মাথায় লেখার ভূত চাপলে আর নিস্তার নাই...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অক্টোবর ২০১৮। এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এজেন্সিতে কথা বলে এসেছি। আমরা কাস্টোমাইজ উমরাহ প্যাকেজে যাচ্ছি। এজেন্সির সাথে কথা বলে জানলাম, ডিসেম্বরের ৬ তারিখ থেকে জানুয়ারির ১৫/২০ তারিখ পর্যন্ত মক্কায় হোটেল খরচ বেড়ে যায়। তাই এই সময়ের আগে অথবা এই সময়ের পরে মক্কায় থাকতে হবে। নাহলে খরচ বাড়বে।
নভেম্বরের ২৮ তারিখ রাতে কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটা ফ্লাইট আছে দেখালো। ঠিক করলাম ,ঐ ফ্লাইট বুকিং করবো। ২৯ নভেম্বর মক্কায় চেক-ইন আর ৬ ডিসেম্বর সকালে চেক-আউট , মোট সাত রাত। ৬ ডিসেম্বর যোহরের আগে মদিনায় চেক-ইন এবং ১৪ ডিসেম্বর ফজর পড়ে চেক-আউট, মোট আট রাত ও চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ ।
হোটেলের ব্যাপারে বলেছিল, মক্কা মিলেনিয়ামের সিটি ভিউ রুম দিবে আর ২৫ নং গেটের কাছে কম বাজেটের হোটেল মোবারক সিলভার এর ফ্যামিলি রুম দিবে।
জিয়ারাহ এর ব্যাপারে আমি প্রাইভেট জিয়ারাহ চাচ্ছিলাম। আমরা গ্রুপ জিয়ারাহতে unease feel করবো, তাই প্রাইভেট জিয়ারাহ চাচ্ছিলাম। এজেন্সি থেকে বলেই দিয়েছে যেহেতু কাস্টোমাইজ প্যাকেজ আর জিয়ারাহ private facilities চাচ্ছি সেহেতু মোয়াল্লেম বা গাইডের ব্যাপারে একটু কমপ্রোমাইজ করতে হবে। হয়তো মোয়াল্লেম সব জিয়ারাহ তে আমাদের সাথে যেতে পারবেন না(অন্য গ্রুপকে সময় দেয়ার জন্য), তখন বাঙালি ড্রাইভার দিয়ে দিবে। আর সাত সিটের সরকারি যেসব ট্যাক্সি পাওয়া যায় , জিয়ারাহতে সেসব গাড়ি দিবে। এ ব্যাপারে আমার কোনো সমস্যা নেই।
আমার পুরো প্যাকেজ সহজ করে লিখলে-
১. ১৫ রাতের প্যাকেজ(৭ রাত মক্কা, ৮রাত মদিনা)।
২.হোটেলঃঃ মক্কায় মক্কা মিলেনিয়াম(সিটি ভিউ) আর মদিনায় মোবারক সিলভার(ফ্যামিলি রুম)।
৩. জিয়ারাহঃঃ মক্কা-মদিনার রেগুলার জিয়ারাহ, তায়েফ, জেদ্দা।
৪. ট্রানজিট ফ্লাইটঃঃ কুয়েত এয়ারলাইন্স (ম্যাক্সিমাম ৩ ঘন্টা ট্রানজিট)।
৫. ট্রান্সপোর্টেশনঃ জেদ্দা-মক্কা হোটেল (সরকারি বাস), মক্কা-মদিনা(প্রাইভেট), মদিনা হোটেল-মদিনা এয়ারপোর্ট(প্রাইভেট)। সব জিয়ারাহ প্রাইভেট গাড়ির(ট্যাক্সি) সুবিধা।
৬. উমরাহ পালনের জন্য মোয়াল্লেম বা গাইড।
৭. খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেদের।
ভিসা খরচ ও সার্ভিস চার্জসহ আমার প্যাকেজের মূল্য দাঁড়ায় জনপ্রতি এক লক্ষ তিন হাজার টাকা। হোটেল বুকিং, প্লেন টিকেট, জিয়ারাহর ব্যবস্থা নিজ দায়িত্বে করলে খরচ আরো কমানো যায় কিন্তু আমার নিজের উপর এসব বোঝা হয়ে যাবে। তাই খরচ বেশি হলেও এজেন্সিতেই বুকিং দিলাম।
২৮ নভেম্বর দিনশেষে রাত ৩টার ফ্লাইট। আমার হাতে এখনো অনেক সময় আছে। বুকিং দিয়ে এসেছি ঠিক, তবুও বিভিন্ন জায়গায় এই প্যাকেজের খরচ কতো হতে পারে যাচাই করছিলাম। এরচেয়ে কমে কেউ কোনো অফার দিতে পারে নি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ ভরসা।
এবার যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার পালা। ব্যাগ-ব্যাগেজ, কাপড়-চোপড়, ইহরামের কাপড়(পুরুষের), হালকা শীতের কাপড়, প্রয়োজনীয় ঔষধ, শুকনো খাবার ইত্যাদি গুছানোর পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম। ফ্রিটাইমে ইউটিউবে প্রচুর ডকুমেন্টারি দেখতাম। ম্যাপ মুখস্থ করতাম। আমি যে হোটেলে থাকবো তার আশেপাশের রাস্তাঘাট হেটে দেখতাম।ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও আছে। "walk to masjid al haram" বা "walk to masjid an nabawi" লিখে সার্চ করে দেখুন। দেশে বসেই হেরেমের আশেপাশের রাস্তাঘাট সব চেনা হয়ে যাবে। বসে বসে হোটেলের রিভিউ দেখতাম। কোন হোটেলের রুম কেমন, কি সুযোগ-সুবিধা, হেটে যেতে কতো সময় লাগে এসব কিছু আমি দেশে থেকেই জেনে গিয়েছিলাম। উমরাহ করার সঠিক নিয়ম নিয়ে অনেক ভিডিও আছে। আমি দেখতাম, শিখতাম। এভাবে দুটি লাভ হচ্ছিল, এক আমি উমরাহ পালন শিখছি, দুই হেরেম আমার কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিচিত হয়ে যাচ্ছিল। আমি কখনো হারিয়ে যাবো এই চিন্তা তো মাথায় আসতোই না বরং আমি সবাইকে গাইড করতে পারবো মনে এই জোর পাচ্ছিলাম।
এতো প্ল্যানিং, প্রিপারেশনের পরও যে দুঃচিন্তা হতো না তা কিন্তু নয়। তখন আল্লাহর সাহায্য চাইতাম। কারণ আমরা যতোই প্ল্যান করি না কেন, আল্লাহ বাস্তবায়নের তৌফিক না দিলে কারো কিছু করার নেই। তাই কম কম পাওয়ার আশা করতাম বা নেগেটিভ অনেক ঘটনা ঘটতেই পারে এ ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতাম।
নভেম্বরের ২০ তারিখে এজেন্সি থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যোগাযোগের নাম্বারসহ ভিসা-পাসপোর্ট-টিকেট নিয়ে এলাম। এবার সবাইকে জানানো যায় যে, হ্যা আমরা যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ! কাউন্ট-ডাউন শুরু ...
প্ল্যানিং আর প্রিপারেশন খুব দরকারী। তাই আবার লিখলাম। পরের পোস্টে প্রথম উমরাহ করার অভিজ্ঞতা লিখবো ইনশাআল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:০৬