কেউ যখন বলে “আমার কেন
জানি মনে হচ্ছে আমি বেশি দিন বাঁচবো না”
তখন ......
প্রেমিকাঃ- “এসব কি বল তুমি! আমাকে রেখে কই
যাবে তুমি? :’(“
মাঃ-“থাপড়ায় দাঁত ফেলে দিবো, এসব
অলক্ষুনে কথা বললে... :@”
বোনঃ- “ ভাইয়া!! :@”
...
বাবাঃ- “ব্যাটা...এসব বলে না। গুনাহ হয়”
.
.
.
.
আর বন্ধুরা...
বন্ধু ১:- “মরস না কেন শালা! তাড়াতাড়ি মর!”
বন্ধু ২:-”যা দুরে গিয়া মর”
বন্ধু ৩:- “তুই মরলে তোর ল্যাপটপটা আমার”
বন্ধু ৪:- “আর তোর মোবাইলটা আমি নিবো”
বন্ধু ৫:- “তুই টেনশন নিস না... তুই
মরলে ভাবীকে আমি দেখবো”
এই স্ট্যাটাস টা পড়ছিলাম ফেসবুকের একটা পেইজে । ছেলেরা বহুত নিষ্ঠুর আসলেই ! আপনি মরবেন বললে আপনার ছেলে বন্ধুরা এভাবেই রেসপন্স করবে । আপনি নিজেও হয়ত আপনার ছেলে বন্ধুর এমন কথার জবাব এভাবেই দিবেন । কিন্তু সাবধান । ভুলেও কোন মেয়ে কে এভাবে রিপ্লাই দিবেন না ।
ব্যাপারটা আমি ঠেকে শিখেছি ।
একটা সময় ছিল যখন আমার উনার সাথে ঝগড়া হইলেই ফেবুতে মেয়ে আইডি দেখলে হাত নিশপিশ করত ফ্রেন্ড রিকু পাঠানোর জন্যে । ফ্রেন্ড রিকু এক্সেপ্ট করলে শুরু হইত নানা কৌশলে তারে পটানোর চেষ্টা। আমার উনাকে দেখায়া দিতে হবে না আমি কতবড় মাপের সুপুরুষ ? এই ভাবেই একটা মেয়ের সাথে ফেবু ফ্রেন্ড হবার পর আসল ফ্রেন্ড (!) হবার আশায় মিশন শুরু !
সেই মেয়ের সব স্ট্যাটাস থাকত মনটা ভীষন উদাস টাইপ । সেইসব স্ট্যাটাসে কমেন্টের পাহাড় তৈরী হইতে দুই তিন মিনিট সময় লাগত । আমার মত পাহাড় কাটুনে ছেলের সেইসব হাজার কমেন্টের ভীড়ে মাথা তুলে দাড়ানোর কোন চান্স ছিল না । এই রকম হাই ডিমান্ডের একটা মেয়েকে পটাইতে পারলে সবাইকে দেখায়া দিতে পারতাম আমি কি জিনিস !
স্ট্যাটাসে সুবিধা করা সম্ভব না । তাই মেসেজ আর চ্যাটের রাস্তা ধইরা আগাইতে হবে । কিন্তু চ্যাট করতে যাইয়া টের পাইলাম মেয়ের শুধু স্ট্যাটাস গুলা উদাসী না !চ্যাট ,মেসেজ সব কিছুই উদাসী । নরমাল উদাসী না ,সাহিত্যিক ভাবে উদাসী !
তাকে জিজ্ঞেস করতাম "কি খবর?
তার উত্তর থাকত "ভালো নেই । মনটা আজ ভীষন খারাপ "
যদিও তার এই "আজ " টা প্রতিদিন থাকত । কোনদিন আর "কাল " হত না । কেমন আছো 'র জবাবে কেউ যদি বলে "ভালো নেই " ,তখন কেন ভালো নেই সেটা জিজ্ঞেস করা টা নাগরিক দ্বায়িত্বের ভেতর পড়ে । আমিও প্রথম দিন আমার নাগরিক দ্বায়িত্ব সুষ্টভাবে সম্পাদন করেছিলাম। জবাব পেয়েছিলাম " জানিনা কেন মন খারাপ । কোন কারন নেই । হয়ত আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে ,আকাশ কেদেছে তাই । কারো কান্না দেখলে আমার ভালো লাগে না । "
বিশাল ব্যাপার । সাহিত্যিক টাইপ উত্তর । আমার মাথার এন্টেনার উপর দিয়েই গেল স্বাভাবিক ভাবে । তাকে বললাম না তার উত্তর শুনে আমারো কান্না চলে আসছে ।
তার সাথে চ্যাট শুরু করতাম প্রতিদিন কি খবরাখবর সেটা জানতে চেয়ে । প্রতিদিনই এই টাইপের উত্তর । এরপর আর কথা খুইজা পাইতাম না !
আরেক দিন । অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি আর কখনো সরাসরি জিজ্ঞেস করব না কেমন আছো । কিন্তু সেদিন আমাকেই আগে জিজ্ঞেস করা হলো আমি কেমন আছি । পিছন দিয়ে যতই হাওয়া যাক না কেন ,উত্তর দিতে হয় ভালো আছি । আমিও দিলাম । ছোটবেলায় শেখা ভদ্রতার কারনে আমাকেও পাল্টা জিজ্ঞেস করতে হলো সে কেমন আছে । এবং ভুল টা করলাম । কিন্তু ততক্ষণে রেলগাড়ির ইঞ্জিন স্ট্রার্ট । "আমার আবার থাকা । জলে ভাসা এক পদ্ম আমি । কখনো এই কূলে আর কখনো ওই কূলে ধাক্কা খেয়ে খেয়েই চলছি আমি । গোলাপের মত কোথাও স্থির হয়ে ফোটা আমার কপালে নেই "।
মর্মান্তিক এক উত্তর । বলাবাহুল্য ,এবারো চোখে পানি চলে আসল । মেয়ের দুঃখ দেখে না ,নিজের কপাল দেখে সেটা খোদা জানে ।
ইতিহাস পাতিহাস কোন হাসেরই ছাত্র না । তাই তার ইতিহাস শোনার কোন ইচ্ছে ছিল না । জিজ্ঞেস করতাম না "ওগো কীসের এত কষ্ট তোমার ?"
বুদ্ধি খাটিয়ে এরপর থেকে তাকে তার মনের খবর আর জিজ্ঞেস না করে আলাদা আলাদা ভাবে বাকী সব কিছুর খবর জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম ।
"পড়ালেখার কি খবর ?"
-"ভালো না । পড়তে বসলে পড়ায় মন বসে না । মনে হয় যেন বইয়ের পাতার অক্ষরগুলো আমার দিকে তাকিয়ে ভেংছি কাটছে । আমাকে টিটকারী করছে । আমার কষ্ট গুলোকে নিয়ে তারা হাসাহাসি করছে । "
এই প্রতুত্তরে এত কষ্টের মাঝেও বইয়ের অক্ষর গুলোর মত আমারও হাসি চলে আসছিল । নিজেকে বাংলা বর্ণমালার ক্ষ মনে হচ্ছিল । এত প্যাচ !
হবে না । পড়ালেখার খবর দিয়েও হবে না ।
অন্য খবর জানতে হবে ।
"শরীরের কি খবর ? "
-"শরীরের ভেতরেই নাকি মন থাকে । সেই মন টাই যদি দুঃখ কষ্টের পাহাড়ে চাপা পড়ে নাভিশ্বাস তোলে তাহলে শরীর যত ভালোই থাকুক সে দীর্ঘশ্বাসই ফেলতে থাকবে "
এই উত্তর শুনে আমি লম্বা একটা শ্বাস ফেলছিলাম । স্পষ্ট মনে আছে । সেটা নাভিশ্বাস নাকি দীর্ঘশ্বাস তা অবশ্য জানি না ।
আমার স্থাবর অস্থাবর সব রকম বুদ্ধি খাটিয়েও কিছু করতে পারলাম না ।
শপথ নিলাম । কঠিন শপথ । দরকার হলে বিটিভির রাত আট টার খবর দেখব । তাও এই মেয়ে থেকে কোন রকমের খবর জিজ্ঞেস করব না ।
নিউজ চ্যানেল দিয়ে আর হবে না । মিউজিক চ্যানেলে ট্রাই করতে হবে । রোমান্টিক আলাপ । কবি বলেছিলেন মেয়ে পটানোর প্রথম শর্ত হইল তার রূপের প্রশংসা করতে হবে । যেনতেন প্রশংসা না । একেবারে পাতিলের তলা কে আগরতলা বানাইয়া ছাড়তে হবে । কিন্তু আমিতো এই মেয়ের রুপই দেখি নাই । প্রোফাইলে দুনিয়ার সব পুতুলের ছবি দিয়ে ভরানো । মেয়ের বাপের মনে হয় পুতুলের ব্যাবসা ।
মেসেজ দিলাম "তোমার প্রোফাইলে নিজের ছবি দাওনা কেন ? কোন কারন আছে ? এত চ্যাট করি অথচ তোমার চেহারা টাই দেখা হলো না কখনো "
এবার নিশ্চিত ছবি দিবে । কথাবার্তার মোড় ঘুরবে । কিন্তু তার রিপ্লাই পাবার পর কথা না ঘুরলেও আমার মাথা ঘুরাইয়া উঠলো !
"চেহারা দেখে কী হবে ? তুমি যে চেহারা দেখতে চাচ্ছ সেটাই কি মানুষের আসল চেহারা ? মানুষের মনের ভেতর কি আছে তা কি এ চেহারা দেখে বোঝা যায় ?মনের চেহারাই আসল চেহারা । দেব আমার মনের চেহারার একটা ছবি ?কিন্তু মনের চেহারার ছবি যে কোন ক্যামেরা তেই উঠবে না । হাজার ফ্ল্যাশলাইটের আলোর ঝলকানিতেও আমার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কষ্টের কালো অন্ধকার দূর হবেনা " ।
ব্যাপারটা এখন মান ইজ্জতের প্রশ্ন হইয়া দাড়াইছে ।
এভাবে একটার পর একটা অব্যার্থ ফর্মূলা ব্যার্থ হইতে থাকবে আর আমি চুপ কইরা বইসা থাকমু ?
কিছু একটা করতে হবে । মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে হবে । মিষ্টি কথায় চিড়া না ভিজলেও এই মেয়ের মন ভিজাইতে হবে । ফোন নাম্বার টা বের করতে পারলেই বাকী কাজ তরলের মত সরল ।
"তুমি এত সুন্দর করে তোমার মনের কথা গুলো লিখ । আমার অবাক লাগে । না জানি তুমি কথা বল কত সুন্দর করে। ভীষন ইচ্ছে হয় শুনতে "
হুম । নরম মনের মেয়ে । দেখি ফোন নাম্বার চাইলে ক্যামনে না করে !
"হাসালে আমাকে । আমার কথা মোটেও সুন্দর না।বন্ধুরা বলে আমার কথা বলার মুখ নাকি দুটি । একটি দিয়ে সারাক্ষন সুখের গান গেয়ে যাই ,মেতে থাকি হাসি আনন্দে । আরেকটি মুখ সচরাচর খুলি না । খুললেই বিপদ । সে শুধু দুখের গান ই গাইতে জানে "।
বলে কি মেয়ে ? নিজের অজান্তেই হাত চলে গেল লুঙ্গির গিট্টুতে । লুংগির ও দুটি মুখ । নিচের মুখ সারাক্ষন সুখের গান গেয়ে যায় ,অবিরাম বাতাস প্রবাহ । উপরের মুখ মানে গিট্টু খুললেই সমূহ বিপদ ।
ওহ মেয়ে ! এতক্ষনে সব ক্লিয়ার । তুমি তাইলে লুংগি ? বুঝছি । এই জন্মে তোমার সাথে প্রেম হবেনা আমার ।
এতদিন যা জিজ্ঞেস করি নাই ,তা জিজ্ঞেস করে বসলাম ।
"এত কষ্ট কষ্ট করো ক্যান ? কী হইছে খুইলা বলো !"
মেয়ে কিছু না খুইলাই উত্তর দিল "জানিনা । ভালো লাগেনা কিছুই । ইচ্ছে করে সারাদিন কাদি । মাঝে মাঝে মনে হয় যদি মরে যেতে পারতাম । "
ওকে । প্রেমিক না হোক । বন্ধু তো হইতে পারি । ভালো একজন ছেলে বন্ধুর মত তাকে বললাম
"মরো না ক্যান ? এত দেরী কিসের ?হেল্প লাগলে বইলো । "
মেয়ে অফলাইন । আমি ব্লকড !
[উপরোক্ত ঘটনাটির সব কিছুই কাল্পনিক এবং লেখকের উর্বর মস্তিস্কের চিন্তা ভাবনার ফসল ! কাছের কিংবা দূরের কারো সাথে কিঞ্চিত মিলিয়া গেলে তাহা মোটেই অনভিপ্রেত কাকতল মাত্র নহে ! ]
u can subscribe to my facebook updates http://www.facebook.com/maruf.mahedi