ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম
মাস হল রমযান। এই মাসে বিশ্বব্যাপী
মুসলিমগণ সাওম বা রোজা পালন
করে থাকে। ইসলামের পাঁচটি
স্তম্ভের মধ্যে রোজা তৃতীয়। চলিত
মাসের ১৮ তারিখেই পবিত্র
রমজানুল মোবারক শুরু (রমজান মাসের
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। তাই আসুন
জেনে নেই রমাজানের গুরুত্বপূর্ণ
কিছু বিধি-নিষেধ।
রমজান কি?
রোজা বা সাওম হল প্রাপ্তবয়স্ক
মুসলিম ব্যক্তিরা সুবহে সাদিক
থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার
পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা
গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর
ক্ষেত্রে) যৌনসংগম থেকে বিরত
থাকা। তবে অসুস্থ, গর্ভবতী,
ডায়বেটিক রোগী, ঋতুবর্তী
নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা
হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে তারা
কাজা আদায় করে নিতে পারবেন।
রোজা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক
মুসলমানের উপর ফরজ। রমজানের
রোজা রাখার শুরুর প্রথম দশ দিন
রহমতের, মাঝের দশ দিন মাগফেরাত
কামনার আর শেষ ১০ দিন হলো
নাজাতের। অন্যান্য প্রতিটি
মাসের চেয়ে রমজান মাস সর্বোত্তম
বলে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ
ঘোষণা দিয়েছেন।
এ মাসে মুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে
থাকেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ
মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে
বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসের
লাইলাতুল কদর নামক রাতে কুরআন
নাযিল হয়েছিল, যে রাতকে
আল্লাহ তাআলা কুরআনে হাজার
মাস অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। এ
রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের
ইবাদতের থেকেও অধিক সওয়াব
পাওয়া যায়।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের
জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো
মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য
রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির
মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ
মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের
শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর
মুনাফিকরা তাতে মানুষের
উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ
করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর
মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।
রোজার নিয়ত:
নাওয়াইতু আন আছুমাগাদাম মিন
শাহরি রমাজানাল মুবারাকি
ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু
ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নীকা
আন্তাস সামিউল আলীম।
ইফতারির দোয়া:
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া
তাওয়াক্কালতু আলা রিজক্কিকা
আফতারতু বি-রহমাতিকা ইয়া
আরহামার রহিমীন।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ:
১. ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে।
২. স্ত্রী সহবাস করলে ।
৩. কুলি করার সময় হলকের নিচে
পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার
কথা স্মরণ না থাকলে রোজা
ভাঙ্গবে না)।
৪. ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে।
৫. নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে
ওষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।
৬. জবরদস্তি করে কেহ রোজা
ভাঙ্গালে।
৭. ইনজেকশান বা স্যালাইরনর
মাধ্যমে দেমাগে ওষধ পৌছালে।
৮. কংকর পাথর বা ফলের বিচি
গিলে ফেললে।
৯. সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার
করার পর দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি।
১১. দাঁত হতে ছোলা পরিমান খাদ্য-
দ্রব্য গিলে ফেললে।
১২. ধূমপান করা, ইচ্ছাকৃত লোবান বা
আগরবাতি জ্বালায়ে ধোয়া গ্রহন
করলে।
১৩. মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে ।
১৪. রাত্রি আছে মনে করে সোবহে
সাদিকের পর পানাহার করলে।
১৫. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে
সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা হতে
জাগরিত হওয়া এ অবস্থায় শুধু কাজা
ওয়াজিব হবে।
রোজার মাকরুহ সমূহ:
১. অনাবশ্যক কোনো জিনিস
চিবানো বা চাখা
২. কোনো দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখা
৩. গড়গড় করা বা নাকের ভেতর
পানি টেনে নেয়া কিন্তু পানি
যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়,
তাহলে রোজা ভেঙে যাবে
৪. ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে
গলাধঃকরণ করা
৫. গীবত, গালা-গালি ও ঝগড়া-
ফাসাদ করা।
৬. সাড়াদিন নাপাক অবস্থায়
থাকা।
৭. অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা।
৮. কয়লা চিবিয়ে অথবা পাউডার,
পেস্ট ও মাজন ইত্যাদি দ্বারা দাঁত
পরিষ্কার করা
যে কারণে রোজা না রাখলে
ক্ষতি নেই। তবে কাযা আদায় করতে
হবে:
১. কোনো অসুখের কারণে রোযা
রাখার শক্তি হারিয়ে ফেললে
অথবা অসুখ বৃদ্ধির ভয় হলে। তবে পরে
তা কাযা করতে হবে।
২. গর্ভবতী স্ত্রী লোকের সন্তান বা
নিজের প্রাণ নাশের আশঙ্কা হলে
রোজা ভঙ্গ করা বৈধ তবে কাযা
আদায় করতে হবে।
৩. যেসব স্ত্রী লোক নিজের বা
অপরের সন্তানকে দুধ পান করান
রোজা রাখার ফলে যদি দুধ না
আসে তবে রোজা না রাখার
অনুমতি আছে কিন্তু পরে কাযা
আদায় করতে হবে।
৪. শরীয়তসম্মত মুসাফির অবস্থায়
রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
তবে রাখাই উত্তম।
৫. কেউ হত্যার হুমকি দিলে রোযা
ভঙ্গের অনুমতি আছে। পরে কাযা
করতে হবে।
৬. কোনো রোগীর ক্ষুধা বা
পিপাসা এমন পর্যায়ে চলে গেল
এবং কোনো দ্বীনদার মুসলিম
চিকিৎসকের মতে রোজা ভঙ্গ না
করলে তখন মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। তবে
রোযা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। পরে তা
কাযা করতে হবে।
৭. হায়েজ-নেফাসগ্রস্ত (বিশেষ
সময়ে) নারীদের জন্য রোজা রাখা
জায়েজ নয়। পরবর্তীতে কাযা করতে
হবে।