ছবিঃ বইগল্প ফেসবুক গ্রুপ
বাংগালির প্রধান ও অন্যতম একটা সমস্যা ছিল তারা বই পড়ে না। শুধু মাত্র স্কুল কলেজ এ বই পড়ে পরীক্ষা পাসের জন্য আর এটাই তাদের জীবনের যত বই পড়া। এই সমস্যা আজকের না, এটা দশকের পর দশক বা শতক ধরেই চলমান।
আমাদের লাইব্রেরীতে কখনো মানুষ যেত না, আমাদের পাঠ্য বইএর বাইরে কোন বই পড়া হারাম ছিল। আমার বাবার বইএর দোকান ছিল, সে হেতু দুনিয়ার অজস্র বই পড়া হয়েছিল কিন্তু আমার সহপাঠী দের কখনো পড়ার বই এর বাইরে কিছু পড়তে দেখিনি।
মনে আছে কি কারো জানিনা, আমাদের দেশে আব্দুল্লাহ আবু সায়েদ স্যার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র দিয়ে শুরু করেছিলেন বাংগালিকে বই পড়ানোর আন্দোলন। তিনি শুরু করেছিলেন যায়গা মতই একদম স্কুল লেভেল থেকে যাতে করে ছোট থেকে বাচ্চা গুলা দেশ বিদেশের জ্ঞান আহরন করতে পারে। বাট অনেক সীমাবদ্ধতার কারনে সমাজের মোটামুটি এলিট লেভেলেই কেন যেন এটা আটকে থেকেছিল।
যে কারো বাসায় পড়ার বইএর বাইরে যদি কোন বই থাকত সেটা হত-
মোক্সুদুল মুমিন, ১২ চান্দের ফজিলত, পঞ্জিকা, দোয়ার বই আর যদি একটু অন্য রকম চিন্তা হত তাহলে মরিস বুকাইলির সেই বিখ্যত বই।
এর বাইরে আরো একটু উন্নত সমাজে গেলে- সমরেশ, বুদ্ধদেব, হুমায়ুন আহমেদ বা সূনীল।
আজাদ, ছফা, কার্ল মাক্স, লেনিন, এরিস্টোটল কিংবা তাস্লিমার বই সমাজের একদম হাতে গোনা দুই চার জনে।
আর বিদেশী লেখকের বই পড়া আরো হাতে গোনা। আমার মনে আছে আমি যখন ২০০০ সালে গালিভার আর লিলিপুট পড়ছিলাম, তখন আমি আমার আশে পাশের ১৪ গুস্টির মধ্যে কাউরে এটার নাম শুনতে দেখিনাই।
আমার ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স আছে অন্তত ২০ বছরের বাংগালি কি বই কিনে । বইএর দোকানে রেগুলার বসি ১৯৯৫ থেকেই।
তবে ২০০০ এর পর থেকে বা ২০১০ এর পর থেকেই এই আন্দোলন মারাত্মক রকমে ভাটা পড়ে যায় এবং কেমন যেন থিতিয়ে যায়।
তাও যা টুকটাক বেঁচে ছিল সেটা সমাজের এলিট লোকেদের মধ্যেই। মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত রা তো বাদ ই এই ইকুয়েশান থেকে।
তবে গত ১০ বছরে এই সিনারিও পালটে গেছে।
আমাদের এই যে জ্ঞানের অভাব আর বই পড়ার অভাব এই যায়গা টা একটা মারাত্মক শিফট এসেছে। এখন আপনি যে কারো বাসায় গেলে কিছু কমন বই দেখতে পাবেন। সেটা আগের মত নয়।
এখন আপনি পাবেন আরিফ আজাদ, রাফান আহমেদ, আসিফ আহনাফ থেকে শুরু করে বেশ কিছু সিলেক্টিভ লেখক রা এই যায়গায় রাজত্ব করছে এর সাথে কিছু নিব্বা নিব্বির কাছে গরিবের হুমায়ুন/জীবনানন্দ সাদত বা লুতুপুত লেখার সুন্দরী ওড়না ছাড়া ফেসবুকে ছবি দিয়ে হট খেতাব পাওয়া মেয়েব্রিটি কিংবা আধুনিক লুতুপুতু লেখক রা।
উপরে একটা লিস্ট দিয়েছি- একটা বই এর গ্রুপে সেরা লেখক বা প্রিয় লেখক দের তালিকা বা টোল করা হয়েছে।
তালিকা থেকেই বুঝা যায় বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা এখন কোন দিকে বইছে।
আমি অনেক বছর ধরে লিখি মূলত আমাদের দেশের মানুষ দের পড়ালেখা আর জ্ঞান বিজ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার সমস্যা নিয়ে।
এই যে জ্ঞান বিজ্ঞান আর বুদ্ধিভিত্তিক পড়াশুনা বাদ দিয়ে অবৈজ্ঞানিক, ভুয়া তথ্যে ভরপুর বই দিয়ে সমাজের একটা বিশাল অংশের মানুষের বই এর তাক ভর্তি এটা থেকেই আপনি বুঝে নিতে পারেন সমাজ বা রাস্ট্র কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে গত ১ দশক ধরে চলছে এক রাজনৈতিক মাফিয়া শাসন আর এর ভেতর দিয়ে উলটা দিকে তৈরি হচ্ছে জ্ঞান হীন বোধ হীন এক্টা ভয়ংকর বুদ্ধিহীন জনগণের বিশাল সমাজ।
দেশ ও সমাজের এই পরিবর্তন ও পচে যাওয়া ঠেকানোর কোন উপায় নেই যদিনা অবস্থার কোন পরিবর্তন না হয় একদম টপ লেভেল থেকে।
এটার দায় কি শুধু জনগনের? অবশ্যই না। এটার সবচেয়ে বেশি দায় সরকারের, রাজনীতির। আজকে সমাজের প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিকরনের ফল এটা। এখন আপনি কোন বুদ্ধিজীবির দেখা পাবেন না, কোন সাহিত্যীক এর দেখা পাবেন না, কোন মুক্ত চিন্তার মানুষের দেখা পাবেন না, পাবেন চাটার দল, পাবেন ভয় পেয়ে লুকিয়ে থাকা ভীতুর দল।
সমাজের এই যে পচন, এ থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। এই পচন ই আমাদের কে নিয়ে যাবে আফগানিস্তান , লিবিয়া কিংবা ইয়েমেনের পথে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১৯