somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আব্দুল মান্নান মল্লিক
ইং ১৯৬২ সনের ১১ই সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার মরাদিঘী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করি। মাধ্যমিক পাশ করে সংসার জীবনে জড়িয়ে পড়ি। কর্মরত ব্যস্ততম জীবনের অবসর সময়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে মানব সমাজ ও প্রকৃতির হাত ধিরে লিখতে থাকি গল্প ও কবিতা।

গল্প কাল্পনিক মন্তব্য সত্য

২০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প কাল্পনিক মন্তব্য সত্য

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দীর্ঘদিন ধরে একটি ভুলকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি। সেই ভুল আজও আমার মনকে বিচলিত করেই চলেছে। কি সেই ভুল, সেটা বুঝাতেই আজ আমি একটি কাল্পনিক গল্পের ছায়াতলে বসেছি।
সে অনেকদিন আগের কথা। প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। ক্লাসের মাস্টার মশাই তখন প্রতিদিন কিছু না কিছু প্রশ্ন দিতেন, তার উত্তরটা পরেরদিন বাড়ি থেকে লিখে আনতে বলতেন। যথারীতি সেদিনও দিলেন এমনই একটি প্রশ্ন।
প্রশ্নটি ছিল; শূন্যস্থান পূরণ,
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে — করে কাল ভাত খায়নি।
যথারীতি প্রতিদিনের ন্যায় পরেরদিন উত্তর লিখে স্কুলে গেছি। অন্যন্য ছেলেদের সাথে টেবিলের উপর খাতা জমা রেখে, মাস্টার মশাই আসবেন সেই অপেক্ষায় বসে রয়েছি।
যথাসময়ে মাস্টার মশাই ক্লাসে প্রবেশ করলেন।
আমরা উঠে দাঁড়াতেই মাস্টার মশাই সবাইকে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে বলেন।
আমরা বসে পড়তেই মাস্টার মশাই একটা একটা করে নাম ডেকে ডেকে হাজিরা খাতায় আমাদের নাম নথিভুক্ত করেন।
তারপর শুরু হল খাতা দেখার পালা। একটা একটা করে খাতা দেখে, আর যে যার মতো রাইট মার্ক দিয়ে ফেরত দেন।
একসময় আমার খাতাটি হাতে নিয়ে মাস্টার মশাই গম্ভীর স্বরে আমাকে কাছে ডাকলেন।
আমি কাছে যেতেই জোরসে দিলেন এক বেত্রাঘাত।
তারপর আমি ডান হাত বাম হাতের বাহুতে দিয়ে দেখি, এক বেত্রাঘাতেই ফুলে উঠেছে।
মাস্টার মশাই বললেন: তোর মতো ছাত্রের এমনটাই হওয়া উচিত। যা বস-গে, গেঁয়ো কোত্থেকে যে এসেছে।
আমি চুপ-চাপ নিজের জায়গায় বসে পড়ি।
মাস্টার মশাই তখন পেন্সিল হাতে বোর্ডে লিখে বুঝাতে থাকেন।
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে — করে কাল ভাত খায়নি।
ওই যে শূন্যস্থান জায়গা, ওখানে “রাগ” শব্দটি ব্যবহার করতে হবে, তবেই বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে, যেমন,
রাজু’র বাবা রাজুকে মেরেছিল, তাই সে “রাগ” করে কাল ভাত খায়নি।
তোমরা সবাই ঠিকই লিখেছ। আর মান্নান লিখেছে সম্পূর্ণ ভুল। আসলে গেঁয়ো ছেলে, তাই মান্নানের ভাষা জ্ঞানটুকুও নাই।
অন্যান্য ছেলেরা জিজ্ঞাসা করে; মান্নান কি লিখেছে স্যার?
স্যার বলেন: মান্নান রাগ না লিখে; লিখেছে ”আগ”, তাই আমি নিজেই লজ্জিত।
মাস্টার মশায়ের কথা শুনে ক্লাসের যতো ছেলেরা সবাই হো-হো করে হাসতে থাকে আর বলে, গেঁয়ো ছেলেরা সব এমনই হয় স্যার।
আমি মাস্টার মশায়ের অনুমতি নিয়ে বলতে শুরু করি:
আমি ছাত্র আপনি আমার শিক্ষক। তাই আমার কথা সম্পূর্ণ হলে, আমি আশা করবো আমার ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে দিবেন।
শোনেন মাস্টার মশাই, আমি গেঁয়ো ছেলে সেটাই আমার গর্ব। আমি যতটুকু জানি, “রাগ” শব্দের অর্থ শ্রুতিধারা। যার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিদ্যমান। স্বর, তান ও লহরী, নানান প্রকার হতে পারে। যা মানুষের মনকে সিক্ততায় স্পন্দিত করে তোলে।
আমি দেখলাম আপনার ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে “রাগ” শব্দটির সাথে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছিনা, তাই আপনার ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে রাগ শব্দটি ব্যবহার করতে আমার বিবেক থেকে বাধা দিয়েছিল।
তাই বলে গেঁয়ো ভাষা?
না মাস্টার মশাই ভাষা যা তাই। ভাষা কখনো গেঁয়ো বা শহুরে আলাদা হতে পারে না। তবুও যদি বলেন তাহলে, আমি বলবো ভাষার উৎপত্তিস্থল এক্কেবারে গেঁয়ো গ্রাম। তাছাড়া আপনি যেটা গেঁয়ো ভাষা বলছেন, তাহলে শুনুন মাস্টার মশাই, “আগ” এই শব্দটি এসেছে হিন্দি ভাষা থেকে। এর বাংলা অর্থ আগুন।
অতএব কথা না বাড়িয়ে আসুন মাস্টার মশাই, দেখি আমরা কোথায় কেমনভাবে কতো জায়গায় ভুল শব্দ বসিয়ে থাকি। “আগ” অর্থ যদি আগুন হয়!
রাগে আমার গা গরগর করছে। “রাগ” কখনো গরগর করেনা, “আগ” গরগর করে।
রাগের জ্বালায় ছটফট করে। “রাগ” কখনো জ্বলে না, “আগ” জ্বলে।
“রাগ” ধরাবি না, আমার মাথা গরম হলে রক্ষা পাবি না। “রাগ” কখনো ধরে না বা গরম হয়না। “আগ” ধরে এবং গরম হয়।
এবার বলেন স্যার, এমন কি ভুল আমি করেছি?
ঠিক আছে, ঠিক আছে; অন্য একদিন বুঝিয়ে বলবো, বলে মাস্টার মশাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন।
তারপর কোনোদিনই স্যার বুঝিয়ে বলেননি। আমিও আর জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাইনি। সেই যে বেত্রাঘাত, তাই আর কি!

( আমার যা বলার বলেছি। আপনাদের বলার থাকলে অবশ্যই বলবেন।)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×