somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো টুকরো ভালবাসা - ৮

১৬ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুকরো - ৭, টুকরো - ৬, টুকরো - ৫, টুকরো - ৪ , টুকরো - ৩, টুকরো - ২, টুকরো - ১
বৃষ্টির প্রচন্ড শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ছেলেটির। খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে, মুষলধারে পড়ছে বৃষ্টি। জানালার ফাঁক গলে ভেতরে এসে মেঝে ভিজিয়ে দিচ্ছে বৃষ্টির ছাট। উঠে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে সে। রুম অন্ধকার হয়ে যায়। লাইটটা জ্বেলে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। সাড়ে পাঁচটা বাজে। একটু পরই রিডিং রুমে যাওয়ার কথা।
ছেলেটি বিরক্ত হয় বৃষ্টির উপর। কি দরকার ছিল এখন আসার? আরেকটু পর এলে কি এমন সমস্যা হতো ওর? এ ধারা কতক্ষণ চলবে কে জানে? ক' দিন ধরে বৃষ্টি শুরু হলে থামা তো দূরের কথা, দু-তিন ঘন্টার মধ্যে আর কমারও কোন লক্ষণ দেখায় না। যে রকম শুরু হয়েছে, ছাতায় নিজেকেই বাঁচানো দায় হবে, তার উপর বইপত্র নিয়ে হোস্টেল থেকে কলেজ ভবনের রিডিং রুম পর্যন্ত যাওয়া তো অসম্ভব। ছেলেটি ভাবে, মেয়েটিকে ফোন করে বলে দেবে যে বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত আসতে পারবে না, ও যেন রুমেই পড়া শুরু করে।

মোবাইল ফোনটা হাতে নেয় ছেলেটা। কিন্তু সে ফোন করার আগেই রিং বাজতে থাকে। মেয়েটা ফোন করেছে তাকে। ছেলেটি মনে মনে হাসে - টেলিপ্যাথি! মেয়েটিও একই কথা বলার জন্য ফোন করেছে তাকে?
ফোনে মেয়েটির কথা কেটে কেটে যায়। বুঝতে পারে না ছেলেটা। লাইন কেটে যায়। সে ফোন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিছুক্ষণ পর মেসেজ আসে - 'পেট ব্যথা করছে অনেকক্ষণ ধরে। অ্যাপেনডিক্স-এর পেইন হতে পারে। হাসপাতালে যাব। জলদি আস।'
আঁতকে ওঠে ছেলেটি। দ্রুত বার কয়েক চেষ্টা করে ফোনের। কিন্তু বার বারই লাইন কেটে যেতে থাকে। কথা বোঝা যায় না। সে মেসেজ পাঠায় - '৫ মিনিটের মধ্যে আসছি। তুমি রুমমেট বা পাশের কোন মেয়েকে নিয়ে বাইরে আসো। এলএইচ - এর সামনে এসে কল দিব।'
কতটা খারাপ অবস্থা কে জানে? ছেলেটার উদ্বেগ বাড়তে থাকে। যদি তেমন খারাপ হয় কাল সকালেই হয়তো অপারেশন করিয়ে ফেলতে হবে। ডাক্তার দেখিয়ে এখনি তাহলে টেস্ট করাতে দিতে হবে কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। দ্রুত তৈরী হয়ে ড্রয়ার খোলে। হাজার তিনেক টাকা ছিল সেখানে। পুরোটাই মানিব্যাগে ভরে ছাতাটা হাতে নিয়ে বের হয় ছেলেটি। বৃষ্টি পড়ছে সেই একই বেগে। মনে মনে কষে গালাগাল দেয় বৃষ্টিকে।
লেডিস হোস্টেলের সামনে দিয়েই হাসপাতালে যেতে হয়। সেখানে আসতে আসতে অনেকখানিই ভিজে যায় ছেলেটি। ঐ টুকু ছাতা শরীর বাঁচাতে পারে না। কিন্তু সেদিকে নজর দেয়ার কথা মাথায়ই আসে না ছেলেটার।

লেডিস হোস্টেলের সামনে এসে দেখে মেয়েটি হোস্টেলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে। একা। রেইনকোট নেই গায়ে, হাতে ছাতাও নেই। ভিজে চুপচুপে হওয়া যাকে বলে, মেয়েটির অবস্থা তা-ই।
'কি ব্যাপার? কাউকে পাও নাই? ব্যথা কি খুব বেশী?' ছেলেটির গলা উদ্বেগে কেঁপে কেঁপে যায়।
মেয়েটি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সামনে হেঁটে যায়। কলেজ ভবন আর লেডিস হোস্টেলের সামনে বসার একটা জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে বসে -'এখন ব্যথা নাই'।
'এখন ব্যথা নাই মানে? অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা এত তাড়াতাড়ি চলে গেল?'
'হ্যাঁ, গেল। কেন? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ব্যথা থাকলেই তুমি বেশী খুশী হতে?'
কি কথার কি জবাব! ছেলেটি ভ্রূ কোঁচকায়। তবে ব্যথা নেই শুনে স্বস্তি বোধ করে।
'তুমি তোমার মাথায় ছাতায় ধরে আছো কেন? দেখতেছো না, আমি পুরা ভিজে গেছি। তোমার কি আমার প্রতি সমবেদনা জানানোর উদ্দেশ্যেও ছাতা সরায়ে রাখা উচিত না?'
ছাতাটা মাথার উপর থেকে সরিয়ে পাশে রাখে ছেলেটা। আর তখনই হঠাৎ করে মাথায় ঢোকে পুরো ব্যাপারটা। সে বাঁ দিকের ভ্রূ উঁচু করে মেয়েটির দিকে বাঁকা চোখে তাকায় - 'আ-চ্ছা!'

বেশ ক'দিন ধরেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। মেয়েটি প্রতিদিনই আবদার করছে ছেলেটির সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে। ছেলেটি সায় দিচ্ছিল না। বৃষ্টিতে ভেজার আইডিয়া তার একদমই পছন্দের না। ভেজার মধ্যে কি আর মজা! বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা। হাতঘড়ি না হয় ওয়াটার-প্রুফ, মোবাইলে না হয় কাভার দেয়া-- তারপরও, যদি পানি ঢোকে, নষ্ট হয়ে যায়? আবার ভেজা অবস্থায় হোস্টেল পর্যন্ত যাওয়াটাও কেমন যেন।
মেয়েটি বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে ছেলেটিকে দেখায়, তার 'ষড়যন্ত্র' যে ছেলেটি ধরে ফেলেছে, বুঝতে পারে। সুর করে বলে - 'জ্বিইই!'
তবে ছেলেটির তেমন খারাপ লাগছে না এখন। মেয়েটির চোখে-মুখে যে আনন্দের আভা, উচ্ছ্বাস- তা দেখার জন্য সে তো তার পুরো দুনিয়াই দিয়ে দিতে পারে, হাতঘড়ি আর মোবাইলের মতো তুচ্ছ ব্যাপার আর তখন মাথায় আসে না।
মেয়েটি উঠে দাঁড়ায় - 'চল, হাঁটি।'
পাশ থেকে ছাতাটা হাতে নিতে নিতে ছেলেটি হালকা গলায় বলে, 'তোমার অবস্থা একদিন ঐ রাখাল বালকটার মতো হবে। এভাবে মিথ্যা কথা বলতে থাকলে দেখবা একদিন সত্যি কথাও বিশ্বাস করবো না।'
মেয়েটি ফিরে তাকায় - 'কে? তুমি? বাজি লাগ, আমি যা-ই বলি, জীবনে কখনোই তা তোমার কাছে মিথ্যা বলে মনে হবে না।'
এক হাত দিয়ে বৃষ্টি থেকে চোখ আড়াল করে আকাশের দিকে মুখ তোলে ছেলেটি। সরাসরি মুখে এসে পড়ে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা। ভাল লাগে।
'তা-ও ঠিক'- মনে মনে মেয়েটির সাথে একমত হয় সে। নিশ্চিত হারের এ বাজি ধরার ইচ্ছে হয় না তার।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:৫২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×