somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরুর মাংস কী মুসলমানদের জন্য হালাল?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকে শুনেছি গরুর মাংস না খেলে নাকি পুরোপরি মুসলমান হওয়া যায় না।আর শুকুরের মাংস খেলে সে হিন্দু হয়ে যায়।

বাড়িতে ছোটবেলায় কখনও গরুর মাংস খাইনি।পাশে হিন্দুগ্রাম ছিল।তাদের অনেকের সাথে আমাদের পরিবারের ঘনিষ্টতা ছিল।তারা বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আমাদের বাড়িতে আসতো এবং মা তাদের না খাইয়ে ছাড়তেন না।হিন্দু মানুষ গরুর মাংস খায় না।প্রতিবেশীদের কথা ভেবে অথবা অন্য যে কোন কারণে হোক আমাদের বাড়িতে কখনও গরুর মাংস রান্নাও হত না।

কিন্তু আমরা যখন মুসলমান বন্ধুদের সাথে মিশতাম তখন তারা একথা বলে আমাদের ছোট করতো।তারা আরও বলতো-গরুর মাংসের স্বাধ নাকি অনেক অনেক ভাল।ভিতরে ভিতরে লোভ জমতে থাকে এবং খাঁটি মুসলমান হওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়।

তখন বেশ বড় হয়েছি।বড় ভাই একদিন হটাৎ করে গরুর মাংস কিনে আনলেন।আমাদের ভাইবোনদের মাঝে আনন্দের ঝলক বয়ে গেল।সবাই এই ভেবে খুশি আজকের পর থেকে কেউ আমাদের ছোট করতে পারবে না এবং সেই সাথে পুরোপুরি মুসলমান হওয়া যাবে।
রান্নার পরে সবাই খেতে বসলাম এবং খেয়ে সকলে তৃপ্ত হলাম।সত্যিই অপূর্ব স্বাধ।সেই থেকে গরুর মাংস খাওয়া শুরু এবং আজ অবধি শেষ হয়নি।জীবনে অনেক পশুর মাংস খেয়েছি কিন্তু গরুর মাংসের মত স্বাধ কখনও পাইনি।কিন্তু গরুর মাংস খেয়ে মুসলমান হওয়ার বিশেষ কোন কারণ আজও খুজে পাইনি।

আসলে গরুর মাংস খেলে কী খাটি মুসলমান হওয়া যায়?

ইসলাম ধর্মে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অনেক বেশি।এটা খুবই ভাল কথা এবং এটাকে সমর্থন করবে না এমন কাউকে খুজে পাওয়া কঠিন হবে।ইসলাম ধর্মে বলা হয় পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ।তাইতো নামাজ পড়ার আগে ওযু করে পরিচ্ছন্ন হতে হয়।ওযুতে অনেক কাজ করতে হয়।তাতে অনেকগুলো ফরজ কাজ আছে,অনেকগুলো ওয়াজিব কাজ আছে,অনেকগুলো সুন্নত আছে।শুধু তাই নয়,সকল কাজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হয় এবং প্রতি কাজ শুরুর আগে বিশেষ দোয়া দরুদ পড়তে হয়।গরু জবাই করার সময়ও এমন দোয়া দরুদ পড়তে হয়।

কিন্তু একটা প্রশ্ন আমাকে খুবই ভাবায়।গরুর মাংস কী হালাল? গরু কী পবিত্র? গরু কখনও কী ওযু করে? পায়খানা শেষে মল বর্হিমুখ অংশ কখনও পানি দিয়ে পরিষ্কার করে? প্রসাব শেষে ঢিল বা টিসু ব্যবহার করে।পানি ব্যবহার করে?পায়খানা বা প্রসাব শেষে ওযু করে?ওযু দূরে থাক অন্তত হাত-পা পরিস্কার করে? সহবাস শেষে তাদের যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করে?সে কী হালাল খাবার কায়? সে কী অন্যের খাবার জোর করে বা চুরি করে খায়?খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়? কখনও নামাজ পড়ে?ক খনও আল্লাহকে ডাকে?সে কী আস্তিক না নাস্তিক? সে কী কোন মুসলমানকে দেখে সালাম দেয়?সালাম দিতে না পারুক অন্তত ইশারা করে?

সব উত্তরগুলো যদি না হয়,তাহলে আপনিই বলুন গরুর মাংস খাওয়া কী হালাল?

আমার কাছে আরও তথ্য আছে-বাংলাদেশে ঈদের সময় যে গরুগুলো মহান আল্লাহ রব্বুলের খুশীর জন্য জবাই করা হয়,তাদের অধিকাংশ ভারত থেকে আমদানী করা হয়।সেখানকার অধিকাংশ মানুষ হিন্দু। আর এই হিন্দুদের দ্বারা লালিত পালিত গরু আরও কতটুকু হালাল? তারা নিশ্চয় কোরাণ হাদিস মতে এই গরুগুলোকে বড় করে না,বরং তাদের ধর্মমতে মাঝে মাঝে গরুগুলোর কপালে সিদুরও দেয়?
তারা ও আবার কতবড় স্বার্থপর ও হারামী-যে গরু তাদের দেবতা,তাদেরকে তারা বিধর্মী মুসলমানদের কাছে বিক্রি করে টাকার জন্য।আবার তাদের দেবতা বিক্রি করে মুসলমানদের আল্লাহকে খুশি করছে?ছি!ছি! ছি!এটাও কী কখনও মেনে নেওয়া যায়?

আবার দেখুন সব গরুগুলোকে জবাই করে তার মাংসের সবটুকু কিন্তু এই আমরাই মানে মানুষেরা খাচ্ছি?

আবার ভাবুন আল্লাহ তো এই দুনিয়ার সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।সব সৃষ্টির পিছনে নিশ্চয় তার ভালোবাসা আছে!অথচ তিনি গরুকে এত ভালোবাসলেন আর শূকরকে এত ঘৃণা করলেন কেন?শূকর খেলে নাকি মানুষ হিন্দু হয়ে যায়।শূকরের মাংস মুসলমানদের জন্য হারাম,হারাম,হারাম-কোরাণে উল্লেখ আছে।

তবে শূকর খাওয়া হিন্দু ও শূকর খাওয়া অন্যান্য পাপী বান্দারা বলে শূকরের মাংসের স্বাধ নাকি গরুর মাংস থেকে অনেক বেশি!

আবার ভাবুন আল্লাহকে খুশী করতে আমরা পশু কোরবানী করছি।কিন্তু কেন? পশুর ঈমান পশুর,মানুষের ঈমান মানুষের।পশু কোরবাণী দিলে আল্লাহ কেন খুশী হবেন?তিনি তো তার মাংস বা রক্ত নিজে কোনটাই খান না!

আমার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত মনে হয়-একজন ঈমানদার খাটি মুসলমানের উচিত আরেকজন ঈমানদার খাটি মুসলমানের মাংস খাওয়াএবং যার মাংস খাওয়া হবে তারও উচিত আরেক খাটি মুসলমানের জন্য,আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অাল্লাহ দরবারে নিজেকে জবাই করার সুযোগ করে দিয়ে সর্বোচ্চ সান্নিধ্য লাভ করা ও আল্লাহকে খুশি করা।

একজন খাটি মুসলমান যেমন পবিত্র,পরিচ্ছন্ন-অন্য কোন মানুষ বা প্রাণী তা নয়।আবার হিন্দুর মাংস,অন্য ধর্মাবল্মবীর মাংস বা নাস্তিকের মাংস যেমন অপবিত্র,অপরিচ্ছন্ন তেমনি তারা আল্লাহর নাফরমান বান্দা।তাদের মাংসে নিশ্চয় আল্লাহ খুশী হবেন না! কোথায় যেন বলতে শুনেছি-মানুষের মাংসের স্বাধ নাকি সবচেয়ে বেশি।মানুষ যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী তার মাংসও সর্বশ্রেষ্ঠ হতে বাধ্য।

আসুন মহান অাল্লাহর প্রিয় মুসলমানগণ-আমরা একজন খাটি মুসলমান আরেকজন খাটি মুসলমানের মাংস খাই ও মহান আল্লাহকে সর্বোচ্চ খুশি করি।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৭
২৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×