somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘে ঢাকা তারা (আমার মা)

০৩ রা মে, ২০১০ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"I always needed time on my own
I never thought I'd need you there when I cried
and the days feel like years when I'm alone
"
Vicky: Hey girl! Tomorrow is Saturday; hang out with me. Your mom is not here, so let’s have a party, let’s get drunk.
"I've never felt this way before
Everything that I do, reminds me of you
"
হ্যা, উনি আমার মা। যার জন্য আমার জীবনে অনেক মজাই করা হয়নি। (According to my co-worker, my life is bored.)
আরো অনেক মায়ের মত আমার মাও আমাকে(আমাদের) সব সময় প্রটেক্ট করতে চান। না মা, আমি কোন অভিযোগ নিয়ে লিখছি না। আমার মা, যার নাম বকুল। আম্মু বকুল ফুলের মতই শুভ্র সুন্দর।
মা দেশে গিয়েছেন মাত্র দু মাসের জন্য, নয় দিন চলে গেছে, মনে হচ্ছে যুগ যুগান্তর ধরে মাকে দেখছি না। ঘুমিয়ে থাকলে সকাল বেলা মা এসে আদর করে দিয়ে চলে যেতো। টের পেতাম তাও ঘুম ভেঙে যাওয়ার ভরে চিতল মাছের মত পড়ে থাকতাম। খুব সকালে আম্মুর ঘুম ভাঙার অভ্যাস, উঠে বিভিন্ন ধরনের নামায-কালাম করবেন, সকাল সকাল নাস্তা তৈরি করে আমাদের ডেকে তুলতো। তখন খুব রাগারাগি করতাম, এত আরামের ঘুমটা নষ্ট করার জন্য। আজকাল সকাল সকালই নিজ থেকে ঘুম ভেঙে যায়, শুধু মা আর জড়িয়ে ধরে আদর করে না। খুব সকালে নাস্তা করতে ভালো লাগতো না। আম্মু আমার পিছু পিছু নাস্তার প্লেট নিয়ে ঘুরতো, "লক্ষি মা, ঠান্ডা হয়ে গেলে মজা লাগবে নাতো। নাস্তাটা করে ফেল। সেই কোন বেলাতে খেয়েছিস!" তখন বিরক্তি লাগতো-"আম্মু! ক্ষিদে লাগলে তো আমি এমনিতেই খাবো!" তোমার মত এত আদর করে কেউ খাইয়ে দিতে পারে না আম্মু। মা ফোন করেই জানতে চায় খেয়েছি কিনা, কি খেয়েছি।
মামনির সাথে দিনে দুই তিন বার করে কথা হয়, তাও মন ভরে না। একটা সময় মা এতো কাছে ছিলো, তখন তো সারাক্ষনই শুধু ব্যস্তই ছিলাম।
ঐদিন বাংলাদেশের সময় রাত সাড়ে তিনটায় ফোন দিলো! ফোন ধরেই দিলাম ঝাড়ি "এতো রাত হইছে, ঘুমাও না কেন?" আম্মু উত্তর দিলো-" আজকে সকালেও তো ফোন দেয়া হয়নি। ভাবলাম এখন তো ক্লাস থেকে আসার কথা, ঠিকমত আসছে কিনা এই জন্য ফোন দিলাম। আর আম্মুর ঘুম হঠাৎ করে ভেঙে গেছে।" ফোন রেখে দেয়ার আগে বললো " I love you mom" কি যে গভীর ভালবাসা আর বেদনা থেকে কথাগুলো বললো আম্মু! হ্যা, আমি জানি, সাগরের মত কি গভীর আর স্বচ্ছ ভালোবাসা আমাদের জন্য আম্মুর!
Click This Link
আমাদেরকে ছেড়ে মা শান্তিতে ঘুমাতেও পারে না। ওখানে গিয়েও আমাদেরকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই আম্মুর, আমরা ঠিকমত খেয়েছি কিনা, ক্লাস থেকে আসলাম কিনা, কি করছি এখন, জবে খাবার নিয়ে গেলাম কিনা, আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো কিনা, আম্মুর যে কত্ত চিন্তা!
ছোট বেলা থেকেই মাকে শুধু কষ্ট পেতেই দেখেছি। কিন্তু কি এক গভীর মমতায় মা আমাদের সব দুঃখ কষ্ট থেকে আগলে রাখতেন! মা ছাড়া আসলে এত বড় এই পৃথিবীতে আপন আর কেউ নেই আমাদের। মামনি আমাদের বন্ধু, বাবা, মা সব...সব কিছু...মা ই আমাদের সমস্ত পৃথিবী। বাস্তব দুনিয়াটা যে কি পরিমান কঠিন আর কষ্টের আম্মু জানতো শুধু, আমরা কোনদিন বুঝতে পারি নি। আমার যখন জ্বর আসতো, আম্মু সারা রাত ঘুমাতো না। আম্মু কাঁদতো আর আল্লাহকে বলতো, "তুমি আমার মেয়েকে এত কষ্ট দিও না। আমার মেয়ের জ্বরটা আমাকে দিয়ে দাও।" আমি জানি সব মানুষ সবচেয়ে বেশি নিজেকেই ভালবাসে। শুধু আমার মা ভিন্ন। আম্মুর কাছে আমরা চার ভাই বোন হলাম অমুল্য সম্পদ আর নিজের জীবন তুচ্ছ!
http://www.youtube.com/watch?v=O6iBzQXOjPw
আমি হলাম আম্মুর ছোট্ট পাখি চন্দনা। আম্মু চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে, আসলে আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। কত্ত কত্ত দায়িত্ব! নিজে নিজে ঘুম থেকে উঠা, নাস্তা করা, ঠিকমত হোম ওয়ার্ক করেছি কিনা দেখা, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দেয়া, ওখান থেকে ড্রায়ারে দেয়া, খাবার তৈরি করা, কিচেন পরিষ্কার করা, ঘর গুছানো, বাথরুম পরিষ্কার, বাগানে পানি দেয়া, ঠিকমত বিল দেয়া, টাকা হিসাব নিকাশ ঠিক মত রাখা!!!!! উফ! এতকিছু আম্মু একাই সামলাতো! I am sorry mom. কোনদিন তোমাকে বুঝার চেষ্টা করি নি। কোনদিন তোমার কষ্টকে মুল্য দেই নি। এখন জব থেকে বাসায় এসে নিজের হাতে ঘরের তালা খুলতে হয়। মা যখন ছিলো তখন চাবি সাথে থাকলেও তালা খুলতে হতো না। মা দশটা বাজুক, এগারোটা বাজুক, আমরা না আসা পর্যন্ত ঘুমাতো না। বাসা থেকে বের হবার সময় আম্মু দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিতো, আদর করে দিতো, কত সাবধানতার বানী শুনাতো, যতক্ষন দেখা যেতো আমাদের ততক্ষন দরজা ধরে দাড়িয়ে থাকতো। দরজার মধ্যে নিজ হাতে বাইরে বের হবার দোয়া লিখে রেখেছেন আর এর নিজে আম্মুর গুটি গুটি হাতে লেখা "নাস্তা, সেলফোন, চাবি, এসাইনমেন্ট নিয়েছো কিনা চেক করো"।
এই হলো আমাদের মা। যার পৃথিবীতে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই, আর কোন চিন্তা নেই। যার কাছে সুখ বলতে বুঝায় উনার ছেলেমেয়ের সুখ। ছোটবেলায় সব আশেপাশের সব আন্টিরা একসাথে গল্প করতে বের হতেন। মা যেতেন না, আমরা স্কুল থেকে এসে যাতে আম্মু কে দেখতে পারি এই জন্য বাসায় বসে থাকতেন একা। একদিকে আমার আম্মু যেমন অনেক সুইট, অন্যদিকে আমার আম্মু অনেক মজার মানুষ। আম্মু রান্না করতে করতে সব সময় গুন গুন করে গান করে। আবার মাঝে মাঝে নিজে নিজেই গান বানায়, গানের কথা, সুর সবই আম্মু নিজে করে। এই যেমন আম্মু আমাদেরকে খেতে ডাকবেন, সেটাও নিজের রচিত গানের সুরে সুরে। :P
একদিন আম্মুকে বললাম, "আম্মু তোমার পেট দিনে দিনে ফুলতেছে, এটা কমাও" তখন আম্মু কি করলো? পেটের মধ্যে হাত বুলাতে বুলাতে বলে "আমার পেটটা উঁচা, আমার নাকটা বুঁচা"
হ্যা, এটা আমার মামনি। she is the sunshine in our life.
"I never tell you,
But I am frightened by the darkness, mother
Usually I, don't show,
But I do care about you, mother
You know it all, isn't it mother?
You know it all, my mother."

Click This Link
আমরা তোমার অপেক্ষায় আছি মা। তুমি এসে এক পশলা শান্তির বৃষ্টি ঝরিয়ে যাও মা। আমার একা একা ভীষন ভয় লাগে মা, ভয়াবহ রকম বিষন্ন লাগে মা, তুমি এসে আদর করে তোমার বুকের মাঝে আগলে রাখো মা।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×