somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনোয়ারায় কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতের ফাঁদ!

১৫ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কার কথা জেনেও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সব উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে সরকার । উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন না করেই ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রের কাজ চলছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীরও আপত্তি সত্ত্বেও এই বিদ্যুত্ কেন্দ্রটি আনোয়ারায় স্থাপনে বদ্ধপরিকর সরকার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন অনেকটা ভারতের ফাঁদে পড়েই সরকার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন থেকে পিছ পা হচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদফতরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে সারা বিশ্ব যেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যু‍ৎকেন্দ্র থেকে সরে আসছে, তখন পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

কর্ণফুলীর মোহনায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সামনে এ বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রটি হলে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। প্রকল্প এলাকার মাত্র সাত কিলোমিটারের মধ্যে থাকা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামাও হুমকির মধ্যে পড়বে। পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যু‍ৎকেন্দ্র থেকে দূষিত কয়লাধোয়া পানি ও ডাস্ট কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ার কারণে নদীর পানি দূষিত হবে। অন্যদিকে দেশের অন্যতম সমুদ্রসৈকত আনোয়ারার পারকি বিচ, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ বেইসসহ চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন কর্ণফুলীর মোহনায় প্রায় অর্ধ লাখ পরিবারের বসতি উচ্ছেদ করে ব্যয়বহুল এই বিদ্যু‍ৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় শুরুতেই আইনগত জটিলতায় পড়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি। কিন্তু নিয়মনীতি, আইনকানুন, স্থানীয় জনতা ও পরিবেশবাদীদের আপত্তির তোয়াক্কা না করেই পরিবেশের জন্য হমুকিস্বরূপ এই বিদ্যু‍ৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ভারত সরকারের ঋণে ১৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যু‍ৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই মধ্যে ভারত সরকারের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তিও চূড়ান্ত করেছে। বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রটির জন্য চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সংশ্লিষ্ট আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়া, গোবাদিয়া, মাঝেরচর, ফুলতলী, পশ্চিমচাল, চালিতাতলী, বোয়ালিয়া, দুধকোমড়া, বারাসাত, পশ্চিম তুলাতুলি ও উত্তর পারুয়াপাড়া এলাকার ৩ হাজার ১৮৮ একর জায়গায় নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে। বিপুল পরিমাণ এলাকায় দীর্ঘদিনের বসতি থাকা প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের সঙ্গে বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও উচ্ছেদের শিকার হবে।

প্রকল্পের শুরু থেকেই কর্ণফুলীর মোহনায় বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে আসছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগ-বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদফতর। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের আপত্তিসহ সমুদ্রবন্দর সন্নিহিত এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যু‍ৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-বন্দর-বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটি। এছাড়া একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতে রিট পর্যন্ত করা হয়েছে। আদালত কেন্দ্রটি স্থাপনের আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিনামা ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পিডিবি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশনা না মেনেই সরকার কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যু‍ৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবেশ অধিদফতরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে সারা বিশ্ব যেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসছে, তখন পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম বন্দরসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসংলগ্ন এলাকায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। তিনি বিদেশি একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেন, কয়লা পোড়ানোর পর এর উপজাতগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবেশ দূষণের জন্য যে ক’টি প্রতিষ্ঠান দায়ী তার অগ্রভাগে রয়েছে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ থেকে এক-তৃতীয়াংশ কার্বনডাই-অক্সাইড, ৪০ শতাংশ মার্কারি (পারদ), এক-চতুর্থাংশ নাইট্রোজেন অক্সাইড ও দুই-তৃতীয়াংশ সালফার ডাই-অক্সাইড উত্পন্ন হয়। সালফার ডাই-অক্সাইডের কারণে হৃদরোগ ও অ্যাজমা এবং নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের কারণে ফুসফুসের টিস্যুর মৃত্যু হয়। গবেষণায় বলা হয়, কয়লাচালিত বিদ্যুেকন্দ্র থেকে উপজাত হিসেবে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, কোবাল্ট, লেড (তামা), ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, রেডিওনিউক্লাইড (তেজস্ক্রিয় পদার্থ) প্রভৃতি উত্পন্ন হয়। সব ধরনের কয়লা থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে এসব দূষিত পদার্থ উত্পন্ন করা হয়। এছাড়া গড়ে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনে ২৫ পাউন্ড মার্কারির নির্গমন হয়। সে হিসেবে আনোয়ারায় ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন ৩২৫ পাউন্ড পারদ নির্গত হবে। এগুলোর সবই পরিবেশ, মানবদেহ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

দেশের এত ক্ষয়ক্ষতি শিকার করেও সরকার পিডিবির মাধ্যমে আনোয়ারাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ জোরেশোরে এগিয়ে নিচ্ছে। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো অনাপত্তিনামা নেয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, পিডিবি এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। তাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র পাওয়ার পর আমরা প্রকল্প স্থানের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করে এলাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্থান নির্ধারণ করার এখতিয়ার পিডিবির নেই বলেও জানায় সূত্রটি।

তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ অন্য বিষেশজ্ঞদের মতে আনোয়ারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে দেশের বৃহত্তর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে।

তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকেও আনোয়ারায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলানিউজ২৪.
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×