উপরের প্রশ্নটি এবার অর্থাৎ ২০১৫ সালের এসএসসি ভোক ৯ম শ্রেণী বোর্ড সমাপনী পরীক্ষার ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার প্রশ্নপত্র। পরীক্ষাটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এর আওতায় ১২.১১.২০১৫ তারিখ সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমেই বলি আমাদের দেশে অনেকেই জানেন না,বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের আওতায় ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে আলাদা ভাবে বোর্ড পরীক্ষা হয় এবং দুই পরীক্ষার গড় নম্বরই এসএসসি (ভোক) ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল।অাবার সারা বাংলাদেশে সকল কারিগরি ও মাদ্রাসা(দাখিল) এর জন্য একমাত্র বোর্ড “বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড।”
১ নং প্রশ্নটিতে প্রথম লাইনেই লেখা হয়েছে “জনৈক ব্যক্তি একজন স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগার।সে আল্লাহকে নিয়ে নানা ধরণের গালমন্দ করে থাকে।’’
তার মানে নাস্তিক ব্লগাররা সব সময় আল্লাহর গালমন্দ করে? কিছু নাস্তিক ব্লগার সব ধর্মেরই বিরুদ্ধে কিছু গালমন্দ করে লেখে এটা সত্যি,তারা যেহেতু নাস্তিক কোন প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাসী নয় তারা শুধু আল্লাহ নয় অন্য ধর্মাবল্মবীর গড,ঈশ্বর,প্রভু, ভগবান.......প্রত্যেকের বিরুদ্ধে লেখে।কিন্তু অধিকাংশ নাস্তিক প্রচলিত ধর্মগুলোর গালমন্দের বাইরে প্রচলিত ধর্মগুলোর কুসংস্কার,কাল্পনিক, অযৌক্তিতা, গোড়ামিন তথা অসংগতিগুলো বিভিন্ন বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে ধরে,বৈজ্ঞানিক ভাবে গবেষণা করে এবং ধর্মগুলোর অসারতার কারনে তারা নিজেরা প্রচলিত ধর্মের প্রতি তাদের বিশ্বাস হারিয়ে সম্পূর্ণ মানবিক হয়ে ওঠে।
অথচ দেশের মেরুদণ্ড,মানুষ গড়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা শিক্ষাবোর্ড সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শিশুদের মনে কী বিভ্রান্তিই না ছড়াচ্ছে।
আবার পরের লাইনেই লেখা হয়েছে,“শামীম একজন আস্তিক ব্লগার।সে তাওহীদে বিশ্বাসী।শামীম আল্লাহ-রাসুলেরে জন্য জীবন দিয়ে কাজ করে।”এ বাক্যগুলি দ্বারা আস্তিক ব্লগারদের ভাল হিসাবে দেখানো হয়েছে এবং তারা ভাল কাজ করে তাও বুঝানো হয়েছে।
প্রথমত প্রশ্ন,যিনি ব্লগে লেখে তিনি ব্লগার।তিনি কী কাজ করে বা না করে সেটা অন্য জিনিস।তাহলে এখানে দেখানো হয়েছে আস্তিক ব্লগার যেমন ভাল তেমন ভাল কাজও করে আর নাস্তিক ব্লগার সব আল্লাহর নামে গালমন্দ করা।
দ্বিতীয় আস্তিক মানে যদি ভাল হয় তাহলে সারাদেশে যত খুন,ধর্ষণ,চুরি,ডাকাতি সহ যাবতীয় সকল অন্যায় কাজ কে করে? উত্তর কী নাস্তিকেরা ? বাস্তবে তা হলে কী ঘটে-এটা কী দেখিয়ে দিতে হবে? বরং কোন নাস্তিক খারাপ কাজ করেছে এমন প্রমাণ প্রায় নেই বললেই চলে।
কী সুকৌশলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কোমলমতি ছেলে মেয়েদের মনে নাস্তিকতার বিরুদ্ধে সরকারী ভাবে কী মিথ্যা ও খারাপ ধারণাই না ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ?এর মধ্য দিয়ে চাপাতি দিয়ে নাস্তিকদের হত্যাকে বৈধতা দেওয়া ও প্রকারান্তে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে না?
শেষ বাক্যে লেখা আছে “এভাবে মানুষের মধ্যে ঐক্যের চেতনা জাগ্রত হয়।এমন হাস্যকর দাবী কীভাবে করে ?জাতিতে জাতিতে এত বিভেদ তৈরিতে ধর্মের চেয়ে কার্যকরী আর কী আছে? সম্প্রতি চাপাতি দিয়ে নাস্তিক হত্যা সহ দেশি বিদেশি এত অশান্তি ও বিভেদের মধ্যে ইসলাম বিশ্বাসী তাওহীদী মানুষই বেশি।
(গ)নং প্রশ্নে বলা হয়েছে শামীম কীভাবে নাস্তিকদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিতে পারে?
কী সাংঘাতিক প্রশ্ন?চারিদিকে চাপতির আঘাতে এত খুনের ঘটনা থেকে শিক্ষার্থীরা কী উত্তর দিবে ,আর প্রশ্নকর্তা কী উত্তর আশা করছে তা কী শিক্ষার্থীর বুঝতে অসুবিধা হবে? আর যদি কেউ একটু ভিন্ন লেখে,তাহলে যতই ভাল লিখুক ঐ শিক্ষার্থী কী পাশ করবে?
ইসলাম ধর্মের প্রথম প্রশ্নটিই এমন প্রশ্ন করে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এটি করা হয়েছে। প্রগতিশীল সকল মানুষের কাছে দাবী,আসুন সবাই মিলে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের এমন উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নটি প্রতিবাদ জানাই ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারকে বাধ্য করি।