somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসূল সাঃ এর কি ছায়া ছিলনা? ইবনু আব্বাস রাঃ এর বর্ণনাটি প্রসঙ্গে

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাসূল (সা.)-এর ছায়া ছিলনা-সংক্রান্ত 'মুসান্নাফ' গ্রন্থের নামে এবং মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক এর সনদে ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনাটির তাহকিক, (খন্ডন ১)

বর্ণনাটি সনদ সহ নিম্নরূপ,

عن عبد الرزاق عن إبن جريج قال اخبرني نافع ان ابن عباس قال: لم يکن لرسول الله صلی الله عليه وسلم ظلّ، ولم يقم مع شمس قط إلا غلب ضوءه ضوء الشمس ، ولم يقم مع سراج قط إلا غلب ضوءه ضوء السراج.

অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ছায়া ছিল না। সূর্যের আলোতে তাঁর ছায়া পড়তো না বরং তাঁর নূরের ঝলক সূর্যের আলোর উপর প্রভাব বিস্তার করতো। কোনো বাতির আলোর সামনে দাঁড়ালেও বাতির আলোর উপর তাঁর নূরের আলো বিস্তার করতো।

এর রেফারেন্স হিসেবে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হুমাম আস সান'আনী (মৃত. ২১১ হি.) সংকলিত 'মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক' এর হাদীস নং ২৫ উল্লেখ করা হলেও মূলত ঐ গ্রন্থে উক্ত সনদে এধরণের কোনো "মতন" (Taxt-মূলপাঠ) খোঁজে পাওয়া যায়না। বরং এটি বানোয়াট ও ফেইক একটি 'মতন' যেটি দুবাইয়ের ডক্টর ঈসা মানে আল হিমইয়ারী কর্তৃক প্রকাশিত "আল জুযউল মাফক্বূদ" এরই সৃষ্টি, যেটি অপ্রমাণিত ও অনির্ভরযোগ্য একটি গ্রন্থ। দুনিয়ার সকল মুহাক্কিক গ্রন্থটিকে মওযূ ও জাল আখ্যা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, শায়খ হিমইয়ারী সাহেবকে ইলমি খিয়ানতের অভিযোগে দেশটির কেন্দ্রীয় উলামা পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বিতর্কিত জাল গ্রন্থ 'আল জুযউল মাফক্বূদ" এর খণ্ডন করে ১৪২৮ হিজরীতে সৌদি আরবের রাজধানী 'রিয়াদ দারুল মুহাদ্দিস' প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, مجموع فى كشف حقيقة الجزء المفقود গ্রন্থটি। এর গ্রন্থকার উক্ত বর্ণনাটির "মতন" সম্পর্কে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেন,

قلت: هذا المتن ليس له أصل مرفوعاً، وإنما يذكره المتوسعون في كتب السيرة والخصائص المتأخرة التي يجمع مؤلفوها بين الثابت وما لا يثبت والموضوع وما لا أصل له!

অর্থ -আমি বলি, এই মতনটির এই ধরনের মারফূ কোনো ভিত্তি নেই, বরং প্রচারকগণ পরবর্তীতে রচিত 'খাসায়েস' এবং 'সীরাত'-এর বইগুলিতে এটি উল্লেখ করেছেন, যাদের লেখকরা ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত বর্ণনাসমূহ একত্রিত করে গেছেন।

আমার প্রিয় আশেক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রশ্ন,

১. ইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী (মৃত. ৯১১ হি.) তাঁর 'খাসায়িসুল কোবরা' গ্রন্থে ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক এর সনদে উল্লিখিত রেওয়ায়েতটি আনেননি। কিন্তু কেন? তিনি বরং নাওয়াদিরুল উসূল গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে হাকিম তিরমিজি থেকে তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.)-এর রেওয়ায়েতটিই এনেছেন। এতে কী পরিষ্কার বুঝা যায় না যে, মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক এর সনদে ঐ মতনটি মূলত বানোয়াট ও দুবাইয়ের ঈসা মানে' আল হিমইয়ারীর-ই জালিয়াতি?

২. মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক গ্রন্থে যদি থেকেই থাকে তাহলে আর দেরি কেন, আপনারা সেটির পুরনো কোনো নুসখা থেকে দ্রুত উদ্ধার করে আমাকে দেখিয়ে দিন। আল্লাহর শপথ! আমি নিঃশর্ত মেনে নেব, ইনশাআল্লাহ।

আশাকরি, জ্ঞানীদের জন্য এটুকুই যথেষ্ট। ধন্যবাদ।

প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ আরও আর্টিকেল -

রাসূল (সা.) এর ছায়া থাকা সংক্রান্ত মারফূ ও মুত্তাসিলুস সানাদ এবং টনটনে সহীহ হাদীস - Click This Link

রাসূল (সা.)-এর ছায়া মুবারক ছিলনা- সংক্রান্ত প্রথম রেওয়ায়েত এর তাহকিক -
Click

রাসূল (সা.)-এর ছায়া মুবারক ছিলনা- সংক্রান্ত দ্বিতীয়তম রেওয়ায়েত এর তাহকিক - Click This Link

তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.)-এর রেওয়ায়েত ও তার তাহকিক - Click This Link

সর্ব প্রথম সৃষ্টি কোনটি? আরশ নাকি পানি? Click This Link

জাবের (রা.)-এর নামে "নূর" এর রেওয়ায়েতটির তাহকিক - Click This Link

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
অ্যাডমিন : ফিকহ মিডিয়া ((Click This Link))
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×