somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষের টাখনুর উপর প্যান্ট পরা, জান্নাত/জাহান্নাম

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, "একটা সময় আসবে, যখন স্বাক্ষরতার হার প্রচুর বাড়বে, কিন্তু মূর্খের সংখ্যাও একই বহুগুনে বাড়বে।"
কথাটি তিনি যখন বলছেন, তখন পুরো আরব সমাজে স্বাক্ষর মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেউ লিখতে ও পড়তে পারে মানেই হচ্ছে তখনকার যুগের অতি উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি। আমাদের যুগের ডবল পিএইচডির সমান। আমাদের নবী (সঃ) নিজেও ছিলেন উম্মি, মানে অক্ষর জ্ঞানহীন। কেউ কেউ এই নিয়ে তর্ক করতে পছন্দ করে, কিন্তু এটি কুরআন দ্বারাই স্বীকৃত (সূরা আল-আরাফ ১৫৭-১৫৮)। হাদিসেও প্রমান আছে। আপাতত সেই তর্কে যেতে আগ্রহী নই।
এখন আপনি ভাবতে পারেন, শিক্ষিত মানুষ কিভাবে মূর্খ হতে পারে? এটিতো পরস্পরবিরোধী কথা হয়ে গেল। সাহাবীদের মাথাতেও একই প্রশ্ন এসেছিল। উদাহরণ হচ্ছে আমাদের আজকের সমাজ। ইন্টারনেট সস্তা হয়ে গেছে, ঘরে ঘরে গুগল চলে, তথ্য, প্রযুক্তির কোন দিক দিয়েই কেউই পিছিয়ে নেই। খুব শীঘ্রই পৃথিবী নিরক্ষরমুক্ত হতে চলেছে, কিন্তু এই অতি আধুনিক, "শিক্ষিত" লোকজনের মধ্যে কয়জনের কর্মকান্ড সত্যিকার শিক্ষিতের মতন হয়ে থাকে? অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট সাহেবেরই উদাহরণ নিন না। আপনারা অবাক হন না এই ভেবে যে এই লোকটা কিভাবে অ্যামেরিকার মতন দেশের প্রেসিডেন্ট হয়? বরিস জনসনের মতন লোক কিভাবে ইউকের প্রধানমন্ত্রী হয়? নরেন্দ্র মোদির মতন এক সন্ত্রাসী কিভাবে ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়? এই নরেন্দ্র মোদির অ্যামেরিকায় আসার ভিসা হতো না। কালো তালিকাভুক্ত ছিল তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য।

আমাদের দেশ ৮৫-৯০% মুসলিমের দেশ। এই মুসলিম জনসংখ্যার ৯০% এরও অধিক মানুষ নিজের ধর্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে "হুজুর নির্ভরশীল।" হুজুর যা বলে, চোখ বন্ধ করে সবাই তা ফলো করে। দেওয়ানবাগী যখন দাবি করে তার সাথে আল্লাহর কথোপকথন হয়, তখন এক দল মুরিদ "ঠিক ঠিক" বলে সমর্থন জানায়।
কেউ ওয়াজে ডিস্কো ডান্স নাচে। কেউ বাঁশ বেয়ে উপরে উঠে যায়।
এদের মূর্খ বলবেন না কেন?
শুধু দেওয়ানবাগীই না। ওয়াজে ওয়াজে হুজুররা এমনসব কথাবার্তা বলে বেড়ায়, যা কোন অবস্থাতেই শিক্ষিত (আলেম) ব্যক্তির পক্ষে বলা সম্ভব না। মদ গাঁজা হেরোইন খেয়েও না। তারপরেও তাঁরা নির্বিকারভাবে বলে যান। উপস্থিত জনতা "ঠিক ঠিক" বলেন। অনুপস্থিত জনতা ইউটিউব বা ফেসবুকে দেখে সাথে সাথে সহমত পোষণ করেন। কেউ নাই একটু মাথা খাটিয়ে হুজুরের ভুল শুধরে দিবে। কেউ ভয়েই কথা বলে না। যদি মাথা খাটাতে গিয়ে মাথা হারাতে হয়!
যেমন, কিছুদিন আগে এক হুজুর ঘোষণা দিলেন, পুরুষের টাখনুর উপর প্যান্ট পরা উচিৎ, কারন এটি নাকি "বৈজ্ঞানিকভাবে" প্রমাণিত। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন, পুরুষের টাখনুর নিচে কিছু হরমোন থাকে, যা সূর্যের আলোর দেখা না পেলে সেই পুরুষের যৌনক্ষমতা হ্রাস পায়। এই কারণেই অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তিনি টাখনুর উপর প্যান্ট পরেছিলেন। এই কারণেই ওয়েস্টার্ন ফ্যাশন ডিজাইনাররা এখন প্যান্ট ছোট করতে শুরু করেছে। ইত্যাদি ইত্যদি।
এই কথা শুনে আমাদের এক বান্ধবী সাথে সাথে তাঁর বরকে নির্দেশ দেয়, "খবরদার! জিন্দেগিতেও যদি ফুল প্যান্ট পরছো, তাইলে তোমার খবর আছে! এখন থেকে হাফপ্যান্ট পরে অফিসে যাবা! ওখানে যেন সূর্যের আলো পৌঁছতে কোন অসুবিধা না হয়!"
আমাদের মোল্লা-মাওলানারা এইধরণের ফালতু কথাবার্তা প্রায়ই বলে থাকেন। খালি কলসি বাজে বেশি অবস্থা। যারা জ্ঞানী, তাঁদের কথাবার্তা এমন হয়না, তাই ভাইরালও হয়না, তাঁদের নামও জানবেন না আপনারা। কিন্তু এদের নাম বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
যাই হোক, প্রথম কথা হচ্ছে, হাদীসটি একবার পড়া যাক। বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি মোটামুটি সব সহীহ গ্রন্থেই আছে যে নবী (সঃ) বলেছেন, "কেয়ামতের দিন সেই লোকটির দিকে আল্লাহ ফিরেও তাকাবেন না, যে 'অহংকারের বশবর্তী' হয়ে টাখনুর নিচে জামা পরে।"
(Whoever trails his garment on the ground out of pride, Allah will not look at him on the Day of Resurrection.)
কোথাও কোথাও "অহংকারের বশবর্তী হয়ে" শব্দগুলো বাদ গেছে, এবং এখানেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনা বুঝতে হলে চলুন ফিরে যাওয়া যাক চৌদ্দশো বছর আগের মক্কায়। শুষ্ক ম্রু অঞ্চল। খাওয়া খাদ্যের সঙ্কট, পানির সঙ্কট চলছে। কাপড়েরও সংকট ছিল তখন। আল্লাহ মাফ করুন আমাদের, আজকে আমাদের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তির বাড়িতেও ওয়ারড্রব ভর্তি কাপড় থাকে, তখনকার মদিনার বাদশা, আমাদের রাসূলুল্লাহর (সঃ) খুব বেশি হলে দুইটি পোশাক ছিল। তাঁর সাহাবীদেরও তাই ছিল। পুরানো পোশাক নষ্ট হলে, ছিড়ে গেলে তালি দিয়ে সেলাই করে আবার ব্যবহার করতেন। মাথায় রাখুন, তখনকার যুগে শিল্প বিপ্ল্ব ঘটেনি, গার্মেন্টস শিল্প কী লোকে জানতোই না। আমাদের খুব বেশিদূর যেতে হবেনা। আমাদের নিজেদেরই পূর্ব পুরুষগন, চার পাঁচ জেনারেশন আগে, তাঁদেরও খুব বেশি পোশাক থাকতো না। বড় বড় জমিদার, রাজা মহারাজাগন এক দুইটা আলখাল্লা পরেই রাজত্বকাল পার করে দিতেন। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা বাদই দিন। এমন পরিস্থিতিতে, কেউ যদি নিজের পোশাককে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে দেয়, নষ্ট হতে দেয় কেবল লোকজনকে এই বুঝাতে যে "আমি পোশাকের পরোয়া করিনা। একটা নষ্ট হলে আমার কিছু আসবে যাবেনা। প্রচুর আছে।" - এইটাকে বলে অহংকার। এই অহংকার প্রকাশকেই আল্লাহ, এবং তাঁর রাসূল (সঃ) তীব্রভাবে তিরস্কার করেছেন। যৌনক্ষমতা কমে যাবার জন্য নয়।

এখন, এই কথা সত্য যে, যখন নবী (সঃ) কথাটি বলেছিলেন, তার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই (৪০-৫০ বছর) মুসলিমদের হাতে বানের জলের মতন টাকা আসতে শুরু করে। শেষ বয়সে হজরত আয়েশা (রাঃ) প্রতিদিন কাঁদতেন এই আক্ষেপে যে তিনি কোনদিন রাসূলুল্লাহকে (সঃ) ভরপেট আহার করতে দেখেননি, অথচ তাঁর জীবিতাবস্থাতেই মুসলিমরা ঐশ্বর্যের পাহাড়ে ডুবে যাচ্ছে। চারিদিকে এত সুখ, এত স্বচ্ছন্দ, অথচ প্রিয় মানুষটিই নেই।
এই সময়ে সাহাবীগণ, তাবেঈগণ টাখনুর নিচে কাপড় পরতে শুরু করেন। কারন তখন এর মাধ্যমে "অহংকার" প্ৰকাশ পায় না। সবারই একাধিক পোশাক আছে, দামি পোশাক আছে।

কেউ কেউ "অহংকার" শব্দটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। তাঁরা বলবেন, অহংকার একটি হাদিসে আছে, আরেকটিতে নেই। তাহলে যেটিতে নেই, সেটিতে কেন আরেকটি থেকে শব্দ আমদানি করে জোর করে ফিট করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে?
তাঁদের জন্য বুখারী শরীফের আরেকটি হাদিস আছে। এখানে ব্যাপারটির কনসেপ্ট একদম ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে যায়।
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন অত্যন্ত রোগা শীর্ণকায় সুপুরুষ। তাঁর পাজামা কোমরে বাঁধলে প্রায়ই তা আলগা হয়ে যেত। ফলে তা প্রায়ই টাখনুর নিচে নেমে যেত। তিনি একদিন রাসূলুল্লাহকে (সঃ) প্রশ্ন করে বসেন, "আমার কী হবে?"
রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাবে বলেন, "তোমার ভয় নেই। তুমি অহংকারের বশবর্তী হয়ে কাজটি করো না।" (বুখারী ৫৭৮৪)
ভাল করে নবীর (সঃ) কথার শব্দগুলো খেয়াল করুন। তিনি বলতেই পারতেন, "কোন সমস্যা নাই। অনিচ্ছাকৃতভাবে অমনটা হয়ে যাচ্ছে।" তিনি সেটা না বলে একদম স্পেসিফিক্যালি বলেছেন "অহংকারের বশবর্তী" হয়ে বা "অহংকার প্রকাশ করতে।" বুঝতে হবে।

আমি কেন হঠাৎ টাখনু নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম? কারন অনেক। প্রধানতম কারন হচ্ছে, আমাদের দেশের লোকজন খুবই জাজমেন্টাল হয়ে থাকেন। এরা লোকের পোশাক আশাক, চেহারা ইত্যাদি দেখেই মানুষকে বিচার করে থাকেন। একটি লোকের প্যান্টের কাপড় যদি টাখনুর নিচে নেমে আসে, এরা কোন যুক্তি প্রমান ছাড়াই তাঁকে "কম ধার্মিক" বানিয়ে দিবে।
আবার কারোর পোশাক উপরে গেলে চোখ বন্ধ করে ওকে অতি ধার্মিক বানিয়ে দিবে। দুয়েই সমস্যা।
দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, ধরুন, আপনি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবেন। আপনি ধার্মিক মুসলমান। প্যান্ট পরেছেন টাখনুর উপরে। ইন্টারভিউ বোর্ডের লোকজনের দৃষ্টি সেখানেই আটকে রইলো। আপনার চাকরি হলো না। অথচ ব্যাপারটা অতি সহজেই এড়ানো যেত।

বর্তমানে আমরা যেই সমাজে বাস করি, আমাদের প্যান্টের দৈর্ঘের উপর অহংকার প্রকাশ নির্ভর করে না। যদি করতো, তাহলে সেটা হারাম হতো। যেমন, দেশে আপনি খাওয়া খাদ্য খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছেন। সেখানে অতি ভোজন দূষণীয় নয়। আমাদের প্রতিটা পুরুষেরই আর কিছু থাকুক না থাকুক, একখানা জবরদস্ত ভুরি আছে।
কিন্তু সোমালিয়ার মতন দেশে, যেখানে লাখে লাখে মানুষ দুর্ভিক্ষপীড়িত, খাওয়া নেই, পানি নেই, এক বেলা খাওয়া মিললে পরের অন্ন সংস্থানের কোন গ্যারান্টি নেই, এমতাবস্থায় আপনি যদি সবার অভুক্ত চোখের সামনে প্লেট ভর্তি বিরিয়ানি মচড় মচড় করে খান, খাওয়া থামিয়ে মাঝপথে অর্ধেক খাওয়া ভর্তি প্লেট আস্তাকুড়ে ফেলে দেন, তাহলে অবশ্যই সেটি একটি ভয়াবহ অপরাধ। আইনের চোখে নয়, ইসলামের চোখে। বুঝাতে পারছি?
আমাদের দেশেও কিছু অঞ্চলে এখনও মানুষ অভাব অনটনে থাকেন, তাঁদের সামনে নিজের ঐশ্বর্যের ফুটানি দেখানোও একই পর্যায়ের অপরাধ।

সাহাবীদের সময় থেকেই এই হাদীসটি নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলেছে।
বিখ্যাত সাহাবী ইবনে মাসুদের (রাঃ) নাম অনেকেই শুনেছেন। তাঁর হাতেই আবু জাহাল জাহান্নামে পৌঁছেছে। তাঁর পা হাঁটুর নিচ থেকে বাঁকা ছিল। এ নিয়ে লোকে হাসি তামাশা করতো। নবী (সঃ) তা দেখে বলেন, "তোমরা ওর পা নিয়ে হাসাহাসি করছো? জেনে রাখো, কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাঁর পায়ের ওজন ওহুদ পর্বতের চেয়েও বেশি হবে।"
সেই ইবনে মাসুদের (রাঃ) যখন টাকাপয়সা হলো, তিনি তাঁর হাঁটুর নিচের অংশ ঢাকতে লম্বা পোশাক পরা শুরু করেন। তাঁর ছাত্ররা যখন তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন তিনি বলেন তাঁর হাঁটু বাঁকা, তাই অমন পোশাক পরছেন।
যদি "হারাম" হতো, তাহলে তিনি অবশ্যই পরতেন না। লোকে হাসিতামাশা করলেও মদ হালাল হয়ে যায় না। বুঝতে পারছেন?
ইমাম আবু হানিফাকে কে না চেনে? আমরা হানাফী মাজহাবের, আমাদের ধর্ম পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে এই লোকটির শিক্ষার উপর। সেই আবু হানিফা (রহঃ) দারুন ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পোশাকও টাখনুর নিচে থাকতো। ছাত্ররা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিতেন, "অহংকারের বশবর্তী হয়ে ওভাবে পোশাক পরলে তখন সেটা হারাম হয়। নচেৎ নয়।"
ইবনে তাইমিয়্যাহর মতন সর্বকালের সর্বসেরা ইসলামিক স্কলারও বলেন "টাখনুর নিচে কাপড় যাওয়া হারাম নয়, যদি না অহংকার প্রকাশের কারনে হয়ে থাকে।"
এখন বর্তমানে এই কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক। আমারই অনেক আত্মীয় নিজেদের প্যান্ট কাটিয়ে টাখনুর উপর পোশাক পরতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁরা আমার দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকান। চোখের ভাষায় টিটকারি ঝরে। অথচ তাঁদের কাউকেই দেখিনা ক্লাসিক্যাল স্কলারদের ওপিনিয়ন ঘাটাঘাটি করে পড়তে। হাদীসটির মর্মার্থ উপলব্ধি করতে।
একটা ব্যাপার মাথায় রাখুন। হাদিস অনুযায়ী, পুরুষের পোশাকের সাথে ইসলামের দ্বন্দ্ব নেই, দ্বন্দ্ব অহংকার প্রকাশ নিয়ে। আপনি সেটা পোশাক দিয়ে করতে পারেন, আপনি সেটা গাড়ি, বাড়ি, এমনকি ফোন দিয়েও করতে পারেন। ফোনের প্রসঙ্গ উঠায় একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
তখন দেশে বেড়াতে গেছি। এক দিনের জন্য চিটাগং যেতে হবে। দাদার কবর আছে, বড় মামা মামী খালার সাথে দেখা করে পরের দিনই ঢাকায় ফিরতে হবে। সময় নেই। সোহাগ বাসই ভরসা। সারারাত আরাম করে ঘুমানোর জন্য বিজনেস ক্লাস সিটের টিকেট কাটলাম। বাসে উঠেই শুয়ে পড়েছি। এমন সময় আমার পাশের যাত্রী সিটে বসলেন। তখন বাংলাদেশে নোকিয়া এন সিরিজের অনেক ডিমান্ড। অনেক দাম। লোকটা ফোন বের করে হেডফোনে গান শুনতে লাগলো। ইচ্ছা করেই আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে (মোবাইল ধরা হাত আমার দিকে সরিয়ে এনে) ফোন টেপাটেপি করতে লাগলো। হুদাই, কোন কারন ছাড়াই। এত দামি সেট ইউজ করছে, কাউকে না দেখালে চলবে?
আমার ঘুমের প্রধান ও একমাত্র শর্ত হচ্ছে কোন রকমের ডিস্টার্বেন্স হলে আমি ঘুমাতে পারিনা। অন্ধকার বাসের মধ্যে চোখের সামনে এক ফাজিলের ফাজলামির ফলে মোবাইলের আলো চোখে বিঁধতে লাগলো। এত টাকা দিয়ে শুধু শুধু টিকিট কেটেছি?
দুর্ব্যবহার এড়াতে আমি তখন আমার পকেট থেকে আই ফোন বের করলাম। অ্যামেরিকার মাটিতে বের হওয়া প্রথম আইফোন, বয়স তিন মাসও হয়নি। এই জিনিস তখনও বাংলাদেশের আলো বাতাস খায়নি। সিংহভাগ বাঙালি চোখ তখনও এ জিনিস প্রত্যক্ষ্য করেনি। কেউ কেউ হয়তো ইন্টারনেটে দেখেছে এমন একটি ফোন বাজারে এসেছে, কিন্তু বাস্তবে সেটি চোখের সামনে দেখা সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
ওটাতে নীড ফর স্পীড গেমটা খেললাম। মোবাইল বাঁকালেই গাড়ি ঘুরে যায়, এই রকম নিখুঁত টাচ স্ক্রীন সেট তখন একেবারেই নতুন। বিজ্ঞানের বিস্ময় বলা চলে।
চুপচাপ কিছুক্ষন গেম খেলে আবার পকেটে ভরে রাখলাম।
আল্লাহর রহমত, বাকিটা রাত ঐ ব্যাটা নিজের ফোন বের করেনি।
সামান্য মোবাইল ফোন নিয়েও শো অফ করে। বাঙালির সমস্যা কী?
সেই ট্রিপেই সেই আইফোন দেখেই এক মেয়ে প্রেমে পরে গিয়েছিল। অ্যামেরিকা থাকি, আর একটা আইফোনের মালিক - এই মেয়ের জিন্দেগীতে যেন আর কোন চাহিদা নেই! অদ্ভুত!

যাই হোক, প্রসঙ্গে ফেরা যাক। হাদিসটার মর্মবাণী হচ্ছে, শো-অফ, সেটা পোশাক থেকে শুরু করে যেকোন কিছু দিয়েই হোক না কেন, যা দিয়ে আপনি অন্যকে ছোট করে নিজেকে বড় দেখানোর চেষ্টা করবেন - সেটাই আপনার বিপদের কারন হবে। ওটাই হারাম। কেয়ামতের দিন যা করার কারনে আপনার আমার দিকে আল্লাহ ফিরেও তাকাবেন না।
দামি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে লাউড স্পিকারে উঁচু স্বরে গান বাজিয়ে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা?
বাজারের সবচেয়ে বড় কোরবানির জন্য কিনে এনে ডিসপ্লেতে শো-অফের চেষ্টা?
এমনকি, নিজের সন্তানের ভাল রেজাল্টের খবর নিয়ে ইচ্ছা করে অন্য আত্মীয়কে ছোট করতে তাঁর সন্তানের বাজে রেজাল্ট সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তাঁকে নিচু দেখানোর চেষ্টা?
সব অহংকার!
এখন যদি টাখনুর উপর প্যান্ট পরার কারনে নিজেকে অতি ধার্মিক ভেবে অহংকার হয়, তবে সেটাও আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। বাকিটা আপনার মন মানসিকতা, আপনি বুঝে শুনে চলুন। গুডলাক!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৫৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×