মালিক
গুঁজে দিল কড়কড়ে নোট, ওয়ানটাইম ঝাঁঝালো পানীয়

টাকার আনন্দ থেকে মন্দদ্বন্দ্বে বেগুনকৃষক
জনকের ছানি না-কি লালপাড় নবান্ন প্রহরে
মাথাচুলকে, নেড়ে কোন সংকেত দ্যাখে না

বিড়ম্বনার দিন তার খুউব রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে করে...

মাটি
সর্বতো ব্যবহার, সৃষ্টি থেকে এই বর্তমান। এই আমি-
সর্বভূতে ছায়া প্রিজমের আখ্যান।

আর মানুষের উপাদান, শস্য ও গৃহনির্মাণ
কারখানা জলাধার এবং শৎকার, মিলে ও সংঘাতে
নির্মাণ-বিনির্মাণে আমি আজও উপলদ্বি করি
বিবিধ আগুন আছে হৃদয়ে নিউরনে। ভেতরে ভেতরে জ্বলি...

অবকাঠামোর গান, অট্টালিকা সমূদয় জলের সন্ধান
বিদ্ধ করে করে আহরণ, ফসিল ফুয়েল আর
খনিজ প্রস্তর। পাতার সংসার পোড়ে।

ভেতরে ভেতরে আশ্চর্য উত্তাপ, সে কেবলই...

আমায় কি দিয়েছ তুমি, তোমরা, এই সম্প্রদায়?
অস্থির ইঞ্জিন এবং খেউড়মাত্র; বায়ুবিষ আর অবিশ্বাস
আর দিয়েছ ছড়িয়ে খুউব অদ্ভূত প্রদাহ।

আমার দহন বোঝ? মর্মন্তুদ এই বেদনায়
জলসবুজ এই সমর্পণ, ঘুমের ভান করে পড়ে থাকি
আকাশ আর মেঘের ফোয়ারা। তবুও নেভে না-
অস্থির প্রদাহ জুড়ে চরাচর, দাঁতের ঝিলিক

ভেতরে ভেতরে জ্বলি, দেখতে পাও
শুনতে পাও পাজর ভঙ্গুর, পাথরে পাথরে বহু রাত জেগে আছে ?

অহম
তোমার গায়ের রঙ, লাবণ্যটুকু
ধুয়ে ম্লান অহমিকা জ্বলে। এ অম্ল মুছে দেয়, ক্ষয় করে
ঈশ্বরেরও ভুল হলে পড়ে...

বাজারের দরে যে চেহারা; ঝকমকে প্রলুব্ধ সনদ
প্রিজমের প্রতিবিম্বে নিজেকেই চিনতে পারবে না।
আর গৃহ নির্মাণ কিংবা স্রোতজলে সাঁকো; স্বর্ণ নয়-
লোহাই শেখাবে।

যুক্তি এনে গ্রীবা তুলে তুমি খুউব জানাতেও পারো
বহু ইস্পাত তবে কিনে নেবে সামান্য সোনায়...

ও অহম, ও শঙ্খচূড়
জেনো সে দূরত্ব দেবে, সুখনিদ্রা আদৌ দেবে না।
আজও বহু খণ্ডিত হৃদয়
অহমিকা এবং স্বর্ণ ফসিল করেছে; রি-সাইকেল কাদাও করেনি।

ছাড়পত্র
স্বীকৃতি দাওনি আমায় প্রিয় গাছ সবুজ উৎসবে
তীব্র আহত স্বর তবু আমি আকাঙ্খা ডাকিনি...

দূর্গ দখিন হাওয়া, দূরবর্তী হিজলের দিন
মাতৃস্নেহ ভাই-বোন বন্ধুর ছাতাওয়ালা হাত
সে-ও তো দেয়ালে ঘেরা প্রাত্যহিক প্রয়োজন, দ্রব্যসমৃহ
স্বীকৃতি দাওনি আমায় প্রিয় বিষদাঁত।

উৎসবদিনের গান প্রিয় উপহার; স্বীকৃতি মেলেনি
উদ্বোধন চারাগাছ, যৌথচুমুক আর
প্রিয়জল স্বীকৃতি মেলেনি।

বিমর্ষ টেবিল-বুকে নৃত্যরত কয়েন আর ম্লান আঁকিবুঁকি
অভিমান ক্রন্দণের অতিক্রমরেখা
এক বাসে বাড়িফেরা, স্বীকৃতি মেলেনি।

প্রিয়ফুল গুঁজে দেয়া কৃষ্ণচূড়ার দিন, হেঁটে যাওয়া-
আর হাতে লেখা প্রিয়চিঠি স্বীকৃতি মেলেনি।
দ্বিধাখণ্ড, কলঙ্ক পৃষ্ঠায় থেকে কষ্ট-পিরামিড
যুক্তিতর্কে মেলেনি স্বীকৃতি...

শহরে বৃক্ষমেলা- উদ্বোধন, আবৃত্তি সন্ধ্যায়
পুড়ে গিয়েছিল চোখ, বাসনার ছোটবুকটুকু
ক্রমাগত এসিড ঝলসানো; বিড়ম্বনার দিন
ছবিয়াল প্রোমো মঞ্চে অচ্ছুত স্বীকৃতি মেলেনি...

স্বেচ্ছা উপোষ আর অ্যালকোহলের ফেনা-
রোদবিকেল, স্বীকৃতি মেলেনি।
হিংস্রতম হয়ে ওঠা বিবর্ণ দিনের অভিপ্রায়ে
মুঠো খুলতে চেয়েছি চোখ বুঁজে; মেলেনি স্বীকৃতি।

বলো-
আমাকে তুমি কি এই মৃত্যুরও স্বীকৃতি দেবে না ?

নেশা
এবং ফুলের স্মৃতি, বৃক্ষ আর বিষন্ন বিকেল
পোড়া বাদামের গন্ধে ভেঙ্গে গেছে সব প্রতিরোধ

তৃষ্ণার্তদিনের শেষে বেজে উঠলে জল সাইরেন
আর্তনাদে কেঁপে ওঠে শেষ বাসটিও
ভল্লুকের উন্মাদনায় মৃত শবদেহ
কেঁপে কেঁপে ওঠে জানলায়- অপেক্ষামূখর দিনগুলি।

আর রক্তের মধ্যে নেশা দূর্বার, ও মহুয়াদিন
টেনে আনে সাঁওতাল রাত
বিগত মৃত্যুরেখা, অনিবার্য রাতকংকাল
তবুও তোমার কথা বলে...

হে অমরত্ত্ব, হে মৃত্যুহীন প্রেম
উৎসব থেকে এনে বিষের পেয়ালা
উন্মুক্ত করো নীলকণ্ঠ পাখির গান, একবার-
শুধু একবার, গলা ছেড়ে গাই।

তোমাকে পাবার তীব্র আকাঙ্খার সুর
একবার গলা ছেড়ে গাই...

পাখি আর ব্রোথেলখুকি
জানলা খোলা রাখছো কেন, জানালায় কি?

আকাশ আকাশ বুকের ভেতর, কৃষ্ণচূড়া আহলাদে ফুল
অচিন পাখি আমায় ডাকে... সেই শৈশব। জানলা দিয়ে একটি শালিক।
মাটির সোঁদা গন্ধমাখা প্রথম বৃষ্টি। আর্তের স্বর-
ওই বাতাসে, জানলা খোলা... একটি ঘূড়ি
পিঁপড়ে পাতায় বনপলাশের, পোয়াতি মেঘ রোদ্দুর ঘ্রাণ
ঘাস চিৎকার... জানলা খোলা। জানলাতে প্রাণ।

তোমার তো খুব জানলা আকাশ, আমার তবে?

বৃক্ষের বিলাপ মাখা শহুরে শরীর, জলে জলে চোখ অন্ধ বলে
তোমার মতো আমারও খুব ভয়। তোমার মতো-
ডানাওলা গান জানিনে, জানলা খোলা। ফুলের মধ্যে ঠোঁট চুবিয়ে
কম্পিত স্বর দেখতে কি পাও?
তোমার তবু পাখনা আছে।
তোমার কিন্তু পূর্ণ আকাশ, তোমার তবে ছয় ঋতুকাল...

জানলা তবে খোলাই থাকে? জানলাখুকি?

আমার যখন মৃত্যু লাগে, আমার যখন রক্তক্ষরণ
চারপাশে মেঘ, দাঁড়াশ সাপের ক্রুদ্ধ ফণা
মৃত্যুউপোস বিদীর্ণঘাস, ডানায় আমার রক্তগন্ধ
জানলা খোলা জানলা বন্ধ...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×