একটি শিল্পের ধ্বংসের জন্য আমাদের সবসরকারকে জনগনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তা 'বাংলাদেশ রেলওয়ে'।
... ব্রিটিশ আমলে কতটুকু রেলপথ নির্মিত হয় জানেন? - ২ হাজার ৮শ ৫৮কিমি। ... এমনকি পাকি সরকারও ২৭০ কিমি রেলপথ নির্মাণ করে। আর আমাদের উন্নয়নের জোয়ারে, উন্নতির তুফানে, ডিজিটালের ঘূর্ণিঝড়ে থাকা সরকারগুলো স্বাধীনতার পর ৪২ বছর রেলওয়ের উন্নতিতো করেনি উল্টো-
১. দেশের ৪৪০টি রেল স্টেশনের মধ্যে লোকবলের অভাবে ৯৮টি বন্ধ হয়ে গেছে;
২. রেলওয়েতে লোকবল ৫৮,০০০ থেকে এখন মাত্র ২৭৯৭১ জন;
৩. ২২০ কিমি রেলপথ বন্ধ
৪. রেলওয়ে এখন সবচে বড় লোকসানের খাত।
এখনও ডিজিটাল বাংলাদেশের ২০ জেলা রেল নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০ জোড়া কমিউটার ট্রেন আমদানি করা হয় চীন থেকে। তার বেশিরভাগই এখন পুঙ্গু, ডকে পড়ে আছে।
... রেলওয়ে ধ্বংসের প্রধান কারন হল- ধনীদেশগুলোর চাপ। তাদের গাড়ি, ইঞ্জিন এসব বিক্রির জন্য রেলওয়েকে পুঙ্গু করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ধনীদেশগুলো তাদের রেলওয়েকে নিয়ে গেছে সুপরিসর পরিবহনে, যোগাযোগের উৎকর্ষে।
আমেরিকায় রেলপথ আছে- ২,২৪,৭৯২ কিমি ( রেলপথ আমাদের ৭২গুন; কিন্তু তাদের জনসংখ্যা আমাদের দ্বিগুণ);
চায়নায়- ১০৩১৪৪ কিমি;
রাশিয়ায়- ১২৮০০০ কিমি;
ভারতে- ৬৪,৪৬০ কিমি;
জাপান- ২৩০২৩ কিমি।
সাউথ কোরিয়া আয়তনে আমাদের অর্ধেক কিন্তু তাদের রেলওয়ে আমাদের দ্বিগুণ- ৫২২৪ কিমি; আমাদের চারভাগের একভাগ ছোটদেশ সুইজারল্যান্ডে রেলওয়ে আমাদের দ্বিগুণ- ৫২২০ কিমি; আমাদের পাঁচভাগের একভাগ বেলজিয়ামে রেলপথ- ৩৫১৩ কিমি।
এগুলোকি আমাদের সরকার, যোগাযোগমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী দেখে না? এমনকি আমরা যখন রেলপথ ধ্বংস করছি তাদের ভেতরে অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে- কে কত উন্নত, দীর্ঘ, দ্রুতগামী ট্রেন চালু করতে পারে।
আরেকটি কারন আমাদের দেশীয় বাস কোম্পানিগুলোর অব্যাহত চাপ। যেমন ব্রিটিশরা ঢাকা-চট্টগ্রাম- কক্সবাজার প্রকল্পের যে রেললাইনটি দো- হাজারী নিয়েছিলো; স্বাধীনতার পর ৪২ বছর ধরে প্রতিবছর ১ কিমি করে বাড়ালেও তা কক্সবাজার পোঁছাতো। সেই লাইনটিও এখন বন্ধ হওয়ার পথে। এই রেললাইনটি নির্মিত হলে এসআলম, সৌদিয়া, সিল্কলাইন, হানিফ এর মত ১২টি হাইওয়ে বাসকোম্পানির ব্যবসায় আঘাত আসবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ১৬ কোটি জনগনের থেকেও ১২ টি বাসকোম্পানির মালিকের স্বার্থ বড়। আমাদের রেলওয়ে লোকসান খাত, ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম আয়ের খাত।
কেন রেলওয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন?
সবচে দ্রুত বেগ দেয়া যায় আকাশপথে, কিন্তু বিপুল খরচ; সবচে কম খরচ জলপথে, কিন্তু অতিসল্প বেগ; সবচে সহজ সড়কপথ নির্মাণ, কিন্তু পরিবহন ঝুঁকি। আর অন্যদিকে গতি, কমখরচ, স্বল্পঝুঁকি সবমিলিয়ে রেলওয়ে কার্যকর পরিবহন। বিশ্বের সবদেশ যখন রেলপথ বাড়াচ্ছে; ইন্টারপ্রবিন্স, ইন্টারসিটি, ইন্ট্রাসিটি যোগাযোগে রেলওয়েকে প্রধান মাধ্যম করছে; আমরা তখন ৮টার ট্রেন ১২ টায় ছাড়ছি; ঢাকা-চট্টগ্রাম যেতে লাগে ১০ ঘণ্টা, টিকেট পেতে লাগে ৬ ঘণ্টা। ট্রেনে আলো নেই, পানি নেই। বগি, সিট, টয়লেট, দরজা জানালা ভাঙাচোরা এবং ফ্যান অচল।
প্রিয় রাজন্যবর্গ, আপনাদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আছে, এয়ারটিকেটের ব্যবস্থা আছে, আপনাদের চলাচলের সময় ২ ঘণ্টা আগে রাস্তা ফ্রী করা হয়। আমাদের জন্য কেবল আসন্ন বাজেটে রেলওয়ে খাতকে আধুনিকীকরণ করার উদ্যোগ নিন; আর দুই- একটা কালো বিড়াল ধরুন।
-লিটন চন্দ্র ভৌমিক