somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিনদেশী তারা(ছোট গল্প )

১২ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এরকম হওয়ার কথা ছিল না । কোন কিছুই এরকম হওয়ার কথা ছিল না । আজকে চাদ রাত টাও ফাহিমের ভালো লাগারই কথা ছিল । তার কাছে ঈদের চেয়ে চাদ রাতের মজাই বেশী ছিল । আর গত দুটা ঈদ তো তার জীবনের সেরা ঈদ ই ছিল । তার পাশে তখন অহনা ছিল । মেয়েটা শপিং এর এত্ত পাগল । ফাহিমকে নিয়ে মার্কেট এর পর মার্কেট ঘুরে ,শ খানেক পাঞ্জাবী ট্রায়াল দিয়ে তারপর নিজের পছন্দের সেরা টা ফাহিম কে গিফট করত । ফাহি
ম এই ঈদে আর পাঞ্জাবী কিনে নি । অহনার দেয়া গতবারের পাঞ্জাবী দিয়েই কাজ চালিয়ে দিবে ।
মায়ের ফোন আসাতে বাস্তবে ফিরে আসে ফাহিম । ঈদানিং প্রায় সারাক্ষনই সে অন্যমনস্ক থাকে । গত দু মাস ধরে এই অবস্থা । অহনা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে দু মাস ।
-হ্যালো মা ,বল
-তুই এখনো রওনা দিস নাই ? কয়টা বাজে?কখন পৌছাবি ?
-এইত এখনি বের হব ।
-ব্যাগ গুছানো শেষ ?
-হ্যা সব শেষ ,শেভ টা করেই বের হচ্ছি ।
-এখনো শেভ ও করস নাই । তাড়াতাড়ি কর । আমি রাখি ।
-আচ্ছা মা । খোদা হাফেজ ।
বাবা মা ছোট বোন সবাই বাড়ি চলে গিয়েছে তিন দিন আগেই । ফাহিম থেকে গিয়েছে পরীক্ষা ঈদের পর , পড়তে হবে এই কথা বলে । সবাই কথাটা বিস্বাস করে তাকে বাসায় একা রেখে চলে গিয়েছে । মেডিকেলে পড়ে । সারাবছরই পরীক্ষা লেগে থাকে । ঈদের পর পরই পরীক্ষা থাকাটা খুব স্বাভাবিক ।কথা ছিল সে চাদ রাতে বাড়িতে রওনা দিবে ।
ফোন টা রেখে ফাহিম কম্পিউটারের সামনে বসে । গান ছেড়ে দেয় উচ্চ শব্দে । একটা গানই সিলেক্ট করা । রিপিট মুডে বারবার বাজতে থাকবে ।

"আমার ভিনদেশী তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলে কোঠার পাশে"
এই গানটা কেন জানি তার খুবই প্রিয় ঈদানিং । হুয়ত অহনা এখন তার কাছে এক ভিনদেশী তারা বলেই ।
কম্পিউটারের সামনে থেকে উঠে দাড়ায় ফাহিম । শেভ করতে হবে । যদিও বাড়ি যাবার কোন প্ল্যানই নেই তার । তবুও সে ধীরেসুস্থে শেভ করে নেয় ।কোন তাড়াহুড়ো নেই তার ভেতর । প্রায় তিন সপ্তাহ বাদে শেভ করার পর তার ফর্সা চেহারায় কেমন একটা সবুজ আভা ভেসে উঠছে । তবে এই আভাও তার চোখের নিচের কালো কালি লুকাতে পারছে না । অনেকদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটানোর ফসল এই কালি ।
গোসল টাও সেরে নেয় । সারা শরীরে আশ্চর্য রকম এক প্রশান্তি । নিজের শরীরের প্রতি নিজেরই মায়া হয় তার । গত দু মাসে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে বেচারার উপর ।
ড্রয়ার থেকে কড়া ইস্ত্রি করা অহনার গতবার দেয়া পাঞ্জাবীটা বের করে । পাঞ্জাবীটার বুকে ভারী কাজ করা । নিজের অজান্তেই হাত বুলিয়ে নিল একবার পাঞ্জাবীটার গায়ে । অহনার পছন্দের পাঞ্জাবী গায়ে দিয়েই ওর সাথে দেখা করবে । মেয়েটা কি পরিমান খুশী হবে চিন্তা করে এখনি হাসি পাচ্ছে ফাহিমের । হয়ত বলবে "কিপ্টা । আমি নাই দেখে আবার আগের মত কিপ্টামি শুরু করে দিছ ? ঈদের জন্যে একটা নতুন পাঞ্জাবীও কিনলা না ?
"।
পাঞ্জাবীর সাথে গতকালই কেনা হালকা কালো রঙ্গের জিন্স টা পরে নেয় ফাহিম ।
বাবা মায়ের রুমে গিয়ে মায়ের ড্রেসিং টেবিল টার সামনে দাড়ায় সে । নিজের আপাদমস্তক দেখে নেয় একবার । নিজেকে দেখে নিজেরই হাসি পাচ্ছে । এত রোগা হয়েছে গত দু মাসে । কি বকাটাই না দিবে অহনা তাকে যদি এই অবস্থা দেখে । মেয়েটা রেগে বকা দেয়া শুরু করলে তাকে আরো সুন্দর দেখায় । অহনা রেগে গেলেই ফাহিম হাসা শুরু করত । বলত "এই যে , চোখমুখ সব লাল করে ফেলছ । পুরা টমেটো । তাড়াতাড়ি টমেটো থেকে মানুষ হও । তারপর তোমার সব কথাই শুনছি " । যত রাগই থাকুক এরপর অহনা আর রাগ করে থাকতে পারত না ।
গানের শব্দ ভেসে আসছে পাশের রুম থেকে ।
"আমার বিচ্ছিরি একতারা
তুমি নাওনা কথা কানে
তোমার কিসের এত তাড়া?
এ রাস্তা পার হবে সাবধানে..."
আসলেই কিসের এত তাড়া ছিল অহনার সেদিন । রাস্তাটা একটু সাবধানে পার হলেই তো হত । ফাহিম বুঝতে পারে তার চোখ ভিজতে শুরু করেছে । নিজের রুমের দিকে যায় সে । যাবার সময় ডাইনিং থেকে আগে থেকে ভরে রাখা এক বোতল পানি নিয়ে নেয় ।
গান টা বেজেই চলছে ।
রুমে ঢুকতেই বিছানার উপর রাখা মোবাইল টা বেজে উঠল । বন্ধু জুয়েল ফোন দিয়েছে ।
-হ্যালো দোস্ত । বল ।
-তুই কই ? বাসায় রুমের কোণার মধ্যে বইসা আছস ?
-হ । তোরে আমি ফোন দিতাম একটু পর ।
-*ল দিতি । বাড়িতে যাবি কখন ?
-একটু পর । শোন আমার আম্মার নাম্বার টা আছে না তোর কাছে ?
-হ আছে ? কেন?
-ওই নাম্বার থেকে ফোন দিলে ধরিস ।
-আচ্ছা । ঠিকাছে । পরে কথা হবে ।
-ওকে । বাই ।
-বাই ।
ফোন রেখে দেয় ফাহিম । মুচকি একটা হাসি দেয় বন্ধুদের কথা চিন্তা করে । শালা গুলার কালকে ঈদটাই মাটি করে দিবে সে । এই যুগে এত ভাল বন্ধু পাওয়া কঠিন ব্যাপার ।
টেবিলের উপর থেকে ঘড়িটা নিয়ে হাতে পড়ে নেয় । ৮টা ১০ বাজে ।
টেবিলের ড্রয়ার হাতড়ায় ফাহিম । পেয়ে যায় যা খুজছিল । অনেকদিন ধরে ২-৩ টা করে কিনে কিনে সে প্রায় ৫০ টা ঘুমের ট্যাবলেট জমিয়ে ফেলেছিল । খাটের উপর পা তুলে আয়েশ করে বসে সে । পানি দিয়ে একে একে সবগুলো ট্যাবলেট ই পেটে চালান করে দেয় । পানির বোতল টা পাশেই নামিয়ে রাখে ।
খাট থেকে নেমে দাড়ায় ফাহিম । মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করে উঠল । এভাবে সাথে সাথে তো কিছু হওয়ার কথা না । হয়ত অবচেতন মনের কোথাও এক অজানা ভয় কাজ করছে । হেটে হেটে বাসার সবগুলো লাইট নিভিয়ে দিয়ে নিজের রুমে ফেরত আসে । নিজের রুমের চারদিকে নজর বুলায় একবার । রুমের লাইট টাও নিভিয়ে দেয় । রুমের ভেতর শুধু কম্পিউটারের মনিটরের আলোটাই বোঝা যাচ্ছে এখন । গান টা বেজেই চলছে ।
খাটের দিকে এগিয়ে যায় ফাহিম । মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল ।
শুয়ে পড়ল খাটে । পাঞ্জাবীটা টেনে ঠিক করে দেয় ।দুই হাত ভাজ করে বুকের উপর রাখে সে । প্রচন্ড ঘুম আসছে । ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । ঘুমানো দরকার । কতদিন ঘুমায়না ঠিক ভাবে ফাহিম । দু মাস আগে রোড এক্সিডেন্টে অহনা মারা যাবার পর থেকে তার চোখে ঘুম নেই এক বিন্দু ও । অহনা গুড নাইট বলে দেয়া ছাড়া কীভাবে ঘুমাবে সে ?চোখ বন্ধ করে ফাহিম । দুই চোখের পাতা জোড়া লাগতেই অহনার চেহারা ভেসে উঠে । একী মেয়েটা কাদছে কেন ? তার তো হাসার কথা । হয়ত অহনার কান্না দেখেই ফাহিমের বন্ধ চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভিজিয়ে দিতে থাকে ।
গানটা তখনো বেজে চলছে ।
"তোমার কিসের এত তাড়া?
এ রাস্তা পার হবে সাবধানে...
তোমার গায় লাগেনা ধুলো
আমার দু'মুঠো চাল-চুলো
রাখো শরীরে হাত যদি
আর জল মাখো দুই হাতে...
প্লীজ ঘুম হয়ে যাও চোখে"।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৫:৩৩
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×