somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড.আসিফ নজরুল বললেন প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা মসিউর রহমান এর কাছ থেকে সভ্যতা শিখতে.

১২ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা আমার দিব্যচোখ খুলে দিয়েছেন। কিছুদিন আগে তিনি (মসিউর রহমান) বলেছেন, ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিনিময়ে কোনো কিছু চাওয়া হবে অসভ্যতা! আমি কত দিন ভেবেছি, বাংলাদেশের ভূমি, সড়ক, নদীপথ ব্যবহার করবে অন্য একটি দেশ; তার বিনিময়ে কিছু দেবে না আমাদের? ট্রানজিটের বিনিময়ে শুল্ক চাওয়া না হয় বারণ আছে আন্তর্জাতিক চুক্তিতে, কিন্তু ফি চাওয়া তো বৈধ ও যৌক্তিক! টেলিভিশনে এ কথা ইতিমধ্যে বলেও ফেলেছি।
কিন্তু মসিউর রহমান বলছেন, ফি চাওয়াও নাকি অসভ্যতা। তার মানে ফির কথা যাঁরা বলেছেন, তাঁরা অসভ্য। মুশকিলের ব্যাপার হচ্ছে, এমন অসভ্য আরও আছেন দেশে। দৈনিক আমার দেশ-এ (৬ এপ্রিল, ২০১১) দেখলাম, আইন মন্ত্রণালয় ত্রিপুরা রাজ্যে যন্ত্রাংশ পরিবহনের জন্য ভারতকে একতরফা ট্রানজিট দিতে রাজি হয়নি প্রথমে। মসিউর সাহেবই কোনো ফি যেন চাওয়া না হয়—এই মতামত দিতে আইন মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করেছেন। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কেবল বাধ্য হয়ে সভ্য সেজেছেন।
তবে উপদেষ্টা নিজে যে খুব সভ্য মানুষ, তাতে সন্দেহ নেই। নিজের দেশের মানুষ ফি চাইলে তিনি অসভ্যতা হবে বলেছেন। কিন্তু চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ভারত তিন বিঘা করিডর বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে দিচ্ছে না, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এটিকে অন্য পক্ষের অসভ্যতা মনে করেননি। এমনকি তিনি আমাদের পরম বন্ধু রাষ্ট্রের কোনো সমালোচনাও করেননি এ কারণে। তিনি বরং বলেছেন, ‘একটি বিষয় হচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলে, অপরটি হচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলে। কাজেই দুটি বিষয় একভাবে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না (আমার দেশ, পূর্বোক্ত)।’
অসাধারণ সৌজন্যবোধ! আমার ধারণা, এই উপদেষ্টার কাছ থেকে সভ্যতা-ভব্যতা শিখে আমরা বহু সমস্যার সমাধান করতে পারি। যেমন: ভারত বা চীনের ভেতর নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিবাদ করা যাবে না। কারণ দুই অঞ্চল এক নয়। সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে গুলি করে মারলে দেশের ভেতর ভারতের কোনো সমালোচনা করা যাবে না। অঞ্চল তো ভিন্ন! বঙ্গোপসাগরে ভারত বা মিয়ানমার কোনো বিরোধপূর্ণ ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করলে আমরাও অন্য কোনো ব্লকে তা শুরু করব না। কারণ একই। অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টার কাছে এভাবে সভ্যতা শিখলে আমাদেরই লাভ। কোনো দেশের সঙ্গে তাহলে আর কোনো বিরোধ থাকবে না আমাদের। আরও সভ্য জাতি হিসেবে আমরা পরিচিত হব তখন!
এই উপদেষ্টার ভাবাদর্শে দীক্ষিত হলে দেশের বহু সমস্যারও সমাধান সম্ভব। যেমন: চট্টগ্রামে পুলিশি নির্যাতন হলে ঢাকায় কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। কারণ দুই অঞ্চল তো এক নয়। সংসদে সরকারি দল খিস্তি-খেউড় করলে বিরোধীদের আসন থেকে কিছু বলা যাবে না। কারণ তারাও সংসদে ভিন্ন অঞ্চলে বসে। তাঁর ভাবাদর্শ সম্প্রসারিত করে আরও বহু বিরোধ এড়ানো সম্ভব। যেমন: বিএনপি আমলের দুর্নীতি বা সন্ত্রাসের বিচার হলে আওয়ামী লীগ আমলেরটাও করতে হবে, এর কোনো যুক্তি নেই। কারণ সময়কাল তো ভিন্ন!
সবাই এভাবে সভ্য হয়ে উঠলে দেশে কোনো প্রতিবাদ, হরতাল, হানাহানি হতো না। ব্যর্থ রাষ্ট্রের ইনডেক্স থেকেও বের হয়ে আসত বাংলাদেশ। জাতি, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি প্রায় সবার এক হওয়ার কারণে হোমোজিনিয়াস রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল আমাদের। তিক্ত রাজনৈতিক বিরোধের কারণে তা হয়নি। আমার ধারণা, মসিউর রহমানের ভাবাদর্শ উদারভাবে প্রয়োগ করলে কোনো ভিন্নমত থাকত না দেশে। সংঘাত আর হানাহানিও হতো না। সত্যিকার হোমোজিনিয়াস রাষ্ট্র হিসেবে তরতর করে এগিয়ে যেতাম আমরা।
সরকারবিরোধীরা তা হতে পারল না। তবে আমার দুঃখ হচ্ছে, উপদেষ্টার কলিগদের কেউ কেউও তাঁর মতো সভ্য হতে পারেননি। যেমন: অর্থমন্ত্রী তাহলে কেমন করে বলেন যে কোনো ফ্রি ট্রানজিট দেওয়া হবে না! ভারতের যান বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ অবশ্যই ফি চাইবে (ডেইলি স্টার, ৯ নভেম্বর, ২০১০)!
অর্থমন্ত্রীর এই অসভ্যতা অনেক বিশেষজ্ঞের মধ্যেও সংক্রমিত। তাঁরা যদি বিএনপিপন্থী বিশেষজ্ঞ হতেন, তাহলেও না হয় বুঝতাম। সিপিডির প্রধান ড. মোস্তাফিজুর রহমান তো তা নন। তিনি তাহলে কেন বলেন, ‘প্রথমে আমাদের ফ্রেইট ও পোর্ট চার্জ নিশ্চিত করতে হবে। এরপর ট্রানজিট ফি ঠিক করা খুবই প্রয়োজন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, টোল এবং আমাদের ট্রানজিট ব্যবহার করে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হলো, তার অর্ধেকের বেশি অর্থ (ডেইলি স্টার, ২৬ নভেম্বর, ২০১০)। আন্তদেশীয় যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ রহমতউল্লাই বা কেন বলেন, ট্রানজিটের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপুল লাভবান হবে (পূর্বোক্ত)! গতকাল প্রথম আলোয় সাবেক কূটনীতিক আশফাকুর রহমান বললেন, ভারত যদি এতে আর্থিকভাবে লাভবান হয়, তাহলে শুল্ক বা মাশুল ‘অবশ্যই দেওয়া উচিত’। কী অসভ্য কথা!
দেশ ভরে গেছে অসভ্যতায়। মসিউর সাহেবের কাছ থেকে আমাদের সভ্যতা শিখতে হবে। তাঁর সভ্যতাতত্ত্বে আমার মনে বহুদিনের জমে থাকা প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। মন্ত্রীরা গোপনীয়তার শপথ নেন, উপদেষ্টারা এ ধরনের শপথ নেন না। কাজেই উপদেষ্টারা মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপস্থিত থাকলে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা নষ্ট হয়। এ কারণে আগে (এমনকি শেখ হাসিনার প্রথম আমলেও) কখনো তাঁরা মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপস্থিত থাকতে পারতেন না। অথচ এই সরকারের আমলে নজিরবিহীনভাবে মসিউর রহমানরা মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপস্থিত থাকছেন। কেন থাকছেন তা এখন বোধহয় বুঝতে পারছি। কিছু অসভ্য লোক মন্ত্রিসভায় নিশ্চয়ই আছেন। মসিউর রহমানরা সম্ভবত দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁদের সভ্য করে তোলার!
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×