somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: বান্ধবী (রহস্যপত্রিকা , মে , ২০১৩)

০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হৃদি ঘন ঘন হাতঘড়ির দিকে তাকায়। এক একটা মিনিট ওর কাছে এক একটা যুগের মতো দীর্ঘ মনে হয়। ওরা স্টেশনে এসে পৌঁছেছে দশ মিনিটও হয়নি। কিন্তু মনে হচ্ছে, অনন্তকাল ধরে যেন ওরা অপেক্ষা করেই যাচ্ছে। সেতুর উপর খুব রাগ হয়। ওর কি আরো আগে আসা উচিত ছিল না?
স্টেশনের কিছুই চেনে না হৃদি। প্রায় প্রতিবছরই ট্রেনে করে দিনাজপুরে দাদাবাড়ি যায় সে, কিন্তু তা-তো বাবা-মা আর বোনের সাথে। বাসা থেকে বেরিয়ে প্রাইভেট কারে চড়ে স্টেশন- কার থেকে নেমে মায়ের-বোনের হাত ধরে সোজা ট্রেনের কামরায়। স্টেশনের কোথায় কি আছে, হয়তো চোখে পড়ে, কিন্তু মনোযোগ দিয়ে কখনো লক্ষ্য করার প্রয়োজনও হয়নি, ইচ্ছেও করেনি। অপরিচিত কারো চোখে চোখ পড়ে গেলে তার খুব ভয় লাগে কেন যেন। তাই স্টেশনের ভীড়ের মাঝে সে কখনো কোনদিকে মুখ তুলে তাকায় না।

আজও সে মুখ নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকে। তবু দু’একবার চোখ চলে যায় রাস্তার দিকে। তখন টের পায়, আশপাশের লোকগুলো কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। ইরার বাহু শক্ত করে ধরে থাকে সে। ইরাকে হিংসা হয় তার। কি নির্বিকার ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইরা। এতক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে বিরক্ত কিছুটা, কিন্তু উদ্বেগ বা ভয়ের কোন চিহ্নই নেই চোখে-মুখে। নিজের মুখটা না দেখতে পেলেও হৃদি জানে, সেখানে ভীতির ছাপ স্পষ্ট। বার বার ঢোক গেলে সে, গলা শুকিয়ে আসে। ইরাটাই যা একটু ভরসা। ও সেতুর সাথে কয়েকবার এসেছিল এই স্টেশনে। ওরা দুজনে ট্রেনে করে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ঘুরেও এসেছে - গর্বিত কন্ঠে জানিয়েছিল ইরাই। স্কুল থেকে কমলাপুরের রাস্তাটা ও ভাল চেনে বলেই আসতে পেরেছে। নইলে হৃদি একা কখনোই এই সাহস করতে পারতো না।

সেতু অবশ্য চেয়েছিল স্কুল থেকেই ওদেরকে নিয়ে আসতে। সেতু ইরার বয়ফ্রেন্ড। ইরা-হৃদির চেয়ে ছয় বছরের বড়। এক মাথা ঝাকড়া চুল, পেটানো শরীর। স্কিন টাইট জিন্স আর টি শার্ট, চোখে সানগ্লাস পরে স্কুল ছুটির সময় মটর সাইকেল নিয়ে প্রায়ই সে ইরার জন্য অপেক্ষা করে স্কুল গেটের বাইরে। ছুটির পর ঐ মটর সাইকেলে চেপে বান্ধবীদের ঈর্ষাকাতর চোখের সামনে দিয়ে ইরা ঘুরতে যায় সেতুর সাথে। ওদের ক্লাসের অনেক মেয়েই সেতুকে চেনে। তাই হৃদি-ইরা কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি। ইরাই বলেছে, সে হৃদিকে নিয়ে খুব পারবে স্টেশনে পৌঁছে যেতে। ঠিক তিনটায় যেন সেতু স্টেশনে পৌঁছে যায়।

প্ল্যানটা হুট করেই করা। মাত্র চারদিন আগে ইরা বলে প্ল্যানের কথা। শুনেই মনটা লাফিয়ে ওঠে হৃদির। তবু ভাবার জন্য এক রাত সময় নেয় সে। পরদিনই জানিয়ে দেয় - সে রাজী। ইরার সেতু আছে। সব ব্যবস্থা সে-ই করবে।

হৃদি ভাবে, ইরা আসলেই খুব সাহসী মেয়ে। আর সাহসী না হলে কি প্রেম করা যায়? প্রেম! কোন ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করার কথাই তো ভাবতে পারে না হৃদি - প্রেম তো বহুদূর। বাবা-মা জানলে কি তুলকালাম কান্ডটাই না ঘটবে! কোন ছেলের সাথে একা দেখলে নিশ্চয়ই খুনই করে ফেলবে তাকে।
হৃদির বাবা উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। সরকারী চাকুরীর কারণে কয়েক বছর পর পর বদলী। এ কারণে হৃদিরও স্কুল পাল্টেছে ঘন ঘন। ক্লাস এইট পর্যন্ত উঠতেই চারটা স্কুলে পড়েছে সে। ক্লাস নাইনে বাবার ঢাকায় বদলীর পর এসে ভর্তি হয়েছে সিদ্ধেশ্বরীর বর্তমান এই স্কুলে। এখানে এসেই ইরার সাথে পরিচয়। ইরাকে খুবই ভাল লাগে তার। কি স্বাধীনচেতা! কি চটপটে, ফূর্তিবাজ মেয়ে! সে-ই বাড্ডা থেকে সিদ্ধেশ্বরী একা একাই যাওয়া-আসা করে। কখনো বাসে, কখনো অবশ্য সেতুর সাথে মোটর সাইকেলে। আর হৃদি! মগবাজারের বাসা থেকে এটুকুও একা আসতে পারে না। সে স্কুলে যাওয়া-আসা করে মা-র সাথে। যদিও গাড়ি থাকে। তবু মা গাড়িতেও একা ছাড়তে চান না ওকে।

ইরা অবশ্য পড়াশোনায় একদম পেছনের সারির। প্রতিবারই ফেল করতে করতে বেঁচে যাওয়া দলের সদস্য। ক্লাস এইট থেকে নাইনে ওঠার সময় একবার ফেলও করেছিল। তাই দু’বছর পড়েছে ক্লাস এইটে। শিক্ষাগত এই পশ্চাৎপদতা হৃদির ইরাকে ভাল লাগার অন্যতম কারণও বটে।

হৃদি নিজেও পেছনের সারির ছাত্রী। কোন ক্লাসে দু’বার পড়তে না হলেও প্রতি বছর ঠেলেঠুলে পাস করে সে। পড়াশোনায় খারাপ বলে ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার বকাঝকা শুনে আসতে হচ্ছে তাকে। উঠতে-বসতে বড় বোনের সাথে তুলনা। হৃদির বড় বোন প্রাপ্তি এবার ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। এই নিয়ে বাসার সবার কি আনন্দ! বড় আপুটার কি প্রশংসা করে সবাই। প্রাপ্তিকে এজন্য মনে মনে হিংসেই করে হৃদি। যখন আদর করে কথা বলতে আসে প্রাপ্তি, মনে হয় তাকে যেন করুণা করছে - অসহ্য লাগে। পারিবারিক বা বাবার অফিসিয়াল কোন অনুষ্ঠান বা পিকনিকে গেলে প্রাপ্তির কাছে নিজেকে ম্লান লাগে তার, সবাই কেমন প্রাপ্তিকে ঘিরে থাকে - শংসা বাক্যে ভরিয়ে দেয় তাকে। আর হৃদিকে গায়ে পড়ে উপদেশ দেয় - দেখো, বড় বোন কত ভাল রেজাল্ট করছে, তোমাকেও অমন হতে হবে। ভাল করে পড়। এক মায়ের পেটের বোন, অথচ ব্রেইনে কি পার্থক্য!

ওর সামনেই এসব কথা বলেন আন্টি-আংকেলরা। এজন্য আজকাল আর কোন অনুষ্ঠানে যেতেও ভাল লাগে না হৃদির। এ নিয়ে প্রতিবারই ঝামেলা বাধে। কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে বাবা-মার বকাঝকা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। হৃদি যেতে চায় না, আর বাবা-মা তাকে নেবেনই। শেষ পর্যন্ত মন খারাপ করে যেতে বাধ্য হয় সে।


আড়চোখে চারপাশে তাকিয়ে ভয় ভয় লাগে হৃদির। তারা দুজন দাঁড়িয়ে আছে একটা থামের পাশে। ওদের উল্টোদিকেই প্রথম শ্রেণীর টিকিট কাউন্টার। কাউন্টারগুলোর সামনে বেশ ভীড়। কাছেই তিনটা লোক দাঁড়িয়ে। ওদের দিকে তাকিয়ে কি যেন ফিসফাস করছে। বদখত চেহারা লোকগুলোর। তাকিয়েও আছে কেমন বিশ্রী ভঙ্গিতে। স্কুল ড্রেস পরে থাকার কারণে আরও অস্বস্তি লাগছে হৃদির। ড্রেসটা পাল্টাতে পারলে ভালো হতো। ইরার দিকে তাকায় হৃদি। ইরার চোখেমুখে অস্থিরতা। কিন্তু ভয়ের কোন ছাপ সেখানে নেই। ওর দিকে তাকিয়ে নিজের মনের ভয় তাড়াতে চেষ্টা করে হৃদি।

যেন অনন্তকাল পর সেতুর আগমন ঘটে। ইরাই প্রথম দেখে। ইরার মুখে- ‘আসছে এতক্ষণে নবাবজাদা’ শুনে সামনের দিকে তাকিয়ে হৃদি দেখতে পায় সেতুকে। ওকে দেখে অনেকটা স্বস্তি পায়।
স্কুল গেটে প্রায়ই দেখতে পেলেও সেতুর সাথে এর আগে দু-তিনবার মাত্র কথা হয়েছে হৃদির। ইরার মুখ থেকেই সেতু সম্পর্কে জেনেছে সে। ইরা বলেছে, সেতু এইচএসসি পাস করার পর আর পড়েনি। ছাত্র হিসেবে তেমন একটা ভাল ছিল না। বাবা মারা গেছেন সেতুর ছোটবেলাতেই। চট্টগ্রামে বাবা একটা বাড়ি করে গিয়েছিলেন। সেখানেই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকতেন মা। সেই মা-ও গত হয়েছেন বছর খানেক আগে। এখন আপন বলতে শুধু বড় বোন। বিবাহিতা। থাকে চট্টগ্রামেই। মা মারা যাওয়ার পর এক আত্মীয়ের সুবাদে সেতু ঢাকাতে আসে। ঐ আত্মীয়ের বাসা বাড্ডাতেই। ইরার বাসা থেকে খুব একটা দূরে নয়। এলাকাতেই আত্মীয়ের ফোন-ফ্যাক্স-কম্পিউটারের দোকান দেখাশোনা করতো সে। একদিন রাস্তায় ইরাকে দেখে পিছু নেয়। প্রথমে তো ইরা ওকে একদমই পাত্তা দেয়নি। আঠার মতো পেছনে লেগে থেকে ওকে পটায় সেতু। তারপর ছয় মাস ধরে ওদের প্রেম। খুব শীগগিরই ওরা বিয়ে করে ফেলবে। কিন্তু বিয়ের আগেই দুজনে যা যা করেছে, ইরার কাছ থেকে তার বর্ণনা শুনতে শুনতে কান-গাল লাল হয়ে গিয়েছিল হৃদির।

সেতুর হাতে একটা বড় ব্যাগ। ওটাতে সেতু আর ইরার কাপড়-চোপড়। ইরা আগের দিনই বাসা থেকে কাপড় আর প্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিসপত্র নিয়ে সেতুর কাছে দিয়েছিল। ইরার হাতে শুধু ওর স্কুল ব্যাগটা। হৃদির হাতে হৃদির স্কুল ব্যাগ। ওর ভেতরে দু’সেট কাপড়, তোয়ালে আর টুথব্রাশ, চিরুনি, আয়না- এইসব টুকিটকি। বাড়তি কোন ব্যাগ আনা তো সম্ভবই ছিল না, বাবার সাথে গাড়িতে করে স্কুলে এসেছে সে। গাড়ির ভেতর পুরোটা সময় ভয়ে ভয়ে ছিল - যদি বাবা কোন কারণে ব্যাগটা দেখতে চান!

ইরা অনুযোগ করে - ‘এত দেরী?’

সেতু উত্তর দেয় না। জরুরী কন্ঠে তাগাদা দেয় - ‘তাড়াতাড়ি করো। যাও, আগে ড্রেস পাল্টায়া আসো।’

ও-ই চিনিয়ে দেয় মহিলাদের ওয়েটিং রুম। ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকা মহিলাদের বিস্মিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে ইরা টয়লেটে ঢোকে। হৃদির বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে যায়। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারে। মনে হতে থাকে, সবাই বুঝে ফেলেছে যে ওরা বাসা থেকে পালিয়েছে। ভয় হতে থাকে, কেউ বোধহয় চিনে ফেলেছে ওকে, হয়তো এক্ষুণি ওর বাবা-মাকে খবর দিয়ে দিচ্ছে। পালানোর আগেই ধরা পড়ে গেলে কি অবস্থা হবে ভেবে মনে মনে শিউরে ওঠে হৃদি। ইরার জন্য অপেক্ষার ক্ষণ দীর্ঘ মনে হতে থাকে। কাপড় পাল্টে ইরা বের হলে হাঁফ ছাড়ে হৃদি। দ্রুত ভেতরে ঢুকে সে-ও স্কুল ড্রেস খুলে রেখে অন্য কাপড় পড়ে নেয়।

অনেক দিন থেকেই ভাবনাটা ঘুর ঘুর করছিল হৃদির মনে - ঐ বাড়ি ছেড়ে, বাবা-মা-বোনকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে। যেখানে সে স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারবে। যেখানে পড়াশোনার কোন ঝামেলা থাকবে না। সর্বক্ষণ এটা করো, ওটা করো না- এসব বলার কেউ থাকবে না। কিন্তু ঐ ভাবনা পর্যন্তই। কোথায় যাবে, কিভাবে যাবে - তা তো হৃদি জানে না। বাসা, স্কুল আর কয়েক আত্মীয়ের বাড়ি - এই তো তার দুনিয়া। তা-ও সব জায়গায় মা-বাবা বা বোন সাথে। একা কোন কিছু করার উপায়-ই নেই। এমনকি বান্ধবীদের সাথে কখনো বেইলী রোডে খেতেও যেতে পারেনি সে। বাবা-মার এইসব কড়াকড়ি আর বাড়াবাড়িতে মাঝে-মধ্যে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে হৃদির। মুক্তির পথ খোঁজে মন।

এমন সময়ে সাক্ষাৎ মুক্তির দূত হয়েই যেন তার কাছে আসে ইরা।

ইরার বাবা-মাও হৃদির বাবা-মার মতো পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই কড়া। পড়াশোনা নিয়ে ইরাকে কত্তবার যে বাবা-মার কাছে মার খেতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সব-ই হৃদিকে বলেছে ইরা। ক্লাস এইটে ফেল করার পর বাবা তাকে বেত দিয়ে এমন বেদম পিটিয়েছে যে তিনদিন জ্বরের ঘোরে পড়েছিল সে। এবার ক্লাস নাইনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ইরা ইংরেজী আর অংকে ফেল করেছে। রেজাল্ট কার্ড কয়েকদিন লুকিয়ে রেখেছিল ইরা। পরে একই এলাকার ইরার ক্লাসের এক মেয়ের কাছ থেকে মা জেনে যান রেজাল্টের খবর। রেজাল্ট কার্ড দেখাতে বাধ্য হয় ইরা। দেখেই মা তার দু’গালে কষে চড় বসিয়েছেন।

হৃদির বাসায় অবস্থা অতটা খারাপ না হলেও কম কিছু নয়। অংক আর ইংরেজীতে ফেল করেছে সে-ও। এমন না যে ও পড়াশোনা করে না। অংক আর ইংরেজীর জন্য আলাদা আলাদা টিউটর আছে তার। প্রত্যেকে সপ্তাহে তিন দিন করে বাসায় এসে পড়িয়ে যায় তাকে। কিন্তু অংক-ইংরেজীটা কেন যেন ওর মাথায় ঢোকে না। প্রাপ্তি পড়া বুঝিয়ে দিতে এলেও ওর অসহ্য লাগে।

প্রথম সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট কার্ড হাতে পেয়ে সে খুব অসহায় বোধ করে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। এর জের যে কতদিন চলবে কে জানে! মা জানতো, ওদিন তার রেজাল্ট হবে। স্কুল ছুটির পর বাইরে বেরিয়েই হৃদি দেখে মা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে। মা তার চেহারা দেখেই যা বোঝার বুঝে নেয়। গাড়িতে একটা কথাও বলেনি। বাড়ি পৌঁছে মা নিজেই হৃদির ব্যাগ খুলে কার্ডটা বের করে। দেখেই ছুঁড়ে ফেলে মাটিতে।

‘আমার লজ্জা হয় এমন মেয়ে পেটে ধরেছিলাম’, ‘ আমার বড় মেয়েটা কি লক্ষ্মী আর এটা হয়েছে গন্ডমূর্খ’, ‘অংক আর ইংরেজীতে আলাদা টিচার দিলাম, তার পরও এই অবস্থা, মাথাভর্তি খালি গোবর’, ‘কি দিইনি, কিসের অভাব তোর, খাওয়া-দাওয়ার চিন্তা নাই, জামাকাপড়ের অভাব নাই, শুধু পড়াশোনা করবে, তা-ও তাকে দিয়ে হবে না’, ‘সারা জীবন বাবা-মাই খাওয়াবে, নিজের ভবিষ্যতের কোন চিন্তা নাই, অশিক্ষিত মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে?’,‘পড়াশোনার আর দরকার নাই এই মেয়ের, একটা কামলা ধরে এনে বিয়ে করিয়ে দেই’, ‘ভাবীদের কাছে আমার মান সম্মান আর থাকলো না’ - একা একাই গজ গজ করতে থাকে মা, হৃদিকে শুনিয়ে, জোরে জোরে। অকারণেই কাজের মেয়েকে বকাঝকা করে।

হৃদি বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদে। রাতে বাবা অফিস থেকে ফিরলে মা আরেক প্রস্থ গজর গজর করে। এমনিতে গম্ভীর প্রকৃতির বাবা তেমন কিছু বলে না কখনো, যদি কখনো কিছু বলে, তা মায়ের কথার চেয়েও ধারালো হয়। এদিন কিছু বলে না বাবা। তবে রাতে কেউ তাকে খাবার টেবিলে ডাকেও না। কাজের মেয়েকে দিয়ে তার রুমে খাবার পাঠিয়ে দেয়া হয়।

হৃদির গলার কাছে কি যেন দলা পাকিয়ে ওঠে। মুখে দিতে ইচ্ছে করে না খাবার। আবার ‘খাবে না’ বলারও সাহস পায় না। কাজের মেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জানালা দিয়ে খাবারটুকু নিচে ফেলে দেয় । রাতে প্রাপ্তি সান্ত্বনা দিতে এলে আরও অসহ্য লাগে।

পরদিন বাবা স্কুলে পৌঁছে দেবার সময় গাড়িতে কোন কথা বলে না। বাবা-মার এরকম ব্যবহারের কথা ইরাকে বলার সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে হৃদি। ইরা সান্ত্বনা দেয়।

ক’দিন পর ইরা জানায় ওর মা’র হাতে মার খাওয়ার কথা। তার পরদিনই টিফিন আওয়ারে ইরা ফিস ফিস করে বলে - ‘পালাবি?’

প্রথমে কথাটা বুঝতে পারে না হৃদি - ‘কি?’

‘আমি বাসা থেকে চলে যাবো। আর ফিরবো না। ওদের সাথে থাকবো না আর। পড়াশোনা করা হবে না আমাকে দিয়ে। তুই চাইলে আমার সাথে আসতে পারিস।’

‘কোথায় যাবি?’ - বিস্মিত হৃদি।

‘সেতু সব ব্যবস্থা করবে। ওর মিডিয়ার লাইনে অনেক জানাশোনা আছে। চাইলেই আমি মডেলিং করতে পারব। বা নাটক সিনেমায় অভিনয়। পালিয়ে গিয়ে আমরা বিয়ে করে ফেলবো। তারপর মডেলিং বা অভিনয়। অথবা অন্য কিছু। সেটা পরের চিন্তা। কিন্তু বাবা-মার ধার ধারতে আমি আর রাজী না।’
বড় বড় চোখ করে ইরার কথা শোনে হৃদি। কি সাহস মেয়ের! - ‘তোর তো সেতু আছে। আমি কোথায় যাব?’

‘তোর কথাও আমি বলেছি সেতুকে। সেতু বলেছে, কোন সমস্যা নেই। তোরও ব্যবস্থা করা যাবে। আফটার অল, তুই আমার বান্ধবী, সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড। আপাতত তুই আমার সাথেই থাকবি। যতদিন ইচ্ছা। এরপর তোর ডিসিশন। হৃদয়ের কথাটা ভেবে দেখতে পারিস।’

পরের পুরোটা ক্লাস ঐ চিন্তাই ঘুরপাক খায় হৃদির মনে। হৃদয় সেতুর বন্ধু। সেতুর সাথে মাঝে-মধ্যে সে-ও আসে ওদের স্কুলে। মাঝে মাঝে যখন হৃদির গাড়ি দেরী করে আসে অথবা শেষ ক্লাসটা না হওয়ায় আগেই বেরিয়ে আসতে পারে তারা, সেরকম সময়ে কয়েকবার দেখেছে সে হৃদয়কে। কথা হয়নি। কিন্তু তাকে দেখেই পছন্দ করেছে হদয়। ইরার মাধ্যমে তাকে একটা চিঠিও দিয়েছে। সে চিঠি পড়ে তো হৃদির মাথা ঘুরে যাবার যোগাড়। পড়েই ছিঁড়ে স্কুলের বাথরুমে ফেলে দিয়েছে সে। ইরাকে সাফ বলে দিয়েছে - এইসব প্রেম ট্রেমের মধ্যে সে নেই। বাবা-মা জানতে পারলে তাকে খুন-ই করে ফেলবে।

এরপর আর ইরাও এ নিয়ে তাকে কোন কথা বলেনি। তবে হৃদয়কে এর পরও মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে হৃদি, কয়েকবার চোখাচোখিও হয়েছে। ছেলেটার চেহারা সুন্দর। দুজনের নামের মিলটাও হৃদিকে শিহরিত করে। মনের মাঝে অন্যরকম বাদ্য বাজার আওয়াজ পেয়েছে মাঝে-সাঝেই। তবে, নিজের মনকে শাসন করেছে সে। ইরার মতো সাহসী সে কখনোই হতে পারবে না।
কিন্তু এখন মনে হয়, আরেকটু সাহসী হতে পারলেই তার জীবনটা অন্য রকম হয়ে যেতে পারে। হৃদয়কে নিয়ে অনেক কিছু কল্পনা করে সে। পরের ক্লাস- তার পরের ক্লাস - ফেরার সময় গাড়িতে- বাসায়- একই চিন্তা ঘুরপাক খায় মনে। কি করবে সে এখন? কি করা উচিত তার? অংকের টিউটর আসে পড়াতে। কোন অংকই মাথায় ঢোকে না। ঢোকে না টিউটরের কোন কথাও। একই কথা কয়েকবার করে বলতে গিয়ে বিরক্ত হয় টিউটর। যাবার সময় মাকে বলে যায় মেয়ের অন্যমনস্কতার কথা।

টিউটর চলে যাওয়ার পর মা যেন ঝাঁপিয়ে পড়েন কথার ছুরি নিয়ে- ‘ভাবুক হইছে! ধ্যান করে! পড়াশোনায় মন নাই কোনো। খালি ফাঁকিবাজি। এইবার যে ফেল করছে, সেটা নিয়েও লজ্জা নাই কোনো। পরের বারও ফেল করবে। শুধু শুধু একগাদা টাকা দিয়ে টিউটর পালতেছি। আগামী মাস থেকে এই মেয়ের পিছনে টাকা পয়সা খরচ করা বন্ধ। গ্রাম থেকে অশিক্ষিত একটা চাষার ছেলে ধরে এনে এখনি বিয়ে করিয়ে দিব এর।’

প্রাপ্তি মাকে মৃদু শাসন করে- ‘আহ মা, কি শুরু করলে, থামো তো।’

থামে না মা। ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দফায় দফায় ছুটতে থাকে কথার তুবড়ি।

সারা রাত ঘুম হয় না হৃদির।

পরদিনই ইরাকে জানিয়ে দেয়, সে রাজী। তবে হৃদয়ের ব্যাপারে এখনি কোন সিদ্ধান্ত নয়। ইরার সাথে থাকবে আপাতত সে। দু’জনে মিলে পরে সিদ্ধান্ত নেবে কি করা যায়।

এরপর তিন দিন ধরে চলে প্রস্তুতি। সিনিয়র এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আজ যে টিফিনের পর আর ক্লাস হবে না, তা জানিয়ে দেয়া হয়েছিল তিনদিন আগেই। সেজন্য এই দিনটাকেই টার্গেট করে ওরা। বাসায় জানায় না যে, এদিন ছুটি হয়ে যাবে আগেই। সেতু ট্রেনের টিকিট যোগাড় করে রাখে তিনজনের।


‘.... আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের যাত্রা শুরু হবে। অনুগ্রহ করে আপনাদের নির্ধারিত আসন গ্রহণ করুন.....’ - ইথারে ভেসে আসা নারী কন্ঠের ঘোষণা বিগত কয়েক দিনের ভাবনা থেকে বর্তমানে টেনে আনে হৃদিকে। ট্রেনের কামরার ভেতরটায় চোখ বুলায় সে। ঢাকা-চট্টগ্রামগামী ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কারণে দরজা-জানালা বন্ধ। পাশাপাশি দুই সীটে বসেছে সে আর ইরা। হৃদি বসেছে জানালার ধারের সীটটায়। উল্টো দিকের দুটো সীটের ভেতরের দিকটায় সেতু।

ঝাঁকি দিয়ে ট্রেন চলতে শুরু করে। ইরা বড় করে একটা শ্বাস ফেলে - ‘অবশেষে আমরা রওনা দিলাম।’

হ্যাঁ - অবশেষে। কিন্তু এখনও ব্যাপারটা কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে হৃদির কাছে। আসলেই সে ঐ বাসা থেকে পালিয়ে যেতে পারছে দূরে। বদ্ধ খাঁচা থেকে পাখিকে বের করে আকাশে ছেড়ে দিলে তার যেমন আনন্দ হয়, তেমন আনন্দই কি অনুভব করা উচিত তার? বুক ভরে শ্বাস নিতে চায় হৃদি। হঠাৎ কাঁটার মতো কি যেন খচ করে বেঁধে মনের ভেতর। যে মা-বাবার কথা বিষের মতো মনে হতো এতদিন, যে বোনকে অসহ্য লাগতো, তাদের মুখগুলি বার বার ভেসে উঠতে থাকে মনের পর্দায়। কি করছে এখন ওরা?

বাবা অফিসে। প্রাপ্তি হয়তো এতক্ষণে বাড়ি ফিরেছে। অথবা মেডিক্যালের ক্লাস শেষে সে যদি রিডিং রুমে পড়ে কিছুক্ষণ, তাহলে দেরী হবে। সেক্ষেত্রে প্রাইভেট কার প্রাপ্তিকে নিয়ে সোজা আসবে হৃদির স্কুলে। তাহলে হয়তো গাড়িতে মা থাকবে না, প্রাপ্তি থাকবে। হৃদির জন্য গাড়ি অপেক্ষা করবে স্কুল গেটে। প্রাপ্তি না থাকলে মা থাকবে গাড়ির ভেতর। কতক্ষণ অপেক্ষা করবে? দশ মিনিট ? পনের? যখন দেখবে, স্কুলের ভেতর থেকে কোন মেয়েই বেরিয়ে আসছে না, মা বা প্রাপ্তি গাড়ি থেকে বের হয়ে দারোয়ানের সাথে কথা বলবে। দারোয়ান জানাবে, স্কুল ছুটি হয়েছে আজ আগেভাগেই। মা বা প্রাপ্তি কি করবে তখন? ছুটে যাবে স্কুলের ভেতর। টিচারদের সাথে কথা বলবে। জানতে পারবে, আসলেই টিফিন পিরিয়ডের পর থেকে ছুটি আজ। কিন্তু হৃদি তো বাসায় পৌঁছেনি!

প্রাপ্তি ফোন করবে মাকে, মা ফোন করবে বাবাকে। মা ওদের ক্লাসের নাহার, লাবণী, পাপিয়াকে চেনে, ওদের ফোন নম্বর জানে। ওদের কাছে খোঁজ নেবে মা। ওরা কি বলবে? ওরা তো জানে না কিছু। তবে, ছুটির সময় ইরার সাথে ওকে দেখেছে, একথা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবে ওরা। মা কি কিছু মেলাতে চেষ্টা করবে? ভাববে, ইরার সাথেই আছে সে? ইরার সাথে যে ওর ঘনিষ্ঠতা - তা মা জানে না। মা সব সময়ই চেয়েছে, ক্লাসের ফার্ষ্ট বেঞ্চের ছাত্রীদের সাথে ওর সখ্যতা থাকুক। কিন্তু নাহার, লাবণী বা পাপিয়া তো বলে দেবে ওদের ঘনিষ্ঠতার কথা। মা কি ইরার ফোন নম্বর যোগাড় করবে? ফোন করবে ইরার বাসায়? করুক। ততক্ষণে ওদের ট্রেন ঢাকার গন্ডি ছাড়িয়ে চলে যাবে অনেক দূর।

‘মুখ ভার কেন? ভয় লাগছে?’ ইরা আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে ওর কানে কানে বলে- ‘কোন ভয় নেই। আমরা আছি না?’

শুকনো মুখে হাসির রেখা ফোটাতে চেষ্টা করে হৃদি।

ইরা কানে কানেই বলে - ‘ওরকম প্যাঁচার মতো মুখ করে রাখলে লোকজন সন্দেহ করবে। স্বাভাবিক হ।’

সেতু ইরার দিকে ঝুঁকে ফিস ফিস করে কি যেন বলে উঠে কামরার বাইরে যায়, হৃদি শুনতে পায় না কথা। যখন ফেরে, সেতুর হাতে কেক, চিপস আর ম্যাংগো জুস। হৃদির তেমন খিদে নেই। টিফিন পিরিয়ডে খাওয়ার জন্য আনা নাস্তা ওয়েটিং রুমে বসেই খেয়ে নিয়েছে হৃদি-ইরা। তাই কেক-চিপসের প্যাকেট তখনি খোলে না ওরা।

জুসের বোতলে চুমুক দিতে দিতে আবারো মন খারাপ হয় হৃদির। এ কাদের সাথে যাচ্ছে সে? চিরচেনা জগৎ ছেড়ে কোন অজানার উদ্দেশ্যে? হঠাৎ করে ইরাকে খুব অচেনা লাগে তার। কত দিনের পরিচয়? মাত্র চার মাসের। ইরাকে কখনো বাসায় নিয়ে যায়নি হৃদি। ইরার বাসাও সে চেনে না। সেতু তো আরো অচেনা।

মনে পড়ে, ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময় একবার বাবা-মা আর প্রাপ্তির সাথে বইমেলায় গিয়েছিল সে। হঠাৎ করে মায়ের হাত থেকে ওর হাত ছুটে যায়। কিছুক্ষণ পর এক দঙ্গল অচেনা মানুষের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করে সে। প্রথমে বিস্মিত হয়ে লোকগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। তার পাশ ঘেঁষে চলে যাচ্ছে লোকগুলো, তার দিকে তাকালেও সেভাবে খেয়াল করছে না কেউ। চারদিকে তাকিয়ে পরিচিত কোন মুখ দেখতে না পেয়ে সেই বিস্ময় কান্নায় রূপ নেয়। পরে কান্নাভেজা হৃদিকে এক লোক নিয়ে যায় মাইকের কাছে। মাইকে তার নাম ঘোষণা করার পর বাবা-মা এসে তাকে নিয়ে যায় সেখান থেকে। তাকে খুঁজে পেয়ে জড়িয়ে ধরে মায়ের সে কি কান্না! আজ হঠাৎ কেন যেন সেদিনের মতো বিপন্ন বোধ করে হৃদি।

বোধের দরজায় খিল আটকে ভাবনাটাকে অন্যদিকে ধাবিত করার চেষ্টা করে হৃদি। ইরার উপর ভরসা করা যায়। এই চার মাসেই ইরা তার নির্ভরতার স্থান, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হোক না বয়সে দু বছরের বড়, পরিচয়ের দুদিন পর থেকেই তাদের সম্পর্ক তুমি থেকে তুইয়ে নেমে এসেছে। নোট নিয়ে ক্লাসে কয়েক মেয়ের সাথে হৃদির ঝামেলা বাধলে ওর পক্ষ নিয়ে ঐ মেয়েদের সাথে ঝগড়াও করেছে ইরা। মা যে টিফিন বানাতো, প্রতিদিনই তা ওরা দু’জন ভাগ করে খেত। ইরার বাসা থেকে সব সময় টিফিন বানিয়ে দিত না, অধিকাংশ দিন টিফিনের টাকা দিয়ে দিত ওর বাবা। কিন্তু মাঝে মাঝেই সেতুর কিনে দেয়া বার্গার, চিপস, স্যান্ডউইচ ক্লাসে এনে হৃদিকে খেতে দিত ইরা। দেখলে বুকে কাঁপন জাগে, নারী-পুরুষের এমন সব যুগল ছবি এনে দেখাত তাকে। কিছুদিন আগে একটা ম্যাগাজিন এনেছিল ক্লাসে, টিফিনের ফাঁকে গোপনে পড়েছে দুজনে মিলে, নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের রগরগে বর্ণনা পাতায় পাতায়। এইতো সেদিন, ইরা ফ্রেন্ডশীপ ব্যান্ড বেঁধে দিয়েছে হৃদির হাতে। আগের স্কুলগুলোতেও কিছু বন্ধু জুটেছিল হৃদির। কিন্তু কাউকে এতটা ভাল লাগেনি তার। কারো উপর এতটা নির্ভরতা জন্মায়নি।
ইরার দিকে আড়চোখে তাকায় হৃদি। কি নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে সেতুর সাথে গল্প করে যাচ্ছে। ওর দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে মন খারাপ ভাবটা কেটে যেতে থাকে হৃদির। ওদের গল্পে একটু একটু করে ও-ও যোগ দিতে থাকে, নিচু স্বরে। অর্থীর ড্রেসের গল্প, তিথির দাঁতের গল্প, প্রিয়তির চুলের গল্প, রুহিনা ম্যাডামের সাথে শিহাব স্যারের সম্পর্কের গুঞ্জনের গল্প। ট্রেন ছুটে চলে ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক।

রাত সাড়ে দশটার দিকে ট্রেন পৌঁছে চট্টগ্রাম স্টেশনে। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে করে ওরা তিনজন যায় হালিশহর, সেতুর বোনের বাসায়। দোতলা বাসা। সেতু জানায়, নীচতলা ভাড়া দেয়া, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের মতো। অবিবাহিতা বা পরিবার ছেড়ে দূরে চাকুরী করতে এসেছে, এরকম মহিলারা এখানে ভাড়া থাকেন। দোতলায় থাকে সেতুর বোন শিউলী, এক খালা আর খালাতো বোন সহ। শিউলী নিঃসন্তান। স্বামী থাকেন দুবাই।

খুব দ্রুতই হৃদি আর ইরাকে আপন করে নেয় পরিবারটি। ইরাকে ভাইয়ের স্ত্রীর মতোই বরণ করে নেয় শিউলী। মহিলাকে খুবই ভাল লাগে হৃদির। কি মিষ্টি ব্যবহার। কত যতœ করে তাদের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

ইরা আর হৃদির জন্য একটা রুমে বিছানা তৈরী করা। খাওয়া-দাওয়া শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় হৃদি। ক্লান্তিতে যেন শরীর ভেঙে আসতে চাইছে তার। কিন্তু ইরা চলে যায় সেতুর কাছে। হৃদিকে বলে, গল্প করতে যাচ্ছে, কিছুক্ষণ পরই ফিরবে।

অপরিচিত ঘরে একা কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে হৃদি। ইরা কি স্বচ্ছন্দে এ ঘর-ও ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছে! যেন নিজেরই বাড়ি। আসলেই তো, সেতুর বাবার বাড়ি মানে তো ইরার শ্বশুরবাড়ি। বিয়ে হয়ে গেলে ইরাও তো এ বাড়িরই একজন। নিজেকেই কেমন আশ্রিতা আশ্রিতা মনে হয় হৃদির। একবার মনে হয়, ওদের সঙ্গে গিয়ে গল্পে যোগ দেয়। আবার ভাবে, থাক। ইরা হয়তো সেতুর সাথে ভালবাসার কথা বলবে, নিজেদের মধ্যে কত গোপন কথা থাকে ভালবাসার মানুষদের। কি দরকার কাবাবে হাড্ডি হওয়ার?

সে শুয়ে শুয়ে ইরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। দরজা খোলা, এ ব্যাপারটাও অস্বস্তিকর লাগে। বাসায় যদিও সব সময় তার রুমের দরজা খোলাই থাকে। দরজা বন্ধ করলে মা খুব রাগ করেন।

আহ! আবার বাসার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। বাবা-মাকে কি জানানো দরকার না ও ভাল আছে? আসার সময় একটা চিরকুট লিখে আসতে পারতো। সে চিন্তা এসেছিলও মাথায়। তবে ইরা মানা করে দিয়েছিল। ওরা পালানোর আগেই যদি চিঠি কারো চোখে পড়ে, তাহলে পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে, তার চেয়ে জায়গামতো পৌঁছে ফোন দিলেই হবে।

ওর বাসার ল্যান্ড ফোনের নম্বর ইরার কাছে আছে, ওকে কি একটু ফোন দিতে বলবে?

না থাক! আজ রাতটা দুশ্চিন্তায় কাটুক তাদের। পড়ালেখা নিয়ে কম জ্বালায়নি তাকে বাবা-মা। একটু দুশ্চিন্তা করুক। কাল ফোন দিলেই হবে।

ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের অতলে তলিয়ে যায় হৃদি টেরই পায় না।


ক্লান্তিতে গাঢ় ঘুম হয় হৃদির। চোখ মেলে প্রথমে বুঝতে পারে না কোথায় আছে সে। পাশে তাকিয়ে দেখে, নিশ্চিন্ত গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে ইরা। সবকিছু মনে পড়ে যায় তার। বাড়ি থেকে পালিয়েছে ওরা। বাবা-মার কথা মনে পড়ে। সারা রাত নিশ্চয়ই ঘুুমাননি তারা উৎকন্ঠায়। তাদের কথা মনে হতে আবার নিজের উপরই বিরক্ত লাগে হৃদির। দূ-র!

আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকে সে। সব চিন্তা ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে মুক্তির এই সময়টা উপভোগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ডেকে তোলে ইরাকে।

এ সময় দরজায় টোকা পড়ে। হৃদিই উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। শিউলী দাঁড়িয়ে। মিষ্টি হেসে বলে- ‘কি? সুন্দরীদের ঘুম ভাঙলো?’

হৃদিও হাসিতেই প্রত্যুত্তর দেয়।

‘হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। টেবিলে খাবার দিচ্ছি।’ - বলে শিউলী চলে যায়।

দরজা ভেজিয়ে খাটে এসে বসে হৃদি। ততক্ষণে উঠে বসেছে ইরা। হৃদি জিজ্ঞেস করে - ‘বাসায় জানিয়েছিস?’

‘নাহ। এখনো জানাইনি। ধীরে-সুস্থে জানাই। অতো তাড়াহুড়ার কি আছে?’

‘বাবা-মা চিন্তা করবে খুব।’

‘তো? তাদের সাথে থাকবো না বলেই তো চলে এসেছি। এখন তারা কি করলো না করলো সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার তো দরকার নেই। তারা কতটা ভাল ব্যবহার করেছে আমাদের সাথে? ...তুই কি ফোন করতে চাচ্ছিস বাসায়?’

‘তুই কি বলিস?’

‘আমি বলি, ফোন করার কোন দরকার নেই। তোর বাবার মোবাইলে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলেই হবে। নম্বরটা দে। সেতুকে বলবো। ও ওর মোবাইল থেকে মেসেজ পাঠিয়ে দেবে।’

ব্যাগ থেকে কাগজ-কলম বের করে নম্বরটা লিখতে লিখতে হৃদি জিজ্ঞেস করে - ‘তুই?’

‘আমার কোন ইচ্ছে নেই এখন। আরো পরে জানাব। দু-একদিন যাক।’

খাবার টেবিলে সেতু বোমাটা ফাটায় - ‘আজ বিকেলে বিয়ে।’

চমকে ওঠে হৃদি। ইরার দিকে তাকায়। ইরা মিটি মিটি হাসছে। শিউলীর মুখেও হাসি। এত জলদি? - ভাবে হৃদি।

ইরা বলে -‘শোন, কালকেই ডিসিশান নিলাম। বিয়ে যেহেতু করবোই, তাহলে আর দেরী কেন? ঝটপট কাজ সেরে ফেলি।’

প্লেটের খাবার মুখে ওঠে না হৃদির। হাত নিশ্চল পড়ে থাকে প্লেটের উপরই। এ কি কথা বলছে ইরা? পালিয়ে ওরা বিয়ে করবে - এ কথা আগেই বলেছিল ইরা, কিন্তু তাই বলে এত দ্রুত? ইরার বিয়ে হয়ে গেলে হৃদির কি হবে? ইরা বলেছিল, হৃদি তার সাথেই থাকবে, যতদিন ইচ্ছা। তখন মনে হয়েছিল - এটা কোন ব্যাপারই না। কিন্তু মাত্র একটা রাত অপরিচিত বাসায় থেকেই হৃদি বুঝে গেছে, আশ্রিতা হিসেবে থাকার অনুভূতিটা মোটেও সুখকর কিছু নয়। শুধু দুই বান্ধবী একসাথে থাকলে হয়তো মনের ভেতর অতটা খুঁত খুঁত করবে না। কিন্তু বিয়ের পর ইরা-সেতু যখন একসাথে থাকবে, সে বাসায় হৃদি থাকবে কোন মুখে! ও তো ভেবেছিল, এই কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে অথবা অন্য কোন ভাড়া বাসায় ওরা দুই বান্ধবী থাকবে, উপার্জনের মতো কোন কাজ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেতুর কাছ থেকে টাকা ধার করবে সে। তারপর নিজে যখন চাকরী বা অন্য কিছু করবে, নিজের কামাই থেকে ধীরে ধীরে সেতুর টাকা শোধ করে দেবে। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন! এখন একাই থাকতে হবে তাকে? অথবা, ভাবতে হবে কি হৃদয়ের কথা?

ইরা যেন ওর মনের কথা পড়তে পারে। বলে - ‘তোর কোন সমস্যা নেই। আমার বিয়ে হলেও তুই আমাদের সাথেই থাকবি। তোর একটা ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত। সেটা যতদিনই হোক। আফটর অল, তুই আমার ক্লোজেস্ট ফ্রেন্ড।’

শিউলীও সায় দেয়- ‘ঠিকই তো। তুমি এত চিন্তা করছো কেন মেয়ে? তুমি আমার ছোট বোনের মতো। তোমার সব দায়িত্ব এখন আমাদের।’

খাওয়ার পর ইরা, সেতু, শিউলী আর ওর খালাতো বোন চলে যায় মার্কেটে, কেনা কাটা করতে। বিকেলে কাজী আসবে। এখানেই বিয়ে পড়ানো হবে। হৃদি রয়ে যায় বাসাতেই, শিউলীর সেই খালার সাথে। হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন যেন পানসে লাগে হৃদির।

বিকেলে কাজী সাথে নিয়ে আসে সেতু। হৃদি জীবনে কাজী দেখেছে একবারই, ছোট খালার বিয়েতে। পাঞ্জাবী-টুপি পড়া দাড়িওয়ালা একটা লোক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যেমন হয়। ছোট খালাকে ঘিরে বসেছিল আত্মীয়স্বজনরা, কাজী একটা লম্বা খাতা বের করে বর-কনের নাম-ঠিকানা লেখে। সবার সামনে সেই নাম-ঠিকানা জোরে জোরে পড়ে, তারপর আরও কি কি যেন কঠিন কঠিন শব্দ বলে। শেষে বলে- ‘বলুন, কবুল।’ ছোট খালা খুব নিচু স্বরে, শোনা যায় কি যায় না এমন স্বরে বলে-‘কবুল।’

বিয়েতে উকিল বাপ-উকিল মা বলে একটা ব্যাপার থাকে- এটা জানে হৃদি। কিন্তু এখানে তো ঐ এক খালা ছাড়া কোন মুরব্বী মহিলা নেই। বর ছাড়া তো কোন ছেলেও নেই বাসায়। ইরাকে আড়ালে নিয়ে প্রশ্নটা করে হৃদি।


ইরা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে উড়িয়ে দেয় প্রশ্নটা- ‘আরে এটা কোন সমস্যাই না। ওইসব রেওয়াজ খালি খালি, লোক-দেখানো। আইনে অত কিছু লাগে না।’

‘স্বাক্ষী?’

‘যোগাড় করা আছে। সেতুর বন্ধুরা পরে গিয়ে সাইন করে দেবে। ওদেরকে আপাতত বাসায় আনা হচ্ছে না।’

এ রাতে ইরার সাথে আর থাকা হয় না হৃদির। লাজ রাঙা মুখে সেতুর সাথে এক রুমে ঢুকে যায় ইরা। হৃদি শোয় সেতুর খালাতো বোন রীতার সাথে, অন্য রুমে।


গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় হৃদির। দেখে, রীতাও জেগে আছে। জানালার পর্দা ফাঁক করে কি যেন দেখছে বাইরে। হৃদিকে বিছানা থেকে নামতে দেখে ঠোঁটে আঙুল রেখে ইশারায় চুপ থাকতে বলে। কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘নিচে পুলিশের লোক এসেছে। তুমি চুপ করে বিছানায় শুয়ে থাক। জানালার ধারে-কাছে যেও না।’ রীতাও পাশে এসে শুয়ে পড়ে।

আতংকে গলা শুকিয়ে আসে হৃদির। বুক ধ্বক ধ্বক করতে থাকে। পুলিশ কেন এসেছে এখানে? এত রাতে? তবে কি জানাজানি হয়ে গেছে, ওরা এখানে আছে? কিভাবে জানা সম্ভব?

হঠাৎ করে বাবা-মার ভয়টা ফিরে আসে মনে। যদি ধরা পড়ে যায়! পুলিশ যদি ভেতরে ঢুকে খুঁজে পায় তাদের। নাহ, এভাবে হুট করে পালিয়ে আসাটা ঠিক হয়নি। এতদিন মা-বাবা শুধু মুখেই যা বলার বলেছেন, পুলিশ ধরে বাড়ি নিয়ে গেলে এবার নির্ঘাৎ প্রচন্ড মার লাগাবেন। মানুষের চলাফেরার আওয়াজ শোনা যায়। একবার মনে হয়, সেতু আর শিউলীর চাপা গলার আওয়াজও শোনে সে। একটা গাড়ি স্টার্ট হবার শব্দ শোনা যায়। এক সময় শান্ত হয়ে যায় সবকিছু। এলোমেলো ভাবনায় কখন যেন ঘুমে চোখ জড়িয়ে যায় হৃদির।

সকালে ঘুম ভেঙ্গে হৃদি দেখে, পাশে কেউ নেই। দরজাটা খোলা। বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি পড়ে যেন। বাইরে বেরিয়ে এসে খাবার ঘরে শিউলীকে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে। ইরা-সেতুর রুমটার দরজা খোলা। শিউলীকে জিজ্ঞেস করে হৃদি- ‘কাল রাতে নাকি পুলিশ এসেছিল?’

শিউলী বলে - ‘হ্যাঁ। পুলিশ তোমাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছিল। কিভাবে খবর পেয়েছে বা সন্দেহ করেছে কে জানে? খালা ম্যানেজ করেছে। রাতে বলে ঘরে ঢোকেনি। কিন্তু আবার আসতে পারে দিনে যে কোন সময়।’

ওদের কথার মাঝেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে ইরা-সেতু। ইরা বলে- ‘আজই এ বাড়ি থেকে সরে পড়তে হবে।’

‘কোথায় যাব?’ - হৃদি জিজ্ঞেস করে।

উত্তর দেয় সেতু- ‘আপাতত কুমিল্লা যাব। ওখানে আমার এক কাজিনের বাসা। ওখানে কয়েক দিন থাকা যাবে। তারপর পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার এখানে চলে আসবো। নাস্তা করে তৈরী হয়ে নাও।’

কিছুটা ভয় ভয় লাগলেও ভেতরে এক ধরণের উত্তেজনাও টের পায় হৃদি। অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার অনুভূতি ছড়ায় মনে। বাবা-মা-বোনের সঙ্গ ছাড়া যে কখনো কোন আত্মীয়ের বাসায়ই যায়নি, সে কিনা বান্ধবীর সাথে চলে এসেছে চট্টগ্রামে! আবার এখন কুমিল্লায়ও যাচ্ছে।

যে স্টেশনে সেদিন রাতে নেমেছিল তারা তিনজনে, আজ সে স্টেশনেই আসে আবার। সেতুই অবশ্য জানায়, এটা ঐ স্টেশনই। নইলে এটাই যে সে জায়গা, হৃদি তা কখনোই চিনতে পারতো না। ঐ রাতে তো ভাল করে তাকায়ইনি কোন দিকে, মনে ভয় থাকার কারণে সারাটা সময় মুখ নিচু করে ছিল। এখন অবশ্য ভীতির অনুভূতি অনেকটা কম। এর প্রধান কারণ, তার পরনে বোরখা। বোরখা পরেছে ইরাও। বুদ্ধিটা দিয়েছে শিউলী। নেকাবে পুরো মুখ ঢাকা, শুধু চোখ দুটো খোলা। বোরখার কারণে গরম লাগলেও হৃদি স্বস্তি পাচ্ছে এটা ভেবে যে, কেউ তার দিকে তাকালেও চিনতে পারবে না এখন। সেতু বলেছে, এখান থেকে একটা ট্রেন নাকি যায় কুমিল্লায়, ওটাতে উঠবে তারা।


সিএনজি যেখানে থামে, সেখান থেকে স্টেশনে ঢোকার দুটো দরজা। ডান পাশের দরজা দিয়ে স্টেশনের ভেতরে ঢোকে ওরা। ভেতরে ঢুকতেই হাতের ডানে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ। বাঁ দিকের দরজা ঘেঁষে নেসক্যাফের একটা কফি মেশিন। দেখতে দেখতে কিছুটা সামনে এগোয় হৃদি। এটিএম বুথ বরাবর সামনের দিকে একটা থামের কাছে এসে দাঁড়ায় ওরা। হৃদি আর ইরাকে ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে সেতু - ‘তোমরা এখানে দাঁড়াও। আমি টিকিট করে নিয়ে আসি।’

হৃদি উপর দিকে তাকিয়ে দেখে, থামের সাথে লাগানো ছোট ছোট চারটা ফ্যান, ও ধরণের ফ্যান সে শুধু টেবিল ফ্যান হিসেবেই ব্যবহার করতে দেখেছে বাসায়। ওদের সরাসরি সামনের দিকে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের রাস্তা, তার বা পাশে সার বেধে অনেকগুলো টিকেট কাউন্টার। অধিকাংশ কাউন্টারের সামনে লোকের ভীড়। ভীড়ের কারণে কাউন্টার গুণতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলে হৃদি। তবে ১২-১৩ টা তো হবেই। কাউন্টারের সেই লোকজনের ভীড়ে সেতুকে আর আলাদা করে চোখে পড়ে না।

হৃদি নজর দেয় ওদের ডান পাশে। সেদিকে বাইরে বেরুনোর আরেকটা দরজা। সেই দরজার ভেতর দিকে এক পাশে একটা কনফেকশনারী, অন্য পাশে রেস্টুরেন্ট।

‘তোর ব্যাগটা দে তো’- বলে নিজেই হৃদির ব্যাগটা নিয়ে তাতে একটা বড় মুখ-বন্ধ খাম রাখে ইরা।

‘কি?’- হৃদি জিজ্ঞেস করে।

‘কিছু কাগজপত্র আছে ওতে, দরকারী। আমাদের ব্যাগে জায়গা নাই। কুমিল্লা পৌঁছে নিয়ে নেব।’
সেতু আর ইরার ব্যাগ এখন একটা। একটাতেই দুজনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ব্যাগটা সাথে নিয়েই টিকেট কাটতে গেছে সেতু। ইরার আচরণ অদ্ভূত লাগে হৃদির। সেতুর কাছ থেকে কি কিছু লুকোতে চাচ্ছে সে? কিন্তু হৃদি কিছু বলার আগেই ইরা বলে, ‘তুই একটু দাঁড়া, আমি টয়লেটে যাব। এই যাব আর আসব। ’

‘কোথায়?’ একা থাকতে হবে ভেবে আবার ভয় ভয় লাগতে শুরু করে হৃদির।

‘আরে এখানেই, ঐ যে, ওয়েটিং রুম।’ বলে ওদের বাম দিকে নেসক্যাফের কফি মেশিনটার পাশের
একটা রুমের দিকে ইঙ্গিত করে ইরা।

হৃদি বলে - ‘আমিও আসি?’

‘উঁহু, তুই এখানেই থাক। সেতু এসে কাউকে না পেলে টেনশন করবে।’- বলে হাঁটা দেয় ইরা।

ওয়েটিং রুমের দরজা দিয়ে ইরা অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত সেদিকে তাকিয়ে থাকে হৃদি। ওয়েটিং রুমের পাশে দুটো বইয়ের দোকান, তার পর একটা ¯œ্যাকসের দোকান, গ্রামীণের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার, কনফেকশনারী - চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে সে। চারদিকে এতো অচেনা মানুষ। কয়েক হাত দূরেই কয়েকটা ছেলে উঁচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। দু’একজন দু’একবার হৃদির দিকে তাকালেও তেমন একটা মনোযোগ দেয় না। কমলাপুর স্টেশনের মতো ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে নেই কেউ। বোরখার আড়ালে আছে বলে অনেকটা স্বস্তি অনুভব করে।

কতক্ষণ পার হলো? এখনও আসছে না কেন সেতু? ইরাটারই বা টয়লেট সারতে কতক্ষণ লাগে?

আবার ভয়টা ফিরে আসতে থাকে মনে। ইরা যে রুমে ঢুকেছে সেই রুমের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ইরাকে বেরুতে দেখা যায় না। সেখানে গিয়ে খোঁজ করবে কি না ভাবে একবার। হঠাৎ আরেকটু বাঁদিকে কফি মেশিনের পাশে স্টেশনে ঢোকার দরজাটার দিকে চোখ পড়তেই বরফের মতো জমে যায় হৃদি।

এ কি! এ কি করে সম্ভব!

নিজের চোখ দুটোকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না হৃদি।

বাবা-মা এখানে কেন!

বেশ খানিকটা দূরে এখনও বাবা-মা। বাবা মোবাইলে কথা বলছে। মা উদভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কি করবে ভেবে পায় না হৃদি। এখনও তার দিকে তাকায়নি তারা। কাছে এসে যদি তাকায়, তারা কি বুঝে ফেলবে বোরখার আড়ালে সে? দ্রুত মাথা নিচু করে ঘুরে দাঁড়ায় হৃদি যাতে তাদের সাথে চোখাচোখি না হয়। চোখ দেখলেই মা-বাবা যে চিনে ফেলবেন এটা সে নিশ্চিত। মাথার উপর থেকে বোরখার ঝালরটা চোখের উপর নামিয়ে আনে হৃদি।

মনে চিন্তার ঝড় বয়ে যায়। বাবা-মা এখানে কি করছে? তারা কি জানতে পেরেছে, সে চট্টগ্রামে আছে? সে কি এখন ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড় দেবে? বা সরে যাবে এখান থেকে? নাহ - তাহলে সেতু বা ইরা এসে ওকে খুঁজে পাবে না। মাথা নিচু করে মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়তে শুরু করে হৃদি- এ সময় যেন ইরা বা সেতু এসে ওকে ডাক না দিয়ে বসে। বাবা মা যেন তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় দ্রুত। স্থানুর মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে হৃদি।

আচম্বিতে দুটো হাত জড়িয়ে ধরে তাকে। ভয়ে জ্ঞান হারানোর আগ মুহূর্তে মায়ের ডুকরে ওঠা কান্নার শব্দ শুনতে পায় - ‘মা আমার হৃদি মা।’

ধরা পড়ে গেছে সে। পালানোর সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে।


চোখ মেলে তাকিয়ে হৃদি বুঝতে পারে, সে একটা মাইক্রোবাসের ভেতর। দুপাশ থেকে বাবা-মা তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তাকে চোখ মেলতে দেখে মা কেঁদে ওঠে- ‘চোখ মেলেছে, আমার মেয়ে চোখ মেলেছে, ওর জ্ঞান ফিরেছে। মা ওরা তোর উপর কোন টর্চার করেনি তো? তোর কোন ক্ষতি করেনি তো ওরা?’

কোন জবাব দেয় না হৃদি। পিছন থেকে প্রাপ্তির গলার আওয়াজ পাওয়া যায়- ‘এখন কেমন লাগছে?’

ছোট্ট করে জবাব দেয় হৃদি -‘ভাল।’

‘কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?’

‘না’।

‘তাহলে এখানে আর হাসপাতালে নেয়ার দরকার নেই। সোজা ঢাকা চল।’ বাবাকে বলে প্রাপ্তি।
গাড়ি ঘুরে রওয়ানা দেয় ঢাকার দিকে।

গাড়ির ভেতর কেউ তেমন কোন কথা বলে না। মা বার কয়েক জিজ্ঞেস করে -‘ওরা তোকে মারে নি তো? তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি তো? খেতে দিয়েছে? কোথায় রেখেছিল?’

কাদের কথা জিজ্ঞেস করছে মা বুঝতে পারে না হৃদি। সেতু-ইরার কথা? ওদের কথা কিভাবে জানলো বাবা-মা? আর যদি ওদের কথা জেনেই থাকে, তাহলে মারধর, খারাপ ব্যবহার- এসব কথা আসছে কেন? কি বলবে বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকে হৃদি।

এরপর বাবা-মাও আর প্রশ্ন করে না। শুধু দু’পাশ থেকে তাকে আগলে রাখে। মাঝে মাঝে আপেল, কমলা, জুসের প্যাকেট এগিয়ে দেয়। কিছুটা খায়, কিছুটা রেখে দেয় হৃদি। বাবা-মার স্পর্শে যে এত ভালবাসা লুকানো - ক-ত দি-ন অনুভব করেনি সে! ভালবাসাটা মরে গিয়েছিল? নাকি ভালবাসাটা এমন-ই ছিল, সে-ই কেবল বুঝতে পারেনি? অথবা বাবা-মার প্রকাশভঙ্গিটাই ছিল তার অবোধগম্য? সে-ই ছোটবেলাকার মতো বাবা-মার আদর যেন ফিরে পায় সে। বাবা-মা তাকে এখনও এতটা ভালবাসে বিশ্বাস হয় না ওর। আনন্দে আর অভিমানে চোখে জল চলে আসে তার। জল লুকোবার জন্য তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে হৃদি।


বাসা-ভর্তি লোকজন। উত্তরার মঞ্জু ফুপু, ধানমন্ডির বেবী খালা, মিরপুরের হেলাল চাচ্চু, খিলগাঁওয়ের খোকন মামা - অনেকেই এসেছেন। কারো দিকে লজ্জায় তাকাতে পারে না হৃদি। এরা সবাই কি জেনে গেছে, সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল? কি ভাবছে ওরা ওর সম্পর্কে?

তবে, সে স্বস্তি পায় সবাই- ‘কেমন আছো ? কেমন বোধ করছো? কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?’ এরকম কয়েকটা প্রশ্ন করেই তাকে ছেড়ে দেয়ায়। উত্তরের জন্য তেমন অপেক্ষা করে না কেউ। সবাই ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে। প্রাপ্তি ওকে ওর রুমে নিয়ে আসে। হৃদি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। প্রাপ্তি ওর হাত ধরে পাশে বসে থাকে।

হৃদি ভাবে - সেতু-ইরা এখন কি করছে? ওরা কি জানে যে ও ধরা পড়ে গেছে? নাকি ওরা এখনও স্টেশনে খুঁজে ফিরছে ওকে? ইশ্, ওদেরকে যদি কোনভাবে একটু খবর দেয়া যেত - সে বাড়ি ফিরে এসেছে, তাহলে ওদের দুশ্চিন্তাটা কমতো। নিজেদের মতো করে ওরা প্ল্যান করতে পারতো। কিন্তু কি-ই বা করার আছে হৃদির? ও তো সেতুর ফোন নম্বরটাও জানে না। কিভাবে খবর দেবে ওদের? না জানি কেমন পাগলের মতো ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ইরা!

প্রাপ্তি হঠাৎ প্রশ্ন করে - ‘কিডন্যাপারদের চেহারা দেখেছিস তুই?’

কিডন্যাপার!! বিহ্বল দৃষ্টিতে প্রাপ্তির দিকে তাকায় হৃদি।

‘ক’জন ছিল ওরা? পিস্তল-ছুরি কিছু বের করেছিল নাকি?’ ওর মাথায় আলতো করে হাত বোলাতে বোলাতে কোমল গলায় আবার প্রশ্ন করে প্রাপ্তি। - ‘কোত্থেকে কিডন্যাপ করেছিল? স্কুলের সামনে থেকে?’

কিডন্যাপের প্রসংগ এখানে আসছে কিভাবে? চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে হৃদি।
প্রাপ্তি বলে চলে- ‘ওরা পঞ্চাশ লাখ চাইলেও বাবা দিয়ে দিত। তবে যোগাড় করতে একটু সময় লাগতো হয়তো। বিশ লাখ চাওয়ায় দ্রুত যোগাড় করা গেছে। ওরা হুমকি দিয়েছিল, আজ রাতের ভেতর টাকা দিতে না পারলে ওরা তোর একটা আঙুল কেটে পাঠাবে। আমরা যা ভয় পেয়েছিলাম!’


কাদেরকে টাকা দিয়ে এসেছে বাবা? ওদের খোঁজ বাবাকে দিল কে? বোনকে কি বলে দেবে কেউ কিডন্যাপ করেনি, নিজেই পালিয়ে গিয়েছিল সে? বলাটা কি ঠিক হবে? চোখ বন্ধ করেই মৃদু কন্ঠে সে বোনকে জিজ্ঞেস করে - ‘তোমরা জানলে কিভাবে আমি ওখানে?’

‘কিডন্যাপাররাই বলেছে। পরশু বিকেলে মা স্কুলে গিয়ে তো শোনে, টিফিনের পরই তোর স্কুল ছুটি হয়েছে। টিচার বা দারোয়ানেরা কেউ তোর খোঁজ দিতে পারেনি। তোদের ক্লাসের পাপিয়া, লাবণীকে ফোন করেছিল মা। ওরাও কিছু বলতে পারেনি। আত্মীয়স্বজনের বাসায় বাসায় খোঁজ করেছি আমরা, হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নেয়ার জন্য লোক পাঠানো হয়েছিল। তোর ঐ বান্ধবীরা আরও কয়েক বান্ধবীর বাসায় খোঁজ নিয়েছে। কেউ জানে না তোর খবর। রাত বারোটার দিকে বাসার ল্যান্ড ফোনে কল করে কিডন্যাপাররা। বলে, তোকে ওরা গোপন জায়গায় আটকে রেখেছে। বিশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। ওরা পুলিশকে জানাতে নিষেধ করে। বাবাও ভয়ে আর পুলিশকে জানায়নি। গতকাল সকালে ওরা বাবার মোবাইলে এমএমএস করে তোর ছবি পাঠায়- তুই শুয়ে আছিস, চোখ বন্ধ। ছবিটা তোকে পরে দেখাচ্ছি। ওরা বলে, তোকে অচেতন করে রেখেছে ওরা ওষুধ দিয়ে। তখন আমরা নিশ্চিত হই যে, আসলেই ওরা তোকে আটকে রেখেছে। বাবা টাকা যোগাড় করেন কালকেই। কাল রাতে কিডন্যাপাররা জানায়, টাকা দিতে হবে আজকে, চট্টগ্রামে গিয়ে। তোকে কোথায় রেখেছে বলেনি তখনো - বলেছে, টাকা দেয়ার পর জানাবে। ওরা একেক বার একেক নম্বর থেকে ফোন করছিল। তবে, বাবা বললো, কথা বলছিল একজনই, পুুরুষ কন্ঠ। আমরা আজ ভোরে মাইক্রোতে রওয়ানা হই টাকা নিয়ে। ওখানে গিয়ে আমরা ওদের কথামতো রেলস্টেশনের কাছেই একটা জায়গায় প্যাকেটে মোড়ানো টাকার বান্ডিল রেখে আসি। কিছুক্ষণ পর ফোন আসে- তোকে স্টেশনের ভেতরে ঐ জায়গায় বোরখা পড়া অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।’

ওরা পালাচ্ছে- এ কথা ওরা তিনজন আর শিউলী ছাড়া আর কেউ কি জানতো? শুধু শুধু কাদেরকে এতগুলো টাকা দিয়ে এলো বাবা? ওর পালানোটাকে বিনা কষ্টে কিডন্যাপিং-এর নাম দিয়ে ফোকটে বাবাকে খসিয়ে নিল কারা? ভেবে কূল পায় না হৃদি।

অন্যের কি আর দোষ ধরবে, বাবার এতগুলো টাকা নষ্ট করার পিছনে হৃদি নিজেই তো দায়ী। তার একটুখানি ভুলের জন্য...।

ঐ রাতেই যদি বাবাকে ফোন দিয়ে জানাতো সে পালানোর কথাটা, তাহলে তো অনর্থক এই টাকাগুলো হাতছাড়া হতো না। পরদিন সকালেও তো জানাতে পারতো। কাল সকালে অবশ্য সে ফোন করতে চেয়েছিল বাসায়। কিন্তু ইরাই তো মানা করলো। ইরাই তো....

কি মনে হতে ঝট করে উঠে বসে হৃদি। প্রাপ্তি অবাক হয়-‘কি হলো?’

জবাব দেয় না হৃদি। ব্যাগ হাতড়ে বের করে খামটা। যে খামটা ইরা দিয়েছিল তাকে স্টেশনে দাঁড়িয়ে। সেটা আর ফেরত নিতে পারেনি সে। কি আছে ঐ খামের ভেতর?

বড় খামটার ভেতর আছে একটা চিঠি। ছোট্ট চিঠি।

কোন সম্বোধন নেই, তবু হৃদি বুঝতে পারে, চিঠিটা তাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা - ‘স্যরি। ভেরী স্যরি। তুই হয়তো আমার উপর খুব রাগ করেছিস। কিন্তু আর কিছু করার ছিল না আমাদের। টাকার খুব দরকার ছিল। নতুন জীবন শুরু করার জন্য, নতুন সংসার সাজানোর জন্য। তাই তোকে এটুকু ধোঁকা দিতে হলো। অনেক মিথ্যে বলেছি তোর কাছে- নিজের সম্পর্কে, সেতুর সম্পর্কে। পারলে ক্ষমা করে দিস। তোর বাবার অনেক আছে। এটুকু গেলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না তোদের। কিন্তু আমার আর সেতুর বিশাল উপকার হবে। বান্ধবীর বিয়েতে বড় একটা গিফট দিয়েছিস বলে মনে করিস। আর কখনো হয়তো আমাদের দেখা হবে না। ভাল থাকিস।’

‘কি ওটা?’- পিছন থেকে জিজ্ঞেস করে প্রাপ্তি।

জবাব দেয় না হৃদি। দিতে পারে না। ভুল বানানে লেখা চিঠিটা হাতে নিয়ে নিরুত্তর দাঁড়িয়ে থাকে সে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ১২:১১
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×