somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভগবৎ সিং-একজন ভারতীয় বি এস এফ সৈনিক (গল্প)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভগবৎ সিং । ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে সাধারণ সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছেন প্রায় তিন বছর হল । তিন বছরেও কোন পদোন্নতি হলনা , বেতন ও বাড়ল না । বেতন বাড়লে বিয়ে করবেন এই আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন বহুদিন । কিন্তু আর তর সইতে না পেরে শেষমেশ যা থাকে কপালে বলে বিয়েটা সেরেই ফেললেন । বিয়েতে খরচ করেছেন প্রচুর । করবেন নাই বা কেন ? বিয়ে একবারই করবেন । গ্রামে তাদের পরিবারের যথেষ্ট নাম ডাক আছে । তার উপর ছেলে বি এস এফ এ চাকরী করে । ভালো সুন্দরী কিশোরী পাত্রী পেতে কোন সমস্যাই হয়নি । বিয়ের ভোজ দেয়ার পিছেই চলে গেছে তার তিন বছরের যা সঞ্চয় ছিল তার বেশীরভাগ । অবশ্য তার এই অকৃপণ ব্যয় গ্রামে তাদের সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন । গ্রামের বুড়োরা পর্যন্ত বলেছে এমন বড় ভোজ তারা তাঁদের ৭০-৮০ বছরের জীবনে দেখেনি । প্রায় এক শত জন মানুষকে এক বেলা নেমন্তন্ন করে খাওয়ানো তার এই মধ্যপ্রদেশের হতদরিদ্র গ্রামটিতে চাট্টিখানি কথা নয় ।
বিয়ের জন্যে নেয়া টানা এক মাস ছুটি কাটিয়ে আজই আবার চাকরীতে জয়েন দিল ভগবৎ সিং । তার পোস্টিং সবসময় বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের দিকেই পড়ে । তার মত জুনিয়র আনাড়ি সৈনিকদের বাংলাদেশ ভারত সীমান্তেই রাখা হয় । যোগ্যতা প্রমান করতে পারলে চীন-ভারত বা কাশ্মীর সিমান্তের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় । বেতন ও কিছুটা বাড়ে ।

সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষে দাঁড়ানো আন্তর্জাতিক নিয়ম নিতি ভেঙ্গে তৈরি ওয়াচ টাওয়ারে বসে বসে গত এক মাসের আনন্দমাখা দিনগুলো মনে করে সময় পার করছিল ভগবৎ সিং । দুপুরের খাবার খেয়েছে একটু আগে । মুখে হাই আসে তার । আধা ঘণ্টা ঘুম না হোক অন্তত একটু ঝিমিয়ে নিতে পারলে ভালো হত । গত একমাসের প্রায় প্রতিটা দুপুরেই সে খাওয়ার পর হালকা দিবা নিদ্রা দিত,তার নববিবাহিতা বউকে জড়িয়ে ধরে । কিশোরী বউয়ের কথা মনে উঠতেই তার মনটা খারাপ হয়ে যায় । কেমন আছে সে? কি করছে এখন ? খেয়েছে তো ?বসা অবস্থাতেই তার চোখ টা বুঝে আসে আয়েশে । চোখে ভাসছে তার বউয়ের চেহারা । বাড়িতে থাকলে কি করত এখন ? বউকে জড়িয়ে .........
মাথা ঝাড়ি দিয়ে সোজা হয়ে বসে সে । কোন অফিসার দেখে ফেললে তার প্রমোশন দূরের কথা, চাকরী টাও যাবে । গলায় ঝুলানো বাইনোকুলার টি চোখে ধরে । সাথে সাথে ওপারের বাংলাদেশ সীমান্তের দৃশ্য লাফ মেরে চোখের সামনে ভেসে উঠে । ডানে বামে বাইনোকুলার টি ঘুরিয়ে এক নজর দেখে নেয় সব । কি আশ্চর্য ! মনে হচ্ছে বাইনোকুলারের সামনেও তার বউয়ের ছবি আটকে আছে । অন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না । বেশ কয়েকবার চোখ কচলে নেয় সে বাম হাত দিয়ে । ঘুম ভাবটা যাচ্ছে না । এবার আর বউয়ের ছবি দেখবে না,এই আশা নিয়ে আবার চোখ রাখে বাইনোকুলারে । সাথে সাথেই চমকে উঠে । লাফিয়ে উঠে হৃদপিণ্ড । এবারো ভুল দেখছে না তো ? দুটো ধানের জমির মাঝখানের আইল ধরে হেঁটে আসছে একটি মেয়ে,বয়সের আন্দাজ করতে পারেনা সে। ঈদানিং সব মেয়েকেই তার মনে হয় তার বউয়ের সমান।মেয়েটির হাতে গামছা বা অন্য কোন কাপড়ে মোড়ানো পুটলি । দু হাত দিয়ে খুব শক্ত করে ধরে সতর্ক ভাবে পা ফেলে সামনে এগোচ্ছে সে । হাতে তার এমন কি আছে যে সে নড়াচড়ায় এত সতর্ক ? বুঝতে পারে না ভগবৎ সিং । বাইনোকুলার একটু ডানে ঘুরাতেই সে দেখতে পায় আরেক জনকে । খালি গায়ে লুঙ্গি পরা এক শক্ত সমর্থ পুরুষ । হাতের পেশী দেখে তার মনে পড়ে যায় বি এস এফে তার ট্রেনার সুরঞ্জিত সেন স্যারের কথা । তারমত পেটানো শরীর কোথাও দেখেনি সে । আজ আবার দেখল এমন একজনকে । তাও বাংলাদেশ সীমান্তে । ভগবৎ সিং এর মনে আর কোন সন্দেহ থাকেনা । এই ব্যাটা নিশ্চিত কৃষকের ছদ্মবেশে থাকা বিজিবি/বিডিয়ার এর কোন জোয়ান সৈনিক । তাহলে মেয়েটি হাতে করে এত সাবধানে কি আনছে ? নিশ্চয়ই কোন বোম্ব বা এজাতীয় কিছু । দাঁড়িয়ে থাকা বিডিয়ার সৈনিক টির হাতে বম্ব টা তুলে দিলেই হয়ত ঘটে যেতে পারে বড় কোন অঘটন । মারাও যেতে পারে ভগবৎ সিং । না , সে মরতে চায়না । বউয়ের কাছে ফিরে যেতে হবে তাকে যে কোন মূল্যে । রাইফেল তাক করে ভগবৎ । পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে ভগবৎ সিং মেয়েটিকে নিশানা করে । একটি বুলেট ভগবৎ সিংয়ের বয়স বুঝতে না পারা ১২ বছরের বাচ্ছা মেয়েটির কপাল ভেদ করে চলে যায় । এতক্ষণ শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকা পুটলির ভেতরের ভাত আর ডালের বাটি তেও এসে লাগে দুটি বুলেট । সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করে পেটানো শরীর বানানো কৃষক বাবার দিকে তাকানো অবস্থাতেই কিছু বুঝে উঠার আগেই মাটিতে ঢলে পড়ে তার নিথর দেহ ।

ভগবৎ সিং নিজ আত্মরক্ষার জন্যে বাধ্য হয়ে গুলি ছোঁড়ে সেদিন । না হয়, সেদিন ভগবৎ সিং মারাও যেত পারত ভাতের প্লেট বিস্ফোরণে, ডাল গুলো এসিডের মত ঝলসে দিতে পারত তার সারা দেহ । ভগবৎ সিংয়ের পদোন্নতি আটকাতে পারেনি এরপর কেউ এমন বীরত্বের পর ।

দু বছর পর ::::::
ভগবৎ সিং টানা এক মাসের ছুটি কাটিয়ে আজই আবার জয়েন করল চাকরীতে । ভালো একটা সময় পার করে এসেছে । তার স্ত্রী গর্ভবতী । কোন অমঙ্গল না হলে আগামী মাসেই তাঁদের সংসার আলোকিত করতে যাচ্ছে তাঁদের ভবিষ্যৎ সন্তান । ভগবৎ সিংয়ের মেজাজ টাও আজ বেশ ফুরফুরে । তার পোস্টিং এখন কাশ্মীরের পাক সীমান্তে । পদোন্নতি আর বেতন বাড়লেও এখানে কস্ট একটু বেশী । অত আরামের ওয়াচ টাওয়ার নেই এখানে । ডিউটি দিতে হয় বাঙ্কারে বসে অথবা বালুর বস্তার আড়ালে । তাতেও আপত্তি নেই ভগবৎ সিংয়ের । বেতন বেশী পাচ্ছে এতেই খুশী সে । উপরন্তু আরেকটা পদোন্নতি বগলদাবা করতে পারলে তো কথাই নেই । আজ তার ডিউটি কয়েকটা বালুর বস্তার আড়ালে । দুইজন করে থাকার নিয়ম । তার সঙ্গী বি এস এফ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সেই যে ঝোপের ভেতর ঢুকল আর কোন খবর নেই । তাতে অবশ্য তার কোন আপত্তিও নেই । দিবাস্বপ্ন দেখেই সে কাটিয়ে দিতে পারে একাকী সময় । বস্তায় হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছে সে । যদিও তাকে বলা হয়েছে এলার্ট থাকতে । গতকাল রাত থেকে এই সীমান্ত গরম । বেশ কয়েক দফা গোলাগুলি হয়েছে । বস্তায় হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছে সে । একটু পর পরই আনমনে হেসে উঠছে সে । বাবা হতে যাচ্ছে সে । কী হবে ? ছেলে না মেয়ে ? তার ইচ্ছা প্রথম সন্তান ছেলে হোক । ছেলে বড় হয়ে বি এস এফ এর বড় অফিসার হবে । ছেলে একটু বড় হলে তাকে সে খেলনা রাইফেল কিনে দিবে । সারা বাড়ি দৌড়াবে খেলনা রাইফেল হাতে । এতসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে খেয়াল নেই । হঠাৎ কিসের যেন শব্দে আচমকা চোখ খুলে যায় তার । মনে হল তার ছোট বাচ্ছা ছেলেটিই খেলনা রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে কয়েকজন বন্ধু সহ । ঘুমের স্বপ্নের সাথে বাস্তবতা মিশিয়ে ফেলে সে । পাকিস্থানী কয়েকজন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডারের এ পাশে এসে খুব সহজেই মেরে ফেলে চলে যায় দুই বি এস এফ সদস্যকে । যাবার সময় বি এস এফ হত্যার প্রমাণ স্বরূপ ভগবৎ সিংয়ের শরীর থেকে আলাদা করে নিয়ে যায় তার মস্তক ।

পরিশেষঃ গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক । আমি এই কাল্পনিক গল্পের ব্যাপারে কিছু বলব না ।আপনার যা ইচ্ছা ভেবে নিতে পারেন । আমি বাস্তব দুনিয়া থেকে তিনটি নিউজ দিচ্ছি শুধু ।
প্রথম টি হল এই জানুয়ারী তে ফেলানী হত্যার দু বছর পার হল ।
দ্বিতীয় টি হল ভারত বলেছে সীমান্তে বি এস এফ বাংলাদেশীদের দিকে গুলি ছোঁড়ে বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার জন্যে এবং এই ব্যাপারে বাংলাদেশের দুইজন মন্ত্রী একমত পোষন করেছেন ।
এবং সর্বশেষ টি হল কাশ্মীরে গত পরশু ভারত-পাক সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গোলাগুলিতে উভয় পক্ষের দুইজন করে নিহত হয় । পাকিরা বি এস এফ এর এক সদস্যের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে নিয়ে যায় ।


২১টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×