somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প→ ছোট বোনের বান্ধবী অতঃপর বউ

০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আমার আর নিতুর তৃতীয় বিয়ে । আসলে আপনারা যা ভাবছেন তা নয়। আমাদের প্রথম বিয়ে মোবাইলে, দ্বিতীয় বিয়ে কাজী অফিসে আর সর্বশেষ পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। আমার নিতুর রিলেশন আজ ৬ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। অর্থাৎ ২৫ মে ২০০৭ সালে নিতুর পক্ষ হতে প্রথম I love you too কথাটা শুনেছি। আমরা প্রতিবারই এইদিনে বিয়ে করেছি। যাই হোক গোসল শেষ করে সবাই ব্যস্ত আমাকে সাজাতে।কিন্তু আমি ব্যস্ত মোবাইল খোঁজার কাজে।খোঁজে পাওয়া মাত্র আমি হাতে মোবাইল টা নিয়ে নিতুকে একটা এসএমএস করলাম " i love you লিখে, সাথে সাথে নিতু রিপ্লেই দিল- " i love too জান, যদি এখন মেসেজ না পাঠাতে না দেখতে তোমাকে কি করতাম।" মুচকি হেসে উঠলাম আমি। আমাকে মোবাইলে এসএমএস লিখতে দেখে কাজিনরা বলে উঠল- আর দম সয়ছে না বুঝি?? কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলাম।তাই মোবাইল রেখে রেডি হয়ে নিলাম, সেরে নিলাম সালাম করার পর্ব। কিছুক্ষণ পর গাড়ি আসলে আমাকে সবাই নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে রাখল।কি আর করবো আমি বেচারা। তাই বসে বসে ভাবছি আমাদের রিলেশনের শুরুটা। আমি যখন ঢাবিতে চান্স পেয়েছি তখন নিতু ক্লাস টেনের ছাত্রী ছিল। নিতু আমার ছোট বোনের বান্ধবী। তাই ওর কমবেশি যাতায়াত ছিল আমাদের বাসায়।আমার বোন তৃনা যখন বান্ধবীদের ফ্যামিলি পোগ্রাম বা পড়াশুনার কাজে যেত, তখন তৃনাকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার কাঁধে পড়তো। তাই তৃণার সব বান্ধবী আমার পরিচিত।নিতুর উপর টাস্কি খেয়েছি অনেক আগে থেকে।একদিন মা বাবা বাহিরে ছিলেন, বাসায় আমি আর আমার বোন ছিলাম। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতে গিয়ে দেখি, এক অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। আমি চুখ ফিরাতে পারছিলাম না। এই প্রথম কোন এক মেয়েকে দেখে অামার মাথা ঘুরার উপক্রম। কতসময় ধরে নিতুর দিকে তাকিয়েছিলাম জানিনা। হঠাৎ নিতু বলে উঠল, কেমন আছেন ভাইয়া?? বাসায় ঢুকতে দিবেন নাকি দাঁড় করিয়ে রাখবেন?? তৃণা কোথায়?? নিতু একাই সব প্রশ্ন করে গেল আমি নির্বাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ও আবার বললো-Excuse me ভাইয়া। আমি যেন নিতুর ডাকে আকাশ থেকে পড়লাম। ওকে Sorry বলে ভিতরে আসতে বললাম। দরজা বন্ধ করার সময় দেখি তৃণাও চলে এসেছে ইতি মধ্যে। এবং আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল নিতুর। বললো নিতু নতুন ভর্তি হয়েছে কয়েক মাস হলো। ঐ দিন হায় হ্যাঁলোতে শেষ। তখন আমি ইন্টারমিডিয়েট পড়ছি আর নিতু ক্লাস নাইনে।আমি তখন থেকে প্রেমে পড়ে গেলাম নিতুর। ভাবতাম কিভাবে ওক প্রপোজ করবো? রাতদিন ওকে নিয়ে ভাবতাম, আমার প্রিয় বন্ধু নাহিদের কাছে পরামর্শ চাইতাম, আরো অনেক কিছু। যে আমি তৃণাকে বান্ধবীদের বাসায় নিয়ে যেতে বললে সোজা না করতাম সে আমিই তৃণাকে বান্ধবীদের ফ্যামেলী পোগ্রাম বা স্টাডির কাজে নিয়ে যাওয়ার পুরো দায়িত্ব গ্রহন করলাম। যেন একটু হলেও নিতু কে দেখতে পাই। কিন্তু বিষয়টি তৃণার চুখ এড়ানো সম্ভব হয়নি। বুঝে গিয়েছিল তৃণা, তাই একদিন নিতু কে আমার সামনে আমাদের বাসায় বলে বসলো- ভাবী ভালভাবে প্রস্তুতি নিন আমাদের বাসায় permanent ভাবে থাকার।নিতু লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ওর লজ্জা মাখা মুখটা যেন আরো সুন্দর।
অবশ্যই ব্যাপার টি তৃণার বন্ধুমহলে ছড়িয়ে গিয়েছে ইতি মধ্যে। তবে নিতুও যে বান্ধবীদের কাছে আমার কথা শুনতে শুনতে আমাকে ভালবেসে পেলেছে নিজের অজান্তে সেটা আমি ওর চুখের ভাষায় বুঝি। কিন্তু সাহসের অভাবে প্রপোজ করতে পারলাম না। যখনি ভাবতাম প্রপোজ করে ফেলবো তখনি ভিতর থেকে আওয়াজ শুনতে পাই-" আপনার এখনো প্রপোজ করার যোগ্যশক্তি নেই। দয়া করে পরে চেষ্টা করুন।" তাই করবো করবো বলে একটি বছর কেটে গেল আমাদের । সর্বশেষ একদিন করেই ফেললাম। হঠাৎ একদিন সকালে তৃণা এসে বললো ভাইয়া আজ নুসরাতের বার্থডে পার্টি রাতে, আমার সব বান্ধবীরাও আসবে সুতরাং আমাকেও নিয়ে যেতে হবে তুকে। তাই তারাতারি বাসায় ফিরবি সন্ধ্যায়। আমি মনে মনে অনেক খুশি হয়ে গেলাম নিতু কে দেখবো বলে। কলেজে গিয়ে নাহিদকে বললাম আজ আমার পরী কে দেখবো রাতে। সুতরাং পরামর্শ দে আমাকে আজ কি প্রপোজ করবো? ? ও আমাকে আজই প্রপোজ করার জন্য বলল সাথে সাথে কিছু টিপস দিল। যাই হোক কলেজ থেকে দুপুরে ফিরার পর আর বাহিরে যায়নি। ঘরে বসে বসে নিতুর কথা ভাবছি, কিভাবে প্রপোজ করবো?? কিভাবে কি হবে?? আমার বোনটাও না কেমন স্বার্থপর। তৃণাকে বলেছিলাম আমাদের রিলেশনটা করে দেওয়ার , কিন্তু মেয়েটি সোজা না করে দিয়ে আমাকে বললো নিজের পছন্দের মানুষ কে নিজে ভালবাসার কথা বলতে পারো না কাপুরুষ কোথাকার!!! শুনেই আমার সে দিন মেজাজ চরমে। খুব রাগ হয়েছিল তৃণার উপর। কিন্তু তৃণার দোষ নেই নিতু নাকি ওকে বলেছিল আমি নিজেই প্রপোজ করতে হবে, নয়তো হবেনা। তাই বাধ্য ছেলের মত ঐ অনুষ্ঠানে করেই পেললাম। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমি আর তৃণা ওর বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলাম।রাস্তায় গিয়ে একটা সিএনজি নিয়ে সোজা নুসরাতের বাসায় পৌঁছলাম, যদিও বার্থডে গিফট তৃণা নিজেই আগে থেকে কিনে রেখেছে। সন্ধ্যা ৭টায় সেখানে পৌছে দেখলাম সবাই চলে এসেছে একমাত্র নিতু এখনো আসেনি। তাই মনে মনে খারাপ লাগতে লাগল।আমার মন বিষন্ন দেখতে পেয়ে তৃণার বাকি বান্ধবীরা আমার সাথে অনেক মজা নিয়েছিল। আমার ইচ্ছা হয়েছিল সবাই কা কানের নিচে করে একটা একটে তাপ্পর মারি। প্রায় আধা ঘন্টা পর আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে নিতু আসল। মনে মনে যতটুকু খুশি হয়েছিলাম ততটুকু নারভাসও ছিলাম। কিছু সময়পর নিতু সবার মাঝে আড্ডায় বসল। যদিও নিতু আমার থেকে দূরে বসতে চেয়েছিল কিন্তু ওর ফাজি বান্ধবীরা আমার পাশেই বসিয়ে দিয়ে বলল -খুব ভাল মানিয়েছে তোমাদের। আমরা দুজনেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। কেক কাটবে রাত ১২টায়, তাই হাতে প্রচুর সময়ছিল বলে সবাই ছাদে গিয়ে গানের কলি খেলার প্ল্যান করল। কিন্তু আমি প্রপোজ করার সুয্রগ খুঁজছিলাম। তাই গানের কলি না খেলে ছাদের অন্য পাশে গিয়ে বসে থাকলাম। হঠাৎ নিতু এসে আমাকে প্রশ্ন করলো- কেমন আছেন? আমি ভেবাচেকা হয়ে উত্তর দিলাম- ভাল আছি, তুমি? নিতু ও উত্তর দিল ভাল। আর বলল আপনি কি কাপুরুষ নাকি? আমি কেন তা জানতে চাইলে নিতু বলল- একবছর পাড়িয়ে গেল ভালবাসার কথাটা কখন বলবেন? আমি আরেকজন কে বিয়ে করে পেলার পর?? আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলতে লাগলাম- ইয়ে মানে........ না।
নিতু বলল- কি ইয়ে মানে? এখন বললে বলুন নইতো পরে আর বলতে পারবেন না। আমি জানি আপনার কখনও সাহস হবেনা প্রপোজ করার তাই আমাকে বাধ্য হয়ে জোর করে করাতে হবে। আমি ততক্ষণাৎ হাঁটু গেরে বসে দুই হাত নিতুর দিকে বাড়িয়ে বলে দিয়েছি i love you nitu, i love you very much....

নিতু আমার হাতে হাত রেখে বলে দিল , বুদ্ধুটা তাহলে সুপুরুষ হয়েছে, আমিও তোমাকে ভালবাসি।এই বলে আমার বুকে জাপটে পড়ে ছিল মেয়েটি। কিন্তু আমি বা নিতু কেউ জানতাম না যে আড়াল থেকে বাকিরা সব দেখতেছে। এরপর হতে কখনো পার্কে ঘুড়া, কখনো রেস্টুরেন্টে একসাথে খাওয়া, ঘুরতে বের হওয়া, রিক্সায় চড়া ইত্যাদি। মাঝে রাগ করা, তারপর রাগ ভান্গানো।রাতে দিনে ফোনে কথা বলা। এভাবে কেটে গেলে বছর গুলো। কখন যে ৬টি বছর কেটে গেল টেরই পাইনি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে গাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে এস গেছে বুঝতেও পারিনি। আজ আমার পরীটাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে । আমি এখন পাশে বসে আছি নিতির। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেছি একজন আরেকজন কে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×