somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথ ও সাম্প্রতিক জাতীয় সংগীত বিতর্ক

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"আজি হতে শত বর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতুহল ভরে আজি হতে শতবর্ষ পরে।"
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মৃত্যুর পর কেটে গেছে তেরাশিটি বছর, আসছে একচল্লিশ সালে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু শতবর্ষ পালিত হবে, কিন্তু এখনও রবীন্দ্রনাথের সম্যক বিচরণ প্রমাণ করে রবীন্দ্রনাথ কত বেশি প্রাসঙ্গিক! কত বেশি শক্তিশালী!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর, ১০ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ কার্জন হলে দ্যা মিনিং অব আর্ট শিরোনামে বক্তৃতা রাখেন, ১৩ই ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় বক্তৃতার শিরোনাম ছিল দ্যা রুল অব জায়ান্ট। জগন্নাথ হলের ছাত্রদের অনুরোধে কবি লেখেন গীতিকবিতা 'বাসন্তিকা'।

রবীন্দ্রনাথের এই ইতিহাস আমরা সবাই জানি। রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন কি করেননি সেই ডিবেটে আমি যাবো না। কেননা আমি জানি রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেছিলেন এবং উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। মানে বিরোধিতা করে থাকলেও রবীন্দ্রনাথ পরিবর্তিত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাঙালি বিশ্বচরিত্র, যিনি আমার মায়ের ভাষায় গীতিকবিতা রচনা করে পুরো পৃথিবীতে পরিচিত হয়েছিলেন। রমা রোলা কিংবা আইন্সটাইন রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় ভাবিত হয়েছেন।
অথচ পূর্ব পাকস্তানে ১৯৬৫ সালে রবীন্দ্রনাথের গানকে প্রথমে অলিখিতভাবে এবং পরে ১৯৬৭ সালে লিখিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।

গান আমার আলোচ্য বিষয় নয়, আমি খুব কমই গান শুনি বা শুনিনা বললেই চলে। মাঝে মাঝে গীতিকবিতা কিংবা সুরহীন বাক্যের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করি।
কিন্তু বাতিল করার চেষ্টায় শিল্পীর শিল্প আরও বেশি তীব্র হয়ে উঠবে, শিল্পী হয়ে উঠবেন আগুন পাখি, আর এটাই নিয়ম।

আর একারণেই রবীন্দ্র সমালোচনায় হুমায়ুন আজাদ লেখেন, "রবীন্দ্রনাথ- যাঁকে বাতিলের চেষ্টা করে আসছে নষ্টরা পবিত্র পাকিস্তানের কাল থেকে; পেরে ওঠে নি। এমনই প্রতিভা ঐ কবির, তাঁকে বেতার থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয় জুড়ে বাজেন; তাঁকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয়ের কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত হয়ে যান, তাঁকে বঙ্গভবন থেকে বাদ দেওয়া হলে তিনি সমগ্র বঙ্গদেশ দখল করেন; তাঁর একটি সঙ্গীত নিষিদ্ধ হলে তিনি জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠেন।"

ব্রিটিশ শাসনে রবীন্দ্রনাথ পুলকিত হয়ে লেখেন, "আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে,নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?"
অথচ যখন ৬৩ দিন অনশনে থাকার পর লাহোরের বোরস্টাল জেলে জোর করে খাওয়াতে গিয়ে মৃত্যু হল বিপ্লবী যতীন দাসের, সেই একই রবীন্দ্রনাথ লেখলেন,
"সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ
হে ভৈরব, শক্তি দাও, ভক্তপানে চাহো
সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ
দূর করো মহারুদ্র, যাহা মুগ্ধ, যাহা ক্ষুদ্র
দূর করো মহারুদ্র, যাহা মুগ্ধ, যাহা ক্ষুদ্র
মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ প্রাণের উৎসাহ''

এটাই হলো কবির পরিবর্তন, প্রাজ্ঞ হয়ে উঠা। আর এরই ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্রনাথ লেখলেন সভ্যতার সংকট নামের প্রবন্ধ, যা এই উপমহাদেশ ও ব্রিটিশ শাসনকে আলাদা চোখে দেখে।

জাতীয় সংগীত কি হবে না হবে সেটা আমার আলোচনার বিষয় নয়। যে ব্যক্তি জীবনের আটটি বছর আয়নাঘরে কাটিয়েছেন, তার কাছে দেশের নাম ঠিক থাকা আর না থাকার কোন মানে নেই। তার ক্রোধ আর কঠিন ও শক্তিশালী হয়ে প্রজ্বলিত হওয়ার কথা। অন্তত যে শব্দ ও কাজে ভারতের গন্ধ নাকে আসে, তা প্রত্যাখ্যান করাই মহৎ প্রতিবাদ।

রবীন্দ্রনাথ তারা কর্মে ও বার্তায় প্রাসঙ্গিক, বাঙালি হৃদয়ে জাগরুক৷ কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসনে রবীন্দ্রনাথের যে চিত্র, রবীন্দ্রনাথ যে দেবতা হয়ে উঠেন বাংলাদেশের মানুষ সেই দেবতার উপাসনা করতে চায় না, প্রত্যাখ্যান করে। স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পরে আবার নতুন স্বাধীনতা পাওয়া দেশের মানুষ সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বলতে শিখে যায়, আমারও কিছু বলবার আছে।

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তন কিংবা স্থায়ী হওয়া নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের বলবার ভাষাকে আমি স্বাগত জানাই, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যারা মিথ্যা ছড়ায় তাদের প্রত্যাখ্যান করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:১১
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×