চলচ্চিত্র দুনিয়ায় সেন্সর বোর্ড একটা বিষফোঁড়া। তবে 'কাঙ্ক্ষিত' বিষফোঁড়া। মানুষ অনেক সময় যন্ত্রণা পছন্দ করে। সেন্সরবোর্ড সেইরকম যন্ত্রণা। সেন্সরবোর্ড চুপচাপ থাকলে সবাই চিল্লায়, এইটা দেখল না ক্যান? সেইটা কাটল না ক্যান? জাতি উচ্ছন্নে গেল! যুবসমাজ গোল্লায় গেল!! ধর্ম গেল!! মান গেল!!! ডট ডট ডট
আবার সেন্সরবোর্ড যদি কাঁচি ধরে, তাহলে তো সব গেল! শিল্পীর স্বাধীনতা নাই, কিছু না বুঝেই কাঁচি চালায়, যত্তোসব, মাথামোটা বসিয়ে রেখেছে একেকটা, সিনেমা বোঝে না ... ইত্যাদি, শতেক বায়নাক্কা।
আসলে সেনসর বোর্ডের কাজ কী? মানুষের রুচির দেখাশোনা করা? রুচি কাকে বলে? হিন্দিতে একটা কথা আছে, 'আব রুচি খানা, পার রুচি প্যাহনা।'
সিনেমাও খাওয়া বটে। খাই যদি, নিজের রুচিতে খাবো। কে বলে দেবে, এইটে ভালো, এইটে দেখ দিকি, আর ঐটে ভালো না, ঐটে দেখিসনি!!! তবে আমরা দেখব? আমরা কি এতোই ঢেউটিন?
প্রসঙ্গক্রমে সৈয়দ মুজতবা আলীর একটি লেখার একটা অংশ উদ্ধৃত করছি।
" ...
আমার ছেলেবেলায় বায়স্কোপও ছেলেমানুষ ছিল। হরেক কেম ফিলিম তখন আসতো; ছোট, বড়, মাঝারি-- এখনকার মতো স্টান্ডার্ডাইজ্ড নয়। সেনসর বোর্ড-ফোর্ডও তখন শিশু, এখনকার মতো জ্যাঠা হয়ে ওঠে নি-- 'এটা অশ্লীল', 'এটা কদর্য', 'সেটা বড় কর্তাদের নিয়ে মস্করা করেছে' বলে দেশের দশের রুচি মেরামত করার মতো হরিশ মুখুজ্যে দি সেকেন্ড হয়ে ওঠে নি। কাজেই হরেক রুচির ফিলিম তখন এদেশে অক্লেশে আসতো এবং আমরা সেগুলো গোগ্রাসে গিলতুম। তার ফলে আমাদের চরিত্রের সর্বনাশ হয়েছে, এ কথা কেউ বলে নি। এবং আজ যে সেনসর বোর্ডের এত কড়াক্কড়ি, তার ফলে এযুগের চ্যাংড়া-চিংড়িরা যীশুখ্রীস্ট কিংবা রামকেষ্ট হয়ে গিয়েছে এ মস্করাও কেউ করে নি। তবু শুনেছি সেনসর বোর্ডের বিশ্বাস, বিস্তর ছবি ব্যান্ করলে শেষটায় ভালো ছবি বেরবে। তাই যদি হয়, সাহিত্যের ক্ষেত্রেও একটা সেনসর বোর্ড লাগাও না কেন? কাকা-মামা-শালাদের চাকরি তো হবেই এবং সুবো-শাম হুদোহুদো বই ব্যান্ করার ফলে একদিন ইয়া দাঁড়িগোঁফ সমেত আরেকটি সমুচা রবিঠাকুর বেহেশৎ থেকে টুকুস করে ঢসকে পড়বেন-- এই যেরকম ইষ্টিসানের কল থেকে প্ল্যাটফর্ম টিকিট মিন্ফর্সেপ্সে বেরিয়ে আসে।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এরা কার রুচি রিফর্ম করতে চায়? আমার? সাবধান! পাড়ার ছোঁড়ারা আমায় মানে (ওরাই আমাকে মাঝে-মধ্যে বায়স্কোপে নিয়ে যায়), শুনলে ক্ষেপে উঠবে। বোর্ডেরও প্রাণের ভয় আছে। তবে কি টাঙাওলা বিড়িওলাদের? ওঃ! কী দম্ভ! ওদের রুচিতে ভন্ডামি নেই। ঐটে পেলে আমি বর্তে যেতুম।
..."
মুজতবা আলী'র চলচ্চিত্র (সেন্সরবোর্ড) দর্শন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট
মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন