somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো টুকরো ভালবাসা - ৫

০২ রা আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুকরো - ৫, টুকরো - ৪ , টুকরো - ৩, টুকরো - ২, টুকরো - ১
স্যার চলে এসেছেন। কিন্তু এখনও মেয়েটির দেখা নেই। ছেলেটির উসখুস ভাব বাড়তে থাকে। মেয়েটি জানে, সে না আসা পর্যন্ত ছেলেটি লেকচারে মন দিতে পারবে না। তা-ও যে কেন এমন দেরী করে! ছেলেটি ডান পাশের সীটটা ব্যাগ রেখে দখল করে রেখেছে, মেয়েটির জন্য। এটা একটা অলিখিত নিয়ম।
এক সারিতে বারোটা আলাদা আলাদা সীট। বাম পাশের ছয়টায় সাধারণত ছেলেরা আর ডান পাশের ছয়টায় মেয়েরা বসে। কখনো কখনো অনুপাতটা সাত-পাঁচও হয়। ক্লাসের বেশীরভাগ জুটিই পাশাপাশি বসে মাঝখানের দুটি সীটে । একজন আগে এলে পাশের সীটটা ব্যাগ বা খাতা দিয়ে দখল করে রাখে যাতে অন্য কেউ এসে না বসে। বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই জুটিদের এ ব্যাপারে ছাড় দেয়, যদিও অনেকেই পিছনে 'আদিখ্যেতা' বলে মুখ ঝামটা দেয়- কেন বাপু; লেকচার করতে এসেছিস, লেকচার কর; একসাথে না বসলে কি কানে শুনতে পাস না? কেউ কেউ আবার তাড়াহুড়োয় বা খেয়াল না করে ঐ 'বুকড' সীটে বসতে চলে আসে। তখন একটু বিব্রতকর অবস্থাই তৈরী হয় বৈকি! এই যেমন, একটু আগে একটা মেয়ে সীটে রাখা ব্যাগটা দেখতে না পেয়ে ডান দিক দিয়ে সারির ভেতরে ঢুকে পড়ে। ছেলেটি দুহাত নেড়ে তাকে ঠেকায় - 'জায়গা রাখা আছে। '
ঐ মেয়ে 'ওহ সরি' বলে চলে যায় পেছনের সারিতে।
স্যার লেকচার নিচ্ছেন। ছেলেটির সামনে খাতা খোলা, হাতে কলম। কিন্তু চোখ দরজার দিকে, মনে মেয়েটির চিন্তা। লেকচারের একটি শব্দও কানে ঢোকে না তার। এ সময় হঠাৎ ছেলেটির রুমমেট ক্লাসে আসে। বাম দিকে দিয়ে সে ঐ সারিতে ঢোকার চেষ্টা করে। স্যারের চোখ এড়িয়ে ছেলেটি হাত ইশারায় রুমমেটকে ঢুকতে মানা করে। রুমমেটটি মুখ ভেংচি কেটে পিছনের সারিতে ছেলেটির ঠিক পিছনে গিয়ে বসে। ফিসফিসিয়ে বলে - 'কি ব্যাপার? এখনও আসে নাই?'
ছেলেটি একটুখানি মাথা ঘুরিয়ে স্যার যেন দেখতে না পায় সেভাবে মুখের সামনে হাত রেখে বলে, 'উহু। বাইরে দেখছিস?'
'না।'
ছেলেটির চোখ দরজা আর দেয়ালে রাখা ঘড়িটার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। অস্থিরতা বাড়তে থাকে। বারো মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পর দরজা দিয়ে মেয়েটিকে ঢুকতে দেখা যায়। যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে ছেলেটির। - উফ! এতক্ষণ!
মেয়েটি ক্লাসের ভেতর ঢুকে একটু থমকে দাঁড়ায়। ছেলেটি কোন জায়গায় আছে দেখার চেষ্টা করে। ছেলেটি হাত তুলতে যাবে এ সময় স্যার হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ান। ছেলেটি চট করে হাত নামিয়ে যতটা সম্ভব পিঠ-মাথা সোজা করে বসে যাতে মেয়েটির চোখে পড়ে।
মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হয় ছেলেটির। ঠিক এ সময়ই স্যারের কন্ঠ শোনা যায় - 'এই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন? বস , ওখানে বস।' - বলে স্যার সামনের সারির ডান দিক থেকে তিন নম্বর সীটটা দেখিয়ে দেন। স্যারের কথা না শোনার ভান করে মেয়েটি পিছনের সারির দিকে রওয়ানা দেবে বলে ভাবছে ঠিক এ সময় আরেকটা মেয়ে ঢোকে ক্লাসে।
'এই, দুইজনই সামনে বস।' - স্যারের এই নির্দেশ তো আর উপেক্ষা করা যায় না। দুই মেয়েই সামনের সারির খালি সীট দুটোতে বসে পড়ে। ক্লাসের ভেতর চাপা হাসির শব্দ শোনা যায়।
ছেলেটির যেন দুচোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসবে। মনে হয় খাতাটা স্যারের মাথায় ছুড়ে মারে। স্যারের শাপ-শাপান্ত করে মনে মনে - কে কোথায় বসবে তাতে আপনের কি? আপনে লেকচার নিতে আসছেন, লেকচার নেন।
স্যার যখন আবার পিছন ফিরে প্রজেক্টরের দিকে তাকান, মেয়েটি পিছন ফিরে অসহায় দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকায়। চোখের ভাষায় বলে - স্যরি। ছেলেটার তখন ভ্রূ কোঁচকানো। রাগ-রাগ চোখে মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তারা দুজনেই জানে, আজ দুজনের কারোরই লেকচার আর শোনা হবে না। অসহ্য বিরক্তি নিয়ে বসে থাকতে হবে বাকীটা সময়।
রুমমেট ছেলেটার মাথার পিছনে চাটি মারে। অর্থ হচ্ছে - কি ব্যাপার যাদু! আমারে তো বসতে দিলি না। এখন বোঝ মজা! কর লেকচার!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:৩২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×