somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফ্রিকান আমেরিকান কোন মেয়েকে বিয়ে

০৩ রা মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় আমাদের বাসায় এক বুয়া কাজ করতে আসতো। ওর নাম ছিল "বিউটির মা।" বিউটি ওর বড় মেয়ের নাম। ঐ সময়ে আমাদের সব বুয়াদের নামই এমন ছিল। শাহলমের মা, ফরহাদের মা ইত্যাদি।
তা বিউটির বাপ ছিল টেম্পো ড্রাইভার। আজকালকার অনেক ছেলে মেয়েই হয়তো জীবনেও টেম্পো দেখেনি। টেম্পো ছিল বেবি ট্যাক্সির এক্সটেন্ডেড ভার্সন, যেখানে অনেক বেশি যাত্রী বসানো যেত। এখন পোলাপান জিজ্ঞেস করবে বেবি ট্যাক্সিটা আবার কি? তা দেশে ফোর স্ট্রোক সিএনজি অটো রিকশা আসার আগে আমাদের দেশের রাস্তায় টু স্ট্রোক অটোরিকশা চলতো। সেগুলো সাইজে একটু ছোট ছিল, আমরা বলতাম বেবি ট্যাক্সি। হুমায়ূন আহমেদের পুরানো নাটকগুলো দেখলে এখনও সেগুলো দেখতে পারা যায়।
তা বুয়া সমাজেও ইকোনোমিক স্ট্যাটাস বিদ্যমান। ঠ্যালাওয়ালা বা ঐ শ্রেণীর মানুষেরা ছিল নিম্নবিত্ত। তারচেয়ে ইজ্জত বেশি রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালাদের। বেবি ট্যাক্সিওয়ালাদের ইজ্জ্ত একটু বেশি, মিডল ক্লাস। টেম্পোওয়ালারা ছিল আপার মিডল ক্লাস। আর গাড়ির ড্রাইভাররাতো কোন কথা ছাড়াই আপার ক্লাস। ওদের ইজ্জত সম্মানই ছিল আলাদা।
বিউটির বাপ ছিল ওদের সোসাইটির আপার মিডলক্লাস। ওদের বস্তিতে কোন ড্রাইভার নেই, কাজেই ওর ইজ্জত ছিল আলাদা। যুবতী নারীদের কাছে সে ছিল হার্টথ্রব। এবং পুরুষ মানুষকে বেশি পাত্তা দিলে যা ঘটে আর কি, দুইদিন পরপর শুনতাম সে অমুক তমুক জায়গায় বিয়ে করে ফেলেছে। অমুকের মেয়েকে নিয়ে ভেগেছে, নাহয় তমুকের বৌকে নিয়ে। অনেকে স্বেচ্ছায় ওর সাথে মেয়ের বিয়ে দিত। কেউই ওর আগের সংসার সম্পর্কে জানতো না। বিয়ে হবার পরে জানলেই বা কি? ঘটনাতো ঘটে গেছে।
কিছুদিন পরপর বিউটির মা এসে আমাদের বাড়িতে কান্নাকাটি করতো। এক সময়ে ওরও গা সোওয়া হয়ে গিয়েছিল। নির্বিকার স্বরে বলতো, "উনি আরেকটা বিয়া করছেন।"
আমার বাপ অবাক হয়ে বলতো, "আমরা একটা বৌই সামলাতে হিমশিম খাই, এই ব্যাটা এত বিয়ে করে কিভাবে?"
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি যেমন নানান দেশে নিজেদের অফিস খোলে, তেমনই শহরের নানান বস্তিতে ওর সংসার ছিল। অনেক সংসার থেকে ওর বৌগুলি অন্য কোন প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যেত। আবার অনেক সংসারে ওরা টিকেও থাকতো। বৌদের মধ্যে কাড়াকাড়ি লাগতো কে ওর মন জয় করতে পারে!
দিন শেষে ওর ঘরে ফেরা হতো সেই বিউটির মায়ের কাছেই। যে বছরে দুই বছরে একটা করে বাচ্চা দিত। সাফল্যের ট্রফি!
আল্লাহ মালুম ওরা এখন কেমন আছে। বেঁচে আছে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন।
দেশের বস্তিতে এমন ঘটনা আনকমন কিছু না।
আমেরিকার বস্তিবাড়িতেও এমন ঘটনা ঘটে। হ্যা, ধনী দেশে বস্তিবাসীর জীবনের মান আমাদের দেশের চাইতে একটু হলেও উন্নত, কিন্তু জীবনযাত্রা একেবারে হুবহু এক। এইসব পাবলিকদের নিয়েই আমেরিকায় বিভিন্ন টিভি শো হয়ে থাকে। গাঞ্জাখোর, নেশাখোর, পিম্প, স্ট্রিপার এরাই এইসব শোয়ের বেশিরভাগ অতিথি, এবং মূল বিষয় হয়ে থাকে কে কার সাথে চিট করেছে, এবং সেটা নিয়েই কনফ্রন্টেশন। বিচিত্র সব কাহিনী, নাটকীয় টুইস্টে ভরপুর! চরিত্রগুলোর ঝগড়ার পাশাপাশি ধুপধাপ মারামারি চলে, উপস্থিত পাবলিক হৈহৈ করে, টিআরপি বাড়ে।
তা এমন একটা শোতে একদিন এক আফ্রিকান আমেরিকান লোক এলো। দেখে মনে হয় এই লোকটা ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। কিন্তু যেহেতু এই শোয়ের অতিথি হিসেবে এসেছে, এর মানে নিশ্চই এর মধ্যে জিলাপির প্যাঁচ আছে।
প্যাঁচের কথাই সে বলল। সে বেশ কয়েক বছর এক মেয়ের সাথে সংসার করেছে। সেই ঘরে ওদের বাচ্চা কাচ্চা আছে। ইদানিং সে আরেক মেয়ের সাথে প্রেম করেছে। মেয়েটা যথেষ্ঠ সিরিয়াস, ওও সিরিয়াস। এখন সে মেয়েটাকে জানাতে চায় ওর আগের সংসারের ব্যাপারে। এবং তারচেয়ে বড় কথা, এইটাও জানাতে চায় যে সে আসলে একজন মেয়ে। মানে মেয়ে হিসেবে জন্মেছিল, তারপরে পুরুষ হয়ে গেছে।
বর্তমান প্রেমিকাকে আনা হলো। দেখে বুঝা যাচ্ছে নম্র ভদ্র আফ্রিকান আমেরিকান এক মেয়ে।
শুরু হলো প্রেমের কথাবার্তা দিয়ে, এবং যখনই জানানো হলো ও মিথ্যা বলেছে, ওর আগে একটা সংসার আছে, তখনই সেই নম্র ভদ্র মেয়েটা ঠাস করে চড় দিয়ে বসলো।
"তুই মিথ্যা বললি ক্যান? আমিতো তোর কাছে যাই নাই, তুই হ্যাংলার মতন আমার পিছে লেগে ছিলি। বলেছিলি আমাকে ছাড়া তুই বাঁচবি না। এখন তুই আমাকে জানাচ্ছিস তোর আরেকটা সংসার আছে?"
আবারও ঠাস!
বাউন্সার এসে মারামারি থামালো।
লোকটা মিনমিনে স্বরে বললো, "আমার আরেকটা কথা বলার আছে।"
মারধরে হাপিয়ে উঠা মেয়েটা বলল, "বল, কি বলবি তুই?"
"আমি তোমাকে জানাতে চাই যে আমি আসলে একটা মেয়ে, অপারেশন করে ছেলে হয়েছি!"
এইবার ঐ মেয়েটা ঝাঁপিয়ে পড়লো। বিচিত্র গালি দিল, কিন্তু টিভিতে সেগুলো সেন্সরড হয়ে গেল। আমি শুধু টু টু শব্দ শুনলাম।
"টুর বাচ্চা, তোর টুরে আমি টু!"
মেয়েটা মারে আর বলে, "তোকে আমি আমার বাচ্চাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। এখন কি আমি ওদের গিয়ে জানাবো যে তুই পুরুষ না, তুই আসলে নারী?"
ধুপধাপ মারামারি চলছে। পুরুষটা (সাবেক নারী) মার খেয়ে যাচ্ছে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে এতে অভ্যস্ত। পুরাই নির্বিকার।
উপস্থাপক বললেন, "আমার মনে হচ্ছে তুমি লেসবিয়ান না।"
মেয়েটা গর্জে উঠলো, "হেল নো!"
এদিকে ওর বর্তমান সংসারের বৌকে মঞ্চে আনা হলো। মহিলা পর্বতাকৃতির। সে এসেই মারধর শুরু করলো। ওরও মুখের ভাষা সেন্সরড হয়ে যাচ্ছে। "টুর বাচ্চা! তোর টু বেশি টু হয়েছে, মজা টের পাওয়াচ্ছি!"
বুঝলাম এই মহিলা "হাত থাকতে মুখে কি" তত্বে বিশ্বাসী। মারছে আর বলছে, "তোর সাথে আমার এত দিনের সংসার। (মাইর।) এতগুলি বাচ্চা। (আবারও মাইর।) তুই ঐ পক্ষের বাচ্চাদেরও পরোয়া করিস নাই! (মাইর চলছেই।) তোর মতন মিথ্যুক জীবনেও শুধরাবে না।"
মারের হাত থেকে বাঁচার জন্য নাকি মিথ্যা বলার স্বভাবের জন্য ছেলেটা (সাবেক মেয়েটা) বলল, "বেবি, আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি। ওতো ছিল টাইম পাস্!"
এইবার প্রেমিকা গেল খেপে। "টাইম পাস মানে? আমি টাইম পাস্ ছিলাম?" সে তেড়ে এসে মারতেই থাকলো।
বেচারা হয়তো একটু স্বস্তি পেল। আগে আমার খাচ্ছিল আন্ডার টেকারের হাতে। এখন কোন পাতলা রেসলারের হাতে।
উপস্থাপক বৌটাকে বলল, "তুমি মেয়েটাকে কিছু বলবে?"
মহিলা বলল, "ওকে কি বলবো? ওরতো দোষ নেই। ওকে এই টুটা মিথ্যা বলেছে।" (আবারও মাইর।)
কাহিনী দেখে বিউটির বাপের কথা মনে পড়ে গেল। বেচারার ভাগ্য ভাল ছিল, আফ্রিকান আমেরিকান কোন মেয়েকে বিয়ে করেনি। নাহলে ওর অবস্থাও এমন হতো। কথা কম, মাইর বেশি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:২০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×