দুনিয়ার সব কিছুর উপরেই রহমান সাহেবের বিরক্তি, আর এই ব্যাপারটা সব থেকে ভাল জানে তার নিজের পরিবার আর অফিসের কর্মচারিরা, কারনে অকারনে তিনি তাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন ।
ছোট ছেলে রুমন কাল থেকে বার বার বলছিল বাবা গল্পের বই কিনব টাকা লাগবে, তার সব গুলো ছেলে মেয়ের মাঝে এটা একটু বেয়ারা । একবার কোন কথা বললে এর কানে যায় না, । ছেলের ঘরে গিয়ে সেদিন দেখলেন ছেলে আবার রবীন্দ্রনাথের একটা ছবি টানিয়েছে ।
একে শক্ত একটা মার না দিলে এর বেয়ারাপনা ঠিক হবে না, সকালে তার পেপার পরার সময় আবার এই বদ ছেলে হাজির
বাবা গল্পের বই কিনব টাকা দাও
সারাদিন তোমার গল্পের বই, পড়াশুনা তো কোন খবর নাই, আমি গল্পের বইয়ের জন্য টাকা দিতে পারব না, পড়াশুনা না করে তুমি কবি হও তারপর রাস্তায় ভিক্ষা কর যাও ।
ছেলে আবার বলল বাবা টাকা লাগবে
এবার রাগ সামলাতে না পেরে রহমান ছেলের গালে এক চর দিয়ে বললেন
তোমার বেয়াদপি আর কবিগিরি আমি বের করছি দাড়াও এই বলে ছেলের রুমে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের ছবি আর সব বই নিচে ফেলে দিলেন ।
অফিসে যাবার সময় তার স্ত্রীকে বলে গেলেন এই ছেলে কবি হবে একে আমি ত্যাজ্য করব ।
সারা সকাল অফিসে রহমান সাহেবের ভাল কাটল না দুপুরে তার স্ত্রী ফোন দিয়ে বললেন
আজ রুমনের জন্মদিন, আজকে না মারলেও পারতে, তোমার কি ওর জন্মদিন মনে নেই ???
রহমান সাহেব অফিস থেকে খুব তারাতারি বের হলেন প্রথমে নিলক্ষেত থেকে রবীন্দ্রনাথের দশটা
বই কিনলেন তারপর রবীন্দ্রনাথের বিশাল এক পোষ্টার ।
বাসায় ফিরে দেখলেন রুমনের জন্মদিন উপলক্ষে সবাই বাসা আর কেক সাজানোতে ব্যাস্ত ,
তিনি সরাসরি রুমনের ঘরে ঢুকে দেখলেন যে ছেলে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে,
রহমান সাহেব ছেলের পাশে বসে মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে ডাকলেন রুমন, রুমন
রুমন চোখ মেলে রহমান সাহেবকে দেখে বলল কি বাবা ?
একটা কবিতা বল তো বাবা শুনি
কি কবিতা বাবা
যে কোন একটা বল তোর পছন্দমত
রুমন বলা শুরু করল
পায়ে ধরে সাধা
রা নাহি দ্যায় রাধা
অবশেষে দিল রা
পাগল ছার পা
তেতুল বটের কোনে
দক্ষিনে যাও চলে
ঈশান কোনে ঈশানী
কয়ে দিলাম নিশানী
রহমান সাহেব লক্ষ করলেন ছেলের চোখে পানি জমছে, ছেলেকে আজ মেরেছেন বলে তার নিজেরও চোখে পানি চলে আসল ।
আচ্ছা এটা কার লেখা রে ?
রবিদার লেখা বাবা
রবিদা কে রে ?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ওহ তুই রবিদা ডাকিস নাকি ?
হ্যাঁ বাবা
চল একটা কাজ করি
কি বাবা ?
রবিদার একটা পোষ্টার নিয়ে আসলাম চল দুজনে মিলে তোর দেয়ালে সেট করি
এরপর পোষ্টার লাগানো শেষ হল ।
এই নে বাবা তোর জন্মদিনের গিফট,
এর অনেক গুলো বই তো আমার আছে বাবা
ফেরত দেয়া তো যাবে না ঠিক আছে তাহলে কালকে আমার সাথে গিয়ে তুই আরো দশটা বই কিনে নিস
খুশিতে রুমন বাবাকে জরিয়ে ধরল
চল বাবা তোর জন্মদিনের কেক কাটি আয়,
বাপ-ছেলে কেক সাথে কেক কাটতে চলে গেল ।
রবি-দা সব কিছু দেখলেন আর সবার অলক্ষে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন “ধারাগোল “ ।