somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেখানে ফাজলামি দেখবেন, অ্যাকশন নিন।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের মসজিদের কিছু কমন দৃশ্য বর্ণনা করি।

১. একটি বাচ্চা ছেলে (দশ বছরের নিচে) মসজিদের সামনের কাতারে দাঁড়িয়েছে।
একজন "মুরুব্বি" জামাত শুরুর পর মসজিদে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে সেই বাচ্চাটিকে পেছনে সরিয়ে নিজে আল্লাহু আকবার বলে জামাতে শামিল হবেন। সেই বাচ্চাটি কিন্তু অলরেডি নামাজে দাঁড়ানো ছিল। ওর নামাজের মাঝপথে এই কান্ড ঘটানো হয়েছে।

২. কোলের শিশুকে নিয়ে নামাজে এসেছেন পিতা। শিশু কান্না করছে, অথবা আপন মনে খেলছে। শিশুর হাসি-কান্নায় মসজিদের মুসল্লিদের "ডিস্টার্ব" হচ্ছে। তখন মুসল্লিগণ এমন ডার্টি লুক দিবেন (ক্ষেত্রবিশেষে ঈমাম সহ) যে বেচারা পিতা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন। তাঁর সেই বিরক্তি গিয়ে তখন পড়বে শিশুটির উপর। অবুঝ শিশু কোন কারন ছাড়াই পিতার রোষানলে পুড়বে।

৩. ভিতরে নামাজ শুরু হয়েছে। শিশুরা খেলছে। কোন এক মুরুব্বি এসে চড় থাপ্পড় মেরে ওদের বাইরে বের করে দিবে।

দেশের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েন, অথচ এইসব দৃশ্যের সাক্ষী হননা, এমন কখনই সম্ভব নয়। কেউ কেউ ছোটবেলায় নিজেও এর শিকার হয়েছেন নিশ্চিত।

কথা হচ্ছে, ইসলাম কী এই বিষয়টা সাপোর্ট করে?
না। কারন এই কুকাণ্ডের কারনে বাচ্চার মনে মসজিদের বিরুদ্ধে, নামাজের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রোশের সৃষ্টি হবে। এবং সেইজন্য দায়ী থাকবেন কেবল মাত্র এই তথাকথিত মুসলিমরাই।

প্রথম দৃশ্যের কথাই বিবেচনায় আনা যাক। দশ বছরের শিশুর মনে আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এত বেশি জন্মেছে যে সে সময়মত মসজিদে গিয়ে জামাতে দাঁড়িয়েছে। কারন এই কথা সর্বজন বিধিত যে জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর সম্মান ও সাওয়াবের কোনই তুলনা নেই।
এখন একজন "মুরুব্বি" যিনি ইচ্ছে করেই হোক, বা অনিচ্ছা করেই হোক, ঢিলেমি, আলসেমি করে নামাজে দেরি করে পৌঁছে সেই শিশুটির হক মেরে দেয়ার ধান্দা করবেন - এমন অবিচার ইসলাম সহ্য করবে? জ্বি না। শিশুটিকে সামনের কাতারে দাঁড়াবার অধিকার আল্লাহ দিয়েছেন, পৃথিবীর কারোর অধিকার নেই সেটা ছিনিয়ে নেয়ার।

দ্বিতীয় দৃশ্যের বর্ণনা আমি নিজের জীবন থেকে দেই।
ঈদের দিন গিয়েছি আমার এক বছরেরও কম বয়সী বাচ্চা নিয়ে। তাঁর জীবনের প্রথম ঈদ। আমি তাঁকে কার সিটে শুইয়ে প্রথম কাতারে বসে নামাজ পড়ছি। আমার বাচ্চা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। নামাজ শেষে আমার পাশের আরব লোকটি বললেন, "মাশাল্লাহ, তোমার বাচ্চাটা অনেক শান্ত।"
ধন্যবাদ দিলাম।
"নাম কী এর?"
"রিসালাত।"
আরবিতে রিসালাত নামের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর ডিরেক্ট ম্যাসেজ। লোকটি চোখমুখ উজ্জ্বল করে বললো, "মাশাল্লাহ অতি চমৎকার নাম!"
পরের বছর আরেক মসজিদে নামাজে গেলাম। এইবার ছেলে খানিকটা বড় হয়েছে। এবং খানিকটা "ডিস্টার্ব" করা শিখেছে।
আমি বিব্রত চেহারায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, সবাই আমাকে হাসিমুখে অভয় দিচ্ছেন। ভাগ্য ভাল ছিল, মুসল্লিদের কেউই আমাদের উপমহাদেশীয় নন।
একবার এক মসজিদে ইফতার করতে গেছি। আমার পাশেই এক পিতা নামাজে দাঁড়ালেন। এবং তাঁর সাথে শিশু কান্না শুরু করলো। নামাজ শেষে লোকটা বিব্রতচেহারায় শিশুটিকে সামলাতে চেষ্টা করলেন। এবং তখনই এক পাকিস্তানী বা ভারতীয় (বুঝা কঠিন, তবে বাঙালি না এইটা নিশ্চিত) "মুরুব্বি" অতি বিরক্তি প্রকাশ করে হিন্দি/উর্দুতে বললেন, "কেমন আক্কেল মানুষের। জানে যখন বাচ্চা কাঁদে, এইভাবে কেউ সামনে দাঁড়ায়?"
তখনই বুঝলাম, ঝামেলাটা আমাদের উপমহাদেশের মুসলিমদের। কেবল বাঙালিদের নয়।

এখন অনেকেই একটি হাদিস আওড়ান।
"আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ আল হুযালী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাছূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন:- তোমাদের মধ্য হতে জ্ঞানী-প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ-বুদ্ধিমান লোকেরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর যারা (জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার দিক দিয়ে যত বেশি) এদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে, (“অতঃপর যারা এদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে)।"
কথা হচ্ছে, যে কোন স্কলার বলেন, এটি স্রেফ সাহাবীদের জন্য প্রযোজ্য। কারন তাঁরা যেন নবীর (সঃ) কাছাকাছি থেকে সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শিখতে পারেন, এবং সবাইকে শেখাতে পারেন।
এখন আরেক গ্রূপের স্কলার বলেন, ঈমামের পেছনে যেন একজন এমন ব্যক্তি দাঁড়ান, যাতে কোন কারনে ঈমামের নামাজ নষ্ট হয়ে যায়, তবে যেন সেই ব্যক্তি নামাজটিকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
দ্বিতীয় মতবাদ মেনে নিলেও, যুক্তি অনুযায়ী আস্ত কাতার ভর্তি মহাপন্ডিত ইসলামিক স্কলার থাকার প্রয়োজন নেই।
এখন কেউ যদি ঈমানের পরিমাপে বয়স বিবেচনায় আনে, তবে সে স্পষ্টতঃ মূর্খ। কারন, আলী (রাঃ) যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, বয়স ছিল দশ বছর। আবু জাহেল, লাহাবরা পঞ্চাশ পেরোবার পরেও মুশরিক ছিল। "তাকওয়া" কখনই বয়স বিবেচনায় মনে স্থান পায় না।
একজন শিশু যদি নামাজে দাঁড়ায়, এবং মনে বিশ্বাস রাখে আমার সামনে আল্লাহ আছেন, সেই শিশুর ঈমান হাজার খানেক মুরুব্বির ঈমানের চেয়ে শক্তিশালী যে ইচ্ছা করেই নামাজে দেরি করে আসে, এই ভাবে যে ওর জন্যতো সামনের কাতারে জায়গা রিজার্ভড থাকেই।
শেষ করি নবীর (সঃ) জীবনের একটি ঘটনা দিয়ে।
তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে জুম্মার খুৎবা দিচ্ছিলেন। এই সময়ে তাঁর নাতি হজরত হাসান এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে মসজিদে প্রবেশ করে এবং হোঁচট খেয়ে আছড়ে গিয়ে কাঁদতে শুরু করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুৎবা বন্ধ করে নিজে মিম্বর থেকে নেমে এসে হাসিমুখে সেই শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে তাঁকে শান্ত করেন।
আর আমরা দুই পয়সার মুসলমান "মুরুব্বিগিরি" ফলাই।
খবরদার, কোন শিশুর মনে মসজিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টির কাজে অংশ নিবেন না। পারলে সেটা প্রতিরোধ করুন।
কথা প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করেই ফেলি।
আমার ছেলেকে মন্টিসরিতে পাঠাই। আমার অফিসের পাশেই একটি স্কুল আছে, যা একটি মসজিদও। খুবই উৎসাহের সাথে নাচতে নাচতে সেই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেই। এবং প্রথম কয়েকদিন বেশ ভালই দিন কাটছিল।
এক মহিলা টিচার এরপর শুরু করলেন ইতরামি। কথায় কথায় কমপ্লেন।
তোমার বাচ্চা এইটা করেনা। ওটা করেনা।
আরে, ওতো বাচ্চা। স্কুলে কী আমি ট্রেইন্ড করে পাঠিয়েছি নাকি? তুমি শিখাও।
তারপরে শুরু করলো ডায়পার নিয়ে বিচার দেয়া। সকালে ওকে স্কুলে ছাড়ার সময়ে অবশ্যই যেন পরিষ্কার নতুন ডায়পার পড়ানো থাকে। নাহলে আমি নিজে পরিষ্কার করে দিয়ে যাব। ম্যাডাম বদলাবেন না।
আনার সময়ে যদি দেখি ডায়পার নোংরা, তখনও তিনি বদলাবেন না।
একদিন মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়ায় দিলাম প্রিন্সিপালের কাছে বিচার। এবং তারপরে শুরু হলো পলিটিক্স।
আমার ছেলে এই করে, ঐ করে বলে প্রতিদিন প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিতে লাগলেন মহিলা।
বাধ্য হয়ে অন্য স্কুলে দিলাম। খ্রিষ্টান স্কুল। এবং ওরা সাদরে গ্রহণ করলো আমার বাচ্চাকে। ডায়পার নোংরা? কোন সমস্যা নাই। অন্যান্য বাচ্চাকে ধাক্কা দেয়? কোন সমস্যা নাই, আমরা শিখিয়ে দিব যাতে ধাক্কা না দেয়।
আজকে আট মাস হতে চললো, একটা কমপ্লেন আসেনাই। জিজ্ঞেস করলে বলে, "ওতো অনেক লক্ষী বাচ্চা। ভেরি ব্রাইট!"
এখন আপনারাই বলেন। আমার নিয়ত ছিল পরিষ্কার। কিন্তু সেই মুসলিম স্কুলে কে আমার ছেলের জীবন দুর্বিষহ করে দিল? আমার ছেলেকে ধর্ম শেখাতে হলে এখন বাসাতেই শেখাতে হবে। ঐ মহিলা থাকাবস্থায় আমি আর ঐ স্কুলে দিচ্ছি না।
একই ঘটনা দেশেও কী ঘটেনা? একটি ছেলে শখ করে গেল মসজিদে, এবং মসজিদ যদি তাঁকে আপন করে না নেয় - এই ছেলে কেন যাবে?
একজন গেল হুজুরের কাছে আরবি শিখতে। হুজুর মলেস্ট করা শুরু করলে সে কেন ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হবে?
তাই, যেখানে ফাজলামি দেখবেন, অ্যাকশন নিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৫৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×