somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাউল এবং ফাউল

২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৭৫ এর অগাস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার সহ হত্যা করা হয়।
এখন ঘটনাটাকে আপনি দুইভাবে বর্ণনা করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন খুনিরা উনার বুকে গুলি করে উনার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
কিংবা বলবেন, "বাংলার সূর্য সন্তানেরা বঙ্গবল্টুর গোয়ায় বাঁশ হান্দাইয়া বুকে গুলি ভইরা মাইরালছে। হেহেহে।"

দুই বর্ণনাতেই একই ঘটনাই বলা হয়েছে। কিন্তু প্রথম বর্ণনায় আপনি যদি আওয়ামীবিদ্বেষীও হন, তারপরেও আপনি এর বিরোধিতা করতে পারবেন না।
আর দ্বিতীয় বর্ণনায়, আপনি আওয়ামীবিদ্বেষী হলে মজা পাবেন, কারন ঘটনাটা হয়তো আপনি এইভাবেই বলতে চাইছিলেন, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে বলতে পারেননি। এদিকে আওয়ামলীগের সমর্থকেরা ভীষণ মর্মাহত হবে।
যদি ওরা ক্ষমতায় থাকে, যেমনটা গত ষোল বছর ছিল, তাহলে ওরা নিশ্চিত করবে আপনি আপনার "অপকর্মের" "উপযুক্ত" শাস্তি পেয়ে যান। আমরা বিগত সরকারের আমলে এটা দেখেছিও।
এনি ওয়েজ। এই পয়েন্ট পর্যন্ত ক্লিয়ার? তাহলে মূল ঘটনায় আসি।

সম্প্রতি এক বাউল আল্লাহর নামে অতি ফাউল কথা বলে জেলে গেছে।
সে বলেছে সে আল্লাহর কথার "গোয়া-মাথা" কিছুই পায় না।
যতদূর জানি, গোয়া শব্দটা "পাছা" শব্দের চলিত রূপ। আমরা ভদ্রসমাজ একে পশ্চাৎদেশ/নিতম্ব ইত্যাদি বলি। ছোটলোকেরা বলে পুটকি, গোয়া ইত্যাদি।
ধরলাম লোকটা ছোটলোক। এত ভাবনাচিন্তার বুদ্ধি/শিক্ষা ইত্যাদি তার নাই। ধরলাম সে নাস্তিক, ঈশ্বরে ওর বিশ্বাস নেই, এবং আল্লাহকে মান্যও করেনা।
সে বলে চললো, আল্লাহর কথার ঠিক নাই, তিনি একেক জায়গায় একেক কথা বলেন।
বাউল উদাহরণও দিয়েছে। আল্লাহ নাকি বলেছেন "প্রথম সৃষ্টি "এশ্ক।" (জানিনা এই তথ্য কই পেয়েছে।)
প্রথম সৃষ্টি "নূর।" (এটিও কোথায় পেয়েছে জানিনা।)
প্রথম সৃষ্টি "আরশ।"
প্রথম সৃষ্টি "রূহ।"
এক মুখে চাইরটা কয়া লাইছে। আল্লাহ এক মুখে এত কথা কয়, আল্লাহর মুখ কয়টা? ঐটা মুখ না "....।"

লোকটার তথ্যগত ভুলভাল ইত্যাদি নিয়ে তর্কে বিতর্কে যাচ্ছিনা। এটি ইসলামের ক্লাস না, লোকটাও ইসলামের পন্ডিত না।
আমার কথা হচ্ছে, এই একই কথাই আপনি ভদ্রভাবেও বলতে পারেন। ঐ যে উপরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বর্ণনা দিলাম, ঘটনা এখানেও একই। আপনি যখন ইচ্ছাকৃতভাবে অসভ্য অশালীন শব্দ বাছাই করবেন, তখন প্রতিক্রিয়া আসবেই। আপনি উপরের বর্ণনায় রেগে যাবেন, আর নিচের ঘটনায় সুশীল হয়ে যাবেন, তাহলেতো সমস্যা অন্য জায়গায়।
আমাদের জাতিগত সমস্যা এটাই যে আমরা প্রতিপক্ষকে অসম্মানের বেলায় অতি নিচে নামতেও দ্বিধা করিনা, কিন্তু নিজের বেলায় হঠাৎ সুশীলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে যাই।

এখন আসি দ্বিতীয় পয়েন্টে। এই পয়েন্টটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখেন, তাহলে বলবেন, হ্যা, যে কাজটা করেছে, সে অন্যায় করেছে। কাজটা ঠিক হয়নি।
সে বাউল, নাকি ক্রিকেটার, নাকি রাজনীতিবিদ নাকি কলেজের প্রফেসর, সেটা এখানে ইস্যু হবে কেন? মূল বিষয় "বক্তব্য।" বাকিগুলো কেন গণ্য হবে?
কিন্তু আমাদের দেশে এত সহজে ঝামেলা মিটলেতো আমরা বাংলাদেশী হতাম না।
বাউলরা সহজেই বলতে পারতো, "উনি ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন। এর সাথে আমাদের সম্প্রদায়ের কোন সম্পৃক্ততা নেই।"
ফেসবুকে কিছু আহাম্মক দাবি করে বসলো লোকটা কোন অন্যায়ই করে নাই। বাউলদের ভাষা আধ্যাত্মিক, সেটা বুঝার ক্ষমতা সাধারণের নাই। এই বেকুবগুলি যদি "গোয়া" কোন অর্থে আধ্যাত্মিক শব্দ, সেটা ব্যাখ্যা করতো তাহলে আমি একটু ধন্য হতাম।
এই মূর্খগুলি কিছু না বুঝেই দাবি করছে "বাউলরা আমাদের সংস্কৃতির ধারক বাহক। এটি বাংলার সংস্কৃতি ধ্বংসের পায়তারা।"
তাদেরকে একটু ব্যাখ্যা করতে বলেনতো "আল্লাহর কথার গোয়া-মাথা কিছুই বুঝিনা" টাইপ অশ্লীল কথাবার্তা কবে থেকে বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ হলো?
কিছু বেকুব কাজী নজরুলকে এই কাতারে নামিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছে। এই মূর্খগুলি জীবনেও নজরুল রচনাবলী খুলে পড়েছে? আমারতো মনে হয়না।
আমি কেন এদেরকে বেকুব, মূর্খ, গাধা ইত্যাদি বলছি জানেন? একটা ঘরের একটি অতি নির্দিষ্ট জায়গায় কেউ হাগু করেছে। সেটা পরিষ্কার না করে এরা পুরো ঘরময় ছড়িয়ে দিচ্ছে। স্পেসিফিক নিন্দনীয় ঘটনাটার মাঝে এরা বাংলাদেশের বাউল সম্প্রদায়, সঙ্গীত ও সংস্কৃতি ইত্যাদি টেনে এনেছে।

আর অন্যদিকে তৌহিদী জনতা (আমার মতে এগুলার নাম পাল্টে রাখা উচিত "মূর্খ জনতা") "ইসলামের উপর আক্রমন হয়েছে" বলে বাউলদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এরাও গু ছিটাছিটিতে ওস্তাদ। অপরাধ করেছে এক লোক, ওকে এরেস্টও করা হয়েছে। তোরা ওদের সম্প্রদায়ের উপর মারামারি কামড়াকামড়ি করবি কেন?
"ইসলামে গান বাজনা হারাম" বলে রাস্তায় নেমে মারধর শুরু করেছে। ফেসবুকে প্রচার করছে। ইসলামে সঙ্গীতের চেয়েও অনেক বড় বড় হারাম কিছু আছে। নাম্বার ওয়ান ক্যাটাগরিতে পড়ে ফেৎনা ফ্যাসাদ তৈরী করা, সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরী করা, মারামারি কামড়াকামড়ি, মজলুমের উপর জুলুম করা ইত্যাদি সবই অতি উচ্চ পর্যায়ের হারাম। একের অপরাধে অপরকে শাস্তি দেয়া হারাম-এ-আকবার! ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রয়োজনে মজলুম হয়ে মরে যাও, সেটাও ভাল, তবু জালিম হয়ো না।
কিন্তু এই সহজ কথা বুঝবে, এই মূর্খগুলির কি সেই জ্ঞান বুদ্ধি আছে?
মাঝে গিয়ে গোটা দেশে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরী করে গোটা বিশ্বের কাছে হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছে।
একটা কাজও সুন্দরভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে করার ক্ষমতা আমাদের নাই। ভুলগুলো শুধরে সুসভ্য হবো, সেই চেষ্টাটাও নেই।

এই ঘটনায় আমার নিজস্ব মন্তব্য?
অবশ্যই লোকটা ফাউল কথা বলেছে। ওর শাস্তি প্রাপ্য। বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত জাতীয় কোন আইন আছে কিনা জানা নেই। সেই অনুযায়ী ওর শাস্তি হোক। যদি সে অনুশোচনা করে, ক্ষমা চায়, তাহলেও সেইটা হোক।
কিন্তু একই সাথে, ও বাউল বলে ওর সম্প্রদায়ের উপর আক্রমন, ওদের আস্তানা ভাংচুর ইত্যাদি কেমন জাহেলিপনা? যারা এসব করছে, ওদের বিরুদ্ধে vandalism এর অভিযোগে মামলা হোক। ক্ষতিপূরণ দিক, জরিমানা দিক, জেল হাজতের ব্যবস্থা হোক।
বাউলরা ওদের মতন জীবন যাপন করবে, সেটা ওদের ব্যপার। ওরা গান করলো, নাচলো নাকি নামাজ পড়লো, কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। আমাকে আমার নামাজ, আমার রোজা, আমার ঈমান, আমার যাকাত, হজ্জ্ব এবং সবচেয়ে বড় কথা, আমার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে। এই কৃতকর্মের মধ্যে কাকে মারলাম, কেন মারলাম, পেটালাম, সে কি দোষী নাকি নির্দোষ ছিল, ওর দোষ আমার কাছে দালীলিকভাবে প্রমাণিত ছিল কিনা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৭
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×