somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইজরায়েলকে কেন ঘৃনা করি।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইহুদি এবং জায়নবাদ দুটি আলাদা বিষয়।
ইহুদি একটি ধর্ম, জায়নবাদীরা ধার্মিক নয়, ওদের বেশিরভাগেরই ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই, কিন্তু একই সাথে ওদের বিশ্বাস ঈশ্বর ওদেরকে ফিলিস্তিন অঞ্চলটি দিয়েছেন, তাই ওদের ওখানেই থাকতে হবে।
মাথা প্যাচ খেয়ে গেছে? যে ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই, সেই ঈশ্বরেরই উপহার নিতে মানুষ খুন করে ফেলছে? জঙ্গিবাদীদের মাথার তার এমনই ছেড়া থাকে।
তা জায়নবাদীরা ইহুদি হতে পারে, খ্রিষ্টানও হতে পারে। ইভেনজেলিক খ্রিষ্টানরা যেমন জায়ানিস্ট। ওরা বিশ্বাস করে সব ইহুদিদের জেরুজালেমে ফেরত পাঠাতে পারলেই যীশু (আঃ) পৃথিবীতে আসবেন, তারপরে উনাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে সব ইহুদিদের মেরে ফেলবেন। তাই যীশুর (আঃ) আগমনকে ত্বরান্বিত করতেই ওরা ইজরায়েলের সাপোর্ট করে।
আমাদের দেশে যেমন এক মাওলানা ওয়াজে মাহফিলে প্রচার করে বেড়ায় ইমাম মাহ্দী চলে এসেছেন, আমেরিকাতেও অনেকে বিশ্বাস করে যীশুর (আঃ) আগমন ঘটে গেছে। কেবল আত্মপ্রকাশ বাকি।
তা আমি কারোর জাত তুলে ঘৃণা না করলেও জায়ানিস্টদের দুই চোখে দেখতে পারিনা। ইহুদি বিদ্বেষ এবং জায়নবিদ্বেষ এক না। আমাদের দেশের মানুষ দুইটা গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক ইহুদীও জায়োনিস্টদের দেখতে পারেনা। যেমন লেখক ও ইন্টারন্যাশনাল স্পিকার Miko Peled একজন ইজরায়েলি, যার জন্ম কট্টরপন্থী এক জায়নিস্ট পরিবারে। ওর বাবা ইজরায়েলি জেনারেল ছিল যে ষাটের দশকে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখলে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
ওর দাদা ইজরায়েল সৃষ্টির অন্যতম কারিগর ছিল (ওদের "ডিক্লারেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স" সাইন করা ব্যক্তি)।
বুঝতেই পারছেন, "Miko Peled সহীহ ইজরায়েলি নহে" বলার কোন সুযোগই নেই। তা ওনার আপন ভাগ্নি আঠারো বছর বয়সে এক ফিলিস্তিনি মেয়ের আত্মঘাতী হামলার শিকারে মারা যায়। যেহেতু শিক্ষিত মানুষ ছিলেন, তাই তাঁর মস্তিষ্ক তাঁকে ভাবতে বাধ্য করে, কেন একটি আঠারো বছরের কিশোরী আরেকটি আঠারো বছর বয়সী কিশোরীর প্রাণের শত্রু হয়ে যাবে? কি ঘটেছে তাঁর সাথে?
এই সাধারণ একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনি সামান্য পড়াশোনা করেন। এবং এর ফল হচ্ছে, আজকে ইজরায়েল তাঁর প্রাণের শত্রু হয়ে গেছে। নিজের দেশে তিনি দেশদ্রোহী। কারন, তিনি এখন বিশ্বব্যাপী বলে বেড়ান ইজরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র! উনার লেখা একটি বই পড়তে পারেন, The General’s Son: The Journey of an Israeli in Palestine.
আরেকজন ইজরায়েলির নাম নিতে পারি, Ilan Pappe. তিনি একজন ইতিহাসবিদ, যিনি অক্সফোর্ডে গিয়েছিলেন ইজরায়েলি ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করতে এবং গবেষণা করতে গিয়ে ইজরায়েলের ইতিহাস জেনে ফেলেন। সত্য জেনে ফেললে একজন আদর্শ বিবেকবান মানুষ যা করে তিনিও সেটাই করলেন। আজকে পর্যন্ত তিনি নিজেও ইজরায়েলি হয়েও ইজরায়েলকে ঘৃণা করেন।
যে দুইজনের নাম বললাম, উনারা দুইজনই কট্টর জায়নবাদী ইহুদি পরিবারে জন্মে ইজরায়েলেই বেড়ে উঠেছেন, এবং আজও ইহুদি আছেন। তারপরেও উনারা ইজরায়েলকে দেখতে পারেনা।
এমন সংখ্যা প্রচুর আছে।
আর এদিকে আমি সেদিন শুনি বাঙালি নাকি জানেই না ইজরায়েলকে কেন বিরোধিতা করতে হবে! তাই ভাবলাম কিছু ফ্যাক্ট তুলে ধরা যাক, দুনিয়ার যেকোন জায়গা থেকে ভ্যারিফাই করে নিবেন, যদি ভুল হয়ে থাকি কানে ধরে উঠবস করবো। তওবা করে ইহুদি হয়ে যাব।
আমি আমার লেখালেখিতে এমন ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে থাকি, কারন আমি জানি আমি আউল ফাউল আবেগতাড়িত লেখা লিখি না।

ইজরায়েল নিয়ে কিছু কথা বলতে গেলেই একদল লোকে বলতে শুরু করবে "আপনি তাহলে হামাসের কর্মকান্ডকে সমর্থন করেন?"
আপনাদের বলে রাখি, এইটা বহু পুরানো টেকনিক, এবং এখানেই বেশিরভাগ মানুষ ধরা খায়। শুরু হয়ে যায় হামাস ভাল না মন্দ এই বিতর্ক, এবং এর ফলে মূল যে বিষয়টা, ইজরায়েলের দখলদারিত্ব, সেটা পাশে পড়ে থাকে।
তাই শুরুতেই বলে দিবেন, "না, আমি হামাসের সমর্থক না। ইনফ্যাক্ট, ইসলামে ইনোসেন্ট সিভিলিয়ান হত্যাকে জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, কাজেই হামাসের হাতে নিহত হওয়া মানুষ যদি ইজরায়েলিও হয়, এতে সমর্থন করার কিছু নেই। কিন্তু তার অর্থ এই না যে ইজরায়েল ভাল হয়ে গেল এবং ওদের সমর্থন করতে হবে। তা আমিতো হামাসকে তিরস্কার করলাম, তা বাবাজি, তুমি কি ইজরায়েলের কর্মকান্ডকে তিরস্কার করছো?"

এখানে ওদের মাথা গুলায়ে যাবে।
কারন ওরা আশা করেনা হামাসকে আমি তিরস্কার করবো। মুখস্ত স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসছিল তর্ক করতে, প্রথমেই ধরা খেয়ে গেল। এখন আসবে নিজের দ্বিতীয় ও শেষ অবলম্বন নিয়ে আক্রমন করতে।
"ইজরায়েল নিজেকে রক্ষা করতে যা করার তাই করেছে। (They have the right to defend themselves.)"
এইবার ওদেরকে আরেকটা মার দেই চলেন। স্বীকার করে নেই "অবশ্যই! প্রতিটা মানুষেরই নিজেকে ডিফেন্ড করার অধিকার আছে। সেটা ইজরায়েল হলেও ঠিক আছে।"

এখন দেখবেন ডুবন্ত মানুষের মতন হাতড়ে বেড়াচ্ছে। কারন দুইটা অস্ত্র নিয়ে আসছিল আক্রমন করতে, দুইটাতেই আনএক্সপেক্টেড জবাব পেয়ে গেছে। লড়ার আর কোন ভ্যালিড অস্ত্র নেই।
এখন ওদের মুখের উপর নিজের অস্ত্র ছুড়ে মারবেন। এবং সেটা হচ্ছে facts. একদম প্রমাণিত সত্য ঘটনা। দেখেন কি জবাব দেয়।

"আপনি বলেছেন নির্দোষ মানুষ মারা অন্যায়। আমি নিজে মানি অন্যায়। এখন আপনি কি স্বীকার করবেন যে ইজরায়েলও নির্দোষ নাগরিক হত্যা করছে? হামাস বারোশো ইজরায়েলি খুন করেছে (সেটাও রমজান মাসে মসজিদে আকসার ভিতরে হত্যা করা বারোশো ফিলিস্তিনি হত্যার বদলা নিতে) এর জবাবে ইজরায়েল ছাব্বিশ হাজার সিভিলিয়ান হত্যা করে ফেলল, যার বেশিরভাগই শিশু। এক্ষেত্রে আপনার মন্তব্য কি? আপনি দাবি করছেন ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে, তাহলে গাজাবাসীর আত্মরক্ষার অধিকার নেই?"

এই যে ইজরায়েলের সমর্থকরা, যারা ইতিহাসের "ই"ও পড়েনাই, এদের ধারণা ফিলিস্তিনিরা এমনিতেই, শখে, মন চায় তাই ইজরায়েলি হত্যা করে। ইজরায়েল কিছুই করে না, ওদের কোন দোষই নাই।
আসেন এদের কিছু ইতিহাস শেখাই।
এবং সেই সাথে আপনাদের বলি একবার শুধু নিজেকে ঐ অঞ্চলে ঐ মানুষদের মাঝে বসিয়ে কল্পনা করুন।

ইজরায়েল যখন রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে, সেই সময়েও ওদেরকে গাজা উপত্যকা দেয়া হয়নি। আজও ইউনাইটেড নেশন্স ওয়েস্ট ব্যাংক (পশ্চিম তীর) এবং গাজাকে ইজরায়েলের "অকুপাইড টেরিটরি" বা দখলকৃত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু ঐ উল্লেখ করা পর্যন্তই। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা ওদের নেই।
ইতিহাস বলে একটা সময়ে ফিলিস্তিন অঞ্চলে ইহুদি জনসংখ্যা ছিল শতকরা তিন ভাগের মতন। ইজরাইলিরা আল্লাহর নির্দেশেই (ওদের ধর্মমতে) বিশ্বের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওরা দলে দলে ফিলিস্তিন অঞ্চলে আসতে শুরু করে। তখন ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৮ সালে ইজরায়েলকে ৫৫% অঞ্চল দেয়, এবং ফিলিস্তিনিদের দেয়া হয় মাত্র ৪৫% অঞ্চল। যদিও জনসংখ্যায় ইজরায়েলীদের চাইতে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি, এবং তারচেয়ে বড় কথা, এলাকাটি ফিলিস্তিনি জনসাধারণের চৌদ্দ পুরুষের ভিটে ছিল। রোহিঙ্গারা যদি মায়ানমার থেকে আপনার বাড়িতে এসে দখল নিতে চায়, আপনি কেনই বা হাসিমুখে নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যাবেন? ফিলিস্তিনিদের সাথে সেটাই ঘটলো।
ইজরায়েল শুরু থেকেই জমি দখলে মন দেয়। এবং এরজন্য নৃশংস থেকে নৃশংসতম কাজ করতেও ওদের হাত কাঁপেনি। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, কিছুদিন আগেই হিটলারের অত্যাচারে নির্যাতিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী নিজেরাই তখন নাৎজি জার্মানদের আচরণ শুরু করে। ওদের নৃশংসতার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল যাতে বাকিরা ভয়েই এলাকা ত্যাগ করে।
এর ফলে লাখের উপর ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে গাজায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।
১৯৬৭ সালে ইজরায়েল আবার জমি দখল শুরু করে, সিক্স ডে ওয়ারে ওরা পশ্চিম তীর বা ওয়েস্ট ব্যাংককে দখলে নেয়। এবং এই সময়েই ওরা জেরুসালেম দখল করে ফেলে। ইউএন ঘোষণা করেছিল জেরুসালেম নিরপেক্ষ অঞ্চল থাকবে, না মুসলিম, না ইহুদি না খ্রিষ্টানের একক আধিপত্ব থাকবে এই অঞ্চলে। কিন্তু ইজরায়েল সেটারও তোয়াক্কা না করে এই পবিত্র শহরটিকে নিজের মুঠোবন্দি করে নেয়।
ব্যস, শুরু হয়ে গেল ইজরায়েলের বর্বরতা।
৬৭তে গাজার সেই ছোট্ট অঞ্চলে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লক্ষ, আজকে দুই মিলিয়নের বেশি। এইটুকু অঞ্চলে এত বিপুল পরিমান মানুষের বসতি মানে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে একে পরিণত করা।
শুধু তাই নাই, ইজরায়েলের হাতেই ওদের ইলেক্ট্রিসিটি, পানি, খাদ্য, জীবিকা, এমনকি বাড়িঘর নির্মাণের অধিকারও ন্যস্ত। ইজরায়েল চাইলে কেউ সমুদ্রে মাছ শিকারের লাইসেন্স পাবে, নাহলে বেকার বসে থাকতে হবে। ইজরায়েল চাইলে কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে পারবে, নাহলে মাথার উপর ছাদহীন থাকতে হবে। ওরা চাইলে আপনার বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছাবে, নাহলে না খেয়ে মরেন, কিছুই আসে যায় না। আপনার মায়ের চিকিৎসা প্রয়োজন, আপনার শিশু না খেয়ে আছে, আপনার কিছুই করার নেই। কারন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে ইজরায়েল।
অর্ধেক জনসংখ্যাই বেকার। আপনি স্থানীয় নাগরিক, আপনি আপনার এলাকার সমুদ্রে মাছ শিকারের লাইসেন্স পাচ্ছেন না, অথচ ইউরোপ আমেরিকা থেকে আগত নব্য ইজরায়েলীরা পারমিট পাচ্ছে। আপনার চোখের সামনে ট্রলারভর্তি মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আপনি ছিপ ফেলেন, আপনাকে ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করবে।
আপনার বাপ দাদার ভিটে দখল করে সেখানে চাষবাস করছে।
আপনাকে আপনারই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। কারন বাড়ি দখল করাটা ওদের দৃষ্টিতে ধর্মীয় লড়াই। ঈশ্বর এই এলাকা ওদের দিয়েছেন, ওরা সেটা পুনরুদ্ধার করছে।
আপনি দিনের পর দিন হোমলেস। মাথার উপর ছাদ নেই। বা কারোর বাড়িতে আশ্রিত। যদি "অবৈধভাবে" (এপ্লাই করার বছর খানেক পরেও যদি দেখেন এপ্রুভ হয়নি) বাড়ি নির্মাণ করে ফেলেন, ওরা এসে সেই বাড়ি গুঁড়িয়ে দিবে।
আপনি বিচার নিয়ে কার কাছে যাবেন? আমেরিকা? সে নাক সিঁটকে বলবে, "অবৈধ বাড়ি নির্মাণ করলে ইজরায়েলতো ভাঙবেই। এখানে আমাদের কি করার আছে?"
"কিন্তু আমাদের এপ্লিকেশন ওরা ছুঁয়েও দেখে না।"
"দাপ্তরিক কাজ একটু দেরিতে হবেই। আপনাদের ধৈর্য্য ধরা শিখতে হবে।"
রসিকতা ভাই, অতি নির্মম রসিকতা চলছে ওদের সাথে।
আপনি জানেন গত তিরিশ চল্লিশ বছর ধরে পয়ঃনিষ্কাশনের লাইনের কোন মেরামত করা হয়নাই? কারন? ইজরায়েল ওটা নিয়ন্ত্রণ করে। ওদের ইচ্ছাই নাই ওটা মেরামতের।
ইউরোপ আমেরিকায় একটা কুকুরের জীবনও ওদের চেয়ে আরামদায়ক হয়ে থাকে।
গাজার চার দিকে আকাশ ছোঁয়া উঁচু দেয়াল। দেয়ালের উপরে কাঁটাতারের বেড়া। ফটক দিয়ে বাইরে কাউকে বেরোতে হলে ইজরায়েলের অনুমতি নেয়া লাগে। অনুমতি পেলে বেরোতে পারবেন, নাহলে বন্দি। ওদের কারোরই কোন পাসপোর্ট নেই। ওদের নিজেদের কোন রাষ্ট্র নেই। ওদের কোন চাকরি নেই।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এবং বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিরা (গাজা ও পশ্চিম তীর) সহ্য করতে না পেরে আন্দোলনে নামে। ওদের অস্ত্র একটাই, পাথর। ইজরায়েলও জবাব দেয় বুলেট দিয়ে। এদিক থেকে পাথর যায়, তো ওদিক থেকে মেশিনগান ছোটে। আশির দশকে ইজরায়েল "আইন পাশ করে" যে কোন ফিলিস্তিনি শিশুকে পাথর ছুড়তে দেখলে ওদের হাত ভেঙ্গে দিতে হবে। এইটা ইজরায়েলি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল। আর বড় কেউ হলেতো সরাসরি গুলি।
আপনি যদি বলেন "ওদের পাথর ছোড়ার দরকার কি?" তাহলে বলবো, "আপনি নিশ্চই মজাক করছেন। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হলো কেন? আমার তোমার রক্ত রক্ত, আর ওদের রক্ত পানি? ওদের অধিকার নাই স্বাধীনভাবে বাঁচার? প্রায় সাত দশক হলো, আর কত?"

আমাকে জবাব দিতে হবেনা, এখন আপনি একটু নিজেকেই প্রশ্ন করেন, ইজরায়েলের যেমন আত্মরক্ষার অধিকার আছে, দুনিয়ার সব দেশের সব জাতিরই আত্মরক্ষার অধিকার আছে, ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকারের বেলায় আপনি কেন হাত কচলান? আর কত নির্যাতন সহ্য করবে? আর কত রক্ত দিবে? দিনের পর দিন পরিবারের পর পরিবার নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, ওরা কতদিন মুখে আঙ্গুল চেপে রাখবে? আপনাকে নিজের সন্তানকে কবর দিতে হয়েছে? ওদের ঘরে ঘরে এই ঘটনা ঘটে। এই যে সাম্প্রতিক হামলা চলছে, কত হাজার শিশু মারা গেছে জানেন?
ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার আমেরিকা। মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি ধরে রাখতে হলে ওর একটা বিশ্বস্ত মিত্র দরকার, ইজরায়েল সেটা। সেই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার একবার গাজাকে বলেছিলেন "এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ছাদহীন কারাগার।"
নেলসন ম্যান্ডেলা, যিনি নিজেই এপারথাইড রেজিমের শিকার ছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি দেখে বলেছিলেন "এদের অবস্থা আমাদের চেয়েও খারাপ। এটিই আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়!"
আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু বলেছিলেন "আমি সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদের সাথে মেলালে বলবো ফিলিস্তিনের অবস্থা অনেক খারাপ।"
সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত বর্ণবাদের একটি ছিল। কালোদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা, আলাদা রাস্তা, আলাদা যানবাহন, চাকরি, স্কুল ইত্যাদি ছিল - কিন্তু সাদারা ওদের পশু পাখির মতন খুন করতো না। ওদের বাড়িঘর গুড়িয়ে দিত না। মূল পার্থক্য ছিল এই যে, কালোদের নিজেদের এলাকায় স্বাধীনতা ছিল। গাজাবাসীদের নিজেদের শহরের ভিতরেই স্বাধীনতা নাই।
সেই সাউথ আফ্রিকা ইজরায়েলকে আন্তর্জাতিক আদালতে টেনে নিয়ে গেছে। গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। ওরা নিজেরা একসময়ে এপারথাইড স্টেট ছিল, ওরা তাই ইজরায়েলের এই আচরণ মেনে নিতে পারছে না। পুরানো পাপের প্রায়শ্চিত্যও বলা যায়।
তবে সাউথ আফ্রিকানরা স্থানীয় কালোদেরকে ঘৃণা করলেও নিশ্চিহ্ন করতে চায়নি। ইজরায়েলের টার্গেটইতো ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।
আপনি বলতেই পারেন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন?
উত্তরটাও সহজ, কারন ইজরায়েলই চাচ্ছে না সমস্যার সমাধান। কারন সমস্যার সমাধান ইজরায়েলের কাছেও নেই।
ওয়ান স্টেট্ সল্যুশন ওরা মানবে না, কারন স্থানীয় ফিলিস্তিনি সংখ্যা ওদের চেয়ে বেশি। "ডেমোক্রেসি" হলে ভোটে ওরা জিতবে না। তাই এই রিস্ক ওরা নিবেনা।
টু স্টেট সল্যুশন ইজরায়েলই মানছে না। কারন ওদের আরও ল্যান্ড চাই, পুরো এলাকাটা চাই। সেটাই ওরা করছে। মাত্র ৫৫% ল্যান্ড দিয়ে ওদের চলবে কিভাবে?
তাহলে সমাধান কি?
জ্বি, ফিলিস্তিনিদের একেবারে শেষ করে ফেলা। কিন্তু ২২ লাখ মানুষকে এক ঝটকায় নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার কথাটা ভদ্রসমাজে বলা সম্ভবও না। ঠিক এই কারণেই আমেরিকা, ইংল্যান্ড বা বিশ্বমাতবরদের কারোর কাছেই কোন সমাধান নেই।
এই যে কথাগুলি বললাম, এইগুলি সবই ঐতিহাসিক ফ্যাক্ট। চেক করেন, তারপরে আমার ভুল খোঁজার চেষ্টা করেন। পাবেন না। তবে লাভ একটা হবে, কিছুটা পড়াশোনা হবে। সঠিক তথ্য জানার পরে ইজরায়েলকে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সাপোর্ট করতে পারেনা। সম্ভব না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:১৩
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×