কয়েক বছর আগেও মানুষ ভেবেছে শুণ্যতা থেকে কিছু সৃষ্টি হতে পারে না। কোন কিছু সৃষ্টি হতে হলে একজন সৃষ্টিকর্তাকে লাগবেই। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জানিয়েছে যে শুন্য থেকেও বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে এটা অসম্ভব ব্যপার যে শুণ্য থেকে কিছু সৃষ্টি হতে পারে। তাই তারা বিশ্বজগত সৃষ্টিতে একজন সৃষ্টিকর্তাকে মুক্ষম অস্ত্র ভেবে নেয়। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই এটা মানতে পারে না যে কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে পারে। তাদের মতে কোন কিছুই একজন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না। যদিও তারা এটা ভাবে না যে, সেই সৃষ্টিকর্তাটি কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই কিভাবে সৃষ্টি হতে পারলো? তারা তাদের বুদ্ধিমত্তাকে এই বলে সান্তনা দেয় যে, সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই কারণ সে নিজেই সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তার দরকার নেই। এতে অবশ্য তাদের মনের সৃষ্টিকর্তাহীন জগতের ভয় থেকে সাময়িক মুক্তি ঘটে। কিন্তু বাস্তবতা তো আর সাময়িক মনোশান্তির কথা ভাবে না; তাকে তথ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করতে হয়।
বিশ্বজগতের কোন সৃষ্টিকর্তার কোন রকমের কোন প্রমাণই পাওয়া যায়নি। বরং বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বমুহুর্ত থেকে কোন সৃষ্টিকর্তার কোন ভুমিকা বা অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ তথ্য প্রমাণগুলো প্রমাণ দিচ্ছে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই এই বিশ্বজগতের। তাহলে কি কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে পারে?
বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তরে বলে থাকেন যে বিশ্বজগতের সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার কোন ভূমিকা নেই। বিশ্বজগত কোন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি পদার্থ বিজ্ঞানের নীতি মেনে কার্যকর রয়েছে। মানব সৃষ্টি বা অন্যান্য প্রাণী বা জীব সৃষ্টিতে কোন সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ ভূমিকা নেই এটি প্রমাণিত সত্য। বিজ্ঞানের কিছু নীতি মেনে (এবাইয়োজেনেসিস এবং বিবর্তন তত্ব) প্রকৃতির নিজস্ব ধর্ম মোতাবেক জড় পদার্থ থেকে পর্যায়ক্রমে জৈব জড় এবং পরে জীবনের উৎপত্তি ঘটেছে। পরবর্তীতে এই জীবনের বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবী জুড়ে পুরো জীবজগত তৈরী হয়েছে। একই ভাবে মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে জিপ্পাঞ্জী, গরীলা প্রভৃতি প্রাণীর পূর্বপুরুষের থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে।
অর্থাৎ জীবজগত সৃষ্টিতেও কোন কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ ভূমিকা নেই।
আবার বিশ্বজগতের সৃষ্টি হয়েছে ইনফ্লেশনের ধারার মধ্য দিয়ে বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে। আর এই পদ্ধতিতে সৃষ্টিকর্তার কোন রুপ ভূমিকারই দরকার পড়েনি। পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ কিছু সুত্র মেনে এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থাৎ জগতের কোথাও কোন সৃষ্টিকর্তার কোনরুপ অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
আবার বিজ্ঞানের কিছু তত্ব সৃষ্টিকর্তাকে জগত থেকে একরকম ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। যেমন বিগ ব্যাং এবং ইনফ্লেশন তত্ব অনুযায়ী বিশ্বজগত সৃষ্টির পুর্বে যেমন কোন শক্তি (এনার্জি) এবং পদার্থের অস্তিত্ব ছিল না তেমনি স্থান (স্পেস) এবং কালের (টাইম) অস্তিত্বও ছিল না। অর্থাৎ বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কোন পদার্থ ও শক্তিতো ছিলই না উপরন্তু স্থান ও সময়ও ছিল না। আর তাই বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কোন সৃষ্টিকর্তার বেঁচে থাকার মত স্থান বা সময় কোনটিই ছিল না। এক কথায় বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কোন সৃষ্টিকর্তাও ছিল না। সৃষ্টিকর্তাকে অস্তিত্বশীল থাকতে হলে যে স্থান এবং কালের প্রয়োজন ছিল সেই স্থান কালটাও বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে ছিল অনুপস্থিত। বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে ছিল এক স্থান কাল বিহীন পরম শুন্যতা। যেখানে কেবল পরম শুন্যতাই বিরাজমান ছিল। আর তাই কোন অস্তিত্বশীল সৃষ্টিকর্তাও থাকতে পারেনি পরম শুন্যতার জগতে। পরম শুন্যতার জগতে কেবল এবং কেবলমাত্র পরম শুন্যতাই অস্তিত্বশীল থাকতে পারে; অন্য কিছুই নয়। কারণ পরম শুন্যতা মানেই হলো অস্তিত্বহীনতা। অর্থাৎ কোন কিছু অস্তিত্বশীল হওয়ার পূর্বে সব কিছুই অস্তিত্বহীন ছিল। অর্থাৎ পরম শুন্যতার জগতে কোন সৃষ্টিকর্তার পক্ষেও অস্তিত্বশীল হওয়া সম্ভব নয়। আর তাই সৃষ্টিকর্তার কল্পকাহিনীটিও ভিত্তিহীন হয়ে যায় অস্তিত্বহীন পরম শুন্যতার জগতে।
সুতরাং এই বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে কিছু ছিল না; সৃষ্টিকর্তাও নয়। অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ যে সৃষ্টিকর্তাকে তার কল্পনার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে সেই সৃষ্টিকর্তার কোন অস্তিত্ব নেই এই বিশ্বজগতে। এটা প্রমাণিত।
বাকী অংশ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০