somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩৭% ট্যারিফ ও আফসোসলীগ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত বুদ্ধিমান একজন ব্যবসায়ী। জীবনের একটা পর্যায়ে ৯০০ মিলিয়ন দেনা থেকে উঠে এসে সে মাল্টি বিলিওনেয়ার হয়েছে। হাজার হাজার যোগ্য মানুষ থাকার পরেও দুই বার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হয়েছে - একে গাধা গরু ভাবার কোন উপায়ই নাই।
এই সমস্ত লোকেরা ওভারকনফিডেন্সের জন্য জীবনের একটা পর্যায়ে নিজেদের ঈশ্বরতুল্য সর্বশক্তিমান ভাবতে শুরু করে। স্বভাবতই, এরা Bully হয়ে থাকে। কারোর কথাবার্তাতো শোনার মুডে থাকেই না, উল্টো নিজের ধ্যান ধারণা অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। দুনিয়াবাসীর ভাগ্য ভাল যে আমেরিকা চেক্স এন্ড ব্যালেন্সে চলে। বাংলাদেশের মতন সব কিছুতে "প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে" চললে কবেই সব লন্ডভন্ড করে দিত!
তা ইদানিং সে ট্যারিফ নিয়ে আলোচনায় আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপর ৩৭% ট্যারিফের কারনে।
একদল লোক হায়হায় করছেন, এইবার বাংলাদেশের ইকোনোমি বুঝিবা ধাক্কা খেল, আমাদের পথের ভিখারি হওয়া থেকে কেউ ঠ্যাকাতে পারবে না। আগেই ভাল ছিলাম। বাঙালি এইবার বুঝবে ওরা কি হারিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি সব আপা ভিত্তিক পোস্ট।
আরেকদল আপাতত চুপ আছে। বুঝতে পারছে না ঠিক কি বলবে। ৩৭% ট্যারিফতো সহজ কথা না। মাত্রই কিছুদিন আগে চীনের ডিপ্লোম্যাটিক বিজয় নিয়ে বিরাট আনন্দ হয়েছিল। এখন এ কি নতুন যন্ত্রনা!
মজার কথা হচ্ছে, গত বছরই (বা তার আগের বছর) আপা ইন্ডিয়ার কথায় নাচতে নাচতে আমেরিকাবিরোধী অনেক আউল ফাউল কথাবার্তা বলেছিলেন। তখন দালাল-এ-লীগ ফেসবুকাররা জ্বালাময়ী সব কথাবার্তা লিখছিল যে "আমরা কাপড় না দিলে আমেরিকানরা ন্যাংটা হয়ে ঘুরবে। ঠিকই আছে। আমাদের নতুন বাজার ধরতে হবে।"
তখনই বলেছিলাম এই সমস্ত গর্ধব শ্রেণীর "সহমত আপা"দের কারণেই আপা গদিহারা হবে।
আজকে ওরাই হাহাকার করছে। পল্টিবাজ যাকে বলে!
তা আমি আগেও যা বলেছিলাম, এইবারও তাই বলবো - "আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় কাস্টমার। কোন বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী নিজের existing কাস্টমারকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন কাস্টমার খোঁজার চেষ্টা করে না।" বাংলাদেশ চেষ্টা করেছিল, না রাশিয়া, না চায়না, না ইন্ডিয়া - কেউ আমাদের আমেরিকার সমান কাস্টমার হয়নি। হওয়া সম্ভবও না। কাজেই, আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে এটাই যে আমাদের বর্তমান কাস্টমারকে ধরে রাখা। প্রয়োজনে হেভি ডিসকাউন্ট দিয়ে। প্রয়োজনে রেফারেল গিফট দিয়ে।
ট্রাম্প ৩৭% ট্যারিফ শেখ হাসিনার দুঃখে ইউনূসের উপর বিরক্ত হয়ে চাপায় নাই। ছাত্রলীগের ওর প্রতি যথেষ্ট পীড়িত থাকলেও ওর এত দরদ নাই। ও শুধু দেখেছে কোন কোন দেশ আমেরিকান পণ্যের উপর কত পার্সেন্ট ট্যারিফ আরোপ করে, তাই ওটার বদলা হিসেবে সেইসব দেশের উপর চাপিয়েছে। যদি পিরিতের বান্ধবের জন্য ট্যারিফ কম রাখতো, তাহলে ইজরায়েলি পণ্য বিনা ট্যারিফে মার্কিন বাজারে ঘুরাফেরা করতো। কিন্তু ইজরায়েলি পণ্যের উপরও ১৭% ট্যারিফ আরোপিত হয়েছে।
এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ওসব দেশ যাতে আমেরিকার সাথে আলোচনার টেবিলে বসে, ট্যারিফ কমাতে অনুরোধ করে। সে দেশবাসীকে দেখিয়ে দেয় যে he made America great again!
কারন বিদেশী পণ্যে উচ্চ ট্যারিফের ফলে লোকজন স্থানীয় আমেরিকান পণ্য কিনবে। মার্সিডিজ বেঞ্জ কিনতে গিয়ে ট্যাক্সের যন্ত্রনায় টেসলা কিনে বাড়ি ফিরবে। আমেরিকান ইকোনোমি বুস্ট হবে। প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরী হবে। সহজ ইকোনমিক সূত্র। ইকোনমিক্স ১০১ এ পড়েছিলাম। কতটা কার্যকর হবে, সেটা প্র্যাক্টিক্যালি দেখতে হবে।
খুব বেশি প্যানিক করার কিছু নাই। ট্রাম্প সকালে এক কথা বলে, বিকালে আরেক, রাত হতে হতে সম্পূর্ণ নতুন কথা নিয়ে হাজির হয়। ট্যারিফ নিয়েও ঘাবড়াবার কিছু নেই। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড ইউনুস দুনিয়ার সেরা কিছু অর্থনীতিবিদের একজন। উনার হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ থাকলে উনি বাংলাদেশকে না খাইয়ে মারবেন না ইন শা আল্লাহ। আমাদের ভাগ্য অনেক ভাল যে উনার মতন একজন মানুষকে আমরা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পেয়েছি।
হ্যা, উনার প্রশংসা করতে গিয়ে আবার উনার সঙ্গী সাথীদের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিবেন না যেন। পাবলিকের টাকায় কেউ কেউ হঠাৎ জমিদারের নাতি হয়ে যাচ্ছে কিনা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না, সরকারি টাকা পয়সা কেউ লুটে খাচ্ছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়গুলো আলোচনায় রাখতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে বিকৃত করার অসুস্থ পায়তারা কেন চলছে - সেটা নিয়েও সমালোচনা, প্রতিবাদ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, উনি নোবেল পেলেও উনার সঙ্গীসাথীদের কেউ কিন্তু নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ নন। বিশাল সম্ভাবনা আছে, ওরাও আমার আপনার মতোই বাটপার। কেউ সমালোচনা করলে উনার নজরে আসবে, উনি একজন কর্পোরেট সিইওর মতন সেই দায়িত্ব থেকে "ব্যর্থ ম্যানেজারকে" সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিবেন।
আফসোসলীগ যেমন পরম দায়িত্বের সাথে সমালোচনার দায়িত্বটা পালন করছে, আমাদের বুঝতে হবে স্বার্থটা আমাদের। কারন, দেশটা আমাদের।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন থাপ্পড় খাবি!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩



ঘটনাঃ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পতনের সময়।
চৈত্র মাস। সারাদিন প্রচন্ড গরম। জামাই তার বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। সুন্দর গ্রামের রাস্তা। পড়ন্ত বিকেল। বউটা সুন্দর করে সেজেছে। গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×