somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন ডায়েরি (পর্ব ৮)

১৯ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

"দূরত্ব যদিও আমাদের মাঝে বাধা হয়ে আছে
তবুও (মনে মনে) আমি আপনার সাহচর্য ব্যতিত নই, আপনার স্মরণ করা থেকে আমি বিরত নই।
আপন মনে দূর থেকে আপনাকে ডেকে যাবো
(এভাবে) পথ চলতে চলতে পা গুলো যদি ক্লান্ত হয়ে যায়
আমি মদিনাতে একাকীই ছুটে যাবো
মদিনার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াবো
এবং সেখানে গিয়ে আমি আর ফিরে আসবো না
আমাকে খুজতে খুজতে সবাই ক্লান্ত হয়ে যাবে
হঠাৎ দূর থেকে যখন সবুজ গম্বুজ দেখতে পাবো
(প্রচন্ড আবেগে) ইবাদাতের নিয়ম-কানুন হারিয়ে যাবে
কিভাবে আপনাকে সম্মান জানাবো ভেবে দিশেহারা আমি?
চোখের পলকে রবের সিজদায় লুটিয়ে পড়বো!
দূরত্ব যদিও আমাদের মাঝে বাধা হয়ে আছে
তবুও (মনে মনে) আমি আপনার সাহচর্য ব্যতিত নই, আপনার স্মরণ করা থেকে আমি বিরত নই।
আপনার নাম যেখানেই উচ্চারিত হবে
আপনাকে যেখানেই স্মরণ করা হবে
নূরে নূরে এ বুক ভরে যাবে
পুরো মাহফিলে সে নূরের ঝলকানি ঠিকরে পড়বে
হে মদিনার মুসাফির, আল্লাহর ওয়াস্তে
সফরের গল্প আমাকে শুনিও না।
বাক্ রুদ্ধ হয়ে যাবে, হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাবে আমার
আমার উন্মত্ত অশ্রুরা উপচে পড়বে
(আমাদের) এই অবস্থা তিনি তার দূরদৃষ্টির মাধ্যমে জানেন
কোন মুসাফির তার জন্য কতোটা ব্যাকুল!
আমি যখন একটিবারের জন্য (মদিনায় যাওয়ার) অনুমতি পাবো
আমিও রাসুল সাঃ এর কাছে যাবো
দূরত্ব যদিও আমাদের মাঝে বাধা হয়ে আছে
তবুও (মনে মনে) আমি আপনার সাহচর্য ব্যতিত নই, আপনার স্মরণ করা থেকে আমি বিরত নই।
আপন মনে দূর থেকে আপনাকে ডেকে যাবো
(এভাবে) পথ চলতে চলতে পা গুলো যদি ক্লান্ত হয়ে যায়।।।"

মূল লেখা(উর্দু) - সৈয়দ ইকবাল আজীম (ফাসোলো কো তাকাল্লুফ)



০১.১১.২০২২

মদিনাতে পৌছেছি ৩১ অক্টোবর ২০২২, মাগরিবের ওয়াক্তে। ০১ নভেম্বর মসজিদে নববীতে সালাত, সালাম পেশ করে আর আশেপাশে ঘুরেফিরে দিন পার করলাম। মক্কা থেকেই এপসের মাধ্যমে রিয়াজুল জান্নাতে যাওয়ার পারমিট নিয়েছিলাম। ৩১ তারিখ মাগরিবের পর ট্যাপাট্যাপির বাবা আর দাদার শিডিউল, ০১ তারিখ এশার সালাতের পর আমার আর মা'র পারমিট।

মক্কা থেকে পৌঁছাতে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ায় ট্যাপাট্যাপির বাবা, দাদা শিডিউল মিস করলেন। গতকাল রোদে অনেকটা সময় দাড়িয়ে থাকায় ট্যাপির শরীরটা তেমন ভালো না। এশার সালাতের পর যেভাবেই হোক আমার রিয়াজুল জান্নাতে যেতে হবে। আবার যাওয়ার সুযোগ পাবো কিনা জানি না। আল্লাহ যেন সবকিছু সহজ করে দেন সেই দোয়া করছিলাম অবিরত।

এশার সালাতের সময় বাচ্চাদেরকে বাবা-দাদার কাছে দিয়েছি। সালাত শেষে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ৩৭ নং গেট দিয়ে মহিলারা রিয়াজুল জান্নাতে যায়। আত্মার শান্তির জন্য ১২ নং গেট থেকে ছোট পথে না গিয়ে পুরো মসজিদ এলাকা ঘুরে ৩৭নং গেটের কাছে গেলাম। এই সফরে আর এভাবে পুরো মসজিদ এলাকা ঘোরার সুযোগ যদি আর না আসে! ৩৭ নং গেটে এসে দেখি মহিলাদের বিশাল লাইন! কয়েক স্তরের চেকিং শেষে সবাই যেভাবে মূল মসজিদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছে, তা আমার আগের অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আমি আর মা লাইনে দাড়ালাম। একবার মনে হয় লাইনের ডান দিক তাড়াতাড়ি সামনে এগুচ্ছে আবার মনে হয় বাম দিক এগুচ্ছে। বেশিরভাগ জিয়ারাতকারীই অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে। সমানে দরুদ পড়ে যাচ্ছি আর আল্লাহর সাহায্য চাইতে চাইতে কখনো লাইনের ডানে, কখনো লাইনের বামে নিজের জন্য জায়গা বের করছি। পারমিট দেখাতে না পারায় ভিনদেশি একদল বোনকে লাইন থেকে বের করে দিল। বুক ধুকপুক করা শুরু করলো। বারবার মোবাইল চেক করছিলাম, নিজেদের পারমিট ঠিক আছে তো? অবশেষে আমাদের পালা এলো। সালাম দিয়ে মোবাইল এগিয়ে দিলাম। ভলিন্টিয়ার বোনটি পারমিট দেখে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিতেই মনে হচ্ছিল কৃতজ্ঞতায় রবের সেজদায় পড়ে যাই!

ধীরে সুস্থে হেটে ৩৭ নং মূল গেইটের সামনে এলাম। গেটের সামনে দাড়িয়ে একজন ভলিন্টিয়ার বোন আরবিতে বলে উঠলো "আহলান-সাহলান, নবীর মসজিদে স্বাগতম!" সালাম দিয়ে ভিতরে যেতেই আরেক ভলিন্টিয়ার বোন ঠান্ডা জমজমের পানি হাতে দিলো। লাইন ধরে হেটে হেটে এগিয়ে যাচ্ছি আর দোয়া করছি, "হে আমার রব, যে জায়গায় আমার সেজদা দেয়াটা তুমি পছন্দ করো, সেখানে সহজে আমাকে পৌঁছে দাও"। সামনে এগিয়ে একেবারে মূল রিয়াজুল জান্নাতে গেলাম। গতবারে যেমনটা দেখেছি, মূল রিয়াজুল জান্নাতে সালাত আদায়ের জন্য মহিলারা কেবলমাত্র এককাতার পরিমাণ জায়গা পেত। এবার দুই/তিন কাতারের মতো জায়গা বরাদ্দ করেছে। পর্দা ঘেঁষা, সবার সামনের কাতারে সালাতের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। পৌঁছে গেছি, আমার সেজদার জায়গাও পেয়ে গেছি কিন্তু সামনে একটি পিলার আর একজন সালাত আদায়কারী বোনকে ডিঙিয়ে আমার সেখানে যাওয়া প্রায় অসম্ভব! হঠাৎ আল্লাহর সাহায্য নেমে এলো। হাত বাড়িয়ে দিলেন আরেক ভলিন্টিয়ার বোন! একপ্রকার আমাকে টেনে নিয়ে আমার সালাতের জায়গায় দাড় করিয়ে দিলেন। কি করে এই শুকরিয়া আদায় করবো! আল্লাহ আপনাদের উত্তম জাযা দান করুন।

সালাত শেষে মা-কেও সামনের কাতারে নিয়ে এলাম। পিছনে দাঁড়িয়ে একে একে সবগুলো পিলার, পয়েন্ট দেখিয়ে দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ মন শান্ত হয়েছে। দুনিয়ার চিন্তা এখন আমার মাথায় ভর করছে। আট মাসের বাচ্চাটার জ্বর আসবে হয়তো, দাদার কাছে রেখে এসেছি, কি করছে? বিরক্ত করছে না তো? তাড়াতাড়ি রুমে ফেরা দরকার। আগামীকাল জিয়ারা আছে। সব কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে। আরো কতো কিছু!



ছবি - নেট

জাজাকুমুল্লাহ খাইরান
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:৪৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×