somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগীয় খ্যাতিময় জীবনঃ সে আমার নয়...

২১ শে মে, ২০০৯ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন রে, তুই বড় মায়া ময়

একজন সাধারন ব্লগারের (অ)সাধারন আত্মকাহিনীর দ্বিতীয় পর্ব




আজ সকালে ব্লগে ঢুকলাম অফলাইনে। উকি মেরে প্রথমেই চোখে পড়লো কৌশিকের মন্তব্যটা, মার্ক যুবায়ের এখন অনেকেরই প্রিয় ব্লগার...আমার তো বটেই...।

হায় রে, বড়ই নাদান আর নাজুক জীব এই মানুষের মন, যাবতীয় প্রশংসা বাক্য বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে সে সদা প্রস্তুত। সবচেয়ে সচেতন যুক্তিবাদি এবং নিঁখুত বিশ্লেষনী ক্ষমতাওয়ালা মানুষও তার নিজের কোন প্রশংসাকে কাটাঁছেড়া করেননা, যুক্তির আতস কাঁচের নিচে মেলে ধরেন না। বিনা বাক্যব্যায়ে তার সত্যতাকে মেনে নেন।

গতকাল প্রথম পোষ্টটা দেবার পরে, বহুক্ষন লজ্জায় আর সংকোচে ওমুখো হই নাই। এই পড়ন্ত বেলায় নিজের ব্লগকে জনপ্রিয় করার ভুত কেন যে চাপলো... এই বয়সে এসে অন্যের মুখে নিজের সুনাম আর বাহবা!! প্রশংসা আর স্তুতির মোহ শেষ পর্যন্ত আমাকেও গ্রাস করলো!! বড়ই আজিব!!

কিন্ত তাই বলে এতটা উৎকট প্রদর্শনবাদীতা? এটা কি ভাবে আমাকে মানায়? আমি নিশ্চিত এটা অবশ্যই একধরনের মনোবিকলন, আর মনোবিজ্ঞানের ভাষায় নিশ্চয় এর একটা রাশভারী নাম আছে!!!

খুব বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যাওয়ার আগে, উচিত এখনই রাশ টানা, নিজের লাগাম নিজের হাতে নেওয়া...

------------
এ বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে আমি খুলনা গেছিলাম বেড়াতে। আমার বড় ভাই তার পরিবার নিয়ে খুলনাতেই থাকেন, আমার এবারের ভ্রমন ছিল- কিছুটা কাজের ব্যস্ততা থেকে রেহাই, কিছুটা ভাই ভাবী আর তাদের বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো। অলস এক মধ্যাহ্নে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমাবো নাকি কিছু একটা পড়বো... ভাবছি, এমন সময় আউলা আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে আমাকে একটা মোটা ডায়েরী মত বাধানো খাতা দিয়ে গেল...,
—চাচু তোমাকে কিছু লেখা পড়তে দেই, পড়ে দেখ, এই ভাইয়াটা আমার বন্ধু মালার কাজিন... উনার লিখা আমাদের খুব ভাল লাগে...

খাতার ওপরে মোটা কালিতে নাম লিখা বুনায়েল শাফাত। বাঁধানো রুল টানা খাতায় বল পয়েন্ট দিয়ে একটানে লিখে যাওয়া কিছু রচনা। ব্যক্তিগত কিছু ঘটনা আর তা নিয়ে নিজস্ব কিছু অনুভুতির বর্ণনা সে লিখার উপজীব্য। হাতের লিখায় এক ধরনের ছেলেমানুষী ভাব আছে, কিছুটা কাগের ঠ্যাঙ বগের ঠ্যাঙ মার্কা। যদিও লেখনীর ভঙ্গিতে সে ছেলেমানুষী ভাব উধাও। বেশ টান টান গদ্য, সাবলীল ভঙ্গী। পড়তে আরাম লাগে। সেদিনের সেই বিকালে ডায়রীর স্টাইলে লিখা সেই রচনা গুলি পড়তে পড়তে আমার কপালে বিস্ময়ের ভাঁজ তৈরি হচ্ছিল। আরে এতো আমারই লিখা, এক বয়সে তো আমিও এভাবে খাতার পৃষ্ঠা......

আর তখনই একটা নতুন আইডিয়া আমার মাথায় খেলে গেলো।

যে বয়সে বুনায়েল শাফাত এর সাধ হতো কিছু না করে, স্রেফ কবিতা পড়ে আর গদ্য লিখে জীবনটা কাটিয়ে দিতে... সে বয়সে আমি দিন কাটিয়েছি ভাটিয়ারীর এক মাছের আড়তে, মাসের পর মাস বরফ কল, জেলে নৌকা আর মাছের বাক্সের পেটি বাধা নিয়ে। ডুবে থাকতাম জেলেদের খোরাকি, ব্যাংকের লোন, মাসিক কিস্তি, আর সমুদ্রের নিন্মচাপের হিসাব নিয়ে। লম্বা হিসাবের টালি খাতায় সব কিছুর নিঁখুত হিসাব বুঝে নিতে।

চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া বিস্তীর্ণ চরাচরে ঝলসে যাওয়া রুপালী মাছের মৃত সাদা চোখ। ডরে আমি চান্দের দিকে চাইতাম না... মরা মাছের চোখে চোখ রাখতাম না। চুলের মধ্যে আঙ্গুল চালিয়ে ঝেড়ে ফেলতে চাইতাম মাথার মধ্যে আনাগোনা করা শব্দগুলো, ডানা মেলে উড়তে থাকা ছন্দোবদ্ধ উপমা আর উৎপ্রেক্ষা।

আমার মাথার মধ্যে তখন হানা দিতো শুকিয়ে ঝরে যাওয়া কবিতার পঙক্তি, ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ানো অশরীরী শব্দ। কিন্ত আমার কিছুই করার ছিল না, কোন দিকে নজর দেবার আমার ফুরসত কই? আমার গান বাধা, সুর তোলা, প্রিয় কবিতায় গলা মিলানো-সব কিছু থেকে আমি নিজকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। ততদিনে আমার গন্তব্য, আমার নিয়তি যেন কেউ আগেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল!!

আমার পরিবার, কুশুমের পরিবার—সবাই কে আমার তখন কিছু একটা করে দেখানোর সময়, প্রমাণ করার সময়। রাতের অবসরে বুকসেলফ থেকে নামানো কবিতার বই গুলো মাঝে নাড়াচাড়া করতাম, মন বসাতে পারতাম না কিছুতেই। শুধু মনে হত—একটু অন্যমনস্ক হলেই, চোখটা সরিয়ে নিলেই আমার সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে।

পারিবারিক পছন্দের বিয়ে এড়াতে কুশুম আমার প্রেমিকা তখন তার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গিয়ে উঠেছে। বাসার সাথে কোন যোগাযোগ রাখত না, লেখাপড়ার জন্য বরাদ্দ মাসোহারার ড্রাফট প্রতি মাসে ফিরে যেত। আমি বুঝছিলাম টাকা পয়সার নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ছাড়া কুশুমের এই পরিকল্পনা চালু রাখা যাবে না। সে মুহুর্তে তাকে আর্থিক ভাবে সাপোর্ট দেওয়ার উপর নির্ভর করছিল কুশুমের লেখাপড়ার ভবিষ্যত, আমাদের ভবিষ্যত জীবনের প্রেম।

অনেকের কাছেই তীব্র ভাবে কাম্য ছিল আমাদের হেরে যাওয়া...

আমার চোয়ালের দাঁতের ওপর চেপে বসতো, ওপরের পাটির দাঁত।

একটা সক্ষম স্বাস্থ্যবান যুবক, কিভাবে ঘরে বসে কবিতা পড়ে, কিভাবে বুকের নিচে বালিশ নিয়ে ছোট ছোট শব্দে কবিতার খাতা ভরাট করে—বুনায়েল কখনও তার বাসার লোককে তা বোঝাতে পারে নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর একটা বছর কোন ভাবে কাটালেই মাষ্টার্স ডিগ্রী, বুনায়েল একদিন ক্লাস করতেও গেল না। অথচ সবাই ভেবেছিল নুন্যতম এম ফিল এর আগে বুনায়েল তার লিখাপড়া থামাবে না... এই ছেলের ভবিষ্যত কি হবে......?

ঢাকায় ফিরে আসার কয়েকদিন পরেও বুনায়েল কে মাথা থেকে সরাতে পারছিলাম না। ব্লগ নিয়ে মাতামাতি করি, কিন্ত নিজের কাছেই কেমন সব কিছু হালকা লাগছিল। নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা ব্লগে আসছে... আমার পক্ষে তাদের সাথে পাল্লা দেওয়া...... অথচ আমার ব্লগটা পপুলার করা দরকার, সাদামাটা কোন কিছু আমি একদম মেনে নিতে পারি না।

চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার আগে এ্কদিন ফোন করলাম পল্লব মোহাইমেনকে—প্রথম আলোর উজ্জ্বল তারকা।


দ্বিতীয় পর্ব কোন রকমে সমাপ্ত হইল।
এই আত্মজৈবনিক আপাতত চলিতে থাকিবে, অনির্দিষ্ট কাল ধরিয়া। তবে অধিক বাড়াবাড়ি উচিত হইবে না -- বিধায়, আগামী পর্ব হইতে জনৈক তরুন লেখক এই রচনার হাল ধরিবেন।
ধারাবাহিক এই কাহিনী পাঠ করিয়া বিপুল ভাবে আমোদিত হউন...

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০০৯ বিকাল ৩:৪২
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×