somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা তেল গ্যাস লুণ্ঠনের এই চুক্তি স্বাক্ষরের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৌফিক-ই ইলাহী প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা পদে পুনরায় নিয়োগ পাওয়ার পরই বুঝা গিয়েছিল আবারো দেশের তেল গ্যাস খনিজের লুণ্ঠন তরান্বিত করার জন্য অন্যায্য চুক্তি হবে। মার্কিন কোম্পানি কনকোফিলিপ্স এর পর এবার বঙ্গোপসাগরে দুটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য অনুমতি পেল ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি); চুক্তি যার সাথেই হোক তাতে আমার আপত্তি নাই কিন্তু আপত্তি চুক্তি নিয়েই, যে চুক্তির ভিত্তিতে মার্কিন- ভারতীয় কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাতে আমাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ নাই! এই চুক্তিতে বাংলাদেশের ভয়াবহ ক্ষতির দিক সমূহ হচ্ছে-

১) কস্ট রিকভারি লিমিট ৫৫% থেকে বৃদ্ধি করে ৭০% করা হয়েছে, এর মানে বিদেশি তেল কোম্পানি কস্ট রিকভারির নামে দেশের ৭০% উত্তোলিত তেল ও গ্যাস পুরাটাই নিজের মালিকানায় নিয়ে যাবে, ফলে আগের তুলনায় তেল গ্যাস লুণ্ঠন আরও বৃদ্ধি পাবে! পূর্বের মডেলে ৫৫% কস্ট রিকভারিই যেখানে অন্যায্য সেখানে সংশোধিত পিএসসিতে তা ৭০% করা মানে হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি কর্তৃক দেশের তেল গ্যাসের অবাধ লুণ্ঠনকে আইনি বৈধতা দেয়া।

২) বহুজাতিক তেল কোম্পানি তার শেয়ারের ৫০% গ্যাস পেট্রোবাংলার কাছে প্রতি হাজার ঘনফুট ৬.৫ ডলার দামে বিক্রি করবে যা পিএসসি-২০১২ তে ছিল গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে ৪.৫৭ ডলার ও অগভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে ৪.১৫৭ ডলার এবং পিএসসি-২০০৮ এ ছিল ২.৯ ডলার; আর বাকি গ্যাস তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে নেগোশিয়েশনের ভিত্তিতে যে কোন দামে বিক্রি করতে পারবে। এই মূল্য বৃদ্ধি ২০১২ এর তুলনায় ৪২% এবং ২০০৮ এর তুলনায় ১২৪% বেশি। সংশোধিত মডেল বাস্তবায়ন করলে আমাদের নিজেদের গ্যাস আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিদেশি কোম্পানি থেকে কিনতে হবে পেট্রোবাংলাকে।

৩) বিদেশি কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স এর ৩৭.৫% পেট্রোবাংলাকেই বহন করতে হবে! বাংলাদেশ সরকার এর মধ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স বাবদ গচ্চা দিতে হবে! বিদেশি কোম্পানির মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার নিশ্চয়তা বিধান করতে গিয়ে বিপুল ট্যাক্স মওকুফ করার মানে কি?

অর্থাৎ এই চুক্তির ফলে উত্তোলিত গ্যাসের উপর সরকার ও জনগনের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রন থাকবে না। দেশের সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক জনগণ হলেও শুধুমাত্র কারিগরি দক্ষতার জন্যই বহুজাতিক কোম্পানির নিরঙ্কুশ মালিকানা অযৌক্তিক এবং অন্যায়।

আমরা তেল গ্যাস লুণ্ঠনের এই চুক্তি স্বাক্ষরের তীব্র প্রতিবাদ জানাই

~বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ সুরক্ষার জন্যই জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে দুর্বল করে রাখা হচ্ছে~

সরকার যদি বাপেক্স এর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত সরঞ্জাম ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করে এবং জনবল বৃদ্ধি করে তাহলে বাপেক্স বহুজাতিক কোম্পানির চেয়ে অনেক বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাপেক্সকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও পুঁজির অভাবকে জোরালো অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায় নীতিনির্ধারকরা । বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বছর বছর ২৫ টাকার গ্যাস ২৫০ টাকায় কিংবা ৩ টাকার বিদ্যুৎ ১৪/১৫ টাকায় কিনে জ্বালানী খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার সময় কোন পুঁজির অভাব হয় না, কিন্তু দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা আসলেই পুঁজির অভাবকে দায়ী করে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন নীতিনির্ধারকগণ - এটা সত্যিই হতাশাজনক। মূলত পুঁজির অভাব নয়, আমাদের শাসকগোষ্ঠীর স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রকট অভাবই এর মাধ্যমে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। সাম্রাজ্যবাদীদের অধীনস্ত বহুজাতিক কোম্পানির সেবাদাসত্বই তাদেরকে উৎসাহিত করে অসম গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশের তেল গ্যাস ও খনিজের উপর বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার কাজে। মূলত বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ সুরক্ষার জন্যই জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে দুর্বল করে রাখা হচ্ছে বলে ধারনা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সরকার যদি বাপেক্সকে শক্তিশালী করে বাপেক্সের মাধ্যমেই গ্যাস কূপ খননের উদ্যোগ নেয় তাহলে একদিকে যেমন দেশের সম্পদের উপর সরকার ও জনগনের মালিকানা অক্ষুন্ন থাকবে, অন্য দিকে তেমনি বাপেক্স এর কাছ থেকে ৫০-১০০ গুন কম দামে উত্তোলিত গ্যাস ক্রয় করে সরকার জনগনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দাম। আমরা মনে করি এর মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে এবং এই টাকা আবার পেট্রোবাংলা এবং বাপেক্স এর লোকবল বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের কাজে লাগানো যাবে।

ভারতীয় ওএনজিসি; মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস কিংবা ভেনিজুয়েলার পিডিভিএসএ ও তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রথমেই দক্ষ ছিল না, কিন্তু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় উপযুক্ত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি আমদানী এবং ট্রেনিং এর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানই স্থলভাগ ও সমুদ্রবক্ষের গ্যাস উত্তোলনে এখন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। ফলে ভারত, মালয়েশিয়া এবং ভেনেজুয়েলা তাদের গ্যাস সম্পদের উপর নিজেদের মালিকানা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

দেশের বিদ্যমান জ্বালানী সংকট মোকাবিলার জন্য জ্বালানী ক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতা সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে দেশীয় সংস্থা পেট্রোবাংলা এবং বাপেক্সকে দক্ষ ও শক্তিশালী করতে হবে যেন স্থলভাগ ও গভীর সমুদ্রে বাপেক্স সহজেই তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্য পরিচালনা করতে পারে। বাপেক্সের প্রয়োজনীয় রিগ ও অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা, প্রয়োজনীয় লোকবল বৃদ্ধি করা এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশি বিদেশি প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। এই শক্তিশালী বাপেক্সের মাধমেই দেশের গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এই কাজটি সময়সাপেক্ষ হলে সরকারের উচিত বহুজাতিক কোম্পানির সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো রিভিউ করা এবং সংশোধনের ব্যবস্থা করা যাতে সমভাবে উভয়পক্ষই লাভবান হয়। আমরা মনে করি পি এস সি মডেল বাতিল করে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর জনগনের মালিকানা অক্ষুন্ন রাখার ব্যবস্থা রেখেই নতুন জ্বালানী নীতি প্রনয়ন করতে হবে। দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×