somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটিকে পতিতা/বেশ্যা/রক্ষিতা/মাগি/খাংকি ইত্যাদি ডাকা বন্ধ করুন

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বসুন্ধরার মালিক বা ওর ছানাপোনাদের সমস্যা আজকের দিনের না, বহু আগে থেকেই এগুলি "পাবলিক নলেজ।" খুন করে পার পেয়ে যাওয়া, জমি দখল করে পার পেয়ে যাওয়া ইত্যাদি ওদের কাছে ওয়ান টুর ব্যাপার। জায়গা মতন টাকা ঢালা থাকে। দেশের ক্ষমতাবানরা ওদের কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। এইসব কিছুই আমরা সেই নব্য প্রস্তর যুগ থেকেই জানি। সবই ওপেন সিক্রেট।
তারপরেও আমরা ওদের তেল দিয়ে এসেছি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্লট/ফ্ল্যাট কিনি, বসুন্ধরা শপিং সেন্টারে নিয়মিত শপিং, আড্ডা, সেল্ফি ইত্যাদি তুলি। বাড়িতে একটা চক্কর দেন, দেখেন ওদের প্রোডাক্ট ছাড়া আপনার বাড়ি চলে কিনা। টিস্যু, চাল, রুটি, পত্রিকা, চ্যানেল ইত্যাদি ইত্যাদি, কি নেই ওদের? ওদের কারোর সাথে লতায় পাতায় সম্পর্ক থাকলেও ফলাও করে বলে বেড়াই। আত্মীয়তা থাকলেতো কথাই নেই। ওদের পরিবারের কারোর পদধূলি আমাদের কারোর বাড়িতে পড়লে আমরা যেন ধন্য হয়ে যাই। ঠিক না? এই যে বিয়ে ছাড়াও তার একাধিক গার্লফ্রেন্ড ছিল, সেটাও কিন্তু আমাদের অনেকেই বহু আগে থেকেই জানতাম। ওর কাছের বন্ধুবান্ধবরা ওকে সাবাসী দিয়েছে। আমাদের দেশে লুইচ্চামীকে লোকজন "প্লেবয়গিরি" মনে করে। যে যত বড় লুচু, সে নিজেকে তত বড় জেমস বন্ড মনে করে। যার টাকা আছে, সে অমন পাঁচ দশটা মেয়েকে পুষতে পারে, যার টাকা নেই, সেও বিয়ে ছাড়া অমন সম্পর্কের খোঁজে থাকে। দেশের পতিতালয়গুলোর কাস্টমার কারা? এলিয়েনরা?
দোষ শুধু পুরুষেরই না। যদি তাই হতো, তাহলে পুরুষ পুরুষের সাথেই প্রেম করতো। এখানে সমানভাবে মেয়েগুলিও দায়ী। ওরা ভাল করেই জানে লোকগুলি বিবাহিত। অনেক ক্ষেত্রে (আমার যতগুলি এক্সট্রা ম্যারিটাল ঘটনা জানা আছে সেগুলোর সবগুলিতেই) মেয়েগুলি নিজেরাও বিবাহিতা থাকে কিংবা বয়ফ্রেন্ডের সাথে কমিটেড থাকে। এরপরেও এইসব প্রেম করে বেড়ায়। কেন? হয়তো ক্ষনিকের সুখের লোভে। আমরা যেমন বাড়িতে খাবার না খেয়ে মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে যাই, এখানেও ব্যাপারটা হয়তো তাই। এ ছাড়া আর কি কারন হতে পারে? নিষিদ্ধ কাজের উত্তেজনা ও আনন্দ ওদের মোরাল ক্যারেক্টারকে একদম শেষ করে দেয়।

বাংলাদেশে দুইদিন পরপর একটা হাস্যকর অভিযোগ উঠে। "বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ।" শুনেইতো হাসি আসে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে "ধর্ষণ" কিভাবে হয়? ধর্ষণ মানেই হচ্ছে কারোর সম্মতির বিরুদ্ধে তাঁর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন। দিনের পর দিন, মাসের পর স্বেচ্ছায় দুইজন নারী পুরুষ মিলিত হয়ে এসেছে। তারপরে হঠাৎ করে কিছু একটা ঘটলো, অমনি অভিযোগ করলেন, "তুমি আমাকে এতদিন ধর্ষণ করেছো!" আদালতে এই জিনিস প্রমান করতে পারবেন? আপনার শরীরে কোন জোর জবরদস্তির চিহ্ন নেই, কোন সাক্ষী নেই, প্রমান নেই, তারচেয়ে বড় কথা, সংজ্ঞানুযায়ীওতো এটি ধর্ষণের ঘটনা না। তাহলে?
আপনি যদি এতই ডিগনিফাইড মহিলা/পুরুষ হয়ে থাকেন, তাহলে কেনই বা শুধুমাত্র আশ্বাসের ভিত্তিতে কারোর সাথে শুয়ে যাবেন? আমি ধর্মীয় বিধান টানতে চাইছি না, সাধারণ মানুষ হিসেবেই আমাকে বুঝান যে এইভাবে শারীরিক মিলন খারাপ কোন ঘটনা না। যদি তাই হতো, তাহলে এই চৌর্যবৃত্তি কেন? লুকিয়ে লুকিয়ে হোটেল বুকিং অথবা বন্ধুর বাড়ির ফ্ল্যাট, এত লুকোচুরি কেন? ফেসবুকে ছবি দিতে নারাজ। পরিবারের লোকজনকে জানাতে নারাজ। যেহেতু নিজেই লুকাতে চাইছেন, তাহলে নিজেই প্রমান করছেন এটা খারাপ। কারন নিজের বিবাহিত পার্টনারের সাথেতো এইরকম করেন না।
আছে কোন যুক্তি?

তা এখন মেয়েটা মারা গেছে। সে এখন পাপ পুণ্যের উর্দ্ধে চলে গেছে। হত্যা, নাকি আত্মহত্যা আমরা জানিনা। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এবং মামলা রিপোর্ট পড়ে মনে হচ্ছে ঘটনা আত্মহত্যারই। তবে বাস্তবে সবই সম্ভব। যদি খুন হয়ে থাকে, তাহলেও অবাক হবো না। আপাতত পুলিশ তদন্ত করুক।
আর আমরা এখন একটা কাজ করতে পারি, তা হচ্ছে, এই মেয়েটিকে পতিতা/বেশ্যা/রক্ষিতা/মাগি/খাংকি ইত্যাদি ডাকা বন্ধ করা। মেয়েটার চরিত্র ফুলের মতন পবিত্র ছিল নাকি বিষাক্ত, তা নিয়ে আমাদের মন্তব্যে কিছুই যাবে আসবেনা। কিন্তু মেয়েটা পতিতা হলেও এইভাবে মৃত্যু সে ডিজার্ভ করে না। যদি হত্যা হয়ে থাকে, তবেতো তা নয়ই। আপনার কি যাবে আসবে? দুই চারটা গালি দিয়ে হাজার খানেক লাইক ও কমেন্ট নিয়ে ঘুমাতে চলে যাবেন। মাঝে দিয়ে একটি নেগেটিভ চিন্তাচর্চা মানুষের মস্তিষ্কে চালু করে যাবেন। আমরা এমনিতেই জাজমেন্টাল জাতি। এইসব কমেন্ট/পোস্ট/স্ট্যাটাস সেটার পালেই হাওয়া দেয়। যদি ভাল কথা বলতে না পারেন, চুপ থাকেন, পুলিশকে তদন্ত করতে দেন, তারপরে মন্তব্য করবেন। নাহলে জনমনের এই নেগেটিভিটি তদন্তেও প্রভাব ফেলবে। মূল আসামিও ফুসলে বেরিয়ে যায়। লোকে ধরেই নিবে, "মাগি মরছে, এতে আপসেট হবার কি আছে?" কিন্তু লুইচ্চা যে লুইচ্চামি করেই যাবে, করেই যাবে, আর করেই যাবে, সেটা নিয়ে কেউ চিন্তাও করবে না। আপনি এক কথায় মেয়েটাকে লোভী/গোল্ড ডিগার বলে দিচ্ছেন, আরে ভাই, পয়সা থাকার ভুল ফায়দা যে লম্পটটা এবং লম্পটগুলি তুলছে, তা নিয়ে বলবেন না? ঢাকা শহরের আপার ক্লাসে মিশে দেখুন, তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ এমন হয়ে গেছে। আমি নিজে সাক্ষী। আনভীরের ঘটনা বাইরে এসেছে বলে ধরে নিবেন না ও একাই এমন। এবং ওর মাধ্যমেও বাকিগুলিকে ম্যাসেজ দেয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। বুঝিয়ে দিন যে একদিন ওরাও ধরা খাবে।

এই যে এখন আপনি পোস্ট দিচ্ছেন অমুক তমুক বিশিষ্ট মানুষদের সাথে আনভীরের পরিচয় ছিল, আরে ভাই, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথেও এদের সম্পর্ক ভাল, এইটা আপনি জানেন না? এদের ক্ষমতা কতদূর বুঝেন না? আপনি নিজেই কোন পার্টিতে এই ব্যাটাকে পেলে ছবি তুলে ফেসবুকে দিতেন নিশ্চিত। তাহলে অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলে লাভ আছে?
সবচেয়ে খারাপ যেটা আমরা করছি, সেটা হচ্ছে, মেয়েটির বোন ও ভাইকে টেনে এনে গালাগালি ও কুৎসা রটাচ্ছি। লোকজন বলছেন, "বোনটা মামলা করতে চায় নাই, পুলিশই মামলা করিয়েছে।"
যারা এমনটা বলছেন, তাঁরাই নিজেদের সাথে এমন ঘটনা ঘটলে "আত্মগ্লানিতে" বোনের সম্পর্ক অস্বীকার করতো। আমাদের দেশে এইসব আবার খুব চলে। ভাই বা বোন অপরাধ করে ফেলেছে, সাথে সাথে বাকিরা সম্পর্কচ্ছেদ করার নাটক করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। নাহলে সমাজে মুখ দেখানো দায়! কেন? বোন কুকর্ম করলে ভাই/বোন/মা/বাবা কেন দায়ী হবে? তাঁরা সমর্থন করলে, তখন সেটা হবে লজ্জার বিষয়। এত পড়াশোনা করে এই কমন সেন্স ডেভেলপ করতে পারেন নাই?
মেয়েটার বাবা মা মারা গেছেন আগেই। ভাই বোনের সংসারে অন্য ভাইবোনের কি হাল হয় সেটা আপনারা জানেন না? মেয়েটা কোন পর্যায়ে, কোন পরিস্থিতিতে "টাকার লোভে" অন্য লোকের দ্বিতীয় বৌ/গার্লফ্রেন্ড হতে চেয়েছে তা আমরা জানি? ওর ভাইবোনের আর্থিক/মানসিক/আত্মিক অবস্থা আমরা জানি? বড় ভাই কোন এডাল্ট বোনকে খুব বেশি হলে কি বলতে পারবে? "ওটা করিস না, এটা কর।" এর বেশি সম্ভব? আমাদের নিজেদেরই ভাই বোনদের মধ্যে ঝগড়া হয়, কথা কাটাকাটি হয়, সম্পর্ক নষ্ট হয় - আমরা আসছি, ওরা কেন একতা কাপুরের সিরিয়ালের মতন পারফেক্ট পরিবার না তা নিয়ে ফেসবুকে কুৎসা রটাতে। রমজান মাসে ইবাদত বন্দেগী করেন ভাই। যদি সেটা না করায় আপনার অঢেল সময় থাকে তাহলে গল্প কবিতার বই পড়েন। যদি সেই রুচি না থাকে, তাহলে পত্রিকায় দেশ বিদেশের খবর রাখেন, সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি করেন। ভারতের করোনা পরিস্থিতির খোঁজ নেন আর ইয়া নফসি জপেন। কিন্তু প্লিজ, মিথ্যা বানোয়াট অনুমান নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে নেগেটিভিটি ছড়াবেন না।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৪
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×