প্রতিদিন অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে ও পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্হা WHO ঘোষণা করেছে সড়ক দুর্ঘটনা এশিয়ার স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের জন্য ৩য় থ্রেট। সাউথ এশিয়া এবং এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনে এ সংখ্যা গ্রাজুয়েলী বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০০ সালে এ এলাকায় এক লক্ষ ৩৫ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৩ লক্ষ ৩০ হাজারে উন্নত হবে বলে WHOতার পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে। কম আয়ের দেশগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনা ৮৫% এবং মধ্য আয়ের দেশ গুলোতে মাত্র ১৫% [১]। জেডি জ্যাকব ও এরিওন থমস তাদের এক গবেষণা পত্রে দেখান বিশ্বের সবচেয়ে বেশী সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা হলো এশিয়া প্যাসিফিক এবং সর্বনিম্ন মধ্যপ্রাচ্য [২]। উপরের ১ নম্বর ছবিতে বিস্তারিত দেখুন। ১ ও ২ নং রেফারেন্স থেকে পরিষ্কার বলা যায় মধ্য আয়ের দেশগুলো সড়ক দুর্ঘটনা শক্তভাবে প্রতিরোধ করতে পেরেছে।
বাংলাদেশ প্রতি দশ হাজার গাড়ি প্রতি ৬০ টি দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) হিসাব মতে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ১২ জন। আহত হচ্ছে ১৭ জনের বেশী। বাংলাদেশ প্রকোশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার নেয়া ড. মাজাহারুল হক ১৯৭০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার একটা সার্বিক চিত্র প্রকাশ করেন তার গবেষনা পেপারে [৩]। ২ নম্বর চিত্র দেখুন। দুর্ঘটনার সংখ্যা কমার কোন লক্ষণ নেই বরং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
চিত্র-২: ড. মাজাহারুল হকের ১৯৭০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার একটা সার্বিক চিত্র।
ড. হকের মডেল থেকে বুঝা যায় সড়ক দুর্ঘটনার কি ভয়াবহ অবস্থা বাংলাদেশে। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর চার হাজার এর মত প্রাণহানি হয় কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা বার হাজারের মত। চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ফলে এ সংখ্যা ৯৩-৯৫ এর দিকে অংকটাই কমে এসেছিলো। এরপর থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা আবার বেড়েই চলেছে। সত্যই কি নিরাপদ সড়ক বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জে??
ড.হক ও হু এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর ২০ হাজার এর মত লোক সড়ক দুর্ঘটনার মারা যায় যদিও পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী এ সংখ্যা মাত্র ৪ হাজার। WHO বলছে পুলিশের রিপোর্টের সাথে বাস্তবের ভ্যারিয়েশনের পরিমাণ ৪০% থেকে ১০০%। ড. হকের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১ লক্ষ মানুষের মধ্য ১২.৭ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। অর্থনীতিতে এর ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির দুই শতাংশ। ড.হক তার পেপারে আরো বলেন ৭০ শতাংশের মত দুর্ঘটনা ঘটে মফস্বল এড়িয়েতে এর মধ্য ৫০% হাইওয়েতে। বাকি ২০% বিভিন্ন রোড ক্লাশে। রোড ক্লাশের মধ্য রোড ক্রসিং এ বেশী মারা যায়। রোড ক্রসিং এ বেশী ভাগ মারা যায় ১০-১৪ বছরের বয়স্করা এবং বিভিন্ন কোম্পানি শ্রমিকরা। মফস্বল এরিয়ার ৭০% সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্য বেশী সংঘটিত হয় ট্রাক ও বাস দ্বারা ।
নিচের গ্রাফটি বাংলাদেশ প্রকোশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কে এম মুনিরুজ্জামানের মডেল। ঢাকা এবং ঢাকার বাহিরে কোন ধরনের যানবাহন দ্বার কি ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় তার বিস্তারিত বর্ণনা এই গ্রাফটিতে। গ্রাফের সাদা অংশটি গোটা বাংলাদেশ সংঘটিত দুর্ঘটনা ও ছাই কালার অংশটি ঢাকার সংঘটিত দুর্ঘটনা প্রকাশ করছে।
ড. হক তার গবেষনায় বাংলাদেশের জাতীয় সড়ক N1 থেকে N9 নিয়ে কাজ করেন।
এর মধ্য ঢাকা টু তমাবিল(N2) ও ঢাকা টু মোমেনশিং (N3) এলাকায় দুর্ঘটনা সব চেয়ে বেশী। নিচের ডাটা টেবিল দেখুন:
N2 এবং N3 হাইওয়েতে দুর্ঘটনা বেশী হওয়ার কারণ হলো ঐ এলাকার হাইওয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত না সে জন্য বেশী দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।
নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ
১/ আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ডিজাইন যেমন- হাইওয়ে ৪ লেন, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে রোড ইন্সপেকশন, ড্রাইভারদের আলকোহোল চেকিং এর জন্য মোবাইল মেডিক্যাল চেকআপ।
২/ ড্রাইভারদের অভ্যাস বদল ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া ড্রাইভিং রহিত-করণ।
৩/ ট্রাফিক আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধি
৪/ দুর্ঘটনা কবলিত ব্ল্যাক স্পট নির্ধারণ এবং দুর্ঘটনা কারণ নির্ণয় ও বিশ্লেষণ ও ড্রাইভার ও জনসাধারণকে সচেতন।
৫/ রোড মারকিং এবং রোড সাইন স্থাপন এবং মেনে চলার জন্য ড্রাইভার ও জনসাধারণকে উৎসাহিত করণ।
৬/ দুর্ঘটনা গুলো কম্পিউটারাইজড করন এবং বিশ্লেষণ মাধ্যমে ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ এবং দেশের মানুষকে সচেতন।
উপরের বিষয়গুলোর উন্নতি করতে পারলে বাংলাদেশ নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা অবশ্যই সম্ভব। WHO স্পষ্ট বলছে কম আয়ের দেশগুলোতে এর হার ৮৫%।
উপরের ডাটা এনালইসেস থেকে স্পষ্ট যে কপালে মৃত্যু থাকলে হাজার সাবধান থাকলেও লাভ হবে না বা দুর্ঘটনা কার হাতে ঘটবে, এটা বলা যায় না। এ ধরনের কথাগুলোর কোন ভিত্তি নাই।
সড়ক দুর্ঘটনা স্বামী হারানোর ক্ষোভে মিশুক মুনীরের স্ত্রী মঞ্জুলি কাজী।
সুত্র:
১। Click this link
২। Click This Link
৩। Click This Link Md Mazharul.pdf