অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হলো নির্মম ভাবে। কি তার অপরাধ? সে মুক্তমনের চর্চা করে। সে সাম্প্রদায়িকতার বিরোদ্ধে ছিল। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় সব সময় ধর্মের ভয়াভহতা নিয়ে লেখালেখি করেছেন। ধর্মের বিরোদ্ধে তার নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। আর তাতেই ক্ষেপে উঠেছে সাম্প্রদায়িকতার ধারক বাহক গোষ্ঠিগুলো। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে হায়েনার দলেরা। যেভাবে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে ঠিক সেই ভাবেই অভিজিৎ রায়কে হত্যা করলো। রাজিবকে যেভাবে হত্যা করেছে ঠিক সেভাবেই হত্যা করলো অভিজিৎ রায়কে। কারণ অভিজিৎ রায় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির বিরোদ্ধে ছিল; ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিরোদ্ধে।
অভিজিৎ রায়ের আরো যে অপরাধটি ছিল সেটি সেই খুনি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিদের কাছে ছিল ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সে ধর্মের বিরোদ্ধে কথা বলেছে। যেখানে মানুষ কুসংস্কারে মঘ্ন থাকে, সেখানে অভিজিৎ রায় কুসংস্কার মুক্তির পথে ছিল এবং কুসংস্কারের বিরোদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। ফলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলো ক্ষেপে গিয়েছিল তার উপর। অপেক্ষায় ছিল তার রক্তে নিজেদের হাতকে রাঙ্গিয়ে এদেশে আরেকটা কলঙ্কের সৃষ্টি করার। সুযোগ পেয়ে মেরে ফেলেছে অভিজিৎ রায়কে।
কিন্তু তাতে কি তারা তাদের কুসংস্কারকে, সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারকে রক্ষা করতে পারবে? একজন অভিজিৎ রায় শহীদ হয়েছেন, এখন লক্ষ অভিজিৎ রায় মাঠে নেমে আসবে। কয়জন অভিজিৎ রায়কে তারা হত্যা করবে?
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করেছিল, তাতে কি তারা সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারকে রক্ষা করতে পেরেছিল? বরং একটা বিদ্রোহী দল তৈরী হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারের বিরোদ্ধে।
সেই পথে হেটেছিল রাজীব। ওরা ওকেও হত্যা করেছে। কিন্তু তাতে কি তারা তাদের সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারকে বাঁচাতে পেরেছে? এক জনস্রোত তৈরী হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারের বিরোদ্ধে।
আর এখন তারা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করলো। তাতে কী তাদের সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারকে রক্ষা করতে পারবে?
একটা বিশাল জনস্রোত তৈরী হয়ে গেছে সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারের বিরোদ্ধে। দেশের সব মানুষ এখন সাম্প্রদায়িকতার বিরোদ্ধে চলে যাবে। সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির পতন ঘটতে খুব বেশী দেরী নেই আর।
স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পৃথিবী। একটা মানুষ কি তার নিজের মতামত প্রকাশ করবার অধিকারটুকুও রাখে না? তার মতামত সে প্রকাশ করেছে। মতামতের জবাবে মতামত দিয়েই দেয়া মানব জাতির কর্তব্য এবং অধিকার। কিন্তু কারো মত প্রকাশের জন্য তাকে হত্যা করা হলো পশুত্ত্ব। একজনের মত প্রকাশের জন্য যদি কাউকে হত্যা করা হয় তবে মানুষ আর মানুষ থাকে না; সে হয়ে উঠে পশুর চেয়েও অধম।
তাই যারা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে সে তার নিজের মত প্রকাশ করেছিল বলে, তাদেরকে আমি মানুষ মনে করি না। কারণ প্রাণ থাকলে সে প্রাণী হয়, কিন্তু সেই প্রাণীর মধ্যে যদি মনুষ্যত্ত না থাকে, তার মধ্যে যদি মানবিকতা বোধ না থাকে তবে সে মানুষের আকৃতির হলেও ঠিক মানুষ হয়ে উঠেনা। সে হয়ে উঠে পশুদের থেকেও নিকৃষ্ট কোন প্রাণী।
নির্মমতা কোন মানুষের গুনাবলী নয়। আর হত্যা হলো সব থেকে নিকৃষ্ট কাজ। আর সেটা যদি হয় নির্মমভাবে হত্যা তবে সেটা অবশ্যই কোন মানুষ করেনি; করেছে একটা পশু; যার প্রাণ আছে কিন্তু তার মন নেই বলে সে ঠিক মানুষ নয়।
অভিজিৎ রায় তুমি চলে গেছ। কিন্তু তোমার কাজ রয়ে গেছে। রয়ে গেছে তোমার স্বপ্ন। আমরা পুরণ করবো তোমার সেই স্বপ্নকে। আগামী দিনের পৃথিবী হবে সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারমুক্ত পৃথিবী, কুসংস্কার মুক্ত আলোর পৃথিবী।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৬