somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাবল স্পেস টেলিস্কোপঃ টাইম মেশিন

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাবল স্পেস টেলিস্কোপঃ পৃথিবীর বাইরে পৃথিবীর চোখ।

দুরের আকাশে কি আছে তা জানার আগ্রহ মানুষের আজন্ম। রাতের আকাশে তারা দেখে যতনা মুগ্ধ হয় তারচে বেশি প্রশ্ন জাগে মনে। কি আছে ওই আকাশে? এই জিজ্ঞাসা থেকেই কালে কালে মানুষ অনেক ধরনের দূরবীন, টেলিস্কোপ ইত্যাদি তৈরী করেছে আর দেখতে চেয়েছে সেই বহু দুরের গ্রহ নক্ষত্র। যতই নতুন নতুন তথ্য পাওয়া গেল ততই আরও বেশী আগ্রহ জন্মাল আরও গভীরে পৌছার। আরও দুরের জিনিষ দেখার। তাই প্রয়োজন পড়ল আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপের। টেলিস্কোপের শক্তি বাড়তেই থাকল। কিন্তু একসময় দেখা গেল টেলিস্কোপের শক্তি বাড়িয়েও আর স্পষ্ট ছবি পাওয়া যাচ্ছেনা। কারন আমাদের বায়ুমন্ডল। এই বায়ুমন্ডলের ধূলাবালীর জন্য স্পষ্ট ছবি পাওয়া সম্ভব না। তাছাড়া এগুলো ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় আছে এবং সেটা হচ্ছে রাতের বেলা। দিনের বেলা এগুলো ব্যবহার করা যায় না (আমি অপটিকাল টেলিস্কোপের কথা বলছি। রেডিও টেলিস্কোপ দিনের বেলায়ও কাজ করে)। তাই এমন একটা ব্যবস্থা করা দরকার যা ধূলাবালী থেকে মুক্ত এবং দিনরাত সবসময় কাজ করে। আর এর জন্য সবচে ভাল সমাধান হলো টেলিস্কোপটাকে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দেয়া। এবং হাবল হলো সেই টেলিস্কোপ যা পৃথিবীর বাইরে অবস্থিত। এবং সর্বদা চোখ রেখে চলেছে দুর থেকে দুর গ্যালাক্সির দিকে।

হাবলকে টাইম মেশিন বলার কারন হলো, হাবল যখন দূরের কোন গ্যালাক্সির দিকে চোখ রাখে তখন সে আসলে অতীতের দিকেই চোখ রাখে। ধরুন হাবল এই মুহুর্তে যে গ্যালাক্সির ছবি পাচ্ছে তা ৫০০০ আলোকবর্ষ দুরের। তার মানে হল গ্যালাক্সিটাকে এখন যে অবস্থায় দেখা যাচ্ছে আসলে তা ৫০০০ বছর আগেকার অবস্থা। আর এই গ্যালাক্সি ঠিক এই মুহুর্তে কি অবস্থায় আছে তা জানা যাবে ৫০০০ বছর পরে। সুতরাং নিশ্চিৎভাবেই হাবলের মাধ্যমে আমরা অতীতে চোখ রাখলাম।

হাবলের ইতিহাস আমি ছবির মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা করলাম।

লেম্যান স্পিটজার, স্পেস টেলিস্কোপের জনক। তিনি ১৯৪৬ সালে স্পেস টেলিস্কোপের সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেন।


হাবলের প্রাথমিক আয়না প্রস্তুত হচ্ছে পারকিন এলমার কর্পোরেশনে ১৯৭৯ সালে। ছবিতে ডঃ মার্টিন ইয়েলিন কে দেখা যাচ্ছে যিনি অপটিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন।


হাবল তৈরী হচ্ছে।


হাবলের খন্ডাংশের ভিউ।


হাবলের লো অরবিট।


হাবলের যাত্রা, ২৪শে এপ্রিল ১৯৯০।


অপটিকাল সিস্টেমের ত্রুটি। একটি নক্ষত্রের ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে আলো ফোকাসড না হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।


সার্ভিস মিশন-১। এ্যাস্ট্রোনটরা ত্রুটিযুক্ত অপটিকস সরিয়ে নতুন ডিভাইস স্থাপন করছেন।


সার্ভিস মিশন-১ এর পর পরিষ্কার ছবি


সার্ভিস মিশন-৩এ। এ্যাস্ট্রোনটরা জাইরোস্কোপ প্রতিস্থাপন করছেন।


সার্ভিস মিশন-৩বি। স্পেস শাটল হাবলের সাথে যুক্ত হচ্ছে।


হাবলের তোলা খুব জনপ্রিয় একটা ছবি "পিলারস অব ক্রিয়েশন"।


হাবল আলট্রা ডীপ ফিল্ডের ছবি। এখানে প্রতিটি আলোকবিন্দু এক একটা গ্যালাক্সি।


সার্ভিস মিশন-২ এর সময় স্পেস শাটল ডিসকভারী থেকে তোলা হাবলের ছবি।


হাবলের রেপ্লিকা

এক নজরে হাবলঃ

প্রতিষ্ঠান-------------------------> নাসা/ইএসএ/এসটিএসসিএল
উৎক্ষেপন তারিখ-----------------> ২৪শে এপ্রিল ১৯৯০
মিশন কাল----------------------> ১৮ বছর ১১ মাস
ভর-----------------------------> ১১,১১০ কেজি
কক্ষপথের ধরন------------------> নিয়ার সার্কুলার (লো আর্থ অরবিট)
কক্ষপথের উচ্চতা----------------> ৫৫৯ কিলোমিটার
প্রদক্ষিন সময়--------------------> ৯৬-৯৭ মিনিট
প্রদক্ষিন বেগ---------------------> ৭,৫০০ মিটার/সেকেন্ড
অভিকর্ষজ ত্বরণ------------------> ৮.১৬৯ মিটার/সেকেন্ড*সেকেন্ড
ব্যাস----------------------------> ২.৪ মিটার
ফোকাল ল্যাংথ------------------> ৫৭.৬ মিটার

সংযুক্ত যন্ত্রপাতিঃ

ইনফ্রারেড ক্যামেরা/স্পেকট্রোমিটার
অপটিকাল সার্ভে ক্যামেরা (বেশির ভাগ সময় ব্যর্থ)
ওয়াইড ফিল্ড অপটিকাল ক্যামেরা
অপটিকাল স্পেকট্রোমিটার/ক্যামেরা (ব্যর্থ)
গাইড্যান্স সেন্সর


বিগত প্রায় দুই দশক ধরে হাবল কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। এই সময়ে হাবল আমাদের পাঠিয়েছে অজস্র ছবি এবং সার্ভে ডাটা যা এ্যাস্ট্রনমিতে বিশেষ অবদান রেখেছে। হাবল ডাটা বহু পুরনো প্রশ্ন এবং সমস্যার সমাধান দিয়েছে। বিশেষ করে মহাবিশ্বের বয়স পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরুপন করা সম্ভব হয়েছে। হাবলের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে গ্যালাক্সিগুলোর সঠিক দুরত্ব নির্ণয় করা।

কিন্ত আমাদের এই পরম বন্ধুটির আয়ু শেষ হয়ে এসেছে। আগামী ২০১৩ সালের জুন মাসের পর কোন এক সময় হাবলকে ছুটি দেয়া হবে। আর তার জায়গা দখল করতে আসবে "জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ"- হাবলের চেয়ে উন্নত প্রযুক্তির এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। আর আমরা চেয়ে আছি আরও অতীত জানতে, সেই অতীত যখন বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়েছিল।


চিত্র ও তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:২৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×