"ধর্মের বেশে মোহ এসে যারে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।"- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ধর্ম মানে আসলে একটা বিশ্বাস, একটা নির্ভরতা। ভিন্নতা শুধু এই নির্ভরতা খোঁজার রাস্তার বহিরঙ্গে। আর ধর্মের কারনে মানুষে মানুষে বিভেদের প্রাচীর তোলা, ঘৃণা করতে শেখানো কিছু নরাধম, কিছু কুসংস্কার আবর্জনার মতো পড়ে থাকে এই রাস্তার দুধারে। কিন্তু সব ধর্ম শেষপর্যন্ত যে মোহনায় এসে মেশে তার নাম মানবতা। আর উৎসব হল এই মানবতার উদযাপন। উৎসব মানে খুশি, উৎসব মানে ভালোবাসা, উৎসব মানে কাছে আসা। উৎসব মানে বন্ধুত্বও।
তবে দুর্গাপুজো বোধহয় শুধু এই 'পুজো'র তকমা ছাড়িয়েও আরো বেশি কিছু। দুর্গাপুজো মানে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ, না শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন পৃথিবীর সমস্তপ্রান্ত জুড়ে পাঁচদিন ধরে চলা শিল্পের এক বিরাট এবং ঊজ্জ্বল প্রদর্শন। দুর্গাপুজোতে যেভাবে উঠে আসছে প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্প, লোকগান তথা ক্রমাগত বিবর্তিত হতে থাকা শিল্পের অন্যান্য ধারা, তাতে একে নিছক আর পাঁচটা পুজোর সাথে এক করে ফেলা বোধহয় ঠিক নয়। শুধু তাই নয়, মানুন বা নাই মানুন দুর্গাপুজো মানে এখন এক বিরাট ইন্ডাষ্ট্রি, বোধহয় এ রাজ্যের সব থেকে বড়ও। কর্মসংস্থান এক বিপুল সংখ্যক মানুষের। এই পোড়া রাজ্যের জন্য সেটা বুঝি কম কিছু?! আর মানুষতো ধর্মের কাছে সাধারনত সেই নির্ভরতাটাই খোঁজে ভালো থাকার, সন্ততিকে দুধে ভাতে রাখার। হয়তো বিশুদ্ধতাবাদীরা ভুরু কোঁচকাবেন জাকজমকের কাছে পুজোর প্রাণ হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে। তবে একথা তো আমরা সবাই জানি সমুদ্রমন্থনে অমৃতের পাশাপাশি উঠে আসে হলাহলও। সেই হলাহলেই জন্ম নেয় কিছু অর্থহীন কৃত্রিমতা । কিন্তু শেষপর্যন্ত মানুষ খুঁজে ফেরে তার শিকড়। আঁকড়ে ধরে শিকড়ে বাঁধা মাটিগুলোই। শিকড়ের জন্য অন্তহীন এই ভালোবাসার নামই উৎসব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৩